কবুতর পালনে সাবলম্বী সুরুজ্জামাল মিয়া
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নের কুটি চন্দ্র খানা মৌজার মোহরটারী গ্রামের কৃষক ফরিদ আলীর ছেলে সুরুজ্জামাল মিয়া (৪৩) কবুতর পালনে এখন সাবলম্বী।
যেন এক রুপকথার গল্প কাহিনী, তিন ভাই দুই বোন,পাঁচ ভাই বোনদের মধ্যে সুরুজ্জামাল বড় বাবা কৃষক ফরিদ আলী তার একার আয় রোজগারে কোন মতে সংসার চলতো। অভাবী সংসারে ছোট বেলা থেকেই পড়ালেখার উপর ঝোঁক ছিল সুরুজ্জামালের, স্কুলের শিক্ষকদের কাছে ভালো ছাত্র হিসেবে বিবেচিত ছিল, ছোট বেলা থেকেই ইচ্ছে পড়াশুনা শেষ করে সরকারি চাকুরী করে কৃষক বাবাকে বৃদ্ধ বয়সে সংসারের খাটুনি থেকে অব্যাহতি দিয়ে নিজের রোজগারের পয়সায় অভাবি সংসারের দুঃখ ঘুচাবে। সংসারের অভাব অনটন শত প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে দিয়ে পড়াশুনায় থেমে থাকেনি সে,তার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ও অদম্য ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে পড়াশুনার খরচ জোগাতে ছাত্র জীবনেই অন্যের ছেলে মেয়েদের কে টিউশনি করিয়ে যে আয় হতো সেই খরচ দিয়ে ১৯৯৫ সালে এসএসসি প্রথম বিভাগ এবং ১৯৯৭ সালে এইচএসসিতে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এমতাবস্থায় সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বাবা ফরিদ আলী বয়োবাদ্ধকর ভারে কাজকর্ম ও আগের মতো করতে পারেনা প্রায় বন্ধ হতে বসে সংসারের আয়রোজগার,বড়ছেলে হিসেবে সম্পুর্ন সংসারের ভার এসে পড়ে সুরুজ্জামালের কাঁধে। এরপরেই ইতি ঘটে তার লেখাপড়ার।
তারপর সুরুজ্জামালের জীবনে শুরু হয় নতুন অধ্যায়, জীবন যুদ্ধে থেমে থাকেনি, তার নিকট টিউশনির অল্প কিছু টাকা জমানো ছিল, তার থেকে কিছু টাকা দিয়ে শখ করে বাজার থেকে তিন জোড়া কবুতর কিনে প্রতিপালন শুরু করেন। এক দুই বছর কবুতরের বাচ্চা বিক্রির টাকা সহ-আগের জমানো কিছু টাকা দিয়ে বিভিন্ন বাজার ঘুরে ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির আরও দশ জোড়া কবুতর কিনে মোট তের জোড়া কবুতরে পরিনত করে। কৃষক বাবার অভাবী সংসারকে সাবলম্বী করতে আত্মনির্ভরশীল হত্তয়ায় চেষ্টা শুরু করেন। সেই তের জোড়া কবুতরে বর্তমানে তার আশি জোড়া কবুতরে পরিনত হয়েছে।কবুতর প্রতিপালনে সংসারে ফিরিয়ে এনেছে সচ্ছলতা।
বাড়ির ভিতরে শয়ন ঘরের ধাইরার সাথে নিচ থেকে রুয়া পর্যন্ত বাঁশ এবং কাঠ দিয়ে সারিবদ্ধভাবে লম্বালম্বি ভাবে কবুতর রাখার ঘরগুলো এত সুন্দর ভাবে তৈরি করেছে এটাতে বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রামের ভাষায় বলা হয়ে থাকে কবুতর নাকি সুখের পায়রা সুরুজ্জামালের বাড়িতে গিয়ে উপলব্ধি করা যায়। কবুতর প্রেমী সুরুজ্জামাল বাড়ির ভিতরে দাঁড়ানো মাত্রই খাদ্যের জন্য কবুতর গুলো উড়ে এসে ঝাঁকে ঝাঁকে তার গায়ে মাথায় হাতে পড়তে শুরু করে মনে হয় খাবারের ইঙ্গিত করে কি এক অবাক করা দৃশ্য। এসময় মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে খাদ্য দেওয়া মাত্রই ঝাঁকে ঝাঁকে রং বেরঙের নানান প্রজাতির কবুতর গুলো আহার করতে শুরু করে, তখন মনে হয় প্রকৃতির সৌন্দর্য্য কে মাতিয়ে তুলছে। কবুতর প্রতিপালন একপ্রকার সৌখিন তাও বটে আবার লাভজনক ও এভাবেই সুরুজ্জামালের সংসারে অভাব দিনে দিনে লাঘব হচ্ছে বটে।
কবুতর প্রেমী সুরুজ্জামাল মিয়া প্রতিবেদক কে জানান, বর্তমানে আমার এখানে দশ থেকে বারো প্রজাতির কবুতর আছে,যেমন দেশি, বাগদাদী,হোমড়া,কালো সিরাজি, গিরিবাজ, ম্যাগপাই,লাখা,কাবজি চিনা,সাদা সিরাজি ইত্যাদি।কবুতরের মাংস অনেকের কাছে সুস্বাদু বটে। এক একটি জাতের কবুতরের ভিন্ন ভিন্ন দাম যেমন জাত অনুযায়ী একজোড়া কবুতরের দাম পাঁচ শত, এক হাজার, দুই হাজার হইতে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এটি সুন্দর একটি লাভজনক ব্যবসা,তবে কবুতরের খাবার যোগানে বড় একটা ব্যয়ও আছে ,যেমন ধান, চাউল,খুদি, সরিষা, ভুট্টা,ফিড এই ধরনের খাবার প্রতিদিন প্রায় পাঁচ থেকে ছয় কেজি খাবারের প্রয়োজন হয় যার দৈনন্দিন ব্যয় প্রায় পাঁচ শত টাকা। এছাড়া ছোট বাচ্চা গুলোকে আলাদা ভাবে ফিড খাওয়াতে হয়, তিনি আরও জানান, একজোড়া কবুতরের ডিম দেওয়া পর্যন্ত সময় লাগে পাঁচ থেকে ছয় মাস কিন্তূ বাচ্চা বিক্রির উপযোগী হয়ে উঠে তিন চার মাসের মধ্যে।
সুরুজ্জামাল মিয়া মনে করেন কবুতর প্রতিপালন যেহেতু একটা লাভজনক ব্যবসা হেতু তার ইচ্ছা এটিকে বড়সড় ভাবে খামারে পরিনত করার। কবুতর পালনে রোগ বালাই ও আছে। যার কারণে কবুতর প্রতিপালনে উৎসাহ দিতে প্রাণিসম্পদ বিভাগের সুপরামর্শ ও সহযোগিতা একান্ত ভাবে কাম্য বলে মনে করি।
এমএসএম / এমএসএম