ওষুধের জেনেরিক নাম: নিরাপদ ও কার্যকর চিকিৎসার চাবিকাঠি
চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হলো রোগ নিরাময় ও রোগীর সুস্থতা নিশ্চিত করা। আর এই চিকিৎসার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টা,সেটা হচ্ছে মেডিসিন। মেডিসিন এর ব্যবহার সাধারণত তিন ভাবে হয়ে থাকে।প্রথমে জেনেরিক নাম ,তারপর ব্র্যান্ড নাম এটি হলো কোম্পানি প্রদত্ত নাম আর সাইন্টিফিক নাম। তবে সঠিক ও কার্যকর চিকিৎসার জন্য ওষুধের জেনেরিক নাম জানা ও ব্যবহারের গুরুত্ব অপরিসীম। জেনেরিক নাম হলো ওষুধের প্রকৃত রাসায়নিক নাম, যা বিশ্বব্যাপী একই নামে পরিচিত।জেনেরিক নাম,প্রতিটা ওষুধের প্যাকেটে ব্র্যান্ড নেম এর নিচে ছোট হরফে লেখা থাকে। এটি শুধু চিকিৎসকদের জন্যই নয়, সাধারণ মানুষের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ওষুধের গুণগত মান, কার্যকারিতা ও মূল্যনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
কিন্তু আমাদের দেশে, রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে এখনো জেনেরিক নাম ব্যবহার করা হয় না।যার ফলশ্রুতিতে বিপাকে পড়েন, বিভিন্ন পর্যায়ের রোগীরা। বিশেষ করে গ্ৰামগন্জে,রোগীদের ভোগান্তি আরো বেশি লক্ষ্য করা যায়।
কাকন বিবি,বয়স সাতাশ বছর।উনি কিছু দিন ধরে অনিয়মিত মাসিক, অতিরিক্ত রক্তস্রাব ইত্যাদি নিয়ে গাইনোকলজিস্ট এর কাছে চিকিৎসা নিতে যান।চিকিৎসক ওনার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে, ক্লিনিক্যাল ইভালুয়েশন এর পর কিছু মেডিসিন নিতে পরামর্শ প্রদান করেন। মেডিসিন গুলোর ভিতরে ওনাকে নরমেন্স দশ মিলিগ্ৰাম খেতে দেওয়া হয়।নরমেন্স একটি প্রোজেস্ট্রোজেন হরমোন যা অনিয়মিত মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি মাসিকের তারিখ নিয়মিত করতে, অতিরিক্ত রক্তপাত কমাতে, এবং মাসিকের আগে বা পরে হওয়া বিভিন্ন সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। উনি ফার্মেসি থেকে মেডিসিন নিয়ে, মেডিসিন খেতে শুরু করেন। কিন্তু বেশ কয়েকদিন গেলেও উনি তেমন কোনো উপকার পান না, বরঞ্চ আরো কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া উনি দেখতে পান। পরবর্তীতে দেখা যায় ফার্মেসিতে থাকা সেলসম্যান তাকে নরমেন্স দশ মিলিগ্ৰাম এর পরিবর্তে নরিয়াম দশ মিলিগ্ৰাম দিয়ে দিয়েছে।এই নরিয়াম হচ্ছে মাইগ্ৰেন, নিউরোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার, মাথাঘোরা ইত্যাদিতে নির্দেশিত।এই জায়গায় ভুল মেডিসিন নেওয়ার জন্য ওনার সমস্যা তো সারেই নি,উল্টো বেড়েছে।
এখানে যদি সারা বিশ্বে সমাদৃত মেডিসিন এর আসল নাম,বা জেনেরিক নাম ব্যবহার করা হতো,তাহলে কাকন বিবির মতো রোগীরা সমস্যায় পড়তেন না। দিনশেষে মেডিসিন এর ব্র্যান্ড নাম ব্যবহার এর ফলে, চিকিৎসক থেকে শুরু করে ফার্মেসি দোকানদার রা লাভবান হলেও, ভয়ংকর ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা।
