বিলুপ্তির পথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের বাহক সাদা বক

আবহমান বাংলার প্রকৃতি থেকে দিন দিন বিলুপ্তির পথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের বাহক সাদা বক। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খাল-বিল, ধানক্ষেত ও জলাশয়ে খাবারের সন্ধানে ডানা মেলে দল বেঁধে উড়ে আসা সাদা বকের সৌন্দর্য এখন আর খুব বেশি চোখে পড়ে না। জীববৈচিত্রের আদরমাখা এই দেশি পাখিটি এখন হারিয়ে যেতে বসেছে।
বাংলার প্রকৃতি জুড়ে সহজে যেসব সুন্দর সুন্দর পাখির সন্ধান মেলে তার মধ্যে অন্যতম বক। পানির মধ্যে শিকারের সন্ধানে এক পায়ে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে থাকে বক। যা দেখতে দৃষ্টিনন্দন। এক সময় বিল ও জলাশয়ের ধারে দল বেঁধে নামতো দেশি সাদা বক। কৃষক লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ ও ফসল লাগানোর সময় খারারের সন্ধানে দলবেঁধে চারদিকে ঘুরে বেড়াতো সাদা বকের দল।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকার খাল-বিল, জলাশয় ও চাষি জমিতে ঘুরে দেখাগেছে, কিছু কিছু জায়গায় খাবারের সন্ধানে বক খাল-বিল ও জলাশয়ের পাশে ঘুরে বেড়ালেও আগের মতো দলবেঁধে ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য চোখে পড়েনি।
উপজেলা সদরের যশমাধব গ্রামের কৃষি জমিতে কাজ করতে থাকা কৃষক কুতুব উদ্দিনের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, সাদা বক আমাদের অনেক উপকার করে। চারা ধানের জমিতে মাজরা পোকা ও ফড়িংসহ ক্ষতিকারক পোকা খেয়ে থাকে। এছাড়া ক্ষেতে পানি দেওয়ার পর যেসব পোকা ভাসতে থাকে তা খেয়ে পরিষ্কার করে। এতে ফসলের উপকার হয়। কিন্তু এখন এই সাদা বক আগের মতো আর দেখা যায় না। শিকারীদের ফাঁদে পড়ে এখন হারিয়ে যাচ্ছে সাদা বক।
বাউসী ইউনিয়নের আথানগর গ্রামের কৃষক রতন সরকার, শেখের পাড়া গামের লিটন মিয়া, মোয়াটি গ্রামের রফিকুল জানান, ছোট বেলা থেকে মাঠেই কাটে তাদের সকাল-সন্ধ্যা। ছোট বেলায় মাঠে অনেক ধরনের পাখি দেখা যেতো। প্রতিদিন ক্ষেতে হালচাষের সময় অনেক বক চোখে পরতো। কিন্তু বর্তমানে আগের মতো সাদা বকের ঝাঁক আর দেখা যায় না। জমির ফসলে কীটনাশক ব্যবহারের কারণে ছোট মাছ ও পোকামাকড় মারা যাচ্চে। ফলে বিষযুক্ত খাদ্য খেয়ে প্রাণ হারাচ্ছে বকসহ অন্যান্য পাখি।
বাউসী অর্দ্ধচন্দ্র উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (স্কুল ও কলেজ) অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাহেরুল ইসলাম বলেন, আমার জীবনের বেশিরভাগ সময়টাই গ্রামে কাটিয়েছি। তাই ফসলের মাঠ ও বন-জঙ্গলের সাথে আমার অত্যন্ত নিবিড় সম্পর্ক। ১৫ থেকে ২০ বছর আগেও বাড়ির পাশের ঝোঁপ ঝাড়ে বসবাস করা বকসহ অন্যান্য পাখি। পাখির কিচিরমিচির ডাকে সন্ধ্যা হতো। আবার পাখির ডাকে ঘুম ভাঙতো।
তিনি আরও বলেন, দ্রুত নগরায়নের ফলে পাখির আবাসস্থল হারিয়ে যাচ্ছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই নানা সংকটের কারণে এই বক পাখি পুরোপুরি বিলুপ্তি হয়ে যেতে পারে। প্রকৃতি থেকে একটি প্রাণী হারিয়ে যাওয়া মানেই প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাওয়া। বক পাখিসহ সকল প্রকার পাখি টিকিয়ে রাখতে হলে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। তাই এসব পাখি রক্ষায় সম্মিলিতভাবে সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত।
বারহাট্টা সরকারি ডিগ্রি কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র প্রভাষক মজিবুল হক বলেন, সাদা বক, যার বৈজ্ঞানিক নাম (Ardea cinerea) এরা আর্ডেইডি গোত্রের অন্তর্গত লম্বা গলা, লম্বা পা বিশিষ্ট মিঠাপানির জলাশয়, উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী মৎস্যভোজী একদল জলচর পাখি। এই পাখিরা খুবই চুপচাপ স্বভাবের। সাধারণত এদের পালক সাদা, হলুদ চঞ্চু, ধূসর-হলদেটে পা। তবে প্রজনন মৌসুমে এদের শরীরের কোনো কোনো অংশের পালক কমলা বর্ণ ধারণ করে। গো-বক ঘাস ফড়িং, ঝিঁঝিঁপোকা, গঙ্গা ফড়িংসহ পতঙ্গ, মাকড়শা, ব্যাঙ, কেঁচোসহ নানা রকম মথ খেয়ে থাকে। এদের প্রায়ই গবাদিপশুর পালের সঙ্গে দেখা যায়। আমাদের দেশে চার থেকে পাঁচ রকমের বকের দেখা পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে ধূসর বক, লালচে বক, সাদা বক, গোবক, কোঁচ বক ও খুন্তে বক উল্লেখযোগ্য।
দৈনিক কালের কন্ঠ পত্রিকার সাংবাদিক ফেরদৌস আহমেদ বলেন, আমাদের বাংলা কবিতা ও সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশাল জায়গা দখল করে আছে বিভিন্ন রকমের বক। কখনও মেঘাচ্ছন্ন আকাশে ঝাঁক বেঁধে উড়ে চলা, কখনও দিগন্ত বিস্তৃত মাঠের সবুজ গালিচার সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে দিত ঝাঁকে ঝাঁকে এই সাদা বক। আবার কখনও দলবদ্ধ হয়ে উড়তে উড়তে একসময় মিশে যেত দূর আকাশ নিলীমায়। আর এই উড়ে যাওয়া মানেই প্রস্থান নয়। এক বিল থেকে ও বিলে অথবা দিন শেষে কোন বন কিংবা বাঁশঝাড়ে নিজ নীড়ে ফিরে যেতো এই বকগুলো।
তিনি আরও বলেন, নিজ ভুবনের আপন পাখি বকের এখন ক্রান্তিকাল। ভাওয়াইয়া সম্রাট আব্বাস উদ্দিনের কণ্ঠে ধরলা নদীর পাড়ের বককে নিয়ে সেই করুণ গান- ‘ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে...’ এ গানের মতোই অবস্থা আমাদের দেশীয় পাখি বকের। খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে নিজেই চলে যায় মানুষের খাবার টেবিলে যাচ্ছে। গ্রামের ঐতিহ্য অপরূপ সৌন্দর্যের প্রতীক এই সাদা বক আগের মতো আর দেখা যায় না। এই পাখিটি পরিবেশ দূষণ ও শিকারীদের ফাঁদে পড়ে এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, বক আমাদের প্রাকৃতিক বন্ধু। বর্তমান বিশ্বে পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনে কীটনাশক ব্যবহার কমাতে হবে। এ জন্য কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে কৃষকদের আইপিএম পদ্ধতি অবলম্বনের জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছি। যাতে বিষাক্ত মাছ ও পোকামাকড় খেয়ে বক না মারা যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এই পাখি মারার কোনো নিয়ম নেই। কেউ যদি মেরে থাকে তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিই।
এমএসএম / এমএসএম

