পাথারিয়া চা বাগানে লুকানো ‘বেকি লেক’: বড়লেখায় পর্যটনে অপার সম্ভাবনা

বাংলার সৌন্দর্য কোথাও কোথাও এতই মোহময়, যেন মিহি বাতাসের আমেজে কানের কাছে আলতো করে দোলা দেয় নজরুল গীতির সুর—‘এ কি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী-জননী’। আহা! আফসোস! জীবন ফুরিয়ে যায়, তবুও বাংলাকে দেখা হয় না। কেননা প্রকৃতি আমাদের যা উপহার দিয়েছে, তার অনেকাংশই এখনও আমাদের চোখের আড়ালে রয়ে গেছে! তেমনই একটি কমনীয় স্থান মৌলভীবাজারের ‘বেকি লেক’; যেখানে লুকিয়ে আছে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য।
মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের পাথারিয়া চা বাগানে সবুজে ঘেরা এই লেক দেশের অধিকাংশ মানুষের কাছে এখনো অজানা। পাথারিয়া চা বাগান বড়লেখা উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহী চা বাগান। আর এই চা বাগানের বুকে অবস্থিত বেকি লেকটি যেন প্রকৃতির এক ছন্নছাড়া রত্ন। চারদিকে বিস্তীর্ণ চা গাছের সারি, পাখির কুজন, বানরের খেলা আর লেকের উপর ভেসে থাকা শাপলা ফুলে সজ্জিত এক অপার্থিব দৃশ্যপট, প্রতি মুহূর্তে থাকে পর্যটকদের অপেক্ষায়।
চারদিকে বিস্তীর্ণ চা গাছের সারি, পাখির কুজন, বানরের খেলা আর লেকের উপর ভেসে থাকা শাপলা ফুলের দৃশ্য এখানে এক অন্যরকম সৌন্দর্য সৃষ্টি করে। বাগানের প্রতিটি বাঁক যেন নিয়ে যায় এক নতুন রূপের দিকে। এখানে এসে যেকোনো মানুষ ভুলে যাবে শহরের কোলাহল, ব্যস্ততা আর যান্ত্রিকতা। প্রায় ২৭ একর জমিতে বিস্তৃত এই লেকের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এটিকে বিশেষ করে তুলেছে। পানিতে ফুটে থাকা সাদা ও লাল শাপলা ফুল এই লেকের প্রধান আকর্ষণ।
শীত মৌসুমে বিভিন্ন ধরনের অতিথি পাখির আগমন দেখা যায়। পাশাপাশি বক, হাসপাখি, সারসসহ কিছু বিরল প্রজাতির পাখির আনাগোনা থাকে বছরজুড়ে, যা পাখিপ্রেমীদের জন্য বাড়তি আনন্দের বিষয়।এছাড়াও আশপাশে রয়েছে চা শ্রমিকদের জীবনধারার চিত্র, যা পর্যটকদের কাছে এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা দেবে।
কিন্তু এমন অপার সৌন্দর্যের এই লীলাভূমিতে পর্যটক না আসার কারণ জানতে চাইলে পাথারিয়া চা বাগানের বাসিন্দা ও চা শ্রমিকরা বলেন, ‘এই লেকটা অনেক পুরনো। আগে শুধু আমরাই যেতাম, এখন বাইরে থেকে টুকটাক লোকজনও আসেন। আমরা চাই সরকার বা স্থানীয় প্রশাসন একটু উদ্যোগ নিক। তাহলে এখানে অনেক পর্যটক আসবে।’
স্থানীয় যুবক কাইয়ুম আহমদ বলেন, ‘এই এলাকায় অনেক সুন্দর জায়গা আছে, কিন্তু প্রচারের অভাবে কেউ জানে না। যদি এই বেকি লেককে ঘিরে কিছু উন্নয়ন হয়, তাহলে বড়লেখার নাম সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে।’
নিউ সমনবাগ চা বাগানের ব্যবস্থাপক শাহিদ নেওয়াজ বলেন, ‘বেকি লেককে যদি একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা যায়, তাহলে তা আমাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী হবে। এতে স্থানীয় অর্থনীতি যেমন চাঙ্গা হবে, তেমনি কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়বে।’
বেকি লেক কেন্দ্রিক পর্যটনের সম্ভাবনা অনেক। এখান থেকে গড়ে তোলা যেতে পারে একটি সংরক্ষিত পর্যটন এলাকা, যেখানে প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করে পর্যটন পরিচালনা করা যাবে। এখানে নির্মাণ করা যেতে পারে একটি ছোট দর্শন টাওয়ার, যাতে পর্যটকরা লেক ও চা বাগান একসাথে উপভোগ করতে পারেন। তৈরি হতে পারে নৌকা ভ্রমণের ব্যবস্থা, যাতে পর্যটকরা শাপলা ফুলের মাঝে ঘুরে দেখতে পারেন লেকের সৌন্দর্য। এছাড়া আশপাশের এলাকায় গড়ে তোলা যেতে পারে স্থানীয় হস্তশিল্পের দোকান, খাদ্যকেন্দ্র এবং পর্যটকদের জন্য বিশ্রামাগার। এতে স্থানীয় জনগণের আয়ের পথ সৃষ্টি হবে এবং নতুন কর্মসংস্থান গড়ে উঠবে। স্থানীয় তরুণরা গাইড হিসেবে কাজ করতে পারবে, গড়ে উঠতে পারে ছোট ছোট উদ্যোগ, যা বৃহৎ অর্থনৈতিক গতিশীলতা সৃষ্টি করবে বলে আশা করছেন স্থানীয়রা। তাই প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য নিয়ে লুকিয়ে থাকা এই লেক এখন দিন কাটাচ্ছে আপনার অপেক্ষায়...
যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে সরাসরি বাসযোগে বড়লেখায় যাওয়া যায়। ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা। ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকার কমলাপুর অথবা বিমানবন্দর স্টেশন থেকে কুলাউড়া স্টেশনে নেমে যেতে হবে। ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৩২০ থেকে ৭৪০ টাকা। সিলেট থেকে যাত্রা করলে, সকালে কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনে কুলাউড়া স্টেশনে পৌঁছানো যায়। কুলাউড়া থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা ভাড়াকৃত গাড়িতে করে বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ বাজারে যেতে হবে। ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৬০ টাকা। সেখান থেকে অটোরিকশায় সমনবাগ চা বাগান পেরিয়ে পৌঁছাতে হবে পাথারিয়া চা বাগানের লেকে। তাছাড়াও লেকটিতে পৌঁছাতে আরো কিছু রাস্তা অনুসরণ করতে পারেন তা হলো দক্ষিণভাগ থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় রশিদাবাদ চা বাগানে যেতে হবে তারপর স্থানীয়দের সহযোগিতায়া কিছু পথ এগিয়ে গেলে পৌঁছে যাবেন আপনার গন্তব্য।
এছাড়াও এই রাস্তা পেরুতে সাহায্য নিন গুগল ম্যাপের! যদি আপনি বেকি লেক, বড়লেখা যেতে চান, তাহলে গুগল ম্যাপ আপনার বিশ্বস্ত সহযাত্রী হতে পারে। আপনাকে শুধু সার্চ বক্সে লিখতে হবে: “বেকি লেক বড়লেখা” — আর বাকি পথ দেখাবে গুগল। ভ্রমণ হোক সহজ ও নিশ্চিন্ত।
থাকা-খাওয়ার খরচ: বড়লেখায় প্রতিদিন থাকার জন্য আপাতত ভালোমানের কোনো হোটেল নেই । তবে খাওয়া দাওয়ার জন্য ভালো চাইনিজ হোটেল রয়েছে। এছাড়া রাত্রি যাপন করার জন্য কুলাউড়ায় বাসা ভাড়া নেওয়া যায়। এক রাত ভাড়া পড়বে ৩০০ থেকে ৮০০শ টাকা।
বড়লেখা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন বলেন, হাওর, পাহাড়, ঝরনা আর চা বাগানবেষ্টিত এ উপজেলার রয়েছে অনেক খ্যাতি। সারা বছরই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষের পা পড়ে এ উপজেলায়। কিন্তু ভালো মানের আবাসিক হোটেল না থাকায় অনেক বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় পর্যটকদের।
এমএসএম / এমএসএম

