নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যের শিকার শিক্ষার্থীরা, মাত্র ৮ শতাংশ শিক্ষক জবিয়ান
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ২০ বছর অতিক্রম করেছে। দীর্ঘ সময়ে নিজ প্রতিষ্ঠানেই উপেক্ষিত থেকেছেন শিক্ষার্থীরা। প্রতি একশজন শিক্ষকের মধ্যে মাত্র আটজন সাবেক জবিয়ান। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষক নিয়োগে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও নিজ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হতে ব্যর্থ হচ্ছেন তারা। ২০০৫ সালে কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে যাত্রা শুরু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের। প্রথম দিকে কলেজ আমলের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের দিয়ে কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠার ২ দশক পার করলেও মাত্র ৫৪ জন শিক্ষার্থী নিজ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৬৮০ জন শিক্ষক রয়েছেন। এর মধ্যে ১১টি বিভাগ ও ১টি ইনস্টিটিউটের কোনো শিক্ষার্থী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাননি। কলা অনুষদের মোট ৮টি বিভাগের মধ্যে ৪টি বিভাগে মাত্র ৪ জন সাবেক জবিয়ান শিক্ষক আছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে ১০১তম সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের জন্য বিবিএ ও এমবিএ উভয় পরীক্ষার জন্য সিজিপিএ ৪ এর মধ্যে ৩ দশমিক ৮৫ থাকতে হবে। এছাড়া সামাজিক বিজ্ঞান, কলা, আইন, বিজ্ঞান, ও লাইফ অ্যান্ড আর্থ সাইন্স অনুষদের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় পরীক্ষায় সিজিপিএ ৪ এর মধ্যে ৩ দশমিক ৭৫ থাকার শর্ত রয়েছে। তবে কলা অনুষদভুক্ত বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ক্ষেত্রে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় পরীক্ষায় যে কোনো একটিতে প্রথম শ্রেণি অথবা সিজিপিএ ৪ এর মধ্যে যে কোনো একটিতে ৩ দশমিক ৫০ থাকতে হবে। তবে কলা অনুষদের সংগীত, নাট্যকলা বিভাগ এবং চারুকলা অনুষদভুক্ত বিভাগসমূহে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় পরীক্ষায় যে কোনো একটিতে ন্যূনতম ৩ দশমিক ৫০ এবং অন্যটিতে ন্যূনতম ৩ দশমিক ২৫ থাকতে হবে। এভাবে শিক্ষক নিয়োগে বেশি সিজিপিএ শর্ত রাখাকে অযৌক্তিক মনে করছেন অনেক শিক্ষার্থী। এভাবে শুধু মার্কের ওপর অতিরিক্ত জোর দেওয়ার ফলে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষক নিয়োগে বাদ পড়ছেন।
অভিযোগ রয়েছে, ক্যাম্পাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ও কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) থেকে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের নিয়ে একটি সক্রিয় সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। নিজের দল ভারি করতে এসব শিক্ষক ঢাবি, রাবি ও ইবির শিক্ষার্থীদের নিয়োগ দিয়ে থাকেন। এছাড়া উদ্দেশ্যমূলকভাবে শিক্ষার্থীদের কম মার্ক দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। ফলে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও শিক্ষকদের পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণের শিকার হচ্ছেন। নিজ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ না পেলেও অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পেয়েছেন জবির অসংখ্য শিক্ষার্থী। অদৃশ্য কারণে আটকে আছে সব নিয়োগ : ৫ আগস্টের পর দায়িত্ব গ্রহণ করে নতুন প্রশাসন। এ সময় থেকে নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের থেকে শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা। তবে নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পার হলেও অদৃশ্য কারণে আটকে আছে সব ধরনের নিয়োগ। মোট ১৩টি বিভাগের ২১ পদে শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম পুনঃবিজ্ঞপ্তির চক্রে ঘুরপাক খাচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন পূর্বের শূন্য পদ পূরণ হচ্ছে না, অন্যদিকে নতুন করে পদ খালি হচ্ছে। ফলে দিন দিন বিভাগগুলোতে শিক্ষক সংকট প্রকট হচ্ছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।