লোহাগড়া বাজারে সরকারি সড়ক গিলে খাচ্ছে তিনতলা ভবন

জয়ের ঘ্রাণ পাচ্ছেন শেখ সাদী ?

যমুনা ব্যাংকের ঢাকা উত্তর ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের ম্যানেজারস’ মিটিং অনুষ্ঠিত

মিরসরাইয়ে মহাসড়ক সংলগ্ন অবৈধ বাউন্ডারি ওয়াল গুঁড়িয়ে দিল উপজেলা প্রশাসন

চিলমারীতে যৌথ অভিযানে, অনলাইন জুয়ার সরঞ্জামসহ দুই যুবক আটক

পারিবারিক দ্বন্দ্বে আহত হয়েও ‘জুলাই যোদ্ধা’ গেজেটে নাম পেলেন বাঘার জাহিদ

মহেশখালীতে শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা, ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড

কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর অনুষ্ঠিত

তাড়াশে আগুনে বসত ঘর পুড়ে ছাই, ১০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি

সুবর্ণচরে বিশিষ্ট সমাজসেবক আকবর হোসেনকে সংবর্ধনা

কোটালীপাড়ায় পুকুরে ডুবে প্রতিবন্ধী যুবকের মৃত্যু

ধামরাইয়ে পোশাক কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
