বারহাট্টায় আমনের বাম্পার ফলন, চলছে ধান কাটার মহোৎসব
টলটলে মুক্তোবিন্দুর মতো ভোরের স্বচ্ছ শিশির জমছে ঘাসের ডগায়, ধানের শীষের পরে। প্রকৃতি জুড়ে ঘিরে রেখেছে হেমবরন ধূসর আবহ। বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে সোনালি ধানের প্রাচুর্য আর সবুজ স্বপ্ন দুলছে। হলুদে-সবুজে একাকার নয়নাভিরাম অপরূপ প্রকৃতি। বারহাট্টায় শুরু হয়েছে রোপা আমন ধান কাটার মৌসুম। মাঠে মাঠে মৃদু হাওয়ায় দোল খাওয়া সোনালি ধানের নয়নাভিরাম দৃশ্য। আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে এবার মাঠে মাঠে ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষক। তবু বারহাট্টার কৃষকদের মুখে নেই স্বস্তির হাসি। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় লোকসানের শঙ্কা ঘিরে ধরেছে তাদের মনে। কৃষকরা বলছেন, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবার বাজারে ধানের দাম ভালো না পেলে, কৃষিতে কাজে অতিরিক্ত ব্যয় করে লাভের মুখ দেখতে পারবো না।
হিম হিম প্রকৃতি, স্বল্পায়ু দিন ক্রমেই ম্রিয়মাণ হয়ে যাচ্ছে, শেষ বিকেলে প্রকৃতি জুড়ে ধূসর কুয়াশার আবছা চাদরের ঢেকে শিশিরের টুপটাপ শব্দ, উত্তরের হিমেল হাওয়ায় নামে সন্ধ্যা। নিস্তব্ধ গভীর নিশিথে টুপটাপ শিশির পতনের হিরণ্ময় শব্দ। ষড়ঋতুর বাংলার ঋতু পরিবর্তনের ছোঁয়ায় প্রকৃতি জুড়ে এসেছে হেমন্তের প্রধান আকর্ষণ অগ্রহায়ণ মাস। 'আমন ধান কাটার মাহেন্দ্র সময়।' বাড়ির আঙিনা ভরে উঠছে নতুন ধানের ম-ম গন্ধে। হেমন্তে প্রকৃতির বিচিত্র রূপের বর্ণনা আর স্তুতিতে মুগ্ধ কবি-সাহিত্যিকরা। পুনর্জন্মে বিশ্বাসী রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ পুনর্বার বাংলার নবান্ন উৎসবে ফিরে আসার আকুতি জানিয়ে লিখেছেন- 'আবার আসিব ফিরে ধান সিঁড়িটির তীরে- এই বাংলায়; হয়তো মানুষ নয়- হয়তো বা শঙ্খচিল শালিখের বেশে; হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে।' ষড়ঋতুর বাংলায় কার্তিক মাসকে 'মরা বা মঙ্গা' মাসও বলে থাকেন গ্রামবাসীরা। এ 'মরা বা মঙ্গা' মাস আর অনিশ্চয়তা পেরিয়ে বাংলার বুকে যখন অগ্রহায়ণ আসে, তখন কৃষকের ঠোঁটের কোন ফুটে ওঠে আনন্দের হাসি। নবান্নের এ আমেজকে মনে করে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের ভাষায়- 'পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে আয়রে চলে আয়..আয়.. আয়, ডালা যে তার ভরেছে আজ পাকা ফসলে মরি হায় হায় হায়।' পল্লীকবি জসীম উদ্দীন হেমন্তের নবান্নের সময়টাকে কেন্দ্র করে বলেছেন-'আশ্বিন গেল কার্তিক মাসে পাকিলো ক্ষেতের ধান, সারা মাঠ ভরি গাহিছে কে যেন হলদি-কোটার গান।' বিদ্রোহী কবি কবি কাজী নজরুল ইসলামের চোখ আর অনুভূতিও ফাঁকি দিতে পারেনি নবান্নের আয়োজন, তিনি লিখেছেন- '‘ঋতুর খাঞ্জা ভরিয়ে এলো কি ধরণীর সওগাত? নবীন ধানের আঘ্রাণে আজি অঘ্রাণ হল মাৎ; 'গিন্নি-পাগল' চালের ফিরনি।' অগ্রহায়ণ মাসকে চলতি বাংলা ভাষায় আদর করে ডাকা হয় অঘ্রাণ। এ মাসটি লোকসংস্কৃতি ও বাংলার প্রকৃতিতে ওতপ্রোতভাবে যেমন মিশে আছে, তেমনি স্মরণীয় হয়ে আছে আমাদের বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের চরণে। কবিগুরুর রচনায় আমাদের জাতীয় সংগীতে সমবেত কণ্ঠে উচ্চারিত হয় মোহনীয় লাইনটি- 'ও মা, অঘ্রানে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি।' গ্রামবাংলার হাজার বছরের প্রাচীনতম উৎসবের একটি উৎসব নবান্ন উৎসব। বাঙালি লোক সংস্কৃতির পুরানো ঐতিহ্যের এ উৎসব সময়ের সাথে সাথে হারাতে বসেছে তার অতীতের রূপ-বৈচিত্র ও আভিজাত্য।
সরেজমিনে উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকদের জমির ৯০ ভাগ ধান পেকে গেছে এবং ১০ ভাগ জমির ধান পাকতে শুরু করেছে। পাকা ধান কাটা, মাড়াই আর ধান শুকনোর কাজে ব্যস্ত কৃষাণ-কৃষাণীরা। দিনভর ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। এদিকে পাকা ধান বাড়িতে আনতে ভ্যান গাড়ী ব্যবহার করতে দেখা গেছে। সনাতন পদ্ধতিতে কাস্তে হাতে ধান কাটার পাশাপাশি ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক যন্ত্র কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন। শুধু ধানই নয় গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ধানের খড়কুটোও সংগ্রহ করে রাখছেন কৃষকরা। চারিপাশে চলছে ধান তোলার মহোৎসব।
