ঢাকা শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

অবশেষে সেই মামুনের বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশীট


আলমগীর হোসেন ও আসাদুজ্জামান রনজু photo আলমগীর হোসেন ও আসাদুজ্জামান রনজু
প্রকাশিত: ৮-২-২০২৫ বিকাল ৬:১২

অবশেষে ঢাকা বিভাগের সেই সাবেক পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের পরিচালক বর্তমানে ( সিলেট) বিভাগে কর্মরত মো. আব্দুল্লাহ আল মামুনের ২ কোটি ৮১ লাখ ২ হাজার ১০৪ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ২ কোটি ৫৬ লাখ ৭১ হাজার ৯৪৯ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের অফিস সুত্র এ তথ্যটি নিশ্চিত করেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিকানার প্রমাণ পাওয়ায় ২০২২ সালের ২১ জুন তার বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করে দুদক। আসামির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫ (২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়।

আসামি মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন দাখিল করা সম্পদ-বিবরণীতে ১ কোটি ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৮৭ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ প্রদর্শন করেছেন। তবে তদন্তকালে দেখা গেছে, আসামি মামুন ২ কোটি ৫৬ লাখ ৭১ হাজার ৯৪৯ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এছাড়া আসামি ২ কোটি ৮১ লাখ ২ হাজার ১০৪ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। গত বছর  দৈনিক সকালের সময়ে মামুনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ৮ পর্বের ধারাবাহিক অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নিলো দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় নুন আনতে পানতা ফুরানো পরিবার থেকে উঠে আসা পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে । বিপুল এ সম্পদ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান চলাকালে কালো টাকা সাদা করার সুযোগও নিয়েছেন আদুল্লাহ আল মামুন। আয়কর আইনের আওতায় জরিমানা দিয়ে ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, বসুন্ধরা ও হাজারিবাগে ৬টি ফ্ল্যাটের মালিক ঘোষণা দিয়ে সম্পত্তি বৈধ করেছেন তিনি। একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে কিভাবে চাকরি বিধি লংঘন করে তিনি চাকরিরত অবস্থায় ৯টি ফ্ল্যাট ও দুটি প্লটের মালিক হয়েছেন এ নিয়ে জনমনে চলছে নানা প্রশ্ন ।
 তিনি ধরি মাছ না ছুই পানি কৌশলে দুর্নীতি করছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। জানা যায়, ঢাকাসহ বাংলাদেশের যত রিক্রুটিং এজেন্সি আছে যারা পাসপোর্ট ও ভিসা ব্যাবসার সাথে জড়িত সবাই তার কাছে জিম্মি। টাকা দিলে কাজ হয়, না দিলে হয়না এভাবেই এগিয়ে চলেছে মামুনের দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য। জানা গেছে, তিনি সরাসরি কোন টাকার লেনদেন করেন না, পাসপোর্ট অফিসে তার কিছু পোষ্য অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের একটি সিন্ডিকেট আছে যাদের মাধ্যমে তিনি ঘুষ বানিজ্যের রমরমা ব্যাবসা চলমান রেখেছেন।
জানা যায়, যে সকল রিক্রুটিং এজেন্সি জরুরিভাবে একাধিক পাসপোর্ট করতে দেন একসাথে, তাদের থেকে উৎকোচ নেন ৩ থেকে ১০ হাজার টাকা, আর যারা দেশের বাহিরে গিয়ে পাসপোর্ট হারিয়ে বিশেষ করে (ইউরোপ) গিয়ে বিপদে পড়েন দালাল মাধ্যমে তাদের থেকে নেন ১ থেকে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া জরুরী ভিত্তিতে এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা লাগান ১০ হাজার টাকা করে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাসপোর্ট অফিসের একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন স্যার প্রতিদিন এখান থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে ঘরে ফেরেন তার কতো টাকা আছে সে নিজেও জানেনা।

 পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুনের মালিকানাধীন সম্পদের বিবরন নিম্নে তুলে ধরা হলো

১/  মোহাম্মদপুরের কাটাসুরে হলি হাসিনা নামের ৭ তলা ভবনে গ্যারেজসহ ১১০০ বর্গফুটের ১টি ফ্ল্যাট।

