একটি পরিপাটি সাজানো গোছানো মনের মতো স্কুল
কুতুবদিয়া উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫৯টি। বেশিরভাগ প্রাইমারি স্কুল বন্ধ থাকাকালীন স্থানীয়দের বিভিন্ন কাজের জন্য ব্যবহার হয়ে থাকত। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে পায়খানা-প্রস্রাব থেকে শুরু করে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ করে পরিবেশ নষ্ট করেছে কিছু দুষ্কৃতকারী। দীর্ঘ ১৮ মাস স্কুলের পরিবেশ সুন্দর রাখতে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে সম্মানিত শিক্ষকদের। তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন স্কুলকে শিশুদের মনের মতো করে গড়ে তোলার।
তবে শিক্ষকদের পরিচর্যায় কুতুবদিয়া উপজেলায় মনের মতো স্কুল হিসেবে সকলের নজর কেড়েছে অজপাড়াগাঁয়ে অবস্থিত উত্তর লেমশীখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা এত সুন্দর যে, প্রতিদিন উপজেলা সদর থেকে কেউ না কেউ ঘুরে আসেন বিদ্যালয়টি।
বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩৮৪ জন। শিক্ষক সংখ্যা ১০ জন। দুটি ভবনে ১১টি কক্ষ রয়েছে। তারমধ্য ছয়টি শ্রেণিকক্ষ। একটি কক্ষে বঙ্গবন্ধুর জীবনী ও মুক্তিযোদ্ধের ইতিহাস নিয়ে লেখা বিখ্যাত লেখকদের ১০০টি বই সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার। একটি ওয়াশব্লক ও ৮টি পরিষ্কার স্বাস্থ্যসম্মত ওয়াশরুম রয়েছে।
এখানে রয়েছে আড়াই হাজার ওয়াটসম্পন্ন সৌর প্যানেলের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের ব্যবস্থা। ১৯টি বৈদ্যুতিক পাখায় শীতল বাতাসের অনুভূতি পায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য স্লিপ অনুদানের ৭০ হাজার টাকা ও সেভ দ্য চিল্ড্রেন পুরাতন মেরামত অনুদানের টাকার সমন্বয়ে বিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজ করা হয়েছে।
বিদ্যালয়টি সরেজমিন পরিদর্শন করে শিক্ষকদের আন্তরিকতা, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং নিজেদের উদ্ভাবনী শক্তির প্রয়োগ দেখে অভিভূত হয়েছেন পরিদর্শনকারীরা। ঝকঝকে পরিষ্কার বিদ্যালয় আঙ্গিনা। কোথাও কোনো ময়লা-আবর্জনার দেখা নেই। পাশাপাশি দুটি ভবন। একটিতে অফিস কক্ষ, বঙ্গবন্ধু কর্নার, প্রাক-প্রাথমিক ও তৃতীয় শ্রেণির ক্লাস রুম। শিক্ষকদের জন্য ওয়াশ রুমের ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে। রয়েছে একটি পরিপাটি খাবার কক্ষও।
সিঁড়িতে তরে তরে সাজানো বাহারি ফুলের টব। অফিস কক্ষের প্রবেশমুখে বসানো হয়েছে দুটি দৃষ্টিনন্দন ফুলের টব। দরজায় টাঙানো দামি পর্দা। অফিস কক্ষে প্রবেশ করতেই নজরে পড়বে শিক্ষকদের কনফারেন্স হল। এ যেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সভা কক্ষ। সৌর প্যানেলে বিদ্যুতায়িত কক্ষে সাঁ সাঁ করে ঘুরছে বৈদ্যুতিক পাখা। গরমের শরীর মুহূর্তেই যেন পেল অবসাদ। আহা! কি আরাম। এখানে রয়েছে কোরিয়ান সরকারের একটি উপহার। বিশাল পিয়ানো। তাতে রয়েছে বেশ কয়েকটি দেশের গান। এই কর্নারের নাম দেয়া হয়েছে সংগীত কর্নার। পাশে আইসিটি কর্নার। পিয়ানোটি চালিয়ে দেখান একজন শিক্ষক। এই কক্ষে রয়েছে শিক্ষকদের ছবিসংবলিত একটি বোর্ড। তাতে রয়েছে কর্মরত শিক্ষকদের তথ্য। বিদ্যালয়ের প্রতিটি দেয়ালে মনোমুগ্ধকর চিত্রকর্ম, যা শিশুদের সহজেই নজর কাড়ে। শুধু শ্রেণি কক্ষ নয়, বারান্দাসহ নিচতলায় দেয়ালে দেয়ালে আঁকা হয়েছে চিত্রকর্ম। আরো আছে মনিষীদের বাণী। প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে রয়েছে শিশুদের খেলনাপাতিসহ নানা কিছু। এমন স্কুল পেলে শিশু কি আর বিদ্যালয় বিমুখ হবে? শিক্ষকরা জানিয়েছেন, কেচম্যান্ট এলাকা ছাড়াও অন্যান্য এলাকা থেকেও শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয় এ বিদ্যালয়ে। সম্মানিত শিক্ষকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এগিয়ে যাচ্ছে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, শিক্ষকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অনুদান ও স্লিপের অর্থের স্বচ্ছ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে বিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও সার্বিক উন্নয়নসহ শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধি সম্ভব।
বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করলে মনে পড়ে যায় মীনা দিবসের একটি প্রতিপাদ্য। ‘মনের মতো স্কুল পেলে, শিখব মোরা হেসে খেলে।’ প্রতিপাদ্যটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পরিচিত (মীনা কার্টুন) মীনা দিবস উপলক্ষে ২০১৯ সালে মীনা দিবস উদযাপনের। মীনা শিশুদের একটি জনপ্রিয় কার্টুন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ইউনিসেফের সহায়তায় কার্টুনটি ধারাবাহিকভাবে প্রচারিত হয়ে আসছে। কার্টুনটিতে মূলত বিভিন্ন সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি এবং শিশুদের জন্য শিক্ষামূলক বিভিন্ন বিষয় ফুটিয়ে তোলা হয়। ১৯৯৮ সাল থেকে আমাদের দেশে মীনা দিবস উদযাপন হয়ে আসছে। যদিও ১৯৯১ সালে ৯ বছরের একটি মেয়ের ভূমিকায় মীনার আবির্ভাব।
এমএসএম / জামান