কৃষকরা জানান, এ বছর মাঠে কৃষকদের খরচ আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। বিশেষ করে পোকামাকড়ের আক্রমণ, রোগবালাই প্রতিরোধ ও সার-বালাইনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার তাদের খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে। বারহাট্টা উপজেলা সদরের বারঘর গ্রামের কৃষক নন্দন সরকার বলেন, এলাকার কৃষক শহিদ মিয়া জানান, তার রোপা আমন আবাদে প্রতি কাঠা জমির জন্য ২৫০০ থেকে ৩৫০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়েছে। এছাড়াও, মাঠে কৃষি কর্মকর্তাদের সঠিক তদারকি না পাওয়ার অভিযোগও তুলেছেন অনেকে।
ধান কাটার খরচ বাঁচাতে সাহতা এলাকার সালেক, রায়পুর এলাকার সত্যেন্দ্র, বাউসী এলাকার জজ মিয়াসহ আরও অনেক কৃষক তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে নেমেছেন মাঠে। তবু তাদের মনে দুশ্চিন্তা, বর্তমান বাজারে ধানের যে দাম সব খরচ উঠবে তো? তারা ধানের ন্যায্য মূল্যের আশা করছেন।
সিংধা ইউনিয়নের নূরুল্লারচড় গ্রামের কৃষক রিটন মিয়া বলেন, এবার আমি ১১ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছি, ফলনও ভালো হয়েছে। এবার শুধু ভাল দাম পাওয়ার আশায় আছি। তবেই আমাদের পরিশ্রম সার্থক হবে।
সদর ইউনিয়নের বারঘর গ্রামের কৃষক নন্দন সরকার বলেন, আমি কৃষি অফিসের পরামর্শে ৭ বিঘা জমিতে ৩০ জাতের ধান চাষ করেছি, গত বছরের তুলনায় এবার কিছুটা ফলন বেশি হয়েছে। রায়পুর এলাকার ফকিরের বাজার গ্রামের মাসুক মিয়া বলেন, আমি ৪০ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছি, খরচ বেশি লেগেছে, ফলনও ভালো হয়েছে। তবে উপযুক্ত মূল্য পাওয়ার দাবি জানাই। এছাড়াও উপজেলার চিরাম, নওয়াগাঁও, শেমিয়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের একাধিক কৃষক তাদের জমিতে ভালো ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
উপজেলার কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শারমিন সুলতানা জানান, আমন আবাদ শেষ পর্যায়ে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের মাঝামাঝি ইউরিয়া সারের চাহিদা একটু বেশি লাগে সেপ্টেম্বর মাসে চাহিদার তুলনায় বেশী মওজুদ রয়েছে। মূল্যবৃদ্ধির কারণে কৃত্রিম সংকট যাতে না হয় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে মনিটরিং কাজ পরিচালনা করছেন। মূল্য বৃদ্ধি ও অনিয়ম এর জন্য প্রতিদিন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা পূর্বক অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এমএসএম / এমএসএম
ভূরুঙ্গামারীতে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বীজ ও সার বিতরণ
গোপালগঞ্জে সাড়ে চার হাজার কৃষকের হাতে পৌঁছাল প্রণোদনার বীজ–সার
মুকসুদপুরে জাতীয় প্রাণি সম্পদ সপ্তাহ ও প্রাণি সম্পদ প্রদর্শনী উপলক্ষে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান
সুবর্ণচরে বর্ণাঢ্য আয়োজনে প্রাণীসম্পদ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত
মহম্মদপুরে ভোক্তা অধিকারের অভিযান তিন প্রতিষ্ঠানে ৪১ হাজার টাকা জরিমানা
ভূঞাপুরে আধুনিক পশুপালন নিয়ে জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহের বর্ণিল উদ্বোধন
জয়পুরহাটে জাতীয় প্রাণীসম্পদ সপ্তাহ ও প্রাণীসম্পদ প্রদর্শনী উপলক্ষে র্যালি ও আলোচনা সভা
বেলাবোতে প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ ও প্রদর্শনী উদ্বোধন
কোটালীপাড়ায় প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী মেলার উদ্বোধন
নালিতাবাড়ীতে প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী মেলা অনুষ্ঠিত
লটারির ভিত্তিতে যশোরের নতুন পুলিশ সুপার সৈয়দ রফিকুল ইসলাম
খুলনায় বেতন ও পদ বৈষম্য দূর করতে স্মারকলিপি প্রদান