প্রকৃতি থেকে বিলীনের পথে প্রাচীন জীব কচ্ছপ

স্বভাবে লাজুক, কাছে গেলেই খোলের ভিতর গুটিয়ে যায়। ধীর পায়ে হেঁটে যাওয়া চতুষ্পদী প্রাণী কচ্ছপ। একসময় সর্বত্রই পানিতে ও স্থলে এদের অবাধে বিচরণ করতে দেখা গেলেও মানবসৃষ্ট নানা কারণে বর্তমানে প্রকৃতি থেকে বিলীনের পথে এই বিপন্নপ্রায় সরীসৃপ শ্রেণির প্রাণী।
কয়েক দশক আগেও গ্রামবাংলায় দেশি কচ্ছপের দেখা পাওয়া অতি স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। তখন নদী-নালা, খাল-বিল, ঝোপ-ঝাড়, পুকুর–ডোবাসহ অনেক জলাশয়েই কচ্ছপের দেখা মিলতো। কিন্তু বাসস্থানের অভাব, প্রাকৃতিক বনভূমি ধ্বংস, কৃষিজমিতে কীটনাশক প্রয়োগ, চাষের জন্য বনভূমি পোড়ানো, জলাশয়ে নিষিদ্ধ জালের ব্যবহারসহ নানা কারণে হারিয়ে যাওয়ার শেষ প্রান্তে রয়েছে এই প্রাচীন জীব।
সরেজমিনে উপজেলা সদরসহ সাহতা, বাউসী, রায়পুর, চিরাম, সিংধা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে এবং প্রবীণ ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিগত প্রায় অর্ধশত বছর আগে উপজেলার অধিকাংশ ডোবা-নালা ও পুকুর প্রায় সময়ই পতিত থাকতো। ফলে সেখানে পানি, কচুরিপানা ও বিভিন্ন আগাছায় ভরে যেতো। আর সেই সুযোগে নির্ভয়ে পোকা-মাকড়ের পাশাপাশি বসবাস করতো কচ্ছপের মতো প্রাণী। তখন এসব খাল-বিল, পুকুর, ডোবা-নালা সেঁচ দিয়ে শুকালে সবার আগে চোখে পড়তো ছোট-বড় কাউট্টা/কচ্ছপ। কিন্তু বর্তমানে পানি দূষণ, খাদ্যাভাব ও মানুষের আক্রমণে দিন দিন প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে পরিবেশের বন্ধু কাউট্টা/কচ্ছপ।
বারহাট্টা সরকারি কলেজের জীববিজ্ঞান বিষয়ের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র প্রভাষক মজিবুল হক জানান, কচ্ছপ হলো সরীসৃপ (Reptiles) শ্রেণির একটি দল, যাদের বৈজ্ঞানিক নাম "Testidines"। এই বর্গের মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতি অন্তর্ভুক্ত, যেমন- সমুদ্র কচ্ছপ, মিঠা পানির কচ্ছপ, এবং স্থল কচ্ছপ। কচ্ছপ সাপ, গুইসাপ ও কুমির প্রজাতির সরীসৃপ প্রাণী। দেশের ২৭ প্রজাতির কাছিমের মধ্যে ৪টি Cheloniidae ও Dermochelyidae গোত্রে এক প্রজাতির কাছিম এবং Bataguridae, Testudinidae ও Trionychidae গোত্রে ২২ প্রজাতি রয়েছে। মিঠাপানির কাছিমসহ Freshwater Tortoise (Cyclemis dentata) দেশের সর্বত্র ব্যাপক ছড়িয়ে আছে। বাংলাদেশে মিঠাপানিতে বেশ কয়েক ধরনের কচ্ছপ দেখা যায়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো: লাল-মুকুটি কড়ি কাইট্টা (Red-roofed turtle), সন্ধি কচ্ছপ (Indian Flapshell Turtle), এবং বোস্তামী কচ্ছপ। এছাড়াও, পাহাড়ি শিলা কচ্ছপ ও হলুদ কেটো কচ্ছপও মিঠাপানির কচ্ছপ হিসেবে পরিচিত।
তিনি আরও বলেন, জল ও ডাঙা দুই জায়গায়ই এরা বাস করতে পারে। স্ত্রী কচ্ছপ মাটিতে গর্ত করে রাতের অন্ধকারে ১ থেকে ৩০টি পর্যন্ত ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার পর মা কচ্ছপ ডিমগুলো মাটি, বালু বা অন্য যেকোনো জৈব পদার্থ দিয়ে ঢেকে দেয়। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে প্রজাতিভেদে ৬০ থেকে ১২০ দিন সময় লাগে। বেশিরভাগ প্রজাতির কচ্ছপের গড় আয়ু ১৫০ বছর হলেও এদের সর্বোচ্চ আয়ু ২৫০-৩০০ বছর।
