ঢাকা শনিবার, ২ আগস্ট, ২০২৫

রেজিস্ট্রি অফিসের প্রভাবশালী নকলনবিশের কাণ্ডঃ মন্ত্রীদের প্রভাবে চাঁদাবাজি ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ


আব্দুল লতিফ রানা photo আব্দুল লতিফ রানা
প্রকাশিত: ৩১-৭-২০২৫ দুপুর ৪:৫৬

বাংলাদেশ এক্সট্রা মোহরার বা নকলনবিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সহ-সভাপতি মো. রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে একই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এম এম হেমায়েত উদ্দিনকে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে মৃত দেখানোর গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় দেশের সকল মোহরার বা নকলনবিশদের মাঝে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এই জাল জালিয়াতির মাধ্যমে জীবিত ব্যক্তিকে মৃত ঘোষণাপত্রে যাদের সই স্বাক্ষর করা হয়েছে, সেই গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার ৬ নং এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারগণ জানিয়েছেন, উক্ত মৃত্যুর সনদটি উল্লিখিত মামলার আসামি জাল জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্টি করে থাকতে পারেন। অপরদিকে উল্লিখিত জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখিয়ে মৃত্যুর সনদ দেওয়ার বিষয়টি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর তদন্তেও জাল বলে প্রমাণিত হয়েছে।

জানা গেছে, নকলনবিশ মো. রফিকুল ইসলাম শেখ হাসিনা সরকারের দীর্ঘ ১৫ বছর আওয়ামী লীগের গাইবান্ধা ফুলছড়ি উপজেলার সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। আর সেই পদের প্রভাব খাটিয়ে সারা দেশের নকলনবিশদের তটস্থ রাখতেন এবং অ্যাসোসিয়েশনে পদ আঁকড়ে ধরে রাখার চেষ্টা করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক আইন মন্ত্রী আনিসুল হক, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শাহজাহান খানসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাদের সঙ্গে ছবি তুলে তার নেতৃত্বে সন্ত্রাসী কায়দায় নকলনবিশদের ওপর জুলুম নির্যাতনসহ নানাভাবে হয়রানি করে আসছিলেন। এসব জুলুম নির্যাতনের কারণে নকলনবিশ এম. এম. হেমায়েত উদ্দিন আদালতে মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলার আসামি জাল জালিয়াতির মাধ্যমে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মেম্বারের স্বাক্ষর জাল করে মামলার বাদীর মৃত দেখিয়ে তার মৃত্যুর সনদ আদালতে দাখিল করেন। এরপর এই মামলার বাদী আদালতে হাজির হয়ে উক্ত মৃত্যুর সনদ জাল বলে অভিযোগ করেন। অভিযোগে আদালতে সিআর মামলা নম্বর-১২৮৪/২০১৯ (পল্টন) দায়ের করেন। এই মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে তদন্তের নির্দেশ দেন।

পিবিআই সূত্র জানায়, মামলাটি পিবিআই ঢাকা মেট্রো (দক্ষিণ) এর স্মারক নম্বর পিবিআই/২০১৯/৪০৭২ এর ক্রমিক নম্বর ৬৪৮ তদন্তভার গ্রহণ করা হয়। মামলার সূত্রে জানা গেছে, নকলনবিশ মো. রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ প্রথম শ্রম-আদালত ঢাকায় বি.এল এর মামলা নম্বর ৮৮৯/২০১৮ দায়ের করেন নকলনবিশ মো. হেমায়েত উদ্দিন। উক্ত মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মো. রফিকুল ইসলাম যাতে নকলনবিশ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দাবি করতে না পারেন, সেজন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন তিনি। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানি শেষে আদালত গত ২০১৮ সালের ১৫ অক্টোবর মঞ্জুর করেন। এরপর মামলার আসামি মো. রফিকুল ইসলাম আইনজীবীর মাধ্যমে উক্ত নিষেধাজ্ঞা বাতিল চেয়ে আদালতে আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করে একই বছরের ৫ নভেম্বর শুনানির দিন ধার্য করেন। উক্ত শুনানির দিন তিনি তার আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে মামলার বাদী এম. এম. হেমায়েত উদ্দিনকে মৃত দেখিয়ে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার তারই এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারের স্বাক্ষর জাল করে মৃত্যুর সনদ উপস্থাপন করেন।

এই ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, মামলার বাদী মো. হেমায়েত উদ্দিন ও আসামি মো. রফিকুল ইসলাম এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সাংগঠনিক কমিটির বৈধতা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। মামলার আসামি মো. রফিকুল ইসলাম হেমায়েতের সঙ্গে কোনো প্রকার সুবিধা করতে পারেননি। ফলে উপায়ান্তর না পেয়ে আসামি রফিকুল ইসলাম ও তার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এক্সট্রা মোহরার (নকলনবিশ) অ্যাসোসিয়েশনের গঠনতন্ত্রের ৪ নম্বর ধারা একই লাইন (এস এ টি মোহরার টি. সি. মোহরার, মোহরার সহকারী প্রধান সহকারী) গোপন করে। আর সেই অনুসারে মো. রফিকুল ইসলাম নিজেকে সংগঠনের সভাপতি দাবি করেন। আর তিনি সারা দেশে অবৈধভাবে সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকেন। আর এর বিরুদ্ধে মো. হেমায়েত উদ্দিন আদালতে বি.এল এ অভিযোগ মামলা নং ৮৮৯/২০১৮ দায়ের করেন। মামলায় আরও যাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে, তারা হলেন, মো. শাহাব উদ্দিন, মো. মাসুদ রানা, মো. আজিজুর রহমান, চেয়ারম্যান ফুলছড়ি উপজেলার এরেন্ডাবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান, মো. নুরুল ইসলাম।