শিক্ষক নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পুনঃনিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ঘটনা একটি খারাপ প্র্যাকটিস হিসাবে দেখছেন তারা। এভাবে চলতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কাজে সমন্বয়হীনতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। উপাচার্য পরিবর্তন হলেই পুনঃবিজ্ঞপ্তি : নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বেশির ভাগ বিজ্ঞপ্তি ২ থেকে ৩ বছর আগের। কিছু নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ক্ষেত্রে সাবেক প্রয়াত উপাচার্য ইমদাদুল হকের সময় প্ল্যানিং কমিটি থেকে অনুমোদন হয়ে বাছাই বোর্ডও গঠিত হয়েছিল। কিন্তু এর মধ্যে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে উপাচার্য ইমদাদুল হক ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে টানা তিন মাস চিকিৎসাধীন থেকে মৃত্যু বরণ করেন। পরে উপাচার্য সাদেকা হালিম দায়িত্বে এসে সবগুলোর পুনঃনিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেন। সাদেকা হালিম দায়িত্ব নেওয়ার ৬ মাসের মাথায় কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। পরে সরকার পতনের ধারাবাহিকতায় তিনি পদত্যাগে বাধ্য হন। সর্বশেষ অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম দায়িত্ব নেওয়ার পর চলতি বছর ৫ জানুয়ারি মোট ১৩টি বিভাগে ২১টি পদে পুনঃবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, বেশ কয়েকটি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে পুনঃবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সেসবের দ্রুত নিয়োগ সম্পন্ন করা জরুরি। এছাড়া আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি, শিক্ষক নিয়োগে জবি শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য দিতে হবে। এই নিয়োগে অবশ্যই তার প্রতিফলন থাকতে হবে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হাফিজুল ইসলাম বলেন, একটি বিভাগে যখন শিক্ষক সংকট দেখা দেয়, তখনই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। দেখা যায় যে, সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে ২-৩ বছর লেগে যাচ্ছে। এই সময়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বিভাগের সব শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে। এতে ব্যাহত হচ্ছে একাডেমিক কার্যক্রম। দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা নিয়োগ প্রক্রিয়াগুলোর একটি সুরাহা হওয়া দরকার।
বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, আমরা মনে করছি, আগের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলোতে সবার বাধাহীনভাবে আবেদনের সুযোগ ছিল না। এখন পরিবর্তিত সময়ে সবাইকে সমান সুযোগ করে দিতে আমরা পুনঃবিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। আমাদের কাজ চলমান রয়েছে। শিগগিরই নিয়োগের মাধ্যমে শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণ করা হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ২০ বছর অতিক্রম করেছে। দীর্ঘ সময়ে নিজ প্রতিষ্ঠানেই উপেক্ষিত থেকেছেন শিক্ষার্থীরা। প্রতি একশজন শিক্ষকের মধ্যে মাত্র আটজন সাবেক জবিয়ান। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষক নিয়োগে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও নিজ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হতে ব্যর্থ হচ্ছেন তারা।
Aminur / Aminur
জকসু নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য পদপ্রার্থী অবন্তির ভাবনা
জকসু নিয়ে কেন্দ্রীয় পাঠাগার ও সেমিনার সম্পাদক পদপ্রার্থী ইমনের ভাবনা
ছাত্রদলের উদ্যোগে সুবিধাবঞ্চিত ও ছিন্নমূল শিশুদের সাপ্তাহিক স্কুল উদ্বোধন
শেকৃবিতে নিয়োগে আওয়ামী পুনর্বাসন, এলাকাপ্রীতি ও অর্থ লেনদেনের অভিযোগ
উত্তরায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন
জকসুতে কার্যনির্বাহী সদস্য পদে নির্বাচন করবে সাংবাদিক সম্পদ
দীর্ঘ তিন যুগ পর জাবিতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের মিছিল
জকসু নির্বাচন: ছাত্রশিবিরের ‘অদম্য জবিয়ান ঐক্য’ প্যানেল ঘোষণা
জকসু নির্বাচন: ছাত্রদল সমর্থিত "ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান" প্যানেল ঘোষণা,
এইচএসসির খাতা পুনঃনিরীক্ষণের ফল প্রকাশ
বাকৃবিতে প্রিসিশন ব্রিডিং-ভিত্তিক দুগ্ধ উৎপাদন উন্নয়ন বিষয়ক কর্মশালা
স্কুলে ভর্তিতে ৬৩ শতাংশই কোটা, অভিভাবকদের আপত্তি