ঢাকা রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৫

সহকর্মীর সঙ্গে গল্পে যে বিষয়গুলো এড়িয়ে চলবেন


ডেস্ক রিপোর্ট  photo ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১৩-৮-২০২৫ দুপুর ১০:৩৮

কোনো পরিবেশে যখন আপনি দিনের একটা লম্বা সময় কাটাবেন, খুব স্বাভাবিকভাবেই সেখানে আপনার কিছু বন্ধু তৈরি হবে। তবে অফিসে তৈরি হওয়া বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে অনেকসময় একটু ভেবেচিন্তে কথা বলতে হয়।
কর্মক্ষেত্রে কাজের পাশাপাশি সবাই সহকর্মীদের সঙ্গে গল্প করে থাকেন। কিন্তু যেকোনো বিষয়ে অতিরিক্ত বা অপ্রয়োজনীয় তথ্য শেয়ার করলে সেটি পেশাগত পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশে সামাজিক সংস্কৃতি, ধর্মীয় বিশ্বাস, আর্থ-সামাজিক অবস্থান মিলিয়ে বিষয়গুলো অনেক সময় অতিরিক্ত স্পর্শকাতর হয়ে ওঠে। তাই জেনে নিন কোন বিষগুলো এড়িয়ে চলা ভালো-
১. আর্থিক সমস্যা ও লেনদেন
বাংলাদেশে আর্থিক সমস্যা নিয়ে কথা বলা সাধারণ হলেও অফিসে তা নিয়ে অতিরিক্ত আলোচনা কাজের পরিবেশের জন্য ভালো নাও হতে পারে। ঋণ, বকেয়া অর্থ, আর্থিক ঝুঁকি বা ব্যক্তিগত লেনদেনের জটিলতা শেয়ার করলে সহকর্মীদের মাঝে দূরত্ব তৈরি করতে পারে। এটি আপনার ব্যক্তিত্বের জন্যও নেতিবাচক হতে পারে।
২. পারিবারিক সমস্যা
বিবাহ, পারিবারিক কলহ, সন্তানদের জীবন বা প্রেম-বিরহ নিয়ে অতি ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করলে এটি গসিপের সূত্রপাত হতে পারে। বাংলাদেশে পরিবার কেন্দ্রিক সমাজ হওয়ায় এসব বিষয় গোপন রাখা ভালো।
৩. স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অতিরিক্ত তথ্য
শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতা সম্পর্কে কিছুটা শেয়ার করা প্রয়োজন হতে পারে, তবে খুব বেশি গোপনীয় বা সংবেদনশীল তথ্য জানানো পেশাগত সম্পর্ক ও সহানুভূতিকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। একই সঙ্গে এটি আপনার গোপনীয়তা লঙ্ঘনের কারণও হতে পারে।
৪. নেতিবাচক ও গোপন তথ্য
বাংলাদেশের অফিস সংস্কৃতিতে বস বা অন্য সহকর্মীদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক কথা বলা বা গোপন তথ্য প্রকাশ করা পেশাগত পরিবেশকে বিষাক্ত করে। এতে মনমালিন্য, দলীয় বিভাজন ও কাজের মান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
সহকর্মীর সঙ্গে গল্পে যে বিষয়গুলো এড়িয়ে চলবেন
৫. ধর্মীয় ও রাজনৈতিক মত
বাংলাদেশে ধর্ম ও রাজনীতির গুরুত্ব বিবেচনায় ধর্মীয় মতবিরোধ বা রাজনৈতিক আলোচনা কাজের পরিবেশে বিরোধ সৃষ্টি করতে পারে। এই বিষয়গুলো এড়িয়ে চলা ভালো।
৬. ব্যক্তিগত অভ্যাস ও সীমাবদ্ধতা
ধূমপান, মদ্যপান বা অন্যান্য ব্যক্তিগত অভ্যাস নিয়ে অতিরিক্ত আলোচনা সহকর্মীদের বিরক্ত করতে পারে এবং পেশাগত সম্মান হ্রাস পেতে পারে।
কেন এসব বিষয় এড়িয়ে চলা জরুরি?
কর্মসংস্কৃতিতে পেশাদারিত্ব বজায় রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করলে কর্মক্ষেত্রে বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একই সঙ্গে কাজের দক্ষতা ও মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে। মানসিক চাপ ও কাজের চাপ বৃদ্ধি পায়।
জার্নাল অফ অকুপেশনাল হেলথ সাইকোলজি (২০১৭) এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তিগত তথ্য অতিরিক্ত শেয়ার করলে মানসিক চাপ ও উদ্বেগের মাত্রা বেড়ে যায়, যা পেশাগত সম্পর্কের অবনতি ঘটায়।
হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ (২০১৯)-তে বলা হয়েছে, গোপনীয়তা রক্ষা করলে কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয় ও তারা আরও মনোযোগী হয়।
সহকর্মীর সঙ্গে গল্পে যে বিষয়গুলো এড়িয়ে চলবেন
অনেক অফিসে দেখা যায়, অতিরিক্ত ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করার কারণে সহকর্মীদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি, গসিপ, পক্ষপাত ও দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। এতে অনেক সময় কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপ বেড়ে যায় এবং কাজের পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে পড়ে। তাই অভিজ্ঞরা ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।
কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করার সময় স্পষ্ট সীমারেখা থাকা প্রয়োজন। নিজের সীমা বুঝে, পরিমিত ও শ্রদ্ধাশীল হওয়া প্রত্যেক কর্মীর দায়িত্ব।

 

Aminur / Aminur