অভিযোগে জানা গেছে, গত ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর আদালত প্রথম শ্রম আদালত ঢাকায় শুনানি শেষে আদালত হতে নেমে যাওয়ার সময় রাজধানীর মতিঝিলস্থ কর্মসংস্থান ব্যাংক এর পূর্বপাশের রাস্তায় মামলার আসামি রফিকুল ইসলাম ও তার লোকজন বাদী হেমায়েত উদ্দিনকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দেন। এসময় তাকে কিল ঘুষি ও প্রাণে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।

উল্লিখিত নকলনবিশ মো. হেমায়েত উদ্দিনের মৃত্যুর সনদ এর বিষয়ে গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার ৬নং এরেন্ডাবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান মো. আজিজুর রহমান ও মেম্বার মো. নুরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা সকালের সময়কে বলেন, "এই জালিয়াতির ঘটনায় পুলিশ ব্যুরো অব বাংলাদেশ (পিবিআই) এর তদন্তকারী কর্মকর্তা আমাদের সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করেছেন। আমরা তাকে জানিয়ে দিয়েছি, এ ধরনের মৃত্যুর সনদ দেওয়ার কোনো প্রকার প্রমাণ আমাদের এখানে নেই। আর আমরা কোনো নকলনবিশকে মৃত্যুর সনদ প্রদান করি নাই। তাই উল্লিখিত মৃত্যুর সনদটি জাল জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে বলে আমাদের বিশ্বাস।" মামলার আসামি মো. রফিকুল ইসলামের বাবার নাম মো. আব্দুল কাইয়ুম সরকার, গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার এরেন্ডাবাড়ী জিগাবাড়ী গ্রামের তাদের বাড়ি। অপরদিকে মামলার বাদীর বাড়ি পাশের ইউনিয়নে হলেও আসামি নিজের এলাকার ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত মৃত্যুর সনদ আদালতে দাখিল করেছেন।

বিভিন্ন সাব রেজিস্ট্রি অফিসে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মো. রফিকুল ইসলাম আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কার সাবেক একজন হুইপের ভাতিজা পরিচয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দলীয় পদ নিয়ে বিভিন্ন লোকজনের মাঝে প্রভাব খাটাতেন। সাব রেজিস্ট্রি অফিসের প্রভাব খাটিয়ে এবং স্বঘোষিত সভাপতি পরিচয়ে নকলনবিশসহ কর্মচারী নিয়োগের নামে সারা দেশে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এসব ব্যক্তিদের কারও কারও চাকরি দিয়েছেন। আবার এখনো অনেক ব্যক্তির চাকরি দিতে পারেন নাই। গত পনেরো বছরে প্রায় অর্ধশত ব্যক্তিকে টাকার বিনিময়ে চাকরি দিয়েছেন। রফিকুল ইসলাম স্বঘোষিত সভাপতি পরিচয়ে সংগঠনটির ১৬ হাজার ৩৪৫ জন সদস্যের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করেছেন। আর এর প্রতিবাদ করায় অনেক নকলনবিশকে নানা ধরনের হয়রানি ও হুমকি ধামকি দিয়েছেন। আবার নকলনবিশ বিগত আওয়ামী লীগের সময়ে নানা অনিয়মের নকল-নবিশ নিয়োগ করা হয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেছেন, রফিকুল ইসলাম মামলার বাদীকে মামলা প্রত্যাহারে হুমকি দিয়ে তাকে মারপিট করে জখম করেছেন বলে প্রমাণিত হয়েছে। ফলে তিনি ১৯৩/৩২৩/৫০৬ ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হয়েছেন। আর মো. শাহাব উদ্দিন বাদীকে মারধর করে হুমকি দেওয়ার সত্যতা পাওয়া গেছে। আসামি মাসুদ রানা সহ অন্যান্য আসামিরা মামলার বাদীকে মৃত্যুর সনদ তৈরির সঙ্গে জড়িত থাকায় তাদের বিরুদ্ধে উল্লিখিত ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলার বাদী মো. রফিকুল ইসলামের সেল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এমএসএম / এমএসএম

রেজিস্ট্রি অফিসের প্রভাবশালী নকলনবিশের কাণ্ডঃ মন্ত্রীদের প্রভাবে চাঁদাবাজি ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

বিসিক এর নীরিক্ষা কর্মকর্তা সাবধান আলী হতে সাবধান!

কেরানীগঞ্জ উপজেলার রাজাবাড়ী রোডে অবৈধ এলপিজি বটলিং প্লান্ট এর সন্ধান

গডফাদার মুরাদ জং-এর বোন পরিচয়ে দলিল দাতা-গ্রহীতাদের জিম্মি করার অভিযোগ

গাজীপুরের কাশিমপুরে সরকারি খাস জমি ভূমিদস্যুদের দখলে

বগুড়ায় সাবেক অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে 'ফ্যাসিস্ট সিন্ডিকেটের' মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের আইন যেন শুধু খাতা কলমে

প্রকৌশলী কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ

গোয়েন্দা প্রধানসহ লুটপাটের অভিযোগে চার কর্মকর্তা ক্লোজড

নির্বাহী প্রকৌশলী জহির রায়হানের বিরুদ্ধে ঠিকাদারদের মানববন্ধনে শাস্তি ও অপসারণ দাবী

সীমাহীন দুর্নীতি,অর্থ আত্মসাত ও সরকারি চাকুরির শৃংখলা ভংগের অভিযোগে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী রনজিত দে সাময়িক বরখাস্ত

সরকার বিরোধী কর্মকান্ডে শ্রমিকদের উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ

রাজউকের ইমারত পরিদর্শক জয়নাল আবেদিন এর বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