ঢাকা শনিবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৫

গবেষণায় বরাদ্দ বাড়লেও অসন্তুষ্ট গবেষকরা


অর্পণ ধর, রাবি photo অর্পণ ধর, রাবি
প্রকাশিত: ৭-৭-২০২২ দুপুর ১১:৩০

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বাজেটের সাথে সাথে গবেষণা খাতেও বরাদ্দ বেড়েছে। কিন্তু এ বরাদ্দ গবেষণা কাজের জন্য 'অপর্যাপ্ত' বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। বিদেশি সংস্থা থেকে অনুদান এনে গবেষণা সম্পন্ন করতে হচ্ছে তাদের। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বাজেটের বরাদ্দ 'অসন্তোষজনক' বলে মনে করছেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলছেন, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর গবেষণা বাজেটের তুলনায় আমাদের গবেষণা বাজেট অপ্রতুল। অর্থ সংকটের কারণে অনেকেই স্বাচ্ছন্দ্যে গবেষণা করতে পারেন না। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে দুই লাখ টাকা গবেষণার জন্য দেয়া হয়, তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। বিদেশ থেকে অনুদান নিয়ে গবেষণা কাজ পরিচালনা করতে হচ্ছে গবেষকদের।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, গবেষণাগারে যন্ত্রপাতির অভাব এবং অধিকাংশ যন্ত্রপাতি পুরনো হয়ে যাওয়ায় অনেক সময় গবেষণার সঠিক মান পাওয়া যায় না। এছাড়া শক্তিশালী কম্পিউটারের অভাবে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তরুণ গবেষকদের।

ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থ বছরের জন্য রাবির বাজেট দেওয়া হয়েছে ৪৫৬ কোটি ৭৫ লাখ। যেখানে গবেষণা বাজেট দেওয়া হয়েছে ১০ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের মাত্র ২.১৯ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে রাবির বাজেট ছিল ৪৩৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা‌। যার মধ্যে গবেষণার জন্য বরাদ্দ ছিল ১২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। যা মোট বাজেটের ১ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এর আগের অর্থবছরে বাজেট ছিল ৪৩২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। গবেষণা বরাদ্দ ছিল ৫ কোটি টাকা। যা মোট বাজেটের ১ দশমিক ১৫ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট বাজেট ৩৯৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা। গবেষণায় বরাদ্দ ছিল ৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। যা মোট বাজেটের ১ দশমিক ১০ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট বাজেট ৩৯৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। গবেষণায় বাজেট ছিল ৭৫ লাখ টাকা। যা মোট বাজেটের শূন্য দশমিক ১৯ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট বাজেট ৩৯০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। গবেষণায় বরাদ্দ ছিল ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। যা মোট বাজেটের শূন্য দশমিক ৮৯ শতাংশ।

এ বিষয়ে ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. ইয়ামিন হোসেনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে গবেষণার জন্য বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ১.৮৪%, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আমাদের দেশের গবেষণা সংস্কৃতি এখনো গড়ে উঠে নি। যে দেশ গবেষণায় যত উন্নত, তারা সামগ্রীকভাবে ততটা উন্নত। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন গবেষককে ২ লাখ টাকা দেওয়া হয়, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। আমার ১৬ বছরের কর্মজীবনে আমি সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ পেয়েছি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কিন্তু আমি এ সময়ে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ বিশ্ব ব্যাংকসহ অন্যান্য সংস্থা থেকে নিয়ে এসে গবেষণা করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ হচ্ছে গবেষণা করা। তারপর সে গবেষণা লব্ধ জ্ঞান দেশের কল্যাণে ছড়িয়ে দেওয়া।   

বরাদ্দের জন্য শিক্ষকরা গবেষণা বিমুখ হয়ে যান কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বরাদ্দের অভাবে শিক্ষকরা গবেষণা বিমুখ হয়ে যান। বরাদ্দ ব্যতীত কোনোভাবেই গবেষণার সংস্কৃতি গড়ে তোলা সম্ভব নয়। বুয়েট এবং বাকৃবিতে ইনসেনটিভের ব্যবস্থা রয়েছে। ভাল জার্নালে গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হলে, ২ হাজার ডলারের ইনসেনটিভের ব্যবস্থা করা হয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। গবেষণার টাকা প্রদানের যে জটিলতা আছে, সে কারণেও অনেকে গবেষণা বিমুখ হয়ে যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপক মঞ্জুর হোসাইন বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যে গবেষণা বাজেট হয়, তা মোটেও সন্তোষজনক নয়। আমার গবেষণা করতে যে টাকা ব্যয় হয়, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার ৫ থেকে ১০ শতাংশ টাকা পাই‌, বাকি টাকা বাইরে থেকে নিয়ে আসতে হয়। ৪র্থ বর্ষ বা মাস্টার্সের যেসব শিক্ষার্থীরা গবেষণা করে তাদের আর্থিক কোন সহায়তা দেয় না বিশ্ববিদ্যালয়। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা দেওয়া যতটা গুরুত্বপূর্ণ, গবেষণা করাও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ।

নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বখতিয়ার আহমেদ বলেন, বাজেট বাড়িয়ে বা কমিয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সংস্কৃতি গড়ে তোলা সম্ভব নয়।‌ বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এখানের উচ্চতর গবেষণা ডিগ্রী গুলো সবল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ গবেষক থাকা জরুরি। গবেষণার সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের ধরে রাখার ব্যবস্থা এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নেই। পিএইচডি, এমফিল গবেষকরা যেন অন্য কাজ না করে পূর্ণ সময় গবেষণায় দেয়, এজন্য তাদের যে সম্মানীর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, সেরকম কোন আয়োজনই নেই বিশ্ববিদ্যালয়ে।

তিনি আরও বলেন, উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে রাষ্ট্রকে গবেষণা নির্ভর হতে হবে। সরকারকে গবেষণার গুরুত্ব বুঝতে হবে। সরকার যতদিন গবেষণার গুরুত্ব বুঝতে পারবে না, ততদিন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার সংস্কৃতি গড়ে উঠবে না।

প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে কলা নিয়ে গবেষণা করছি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অল্প টাকা পেয়েছি, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। বিজ্ঞান অনুষদের বিষয়ে ২ লাখ টাকা দিয়ে গবেষণা করা বেশ কঠিন। সব জিনিসপত্রের দাম দিন দিন বাড়ছে। তাই আগের তুলনায় গবেষণা বরাদ্দ বাড়লেও তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য।  দেশে বেশি বেশি গবেষণা হলে, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে মন্ত্রনালয় পর্যায়ের নীতি নির্ধারকদের এ বিষয়টি সঠিক ভাবে বুঝতে হবে।

শিক্ষকদের গবেষণা বিমুখতার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাজেটের কারণে অনেক শিক্ষক গবেষণা বিমুখ হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট প্রতি বছর বাড়ে। কিন্তু গবেষণার জন্য যে বাজেট হওয়া দরকার তা আমরা পাই না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, বর্তমানে যে বাজেট আছে তা আসলেই অপর্যাপ্ত। তবে আমরা গবেষণা বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ছয়জন গবেষককে বাষট্টি লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়েছে। একশো এগারোটি গবেষণা প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে  পাঠানো হয়েছে।

এমএসএম / জামান

জকসু নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য পদপ্রার্থী অবন্তির ভাবনা

জকসু নিয়ে কেন্দ্রীয় পাঠাগার ও সেমিনার সম্পাদক পদপ্রার্থী ইমনের ভাবনা

ছাত্রদলের উদ্যোগে সুবিধাবঞ্চিত ও ছিন্নমূল শিশুদের সাপ্তাহিক স্কুল উদ্বোধন

শেকৃবিতে নিয়োগে আওয়ামী পুনর্বাসন, এলাকাপ্রীতি ও অর্থ লেনদেনের অভিযোগ

উত্তরায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন

জকসুতে কার্যনির্বাহী সদস্য পদে নির্বাচন করবে সাংবাদিক সম্পদ

দীর্ঘ তিন যুগ পর জাবিতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের মিছিল

জকসু নির্বাচন: ছাত্রশিবিরের ‘অদম্য জবিয়ান ঐক্য’ প্যানেল ঘোষণা

জকসু নির্বাচন: ছাত্রদল সমর্থিত "ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান" প্যানেল ঘোষণা,

এইচএসসির খাতা পুনঃনিরীক্ষণের ফল প্রকাশ

বাকৃবিতে প্রিসিশন ব্রিডিং-ভিত্তিক দুগ্ধ উৎপাদন উন্নয়ন বিষয়ক কর্মশালা

স্কুলে ভর্তিতে ৬৩ শতাংশই কোটা, অভিভাবকদের আপত্তি

বাকৃবিতে গরুর মাংস উৎপাদনে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব প্রযুক্তি বিষয়ক কর্মশালা