এসব সমস্যার প্রধান সমাধান হবে প্রেসক্রিপশনে ওষুধের জেনেরিক নাম (ওষধের মূল উপাদানের নাম) ব্যবহার।জেনেরিক নাম ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে একই ওষুধ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান একই মান বজায় রেখে উৎপাদন করছে কি না, তা জানতে বায়োএকুইভ্যালেন্স পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা, যত্রতত্র ওষুধের দোকান চালু নিয়ন্ত্রণ করা, ঠিক ওষুধ দেওয়া হচ্ছে কি না, তা বুঝতে দক্ষ ফার্মাসিস্টদের নিয়োগ দেওয়া এবং সাধারণ জনগণকে যেখান-সেখান থেকে নিজেদের ইচ্ছামতো ওষুধ কিনে খাওয়া থেকে বিরত করতে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।
বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে জেনেরিক প্রেসক্রিপশন চালু আছে। কিন্তু অনেক সময় জেনেরিক নাম এক হলে ওষুধের মান এক নাও হতে পারে। যদি এ নিয়মকে কার্যকর করতেই হয়, তাহলে প্রতিটি ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিকে তাদের তৈরি ওষুধের গুণমানও যাতে এক থাকে অর্থাৎ একটিভ ফার্মাসিউটিক্যালস ইনগ্ৰিডিয়েন্ট, এক্সিপিয়েন্টস, ইত্যাদি যা আছে এইগুলো নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। ওষুধ উৎপাদন, বিক্রয়, বাজারজাতকরণ, সংগ্রহ, আমদানি, রপ্তানি, মাননিয়ন্ত্রণ ও বিতরণের জন্য ওষুধ ও কসমেটিকস আইন ২০২৩ প্রণয়ন করা হয়েছে। খুবই আশ্চর্যের বিষয় হলো-ওষুধ বিপণনের জন্য কোনো নিয়মনীতি সেখানে নেই। কাজেই অতিদ্রুত পরিপত্র জারি করে ওষুধের বিপণন নীতিমালা ঠিক করা উচিত বলে মনে করি।
সর্বোপরি সঠিক ওষুধের নিশ্চয়তা এবং চিকিৎসার খরচ কমানোর জন্য জেনেরিক নাম ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। এটি শুধুমাত্র রোগীদের উপকারে আসে না, বরং চিকিৎসকদেরও নির্ভুল ওষুধ নির্ধারণে সাহায্য করে। ব্র্যান্ডের বিভ্রান্তি এড়িয়ে সঠিক ওষুধ নিশ্চিত করার জন্য চিকিৎসক, ফার্মাসিস্ট ও সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি। তাই, এখনই সময় জেনেরিক নাম ব্যবহারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার, যেন স্বাস্থ্যসেবা হয় সবার জন্য সাশ্রয়ী ও কার্যকর।
এমএসএম / এমএসএম
জকসু নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য পদপ্রার্থী অবন্তির ভাবনা
জকসু নিয়ে কেন্দ্রীয় পাঠাগার ও সেমিনার সম্পাদক পদপ্রার্থী ইমনের ভাবনা
ছাত্রদলের উদ্যোগে সুবিধাবঞ্চিত ও ছিন্নমূল শিশুদের সাপ্তাহিক স্কুল উদ্বোধন
শেকৃবিতে নিয়োগে আওয়ামী পুনর্বাসন, এলাকাপ্রীতি ও অর্থ লেনদেনের অভিযোগ
উত্তরায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন
জকসুতে কার্যনির্বাহী সদস্য পদে নির্বাচন করবে সাংবাদিক সম্পদ
দীর্ঘ তিন যুগ পর জাবিতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের মিছিল
জকসু নির্বাচন: ছাত্রশিবিরের ‘অদম্য জবিয়ান ঐক্য’ প্যানেল ঘোষণা
জকসু নির্বাচন: ছাত্রদল সমর্থিত "ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান" প্যানেল ঘোষণা,
এইচএসসির খাতা পুনঃনিরীক্ষণের ফল প্রকাশ
বাকৃবিতে প্রিসিশন ব্রিডিং-ভিত্তিক দুগ্ধ উৎপাদন উন্নয়ন বিষয়ক কর্মশালা
স্কুলে ভর্তিতে ৬৩ শতাংশই কোটা, অভিভাবকদের আপত্তি