অবহেলা-অনাদরে বিলুপ্তির পথে চন্দনাইশের মৃৎশিল্প

দক্ষিণ চট্টগ্রামে চন্দনাইশে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পীরা এখন শুধুমাত্র হাতেগোনা কয়েকজন রয়েছেন। অবহেলা-অনাদরে প্রায় বিলুপ্তির পথে এই মৃৎশিল্প। তাদের ভাষ্য, কঠোর পরিশ্রম, মাটি সরবরাহ ও সংরক্ষণের জটিলতা এবং জ্বালানি সমস্যার কারণে মৃৎশিল্প বিলুপ্তির পথে। তার সাথে তৈজসপাত্রের প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে চন্দনাইশের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প এখন বিলুপ্তপ্রায়।
প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি জিনিসপত্র সহজলভ্য হওয়ায় আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে সৃষ্ট এসব জিনিসপত্রের সৌন্দর্যের প্রতি মানুষ ঝুঁকে পড়েছে। এতে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় তৈরি জীবাণুবাহী জিনিসপত্র ও অ্যালুমিনিয়াম জিনিসপত্রের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে হারিয়ে যাচ্ছে পরিবেশবান্ধব মাটির তৈরি এসব জিনিসপত্র। তাছাড়া উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, প্রয়োজনীয় অর্থাভাব, বাজারজাতকরণের সমস্যার কারণে এ শিল্প এখন লোকসানি ব্যবসায় পরিণত হয়েছে।
চন্দনাইশ উপজেলার জোয়ারা কুলালপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এখন আর কুমারপাড়ায় পুরুষ নয়, নারীরাই তৈরি করছেন মৃৎশিল্পের মাটির তৈরি কিছু কিছু জিনিসপত্র। এতে রয়েছে হাঁড়ি-পাতিল, থালা-বাসন, ফুলের টব, দইয়ের খাবানি, ডবর, মটকি, বরুন, জৈট, কুবার্চা, ঢাকনা, খাসা, কুড়ি, কলসি, মগ, গ্লাস, বদনা, মাটির তৈরি ব্যাংক ইত্যাদি। তাছাড়া বাচ্চাদের খেলনাসামগ্রীর মধ্যে মাটির তৈরি হাঁড়ি, ঘোড়া, হরিণ, সাপসহ বিভিন্ন ধরনের পশুপাখি নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্র রয়েছে।
এক সময় এমন কোনো পরিবার ছিল না, যারা এগুলো ব্যবহার করত না। চন্দনাইশের কুলালপাড়ার ৫ শতাধিক পরিবারের মধ্যে অর্ধশতাধিক পরিবার এখনো মৃৎশিল্পের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। তবে বর্তমানে মহিলারা এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। এক সময় কুমার সম্প্রদায়ের উপার্জনের এ শিল্প ছিল একমাত্র পেশা। তখন মাটির তৈরি এসব জিনিসপত্রের কদর ও চাহিদা ছিল ব্যাপক। বর্তমানে চাহিদা হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি এগুলোর বিক্রয় মূল্য না পাওয়ায় মৃৎশিল্পের ওপর নির্ভরশীল কুমার সম্প্রদায়ের অনেকে তাদের পৈত্রিক পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে।
বর্তমানে আমাদের দেশে অ্যালুমিনিয়াম, মেলামাইন, প্লাস্টিক, স্টিল, সিরামিক প্রভৃতি আধুনিক ও উন্নত শিল্পের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে না পেরে কুমার সম্প্রদায়ের হাতে তৈরি মৃৎশিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। অ্যালুমিনিয়াম, মেলামাইনের মতো নেই কোনো উন্নত যন্ত্রপাতি। এছাড়া মৃৎশিল্পের প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন- মাটি, লাকড়ি, রংয়ের উচ্চমূল্যের কারণে তারা সেভাবে এগিয়ে যেতে পারছে না। কাঠের চাকা ঘুরিয়ে তৈরি করতে হচ্ছে বিভিন্ন মাটির সামগ্রী। এতে পরিশ্রমও অনেক। এসব মাটির সামগ্রী তৈরি করার জন্য আধুনিক মেশিনও তৈরি হয়েছে। মেশিনের দাম বেশি হওয়ায় সবাই তা ক্রয় করতে পারছে না। তারা অনেকেই বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে দিয়ে চাষাবাদ, মুদি দোকানসহ অন্য ব্যবসা-বাণিজ্য এমনকি অনেকে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন।
এক সময় তারা মাটি ক্রয় না করে এসব সামগ্রী তৈরি করত। এখন পাহাড় থেকেও মাটি না পেয়ে ব্যবসা বন্ধ করেছেন অনেকে। কুমার নুরুল ইসলাম জানান, তারা এখনো অনেক কষ্টের মাঝেও বাপ-দাদার পেশায় রয়েছেন। তাদের এলাকার দানু মিয়া ও আলী নকিব দুই ভাই এ পেশায় পারদর্শী হয়ে বিদেশে চলে যান। সেখানে এ শিল্পের সামগ্রী তৈরি করে তারা বেশ লাভবান হয়েছেন বলে জানান।
কয়েকজন কুমার জানালেন, তারা বর্তমানে জীবজন্তুর খেলনার জিনিস ও ফুলের টব তৈরি করে পেশাকে ধরে রেখেছেন। কুমারদের পেশা, পারিবারিক ঐতিহ্যনির্ভর নারী-পুরুষ সম্মিলিতভাবে কাজ করেন। বাংলাদেশে মৃৎশিল্প ঐতিহ্য কার্য বহন করে চলেছে।
প্রাচীন শিলালিপি ও পুরাকীর্তিতে প্রাপ্ত বিভিন্ন নিদর্শন থেকে জানা যায়, এদেশে উন্নত ও গুণগতমানের মৃৎশিল্প ছিল। পরবর্তীতে শৈল্পিক, নৈপুণ্য, সৃজনশীল, ডিজাইনকৃত, মাথাযুক্ত হয়ে মৃৎশিল্প ধনাঢ্য ও সৌখিন ব্যক্তিদের ড্রয়িং রুমে, বিভিন্ন জাদুঘর, কারু প্রদর্শনীতে স্থান করে নেয়। কালের বিবর্তনে অন্য বস্তু যেমন, প্লাস্টিক বা ধাতু নির্মিত পণ্যের উদ্ভব ও ব্যবহার মৃৎশিল্পের অবক্ষয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বর্তমানে গ্রামীণ এলাকায় শুধু দরিদ্ররা মাটির তৈরি সাদামাটা ধরনের সস্তা জিনিসপত্র ব্যবহার করে। শহরের ধনীরা তাদের ড্রয়িং রুমের শোকেস বা অত্যন্ত রিং ডেকোরেশনে মাটির পণ্যটি ব্যবহার করে থাকে। দেখে যেন মনে হয় এ দেশের মৃৎশিল্পের ঐতিহ্যকে লালন করতে তাদের ড্রয়িং রুমে শোভা পাচ্ছে মাটির তৈরি পণ্য।
আজকাল অধিকাংশ শিল্পের জন্য আছে সরকারি-বেসরকারি ঋণ ও পৃষ্ঠপোষকতা। কিন্তু এ শিল্প সবচেয়ে অবহেলিত। উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা পেলে অনেক উন্নতমানের মাটির সামগ্রী তৈরি করতে পারবেন এ শিল্পীরা, যা দেশের বাজার ছাড়িয়ে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব বলে মনে করছেন চন্দনাইশের কুমার সম্প্রদায়। এজন্য প্রয়োজন কুমারদের সহজশর্তে ঋণ ও আধুনিক প্রশিক্ষণ। দৃষ্টিনন্দন মাটির তৈজসপত্র তৈরিতে সহায়তা করলে এ শিল্প দেশ ছেড়ে বিদেশেও স্থান করে নেবে তাদের আপন মহিমায়। অন্যথায় এ বিশাল খ্যাতিসম্পন্ন মৃৎশিল্প হারিয়ে যেতে পারে আমাদের দেশ থেকে।
এমএসএম / জামান

