সিঁদুর রঙা কৃষ্ণচূড়ায় সেজেছে বারহাট্টার প্রকৃতি

ষড়ঋতুর বাংলায় ঋতুবৈচিত্রে বসন্তের প্রকৃতিকে রঙিন করে সৌন্দর্য ছড়ায় শিমুল। তেমনই গ্রীষ্মের প্রকৃতিকে রঙিন করে কৃষ্ণচূড়া। ঋতুরাজ বসন্তের বিদায়ে গ্রীষ্মের রোদ্দুরের খরতাপ গায়ে মেখে প্রকৃতি সেজেছে চোখ ধাঁধানো টুকটুকে সিঁদুর রাঙা লাল কৃষ্ণচূড়ার সাঁজে। শহর ও গ্রামের প্রকৃতিতে চোখ ধাঁধানো কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম রঙে ছোঁয়ায় ডেকে এনেছে বৈশাখ।
'গন্ধে উদাস হওয়ার মতো উড়ে তোমার উত্তরী, কর্ণে তোমার কৃষ্ণচূড়ার মঞ্জরি...।' কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো অনেকেই বাংলা কবিতা, গানের উপমা হিসেবে এনেছেন কৃষ্ণচূড়াকে। কবি মহাদেব সাহার কবিতায় ঋতুচক্রের আবর্তনে প্রকৃতিতে এসেছে আবার কৃষ্ণচূড়ার ঋতু। কবির ভাষায়- ‘এসেছে আবার কৃষ্ণচূড়ার ঋতু, তুমি আছো তাই অভাব বুঝিনি তার, না হলে চৈত্রে কোথায়ইবা পাবো বলো, কৃষ্ণচূড়ার অযাচিত উপহার।‘ গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহের মাঝে সারা দেশের মতোই প্রকৃতি জুড়ে যেন চোখ ধাঁধানো টুকটুকে লাল কৃষ্ণচূড়া ফুলে সেজেছে বারহাট্টার প্রকৃতি। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, বৈশাখের রৌদ্দুরের সবটুকু উত্তাপ গায়ে মেখে নিয়েছে রক্তিম পুষ্পরাজি সবুজ চিরল পাতার মাঝে যেন আগুন জ্বলছে। গাছে গাছে কৃষ্ণচূড়ার মোহনীয় রূপে সেজেছে আবহমান বাংলার প্রান্তর।
সরেজমিনে উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আঁকাবাঁকা পথের ধারে, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রাঙ্গণে, বাড়ির আঙিনায় ও জলাশয়ের পাশে সবুজ চিরল পাতার ফাঁকে ফাঁকে লাল টুকটুকে কৃষ্ণচূড়া ফুলের মনভোলানো সৌন্দর্যে প্রকৃতিকে করেছে প্রাণবন্ত। গাঢ় লাল, কমলা, হালকা হলুদ রঙের ফুলে ফুলে সেজে উঠেছে কৃষ্ণচূড়ার প্রতিটি শাখা প্রশাখা। অসম্ভব সুন্দরের বর্ণছটায় কৃষ্ণচূড়া প্রকৃতিকে দিয়েছে এক নতুন মাত্রা। এ ফুলের মনকাড়া সৌন্দর্যে চলতি পথে পথচারীরা থমকে দাঁড়াচ্ছেন। কৃষ্ণচূড়ার এমন বাহারি রূপে বিমোহিত হয়ে কেউ কেউ মোবাইল ফোনে তুলছেন স্থির চিত্র, কেউ কেউ নিচ্ছেন ভিডিও কেউবা আবার ব্যস্ত টিকটকে।
উপজেলা সদরের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক ও সংগীতশিল্পী কান্তি রঞ্জন রায় চৌধুরী বলেন, এই গ্রীষ্মে প্রকৃতিকে সাজিয়ে তোলা ফুলগুলোর মধ্যে সৌন্দর্যে অন্যতম ফুল কৃষ্ণচূড়া। এ ফুলের সৌন্দর্য প্রতি গ্রীষ্মেই মানুষ মন খুলে উপভোগ করেন। কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্যকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে অনেক গান জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে লিখেছেন, 'কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে, আমি ভুবন ভোলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে।'
তিনি আরও বলেন, কৃষ্ণচূড়া গাছের আরেক নাম যে গুলমোহর তা কম লোকই জানেন কিন্তু কৃষ্ণচূড়াকে চেনেন না এমন লোক খোঁজে পাওয়া যাবে না। এখন কৃষ্ণচূড়ার সময়, ফুল ফোটে আছে গাছে লালে লাল হয়ে। এই লালের সমারোহ কৃষ্ণচূড়ারই মহিমা। আমাদের বাড়ির পাশে একটি বহু পুরনো কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে। প্রতিদিন সকালে আশপাশের শিশুরা গাছের নিচ থেকে ঝরা ফুল কুড়িয়ে নেয়।
বারহাট্টা সরকারি ডিগ্রি কলেজের জীববিজ্ঞান বিষয়ের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র প্রভাষক মজিবুল হকের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, কৃষ্ণচূড়া এক ধরনের বৃক্ষ জাতীয় বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম- 'ডেলোনিক্স রেজিয়া', ইংরেজি নাম- 'ফ্লেম ট্রি'। এটি ফ্যাবেসি পরিবারের অন্তর্গত একটি গাছ। এটি 'গুলমোহর' নামেও পরিচিত। সাধারণত বসন্তে এ ফুল ফোটা শুরু হয়। বসন্তকালে ফুটলেও গ্রীষ্মকালে পূর্ণাঙ্গ রূপে এ ফুলের প্রদর্শন শুরু হয়। এ ফুল চার পাপড়ি বিশিষ্ট। পাপড়িগুলো ৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। কৃষ্ণচূড়ার পাতা সবুজ। প্রতিটি পাতা ৩০ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার লম্বা হয় এবং ২০ থেকে ৪০টি উপপত্র বিশিষ্ট। সাধারণত এ গাছে ফুল আসলেই গাছটি সহজেই নজরে আসে। এর ফুল মন কেড়ে নেওয়ার মতো সুন্দর হয়। এ ফুলের ঝলমলে রঙের খেলায় যেকেউ সহজে আকৃষ্ট হয়।
বারহাট্টা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক কালেরকন্ঠ পত্রিকার সাংবাদিক ফেরদৌস আহমেদ বলেন, প্রকৃতি মানেই স্বস্তির জায়গা, আর তা যদি হয় ফুলে ফুলে সজ্জিত তাহলে তো কথাই নেই। ফুল প্রকৃতির অলংকার। ঋতুচক্রে প্রতি দুই মাস পর পর নানা রঙের ফুল প্রকৃতিকে রাঙিয়ে তোলে। বসন্ত শেষে ও গ্রীষ্মের শুরুতে ফোটা ফুল কৃষ্ণচূড়া বাঙালী সংস্কৃতি এবং কাব্যচর্চায় এতটাই জনপ্রিয় যে, বর্ষবরণের বৈশাখকেই রাঙিয়ে দেয়। প্রকৃতি কৃষ্ণচূড়া ফুটিয়ে দেশজুড়ে নববর্ষের লাল আভায় ভরিয়ে দিয়েছে। মনে হবে গোটা দেশই কৃষ্ণচূড়ার শহর ও গ্রাম।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কৃষ্ণচূড়ার ফুল ফোটার সময় বিভিন্ন। বৃক্ষ নিধনের শিকার হয়ে দিন দিন বারহাট্টা থেকে কমে যাচ্ছে প্রকৃতিকে রঙিন করা এই গাছ। একসময় এ গাছ হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কাও রয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি মানুষ ও প্রকৃতির স্বার্থেই বেশি করে কৃষ্ণচূড়া গাছ লাগানোর আহ্বান জানাচ্ছি প্রকৃতিপ্রেমীদের।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা জানান, কৃষ্ণচূড়া হচ্ছে বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ, সেই সাথে পরিবেশবান্ধব, প্রকৃতির শোভাবর্ধক ও ঔষধি গুণসম্মত। অন্যদিকে গ্রীষ্মের খরতাপে শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয় কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো। রক্তিম লালে প্রকৃতিকেও যেন অনেক অপরূপ দেখায়। কিন্তু অপরিকল্পিত আধুনিকায়ন, অতি নগরায়ন এবং মানুষের অসেচতনতা ও বৃক্ষ নিধনে দিন দিন সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে যে কোন আবহাওয়ায় জন্মানো এই ঐতিহ্যবাহী মনোমুগ্ধকর গাছটি। তবে পরিকল্পিতভাবে রাস্তা, রাস্তার মোড়, প্রতিষ্ঠান, বিল-হাওড়-বরেন্দ্র এলাকায় এই বৃক্ষ রোপণে উদ্যোগী হলে বিভিন্ন পেশার মানুষ যেমন উপকৃত হবে, তেমনি অন্যদিকে বৈশ্বিক উষ্ণতা মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে কৃষ্ণচূড়া।
এমএসএম / এমএসএম