২/ নিউ এলিফ্যান্ট রোডের ২২৩ নম্বর হোল্ডিংয়ের ৭ তলা ভবনে গ্যারেজসহ  ১৩০০ বর্গফুটের ১টি ফ্ল্যাট। 


৩/ ধানমন্ডি নর্থ ভূতের গলি ৫০ নম্বর হোল্ডিংয়ে গ্যারেজসহ ১১৫০ বর্গফুটের ১টি ফ্ল্যাট।

৪/ হাজারিবাগ চরকঘাটার ৭ নং রোডে সিক্দার রিয়েল এস্টেটে ১৪০০ বর্গফুটের ২টি ফ্ল্যাট। 

৫/ বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ৪ নম্বর রোডের এফ ব্লকে ৮০০ বর্গফুটের ১টি ফ্ল্যাট। 


৬/ মোহাম্মদপুরের চাঁদ হাউজিংয়ে বি- ব্লকে ১১০০ বর্গফুটের ১টি ফ্ল্যাট। 

৭/ মোহাম্মদপুরের কাটাসুরে ৪০/৩ এ ১১০০ বর্গফুটের ২টি ফ্ল্যাট একটি ৩ তলায় ও ৫ম তলায়। 

৮/ ধানমণ্ডির ১১/৩ নম্বর রোডের ৭৭ নম্বরে নিজ ও স্ত্রীর যৌথ নামে ২২৫১ বর্গফুটের ১টি ফ্ল্যাট।
 
৯/ রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আউট প্ল্যানের ৮ নম্বর রোডে ১০৭ নম্বর প্লটের সিকদার রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের অর্ধ কাঠা জমি এবং রাজধানীর কাফরুল থানার আওতাধীন ইব্রাহিমপুর মৌজার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ০.১৮৩ অযুতাংশ নাল জমি।

এর মধ্যে ২০০৬ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ক্রয়কৃত কিছু জমিসহ ৬টি ফ্লাট ক্রয়বাবদ ২ কোটি ৫২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও নগদ ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ দেখিয়ে ২০২০-২০২১ করবর্ষে আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর ১৯ (এ) ধারায় বৈধ করেছেন।
কিন্তু মামুনের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির বিষয়ে এনবিআর ও দুদক জানায়, পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন ২০০৪ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে যেসব স্থাবর সম্পত্তির মালিক হয়েছেন তার মধ্যে টাঙ্গাইলের গোপালপুরে ৪ শতাংশ কৃষি জমি ও ৫০ শতাংশ কৃষি ও বসতভিটা ছাড়া সকল সম্পত্তির সরাসরি ক্রয়মূত্রে মালিক হয়েছেন।
 ক্রয়কৃত স্থাবর সম্পদের মধ্যে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আউট প্ল্যানের ৮ নম্বর রোডে ১০৭ নম্বর প্লটের সিকদার রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের অর্থ কাঠা জমির মালিক হয়েছেন ২০০৫ সালে।

মোহাম্মদপুরের কাটাসুরে হলি হাসিনা নামের ৭ তলা ভবনে গ্যারেজসহ ১১০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট জন্য করেন ২০১২ সালে, (এলিফ্যান্ট রোডের ২২০ নম্বর হোল্ডিংয়ের ৭ তলা ভবনে গ্যারেসহ ১৩০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের মালিক হন ২০০৬ সালে এবং ধানমন্ডি নর্থ ভূতের গলি ৫০ নম্বর হোল্ডিংয়ে গ্যারেজসহ ৮০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট ক্রয় করেন ২০০৯ সালে।

