একই কর্মস্থলে ১৬ বছর পর: গড়েছেন অনেক সহায় সম্পদ
সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরের ম্যানেজার হাফিজ চক্রের দূর্নীতি

সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে নিজের বসত বাড়ি বানিয়ে দিয়েছেন সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরের ম্যানেজার কাম পরিচালক হাফিজ আহমদ। এই হাফিজকে মাত্র এক মাসের দায়িত্ব দিয়ে ঢাকা থেকে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরের ম্যানেজার কাম পরিচালক হিসেবে পাঠানো হলেও তিনি একই স্থানে পার করেছেন প্রায় ১৬টি বছর। দীর্ঘ ১৬ বছর সিলেট বিমানবন্দরের পরিচালক হিসেবে দায়িত্বে থেকে নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে হাফিজ আহমেদ আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। তিনি এখন কয়েক শতকোটি টাকার মালিক। রাজধানী ঢাকায় তার একাধিক বাড়ি ও ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া গেছে। আমেরিকার নিউইয়ক শহরে রয়েছে তার নামে-বেনামে বাড়ি। তিনিও আমেরিকার গ্রিনকার্ডধারী। সিলেট বিমান বন্দরে সোনা পাচার থেকে শুরু করে সকল রকম অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে হাফিজ আহমেদ সরাসরি জড়িত। সাধারণ কর্মচারীদের মারধর, মদ্যপান অবস্থায় গভীর রাতে কর্তব্যরত আনসার বাহিনীর সদস্যকে মারধর পর্যন্ত করেন তিনি। হেলাল নামের এক আনসারকে নির্যাতনের ঘটনায় হাফিজের বিচার দাবি করে আনসার বাহিনীর সদস্যরা বিদ্রোহ করার চেষ্টা করে। এ নিয়ে তদন্ত কমিটি করা হলে সেটি আর আলোর মুখ দেখেনি। সাবেক চেয়ারম্যান মফিদুর রহমানের আমলের এ ঘটনা। সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপকের (স্টেশন ম্যানেজার) দায়িত্বে আছেন হাফিজ আহমদ। ২০০৮ সাল থেকে এই দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। এর আগেও তিন বছর টাওয়ার কন্টোলারের দায়িত্বে ছিলেন সিলেটে। বিগত বিএনপি সরকারের আমলে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান ‘টাওয়ার কন্ট্রোলার’ পদে হাফিজকে নিয়ে আসেন ওসমানী বিমানবন্দরে। পরে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলে হাফিজ হয়ে উঠেন আওয়ামী লীগার। সিলেট বিমানবন্দরে রয়েছে তার নিজস্ব একটি সিন্ডিকেট। হাফিজ আহমেদ বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে প্রয়াত আবুল মাল মুহিত ও ড.আব্দুল মোমেনের আশীর্বাদে একক দায়িত্বে ১৬টি বছর পার করেন হাফিজ আহমেদ।২০১৬ সালে হাফিজ আহমদকে পদোন্নতি দিয়ে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বদলি করা হয়। আরো একাধিকবার তাকে বদলি করা হয় বলে জানা গেছে। তবে প্রত্যেক বারই উচ্চপর্যায়ে তদবির করে বদলিটি ঠেকিয়ে দেন হাফিজ।সরকারের পঠ পরিবর্তনের সাথে সাথে বর্তমানে রাজনৈতিক খোলস পাল্টে বিএনপি নেতা, সিলেট সিটির সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর আশ্রয়ে পরিচালকের রুটিন দায়িত্ব থেকে পরিচালক হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন হাফিজ আহমেদ। আওয়ামী সরকারের পতনের পর গত ৫ আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সিলেট বিমানবন্দর দিয়ে লন্ডনে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন হাফিজ আহমেদ।
ওসমানী বিমান বন্দরে হাফিজের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে একটি সিন্ডিকেট, সেই সিন্ডিকেটে নেতৃত্ব দেন, জসিম উদ্দিন, শাহেদ আহমদ, তরিকুল ইসলাম, অরুন সহ কয়েকজন। গত কয়েকদিন আগে কার পার্কিংয়ে অনিয়মের প্রতিবাদ করলে তার সিন্ডিকেড সদস্যরা যোগাযোগ শাখার কর্মচারী রাজু মিয়াকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। এ ব্যাপারে মামলাও হয়। এই রাজু মিয়া সিএটিসির সাবেক পরিচালক আব্দুল মান্নানের আপন ভাগিনা বলে জানা যায়।বেবিচকের এই মুকুটহীন সম্রাট হাফিজ আহমেদ এতটাই অত্যাচারী যে, যোগাযোগ শাখার প্রযুক্তি সহকারী আজিজুর রহমানকে কাজে চাপ প্রয়োগ করার কারণে তিনি স্টক করেই মৃত্যুবরণ করেন। পরে টাকার বিনিময়ে বিষয়টি মিমাংসা করে ফেলেন সুচতুর হাফিজ আহমেদ।