সততার সঙ্গে ৪০ বছরের চাকরির সমাপ্তি, কনস্টেবল আব্দুস সবুরকে বিদায়

তারাগঞ্জে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায়দের মাঝে ঢেউটিন ও চেক বিতরণ

লাকসাম পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বাল্যবিবাহ রোধে মতবিনিময় সভা

চট্টগ্রাম ডিসি পার্কে মৎস্য অবমুক্তকরণ, বৃক্ষরোপণ ও ফ্লাওয়ার জোনের উদ্বোধন

মুচির ধারালো অস্ত্রের কোপে কিডনি হারালেন কৃষকদল নেতা

মিরসরাইয়ে অভিনব কায়দায় প্রতারণার শিকার এক ব্যবসায়ি , থানায় অভিযোগ

ধামইরহাটে ১৭০ তম সান্তাল হুল দিবস পালিত

মেহেরপুরে ধর্ষণের মামলায় যাবজ্জীবন জেল ও জরিমান আদেশ দিয়েছে আদালত

বড়লেখায় ভিজিএফের ২৩৪ বস্তা চাল মাটিচাপা দিলো পৌর কর্তৃপক্ষ

আদমদীঘি উপজেলা শ্রমিক দলের আংশিক কমিটি ঘোষনা

নবীনগরে পুকুরে ভেসে উঠল অজ্ঞাত শিশুর লাশ

পটুয়াখালীতে দীর্ঘ ২৩ বছর পর জেলা বিএনপির সম্মেলন