এছাড়া ২০০৬-০৭ সালে মালিক হন হাজারিবাগ চরকঘাটার ৭ নম্বর রোডের সিকদার রিয়েল এস্টেটে ১৪০০ বর্গফুটের ১টি ফ্ল্যাট। 
 একই রিয়েল এস্টেটের ১৪০০ বর্গফুটের আরও ১টি ফ্ল্যাট ২০০৯ সালে ক্রয় করেন। আর বসুন্ধরা  আবাসিক এলাকায় ৪ নম্বর রোডের এফ ব্লকে ৮০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটি ক্রয় করেন ২০১০ সালে। 
মোহাম্মদপুরের চাদ হাউজিংয়ের বি-ব্লকে ৭৬০ বর্গফুটের ১টি ফ্ল্যাট ২০১০ সালে এবং ২০১১ সালে মোহাম্মদপুরের কাটাসুরে ৪৩/3 এ ১১০০ বর্গফুট ফ্ল্যাটের ক্রয়সূত্রে মালিক হন। অন্যদিকে,  ধানমণ্ডি ১১/৩ নং রোডের ৭৭ নম্বরে নিজ ও স্ত্রীর যৌথ নামে ২২৫১ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটি তারা ক্রয় করেন ২০১৮ সালে। এছাড়া রাজধানীর কাফরুলের ইব্রাহিমপুরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ০.১৮৮৩ অযুতাংশ নাল জমি ক্রয় করেছেন  নিজ নামে ২০০৯ সালে। আর এই সকল সম্পত্তি তিনি ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের আয়কর নথিতে ১৯ (এ) ধারায় ঘোষণা দিয়ে বৈধ করার চেষ্টা করেন।
অন্যদিকে মামুনের অস্থাবর সমপত্তির বর্ননায় রয়েছে - সাধারন ভবিষ্যত তহবিলের (জিপিএফ) সুদসহ প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি: এর আগারগাঁও শাখায় ৩টি হিসাব নম্বরে ৭০, ৭৫,৩৬,০০০ ও ৮,২৬,০০০ টাকা এবং আলিকো ইন্সুরেন্স বাবদ ৩,৫৫,০০০ টাকাসহ ২,৪৪,৬৪,০০০ টাকা। একজন সরকারি কর্মকর্তার বিশাল এই সম্পত্তির ফিরিস্তি শুনে নিজ এলাকা ও কর্মস্থলের সহকর্মীরাও হতবাক। দৈনিক সকালের সময়ের বিশেষ অনুসন্ধানী টিম তার দুর্নীতির অনুসন্ধান চলমান রেখেছেন আমরা আশাবাদী সত্য উন্মোচন করে জাতির সামনে তার আসল চরিত্র উপস্থাপন করতে পারলে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে।
দুদকের এজাহার বলছে, আসামি মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন ঢাকা বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদফতরসহ বিভিন্ন পদে চাকরিকালীন ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতিমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এ সম্পদ অর্জন করেছেন।
অথচ, সংবাদ সংগ্রহকালে মামুন দাবি করেছিল তার ১ টাকারও অবৈধ সম্পদ নেই। এ বিষয়ে তার মতামত জানতে বারবার মুঠো ফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এমএসএম / এমএসএম

গাজীপুর গণপূর্তের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিমের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ

গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকের ঢাকায় ১৯ বছরের লুটপাটের রাজত্ব

মসজিদের নামে জমি দখলের চেষ্টা করছে মল্লিক বিল্ডার্স

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ডিজি আবু সুফিয়ান এর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে টেন্ডার বাতিল এর অভিযোগ

পিডব্লিউডি এর কয়েকজন স্টাফের বিরুদ্ধে আইন ও বিচার বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর অভিযোগ

অবশেষে সেই মামুনের বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশীট

তুরাগ নদীতে মাটি খেকো চক্র বেপরোয়া

আদম পাচারের ফাঁদ পেতে শত কোটি টাকা আত্মসাৎ

এলজিইডিতে ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনও বহাল তবিয়তে!

প্রধান শিক্ষিকা নার্গিস আক্তার চাকরি বাঁচাতে মরিয়া,দৌড় ঝাঁপ শুরু করেছেন

দুর্নীতির শীর্ষে ২৪ তম বিসিএস ক্যাডারের অনেকেই

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে ১০০ কোটি টাকার এফএমডি ভ্যাকসিন ক্রয়ে ভয়ংকর অনিয়ম

সংবাদ প্রকাশ করায় কন্ঠরোধের অপচেষ্টা