জানা যায়, চিরকুমার এই হাফিজ আহমেদের বাড়ি সিলেট মৌলভীবাজার জেলায়। বৃহত্তর সিলেটের লোক হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন ধরে নিয়মনীতি তোয়াক্ষা না করেই ওসমানী বিমান বন্দরকে নিজের বাড়ি ঘর মনে করে, যা খুশি তাই করেন। সরকারি কোন নিয়ম নিতির তোয়াক্ষা করেন না এই হাফিজ। বেবিচকের নিয়ম অনুযায়ী একই কর্মস্থলে ৩ বছর চাকরির নিয়ম থাকলেও তিনি এক জায়গাতেই আছেন ১৬ বছর। তবে হাফিজের খুটি হচ্ছেন বেবিচকের পরিচালক মানবসম্পদ। হাফিজের বদলি ঠেকাতে পরিচালক মানবসম্পদ তাকে শেল্টার দিয়ে থাকেন জনশ্রুতি রয়েছে। এ জন্য মাসে মাসে পরিচালক মানবসম্পদের কাছে বড় অংকের নজরানা পাঠাতে হয়। সিলেট বিমানবন্দরে সকল ঠিকাদারি কাজের প্রত্যায়ন থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম, কাজ না করে বিল উত্তোলন করে ভাগ-বাটোয়ারা, পরিবহনপুলে কেনাকাটা, গাড়ি মেরামতে ভূয়া বিল ভাউচার করে অর্থ আত্মসাৎ, জ্বালানি তেল চুরি, সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার, বাসাবাড়ি, দোকানপাট বরাদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম, সোনা চোরাচালান, ডলার ও রুপি পাচার, ডিউটি ফ্রি শপের মদ বিক্রি, বিজ্ঞাপনের জন্য নিয়ন সাইনে দুর্নীতি সব কিছুই জড়িত অনিয়ম-দুর্নীতির রাজা এই হাফিজ আহমেদ। নিয়ন সাইন অনিয়মের বিষয়টি সম্প্রতি ফাঁস হয়ে গেলে সম্পত্তি শাখার উপপরিচালক ইসরাত জাহান পান্না তদন্ত শুরু করেছেন। ক্ষমতার পালা বদলের পর বিভিন্ন সেক্টর থেকে আওয়ামী দোসরদের বদলি করা হলেও সিলেট বিমানবন্দরের পরিচালক হাফিজ আহমেদ এখনও বহাল তবিয়তে। উল্টো তাকে বিমানবন্দরের রুটিন পরিচালক থেকে পরিচালক করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলে জানা যায়। দীর্ঘদিন সিলেট বিমানবন্দরে পরিচালকের দায়িত্বে থাকায় এই হাফিজ আহমেদ ওসমানী বিমানবন্দর কর্মরত বাইরের জেলার কর্মচারীদের নানাবিধ হয়রানি অত্যাচার, মানসিক নির্যাতন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিমান বন্দরে সকল উন্নয়নমূলক প্রকল্পের বিভিন্ন কাজে কাজ অসম্পূর্ণ থাকার পরও প্রত্যয়ন দিয়ে ‘কমিশন’ গ্রহণ, প্রভাব খাটিয়ে আউট সোর্সিং কোম্পানির পরিচ্ছন্ন কর্মীদের নিজের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার তার রুটি কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিলেটে কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গেও নাকি এই হাফিজ আহমেদ খারাপ আচরণ করে থাকেন। এ নিয়ে সিলেটের স্থানীয়সহ জাতীয় পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলেও হাফিজ আহমেদের টিকিটিও কেউ স্পর্শ করতে পারেনি। চিরকুমার এই পরিচালক বিমানবন্দরের পাশেই পুরাতন রেস্ট হাউসে একাকি থাকেন। গভীর রাতে সেখানে মদ্যপান আর বিমান অফিসে কর্মরত নারিদের নিয়ে আমোদফুর্তিতে ব্যস্থ থাকেন হাফিজ আহমেদ।
হাফিজ আহমেদ ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সহকারী অ্যারোডাম অফিসার হিসেবে বেবিচকে যোগদেন। দীর্ঘ ১৬ বছরে পরিচালক থাকা অবস্থায় নানা অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম তদন্ত হয়েছে। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা সংশ্লিষ্টদের কাছে রিপোর্ট জমা দিয়েছে। কিন্তু কোনোটাই আমলে নেয়নি কর্তৃপক্ষ। সিভিল এভিয়েশনের জনৈক কর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হাফিজের দুর্বৃত্তপনার কাছে তারা অসহায়। কেউ প্রতিবাদ করলে তারও খেসারত দিতে হয়। গায়ে হাত তুলতেও তিনি দ্বিধা করেন না। তাই সব দেখেও না দেখার ভান করে আছেন তারা। লন্ডন থেকে দুবাই হয়ে আসা প্রায় প্রতিটি ফ্লাইটেই আসে তার সিন্ডিকেটের লাগেজ। এসব লাগেজে কখনও সোনা, কখনও মাদক আবার কখনও আসে ডলার। মোটা অংকের বিনিময়ে তিনি সিন্ডিকেটের লাগেজগুলো ছাড়িয়ে দেন সুকৌশলে । নিরাপত্তার অজুহাতে এসময় খুব কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। বিমানবন্দরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বেসরকারী সংস্থার জনৈক কর্তা, ইমিগ্রেশনের ক’জন কর্তাব্যক্তি, সিভিল এভিয়েশনের কিছু দালাল হাফিজের অপকর্মের অন্যতম সহযোগী হিসেবে সিন্ডিকেটের দেখভাল করে থাকেন। এছাড়া স্থানীয় একটি মাস্তান গ্রুপও আছে-যাদের কাজ সিন্ডিকেটের লাগেজ নিরাপদে যাতে পৌছায় সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
সিলেটে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক মানের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো এবং দেশি-বিদেশি ফ্লাইট চালুর লক্ষ্যে চার বছর আগে কাজ শুরু হলেও কাজ চলেছে কচ্ছপ গতিতে, দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। অভিযোগ উঠেছে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে সরকারি অর্থ লুট করার উদ্দেশ্যেই ত্রুটিপূর্ণ নকশা প্রণয়নসহ নানা ধরনের অপতৎপরতার কারণেই সিলেটবাসী ওসমানী বিমানবন্দর থেকে সরাসরি আন্তর্জাতিক বিমানে যাতায়াতের পর্যাপ্ত সুবিধা পাচ্ছেন না। এসব কিছুর পিছনের নাটের গুরু হাফিজ আহমেদ।
তবে এসব বিষয়ের কোন অভিযোগই স্বীকার করতে রাজি নন পরিচালক হাফিজ আহমেদ, তিনি বলেন আমার বদলীর বিষয়টি কর্তৃপক্ষের হাতে, তারা কেন আমাকে এখানে রাখেন, তারা ভালো, জানেন। আমেরিকা বাড়ী প্রসঙ্গে হাফিজ আহমেদ বলেন, আমেরিকায় আমার কোন বাড়ি নেই, আমেরিকায় কোন বাড়িটি আমার এটার প্রমান নেই কারো কাছে। আমি আমেরিকার নাগরিক তার প্রমান নেই। তবে আগের চেয়ে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর ভালো চলতেছে কিনা এমন প্রশ্নও করেন এ প্রতিবেদককে। পরিশেষে তিনি বলেন, সিলেট বাড়ি হওয়ায় একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও বিভিন্ন রকম অভিযোগ করে যাচ্ছে বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি। তদন্তে আমি দূষি প্রমানিত হলে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) বর্তমান চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো.মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক এর সাথে যোগাযোগে চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
Aminur / Aminur

বগুড়ায় বাসের ভেতর তরুণীকে ধর্ষণের চেষ্টা, চালক গ্রেপ্তার

ভূরুঙ্গামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ভূট্টা বাদে ৯ প্রকার বীজ প্রণোদনা হিসাবে পাবে ৪২০০ কৃষক

দুর্গাপুরে সেচ্ছাসেবক দলের মাদক বিরোধী মানববন্ধন

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নাচোলে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নারী-পুরুষসহ প্রায় ২০ জন আহত

কুড়িগ্রামে কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ

গোপালগঞ্জে ৫৬তম বিশ্ব মান দিবস পালিত

ঠাকুরগাঁওয়ে থানা বিএনপির বর্ধিত সভায় মির্জা,ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বীরগঞ্জে বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ উদযাপন.

দোহারে প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবীতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

এসকেএএল ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রিদে সদস্যপদ পেলেন ডাল্টন জহির

ঝুঁকিপূর্ণ না হওয়ায় পুরাতন যমুনা রেলসেতু লাইনের ব্যালাস্ট পাথর ব্যবহার করে আর্থিক সাশ্রয় পাকশী বিভাগে

সারা দেশের ন্যায় নাগরপুরে সকল এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলছে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ মিছিল