লোহাগড়া বাজারে সরকারি সড়ক গিলে খাচ্ছে তিনতলা ভবন

জয়ের ঘ্রাণ পাচ্ছেন শেখ সাদী ?

যমুনা ব্যাংকের ঢাকা উত্তর ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের ম্যানেজারস’ মিটিং অনুষ্ঠিত

মিরসরাইয়ে মহাসড়ক সংলগ্ন অবৈধ বাউন্ডারি ওয়াল গুঁড়িয়ে দিল উপজেলা প্রশাসন

চিলমারীতে যৌথ অভিযানে, অনলাইন জুয়ার সরঞ্জামসহ দুই যুবক আটক

পারিবারিক দ্বন্দ্বে আহত হয়েও ‘জুলাই যোদ্ধা’ গেজেটে নাম পেলেন বাঘার জাহিদ

মহেশখালীতে শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা, ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড

কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর অনুষ্ঠিত

তাড়াশে আগুনে বসত ঘর পুড়ে ছাই, ১০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি

সুবর্ণচরে বিশিষ্ট সমাজসেবক আকবর হোসেনকে সংবর্ধনা

কোটালীপাড়ায় পুকুরে ডুবে প্রতিবন্ধী যুবকের মৃত্যু

ধামরাইয়ে পোশাক কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