চসিকের সিইওকে সরাতে মেয়রের ডিও লেটার

নড়াইলে গণঅধিকার পরিষদের নির্বাচন প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত

লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচও ডা. আবুল হাসনাতের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারি ও দুর্নীতির অভিযোগ

মুলাদীতে বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

কামালপাড়া যুব সংঘের আহ্বায়ক কমিটি গঠন

‘সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর জরুরি’: কানাডা বিএনপি নেতা হুমায়ুন পাটোয়ারী

পটুয়াখালীতে কোস্ট গার্ড ও পুলিশের যৌথ অভিযানে ৩৫ লক্ষাধিক টাকার মাদক ও জাল নোট জব্দ

কেরানীগঞ্জে চাষের মাগুরকে খাওয়ানো হচ্ছে মরা মুরগি, তীব্র গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

যথা সময়ে নির্বাচন, সহিংসতা প্রতিরোধে জনগণকেও ভূমিকা রাখতে হবে: উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ

নুরাল পাগলা’র দরবারে পুলিশের ওপর হামলা, ৩৫০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

গাছের ডালে ঝুলন্ত অবস্থায় ডেকোরেশন কর্মীর লাশ উদ্ধার

কুড়িগ্রারে রৌমারীতে সেচ্ছাসেবক দলের কর্মী সভা অনুষ্ঠিত