এ বিষয়ে বারহাট্টা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক কালেরকন্ঠ পত্রিকার সাংবাদিক ফেরদৌস আহমেদ জানান, "আমরা হাওরাঞ্চলের মানুষ। আমাদের অঞ্চলে কচ্ছপকে কাউট্টা নামে ডাকা হয়। একসময়ে আমাদের এলাকায় পৌষ-মাঘের নিত্যকার দৃশ্য ছিলো নৌকার গলুইয়ে বসে রোদ পোহানো কচ্ছপের ছানা। শীতে নৌকা ব্যবহার হতো না, তাই ডিঙ্গি বা নৌকা ডুবিয়ে রেখে দেওয়া হতো পুকুরে বা ডোবায়। সেই গলুই থেকে টুপ করে ডুব দিতো মানুষের সামান্য সাড়া পেলেই। অথচ এখন আমাদের এলাকাসহ সারাদেশে বিলুপ্তপ্রায় মিঠা পানির নিরীহ প্রাণী কচ্ছপ। বর্তমানে এই কচ্ছপের দেখা পেতে আমাদের এখন যেতে হবে দেশের বাইরে।"
তিনি আরও বলেন, "আমাদের এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় আশির দশকেও গ্রামগঞ্জের হাটগুলোর এক পাশে বিক্রি হতো শুধুই কচ্ছপ। চিৎ করে রাখা ছড়ানো সব কচ্ছপ। হিন্দু সম্প্রদায়ের মাংসের ভালো একটা যোগান আসতো কচ্ছপ থেকে। নব্বই দশকের পর থেকে বিক্রয়ের জন্য আর বাজারে উঠতে দেখা যায় না কচ্ছপ। ফলে ক্রমেই হাওর-বাওর, পুকুর-ডোবা, খাল-বিল থেকেও উধাও হয়ে যাচ্ছে কচ্ছপ। এখন কচ্ছপের দেখা মেলে কালেভাদ্রে।"
উপজেলা সদরের কাশবন এলাকার কচ্ছপ শিকারী অরুণ সিংহ, তরুণী সিংহ, রামভদ্রপুর এলাকার নিরঞ্জন ক্ষত্রিয়, রমেশ ক্ষত্রিয় জানান, বছরের কার্তিক মাস থেকে বৈশাখ পর্যন্ত (অক্টোবর থেকে এপ্রিল) কচ্ছপ শিকারের মৌসুম। আগে এসময় তারা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে নদী-নালা, খাল-বিল, ও ডোবা থেকে কাউট্টা/কচ্ছপ শিকার করে বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাতেন। তবে, এখন আর আগের মতো কচ্ছপ শিকার ও বিক্রি হয় না।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাদিকুল ইসলাম বলেন, দেশে বন্যপ্রাণী আইনে যে কোনো বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী হত্যা দণ্ডনীয় অপরাধ। ১৯৭৪ ও ২০১০ সালের আইনে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এসব বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী সংরক্ষণে যে আইন রয়েছে তাতে শাস্তির মাত্রা তুলনামূলকভাবে কম। যতটুকু শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে সেগুলো যদি কার্যকর করা হতো তাহলেও কচ্ছপ নিধন কমতো।
এমএসএম / এমএসএম

নাচোলে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় জোড়া মৃত্যু লাশ এসেছে এলাকায় শোকের ছায়া

ভূরুঙ্গামারীতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর জনসভা অনুষ্ঠিত

গলাচিপায় জেলা প্রশাসকের মতবিনিময় সভা

শ্যামনগরে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজনে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস-২০২৫ উদযাপন

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নওগাঁয় বৃক্ষরোপণ

দিনাজপুর বোর্ডে ৪৩ কলেজে কেউই পাস করেনি

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নওগাঁয় বৃক্ষরোপণ

কুড়িগ্রামে ৬১৪ বস্তা নকল সার ধ্বংস

শাহজাদপুর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস দলিল লেখক সমিতি'র নেতৃবৃন্দের সাথে প্রফেসর ড. এমএ মুহিতের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

হাতিয়ায় বিএনপিররাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা কর্মসূচি পথসভা ও লিফলেট বিতরণ

কুড়িগ্রামে ৬১৪ বস্তা নকল সার ধ্বংস

বড়লেখা উপজেলায় এইচএসসিতে শীর্ষে এম. মুন্তাজিম আলী মহাবিদ্যালয়
