ঢাকা বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫

সব লোকে কয় কী জাত সংসারে: গবিতে লালনের স্মরণোৎসব


ইভা আক্তার, গবি photo ইভা আক্তার, গবি
প্রকাশিত: ২২-১০-২০২৫ দুপুর ১:৪০

সূর্য তখন ঢলে পড়ছে পশ্চিম আকাশে। ট্রান্সপোর্ট চত্বরের বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে এক অদ্ভুত শান্ত সুর “সব লোকে কয় কী জাত সংসারে…” এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়, শহরের কোলাহল পেরিয়ে যেন লালনের আখড়ায় এসে দাঁড়িয়েছে গণ বিশ্ববিদ্যালয়। বাতাসে লালনের গান, চোখে মোমের আলো, মুখে মুখে একটাই মন্ত্র মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি।

এই ভাবের মেলায়, লালন স্মরণোৎসবের আয়োজন করেছিল গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (গকসু)। বিকেলের আলোর মতোই মায়াময় সেই আয়োজনের আবেশে ভরে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস।

ঊষার আলোর মতোই এই আয়োজনটি ছিল এক ধরণের মিলনের কথা। ট্রান্সপোর্ট চত্বর ভরে উঠেছিল দর্শক, লালনভক্ত। মঞ্চে কণ্ঠ মিলিয়েছেন অনেকে; সুরের ওই মেলায় মিশে ছিল ভক্তি, ভালোবাসা আর একাত্মতার সুর। ছাত্রের গলায়, শিক্ষকের চোখে, এবং দর্শকের নিঃশ্বাসে লালনের গানের কাব্য যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে। এক সময়ের লোককথা, আজকের প্রশ্ন, আগামীকালের আশা।

মঞ্চে একের পর এক সুর তুলছেন শিক্ষার্থীরা ‘তিন পাগলে হলো মেলা’, ‘আছে যার মনের মানুষ মনে তোলা’, ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’। সেই গানের ভেতর দিয়ে যেন ফিরে আসছিল লালনের দর্শন মানুষ, ভালোবাসা, ও সমতার প্রতিধ্বনি।

সুরে ভরা সেই মুহূর্তগুলোতে ক্যাম্পাস যেন থেমে গেল; পাঠশালার টাইমটেবল, পরীক্ষার চাপ, রুটিনের দৌড় সবই হঠাৎ এক প্রকার নির্বাসিত। মঞ্চ চত্বর জুড়ে মিলল এমন এক মিলন যা অক্ষরে অক্ষরে ঘোষণা করে সংস্কৃতি ক্ষণস্থায়ী উৎসব নয়; এটি মনের সঙ্গে মনের ঘনিষ্ঠ আলাপ। কেউ হাততালি দিয়ে সুরের সঙ্গে তাল মিলালেন, কেউ বা চোখ বুজে গীবতলা করলেন ভাবনার ঢেউকে ছোঁয়াতে। যাদের কণ্ঠে গাইলেন, তাদের কণ্ঠে ছিল শ্রদ্ধা; শ্রদ্ধার সঙ্গে মিশেছিল প্রতিবাদের নীড়ানন্দ লালনের সেই বেদনা ও আশা, যেগুলো দিনে রাতে ঘোরে।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলেও উৎসবের আলো নিভেনি। কারও চোখ বুজে ভাবের দুলুনি, কারও কণ্ঠে সুরের অনুরণন, আর চারদিকে হাততালির ঢেউ। একাডেমিক ব্যস্ততার ফাঁকে শিক্ষার্থীরা যেন পেয়ে গেলেন এক টুকরো বিশ্রাম, এক মুহূর্তের প্রশান্তি, যেখানে পড়াশোনার ক্লান্তি মিলিয়ে গেল ভাবের আলোয়।

