চা–শ্রমিকদের তলব বাজার

দৈনিক ১৭৮ টাকা মজুরিতে কাজ করা চা-শ্রমিকেরা তাদের এই পাওনা টাকা সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট দিনে হাতে পান, যে দিনটিকে বলা হয় 'তলববার'। আর এই মজুরি হাতে পেয়েই পরিবারের জন্য কেনাকাটা করতে তারা ছোটেন 'তলব বাজার'-এ। এই অস্থায়ী বাজারটি উপজেলার বিভিন্ন চা বাগানগুলোতে বসে, যা চা-শ্রমিকদের জীবনে এক ভিন্ন আমেজ নিয়ে আসে।
চা শিল্পের শিল্পীরা, অর্থাৎ চা-শ্রমিকেরা, তাদের জীবন বাগানের গণ্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেন। সবুজ কুঁড়িবেষ্টিত চা বাগানের সীমানাতেই আটকে আছে তাদের জীবনযাত্রা। কিন্তু সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট দিনে তাদের অপুষ্ট শরীর, মলিন পরিধান আর ক্লান্তির ছাপ উধাও হয়ে যায়, যা ঘটে তলববারে তলব বাজারে।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের কয়েকটি চা বাগানে গতকাল বুধবার এমনই এক তলববারে বাজারের দৃশ্য দেখা যায়। কালিঘাট, ভাড়াউড়া, ভুড়ভুড়িয়া, হরিনছড়া, জাগছড়া, টিপরাছড়া চা বাগানে অস্থায়ী বাজার ঘিরে চা-শ্রমিকদের মিলনমেলা বসে। এছাড়াও উপজেলার অন্যান্য চা বাগানগুলোতেও ছোট পরিসরে এই তলব বাজার বসে।
তলব বাজারের দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তারা সবাই ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা। এই দিনে তলব বাজারে বিক্রিবাট্টা ভালো হয় বলে তারা বুধবার পসরা নিয়ে আসেন। পান-সুপারি থেকে শুরু করে শাকসবজি, মাছ, খই-মুড়কি, মিষ্টান্ন, চুড়ি, ফিতা, আলতা থেকে গৃহস্থালির বিচিত্র সব জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। এছাড়াও অল্প দামে সুন্দর সুন্দর পোশাক নিয়ে আসেন তারা। আয় যত কমই হোক, শ্রমিকেরা সপ্তাহের এই একটি দিন মজুরির টাকা পেয়ে পরিবারের সদস্যদের জন্য সবটুকু স্নেহ উজাড় করে দিতে চান এটা-সেটা কিনে।
ভাড়াউড়া চা-বাগানের তলব বাজার বসে বাগানের সার্বজনীন দুর্গামন্দিরের মাঠে। পান-সুপারি থেকে শুরু করে শাকসবজি অথবা কাচের বাক্সে নিকেল করা স্বর্ণাভ গয়না পাওয়া যায় এ বাজারে। ২০-৩০ টাকার এক জোড়া কানের দুল নিজের কন্যাসন্তানটির জন্য কিনে নেন নারী চা-শ্রমিকেরা। এ বাজারে পাহাড়ি নদীর মাছ থেকে শুরু করে হাতে বানানো তেলেভাজা পিঠা পর্যন্ত পাওয়া যায়। নারী চা-শ্রমিকেরা সপ্তাহের এই একটি দিন মজুরির টাকা পেয়ে পরিবারের সদস্যদের জন্য সবটুকু স্নেহ উজাড় করে দিতে চান এটা-সেটা কিনে। বেশি ভিড় থাকে পোশাকের দোকানে। অল্প দামে সুন্দর সুন্দর পোশাক নিয়ে আসেন বিক্রেতারা।
স্থানীয়রা জানান, তলববারে বাগান থেকে পাতা তোলা শেষ করে, ওজন দিয়ে সাধারণত বাড়ি চলে যান চা-শ্রমিকেরা। পরিচ্ছন্ন হয়ে পোশাক বদলে আসেন মজুরি নিতে অফিসে। সেখানে এক-এক জনের নাম ধরে ডাকেন চা বাগানে কর্মরত বাবু। প্রতি সপ্তাহের বুধবারে প্রায় এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা মজুরি পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যান তারা।
কালিঘাট চা বাগানের তলব বাজার বসে আবড়া মাঠে। লিয়াকত মিয়া নামে একজন ব্যবসায়ী বলেন, "আমি ২৮-৩০ বছর ধরে এই বাজারে ব্যবসা করে আসছি। আমরা সপ্তাহে বুধবারে এখানে আসি। আমরা সাধারণত বেশিরভাগ পণ্য বাকিতেই বিক্রি করি। তবে তলববারে আমাদের কেনাবেচা ভালো হয়। সেদিন বাকি পরিশোধ করে নগদ টাকায় কেনাকাটা করেন চা-শ্রমিকেরা।"
হরিনছড়া চা বাগানের চা শ্রমিক নিপেন সাঁওতাল ও জগদীশ ফুলমালি বলেন, তাদের বহু প্রজন্ম ধরে জেনে এসেছে চা বাগানে তলব বাজার বসে। এটা ব্রিটিশ শাসনামল থেকে শুরু হয়েছে, অর্থাৎ চা বাগান ঘিরে চা শ্রমিকদের জন্য এই বাজার বসার প্রচলনের বয়স প্রায় দেড়শ বছরেরও বেশি।
চা বাগানের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সপ্তাহের একটি দিন শ্রমিকদের নাম ধরে ডেকে ডেকে মজুরি দেওয়া হয় বলেই ‘তলব’ শব্দটি ব্যবহার হয়। সব বাগানেই বসে অস্থায়ী এই তলব বাজার। প্রচলনটি ব্রিটিশ শাসনামলে প্রথম চা-বাগান তৈরির সময় থেকেই এই প্রথা চলে আসছে। অধিকাংশ বাগানের তলববার বুধবার। তবে রোববার চা-শ্রমিকদের ছুটির দিন বাদে অন্যদিনও হতে পারে দিনটি।
ষাটোর্ধ্ব চা-শ্রমিক আনোয়ার হোসেন বলেন, "বহু প্রজন্ম ধরে জেনে এসেছি চা বাগানে সপ্তাহের একটি দিনে তলব বাজার বসে। এটা ব্রিটিশ শাসনামল থেকে শুরু হচ্ছে। চা-বাগান ঘিরে শ্রমিকদের জন্য এই বাজার বসার প্রচলনের বয়স শত বছরের।"
চা শ্রমিক ফুলকুমারি বুনার্জি বলেন, "আমরা অনেক কষ্টে সংসার চালাই। যা টাকা পাই সেটা দিয়ে কোনোমতে দিন পার করি। সেটাও যখন পাই না, তখন চলবে কীভাবে? তখনই বাকিতে শুধুমাত্র নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনি। তলববারে যখন টাকা পাই তখন সংসারের অন্যান্য খরচপাতি করি।"
২০-৩০ টাকার এক জোড়া কানের দুল ও ৪০-৫০ টাকায় এক পিস নাকফুল নিজের কন্যা সন্তানের জন্য কিনে নেন নারী চা-শ্রমিক ফাতেমা বেগম। তিনি বলেন, "আমার ভাইয়ের মেয়ের কানের দুল ও নাকফুল আছে, তা দেখে আমার মেয়েও বায়না ধরেছে। আজ মজুরি পেয়ে প্রথমেই তার জিনিস কিনলাম।"
চা-শিল্পের শিল্পীরা সারাদিন বাগানে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ঘুরে রোদে পুড়ে মলিন হয়ে যায় মুখ। কিন্তু, তলববারে সেই মুখেও তখন দেখা মিলল একটু আনন্দের রঙিন ঝিলিক। চুড়ির রিনিঝিনি শব্দ আর আলতার চেয়ে কোনো অংশে কম নয় সেই রঙিন মুহূর্তের সময়টুকু।
এমএসএম / এমএসএম

