ফিতনার এই যুগে ঈমানের প্রকৃত নিরাপদ আশ্রয় হলো মদীনা
আজকের পৃথিবী সামাজিক, পারিবারিক ও রাজনৈতিক সংকটে জর্জরিত। মানুষের অন্তরে অস্থিরতা বিরাজ করছে, বিশ্বাস ও আস্থা দুর্বল হয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে সত্যিকার স্থিতি ও আশ্রয় খুঁজতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে আল্লাহর রাসূল ﷺ-এর শিক্ষা ও নির্দেশনার দিকে। প্রায় চৌদ্দশ বছর আগে তিনি এ বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিয়েছেন:- ইন্নাল ইমানা লাইয়া’রিযু ইলাল মদিনাতি কামা তাইয়া’রিযুল হাইয়া ইলাজ জুহরিহা।
অর্থাৎ “নিশ্চয়ই ঈমান মাদীনার দিকে ফিরে আসে, যেমন সাপ তার গর্তে ফিরে আসে।” এই হাদিসটি মুত্তাফাকুন আলাইহি, অর্থাৎ ইমাম বুখারি ও ইমাম মুসলিম উভয়েই একে বর্ণনা করেছেন। হাদিসের দিক থেকে এটি সর্বোচ্চ স্তরের গ্রহণযোগ্যতার অন্তর্ভুক্ত। সহিহ আল-বুখারি (হাদিস নং ১৮৭৬, ১৮৮১, ১৮৮২) এবং সহিহ মুসলিমে (হাদিস নং ১৩৮২) একাধিক সনদে এ হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে।
এই হাদিস কেবল আধ্যাত্মিক ইঙ্গিত নয়; বরং এর ভেতরে নিহিত আছে গভীর শিক্ষা, ঐতিহাসিক সত্য, ভবিষ্যতের বার্তা এবং মুসলিম উম্মাহর জন্য স্পষ্ট দিকনির্দেশনা।
ঐতিহাসিকভাবে মদীনা হলো সেই নগরী যেখানে রাসূল ﷺ হিজরত করেছিলেন এবং ইসলামের পতাকা দৃঢ়ভাবে উড্ডীন হয়েছিল। মক্কা ইসলামের জন্মভূমি হলেও, মদীনা হলো আশ্রয়ভূমি, দুর্গ ও রাজধানী। এখানেই ইসলাম ব্যক্তিগত বিশ্বাস থেকে রাষ্ট্রীয় রূপ লাভ করে। তাই রাসূল ﷺ ঈমানের সাথে মাদীনার সম্পর্ককে তুলনা করেছেন সাপ ও তার গর্তের সম্পর্কের সঙ্গে। যেমন গর্ত সাপের নিরাপদ আশ্রয়, তেমনি মাদীনা হলো ঈমানের নিরাপদ আশ্রয়।
নবী করিম ﷺ সুস্পষ্টভাবে জানতেন যে তাঁর উম্মতের মধ্যে ঈমানের উত্থান-পতন ঘটবে। কখনো ঈমান শক্তিশালী হবে, আবার কখনো দুর্বল হয়ে পড়বে। ইতিহাসও সাক্ষ্য দেয় যে নানা সময়ে ফিতনা, বিদআত, বিভাজন ও কুফরের ঝড় মুসলিম সমাজকে আঘাত করেছে। কিন্তু প্রতিটি সংকটে মদীনা অটলভাবে ঈমানের দুর্গ হয়ে থেকেছে। এর শিক্ষা হলো—যখন ঈমান দুর্বল হয়ে যায়, তখন তার প্রকৃত শিকড় মদীনাতেই ফিরে পাওয়া যায়।
রাসূল ﷺ মদীনার জন্য বিশেষ দোয়া করেছিলেন: “হে আল্লাহ! আমাদের জন্য মদীনায় দ্বিগুণ বরকত দাও, যেমন তুমি মক্কার জন্য দিয়েছ।” এই দোয়া প্রমাণ করে মদীনা কেবল ভৌগোলিক স্থান নয়; বরং বরকত, নিরাপত্তা ও ঈমানের প্রতীক।
আখেরি যামানার কথাও তিনি আগাম জানিয়ে দিয়েছেন। তখন ফিতনা-ফ্যাসাদ ও গোমরাহি প্রবল হবে, ঈমান দুর্বল হয়ে পড়বে। কিন্তু মু’মিনগণ ও আহলুল-হক মদীনাতেই ফিরে আসবে। উলামায়ে কিরাম বলেন—ঈমানের হিফাযত, আসল রূপ ও খাঁটি চর্চা মদীনা থেকেই পুনর্জাগরিত হবে।
এটি নিঃসন্দেহে মুসলিম উম্মাহর জন্য এক মহাসুসংবাদ। দুনিয়া যত অন্ধকারাচ্ছন্নই হোক, যত ফিতনা ও গোমরাহির ঝড় বইতেই থাকুক—ঈমানের আলো মদীনার ভেতরে অটুট ও উজ্জ্বল থাকবে। এই হাদিস থেকে আমাদের জন্য যে শিক্ষাগুলো স্পষ্ট হয় তা হলো: ১. মদীনার প্রতি ভালোবাসা ও হৃদয়ের টান রাখা ঈমানের দাবি। ২. মদীনার মর্যাদা স্বীকার ও সম্মান করা প্রতিটি মুসলিমের দায়িত্ব। ৩. মদীনা হলো সেই দুর্গ যেখানে ঈমানের ভিত্তি সবসময় নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পায়।
বর্তমান কিংবা ভবিষ্যতের যেকোনো চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও মদীনা সর্বদা ঈমানের পুনর্জাগরণের প্রতীক হয়ে থাকবে। তাই মদীনার প্রকৃত মর্যাদা উপলব্ধির জন্য আমাদের প্রয়োজন এক বিশুদ্ধ ঈমানি দৃষ্টিভঙ্গি।
অতএব, এই ফিতনার যুগে প্রতিটি ঈমানদার মুসলমানের মহান রবের কাছে প্রার্থনা হওয়া উচিত—
আমরা যেন ঈমানের উত্থান-পতনের মাঝেও কখনো ঈমানহারা না হই; মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যেন মদীনার সাথে আমাদের হৃদয়ের সম্পর্ক অটুট থাকে, এবং আমরা যেন ঈমানের সাথেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে পারি। কেননা এর ভেতরেই নিহিত রয়েছে ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি।
লেখক: গবেষক, কলামিস্ট ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও ভূ-রাজনীতির বিশেষজ্ঞ!
এমএসএম / এমএসএম
কোরআনের হৃৎপিণ্ড যে সুরা
আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করলেও সওয়াব
সুস্থতার নেয়ামত রক্ষা করা জরুরি
নববী আদর্শের নওজোয়ান: ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন-নুমান রিডার
নিরাপদ জীবনের চার উপাদান
ইসলামে মানবাধিকারের শিক্ষা
ঈমান ধ্বংসকারী ফেতনা থেকে আত্মরক্ষা
মানুষের হক নষ্ট করা পাপ
সাহাবিদের মতো জীবন গড়ার শিক্ষা
ভূমিকম্পে ধ্বংসপ্রাপ্ত সামুদ জাতির কাহিনি
পুরোনো কাপড় দান করে সওয়াব অর্জন
হালাল সম্পদ উপার্জনের নির্দেশনা