নৌকাকে বিজয়ী করতে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : অ্যাড. সিরাজুল মোস্তফা

চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে হবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে কেউ ঠেকাতে পারবে না। আমাদের মধ্যে অনেক ভুল বোঝাবুঝি হবে। যখনই শেখ হাসিনার নৌকাকে বিজয়ী করার কথা আসবে সেখানে কোনো বিবেধ থাকতে পারে না। দলের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করে কোনো লাভ নেই। যে কোনো সমস্যা আমাদের সাংগঠনিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে।  বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) বিকেল ৩টায় চকরিয়া পৌর শহরের এটিএন পার্ক কনভেনশন হলে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বিশাল কর্মী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা।

অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন,  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে দায়িত্ব দিয়েছেন সেটা অক্ষরে অক্ষরে পালন করব। এমন কোনো কাজ করব না যাতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। তিনি পৌর নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে নৌকাকে বিজয়ী করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন। 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, জেলার আটটি উপজেলা ও চারটি পৌরসভায় যেভাবে সম্মান পাওয়ার কথা আমরা সেভাবে পাইনি। এরপরও জননেত্রী শেখ হাসিনা যে ভালাবাসা দেখিয়েছেন সেটা ভোলার নয়। জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা হিসেবে আমরা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে যাব। গণভবনে বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে বাঁচানোর জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আপনারা আসতে না বললেও জেলা আ’লীগের নেতা হিসেবে আমরা আসব। 

সভাপতির বক্তব্যে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাংসদ জাফর আলম বলেন, পৌরসভা নির্বাচনে এমপিকে বাদ দিয়ে নৌকা বিজয় করার চেষ্টা এক ধরনের ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়। আমাকে অবহেলা করা হয়েছে। চকরিয়ার লোকজন যেখানে বড় নৌকা বিজয় করতে পারে সেখানে ছোট নৌকা বিজয় করা কোনো ব্যাপার নয়। তিনি আরো বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের যে কোনো যৌক্তিক সিদ্বান্ত আমরা মেনে চলব। কিন্তু চকরিয়া-পেকুয়ার ব্যাপারে কোনো সিদ্বান্ত নিতে হলে অবশ্যই তা এমপিকে জানাতে হবে।    

চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাংসদ জাফর আলমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত কর্মী সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা। প্রধান বক্তা ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান।  

এ সময় জেলা আ’লীগের যুগ্ম-সম্পাদক মাহবুবুল হক মুকুল, অ্যাডভোকেট রনজিত দাশ, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা অ্যঅডভোকেট আয়াছুর রহমান, আবদুল খালেক, বন ও পরিবেশ সম্পাদক জেলা পরিষদ সদস্য কমরুউদ্দিন আহমদ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক ইউনুছ বাঙ্গালী, শ্রম সম্পাদক গাজী মোস্তাক, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী, চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী, কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাইছারুল হক জুয়েল, উপ-দপ্তর সম্পাদক এমএ মনজুর, আমিনুর রশিদ দুলাল, পেকুয়া মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান উম্মে কুলসুম মিনু, পেকুয়ার আহ্বায়ক আবু হেনা মোস্তফা কামাল, সদস্য সচিব আবুল কাসেম, চকরিয়া পৌরসভার সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটু, সাধারণ সম্পাদক আতিক উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, পৌর নির্বাচনে নৌকার বিরোধিতার অভিযোগ এনে গত ৮ জুন চকরিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটুকে অব্যহাতি দেয় কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে একই দিন রাতে পৌরসভার প্রধান গেট চিংড়ি চত্বরে নৌকার প্রার্থী বর্তমান মেয়র আলমগীর চৌধুরী, পৌর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক উদ্দিন চৌধুরী ও দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়। এ হামলায় ঘটনায় স্থানীয় সাংসদ জাফর আলম, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটুকে দায়ী করেন হামলার শিকার নেতাকর্মীরা। এ ঘটনার পরদিন বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগ চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাংসদ জাফর আলমকেও তার দলীয় পদ থেকে অব্যহতি দেয়। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে চকরিয়া উপজেলা ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের রাজনীতির মাঠ। একপর্যায়ে জাফর আলম এমপি ও জাহেদুল ইসলাম লিটু সমর্থকরা পৌর শহরের প্রধান সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর চালায়। বিষয়টি নিয়ে সাংসদ জাফর আলম ও জেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য উঠে আসে। চকরিয়ার এহেন রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়টি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নজরে এলে গত ১৪ জুন ধানমন্ডিতে প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক কার্যালয়ে জরুরি বৈঠকে বসে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। বৈঠকে উভয় পক্ষকে সমঝোতা করে দেয় হয়। পরে ১৭ জুন কেন্দ্রীয় ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে কর্মী সভার সিদ্বান্ত নেয়া হয়। 

কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে ১৭ জুন বিকেল ৩টায় এটিএন পার্কে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ওই কর্মী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পৌরসভা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।