স্বাধীনতার পরে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বিএনপির জন্ম: ডা. মাজহার

বকশীগঞ্জে কৃষকের ৬১ শতক জমি ধান নষ্ট করে দিলো প্রভাবশালীরা

রায়গঞ্জে লাখো মানুষের ভরসা দড়িটানা নৌকা : জনপ্রতিনিধিদের কেউ কথা রাখেনি

দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রে বাংলাদেশের রাজনৈতিক আকাশে মেঘ ধরেছে: মো.শাহজাহান

ধামইরহাটে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

বিজয়নগরে আসামী গ্রেফতার করায় অতর্কিত হামলায় এএসআই শেখ সাদী আহত

টেকনাফে মাদক সাম্রাজ্য: কাদের নিয়ন্ত্রণে ভয়ংকর চোরাচালান চক্র

হিট প্রজেক্ট প্রাপ্ত যবিপ্রবির জীববিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের দুই শিক্ষককে সংবর্ধনা প্রদান

রাণীনগরের সেই শিক্ষক আনোয়ারকে সাময়িক বরখাস্ত

মাদারীপুরে ১৮০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ১৬ জন

টাঙ্গাইলে ৩৩১২ প্রার্থী থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে ১২০ টাকায় ৫০ জনের পুলিশে চাকরি

উত্তরবঙ্গ সেচ্ছাসেবী সংগঠনের অফিস উদ্বোধন