গকসুর সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. মারুফ বললেন, “আজ গণ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের পক্ষ থেকে এটি আমাদের প্রথম আয়োজন। ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্বপ্নের মতোই আমরা চাই, ‘গ্রামবাংলার সংস্কৃতি’ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসুক, আর শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রতিভা প্রকাশের সুযোগ পাক।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ওহিদুজ্জামানও যেন হারিয়ে গেলেন সেই সুরে। বললেন, “লালনের গান শুনলে এক অদ্ভুত অনুভূতি জাগে। তার দর্শন আমাদের শেখায়, মানুষ হয়ে মানুষকে ভালোবাসতে হয়। চাই, এই আয়োজন সেই ভালোবাসার সেতুবন্ধন হোক।”

সহকারী রেজিস্টার এনামুল হক মনে করিয়ে দিলেন, “লালন ছিলেন বৈষম্যবিরোধী মানুষ। জাত, ধর্ম, গোঁড়ামির ওপরে তার দর্শন এখনো প্রাসঙ্গিক। আমরা চাই, সেই শিক্ষার আলোয় গবির পরিবেশ আরও মানবিক হয়ে উঠুক।”

গকসুর ভিপি মৃদুল দেওয়ানের কণ্ঠে ছিল ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি। তিনি বলেন, “সাত বছর পর গঠিত হলো নতুন ছাত্র সংসদ। এই আয়োজন আমাদের সূচনা। আমরা চাই, সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে গবির শিক্ষার্থীরা নিজেদের মেধা ও মননের বিকাশ ঘটাক।”

জাতীয়ভাবে পালিত লালন সাঁইয়ের ১৩৫তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে সোমবার বিকেলে আয়োজিত এই স্মরণোৎসবে অংশ নেয় বিভিন্ন বিভাগের শত শত শিক্ষার্থী। কারও হাতে গিটার, কারও কণ্ঠে সুর, কেউ আবার নিঃশব্দে শুনছেন, ভেতরে ভেতরে ভাবের আলোয় আলোকিত হচ্ছেন।

সন্ধ্যা যখন পুরোপুরি নেমে এল, তখনও চত্বরে গাইছিলেন এক শিক্ষার্থী “এমন সমাজ কবে গো সৃজন হবে…”বাতাসে ভাসছিল লালনের সুর, আর তার সঙ্গে মিশে ছিল এক অনুচ্চারিত প্রশ্ন-  সমাজ বদলায়, কিন্তু মানুষ বদলায় কতটা?

এমএসএম / এমএসএম

বাঙলা কলেজ সাংবাদিক সমিতির সভাপতির ওপর ছাত্রদলের হামলা

বুয়েটের ধর্ষক শ্রীশান্ত রায়ের বিচারের দাবিতে জাবিতে মানববন্ধন

সব লোকে কয় কী জাত সংসারে: গবিতে লালনের স্মরণোৎসব

বিশ্ব ডিম দিবসে বাকৃবিতে ১০ হাজার ডিম বিতরণ

আলোর মেলা গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে: দীপাবলির রাতে প্রদীপের গল্প

২৫ সেপ্টেম্বর থেকে জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে বর্ষা-মাহির

জবি ছাত্রদল নেতা খুনে ক্ষোভ, বিশ্ববিদ্যালয় দিবস স্থগিত ও দুই দিনের শোক ঘোষণা

অগ্নি দুর্ঘটনা: শিক্ষক-কর্মচারীদের সতর্ক থাকতে বলল মাউশি

বর্ষা মাহিরের প্রেমের বলি জবি ছাত্রদল নেতা জোবায়েদ

জবি শিক্ষার্থী জুবায়েদ হত্যার ঘটনায় তার ছাত্রী আটক

'ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড' শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও উপহার সামগ্রী দিল জবি শিবির

মতামতবিহীন মতবিনিময় সভায় পবিপ্রবিতে ইউজিসি চেয়ারম্যান: সাংবাদিকদের প্রশ্নে বাধা

‘সি আর আবরার, আর নেই দরকার’ স্লোগানে শিক্ষকদের পতাকা মিছিল