পরচুলা বানিয়ে ভাগ্যবদল মুসলিমাদের

কিছুদিন আগেও সংসারে খাবারের অভাবে অর্ধাহারে–অনাহারে দিন কাটাতেন এলাকার নারীরা। কেউ কাজ করতেন দিনমজুরির। কিন্তু এখন পরচুলা তৈরি করে তাঁদের অভাব দূর হয়েছে। প্রতি মাসে এখান থেকে আয় করছেন ৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা। এই টাকায়ই সংসারের সুখ ফিরে এসেছে ফুলছড়িসহ গাইবান্ধার প্রত্যন্ত এলাকার নারীদের। দিনাজপুর জেলার বাসিন্দা রাজু আহম্মেদ চুল দিয়ে ক্যাপ তৈরির প্রধান উদ্যোক্তা। তাঁর উদ্যোগে প্রথমে গাইবান্ধার খামারবোয়ালি কালির বাজার, হাজির হাট গ্রামে এই কর্মযজ্ঞ শুরু হয়।
গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে বোয়ালী ইউনিয়নের খামারবোয়ালি গ্রাম। এই গ্রামেই গড়ে তোলা হয়েছে সততা হেয়ার প্রসেসিং নামের পরচুলা তৈরির কারখানা। এখানে কাজ করছেন শিশুসহ ১৮০ জন নারী। এই প্রতিষ্ঠানের অধীনে চার উপজেলায় আরও নয়টি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এখানে ছোট বড় নানা ধরনের পরচুলা তৈরি হয়। তার মধ্যে অন্যতম ছোট চুলের ক্যাপ। এগুলো সদর উপজেলার তিনমাইল ও বাদিয়াখালী, বোয়ালী এবং সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলায়। এসব স্থানের নয়টি কারখানায় প্রয় পাঁচশ নারী কাজ করছেন।
ক্ষুদ্র চুল ব্যবসায়ীরা প্লাস্টিকসামগ্রী, আচার, চকলেটের বিনিময়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে নারীদের মাথার ঝরে পড়া চুল সংগ্রহ করেন। তাঁরা এসব চুল দিনাজপুরের মহাজনদের কাছে বিক্রি করেন। দিনাজপুরের কয়েকটি কারখানায় গুটিবাঁধা এসব চুল প্রাথমিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। পরে পরচুলা রপ্তানিকারক কারখানাগুলো মহাজনদের কাছ থেকে প্রতি কেজি চুল ১০ হাজার টাকায় কিনে তা চীনে পাঠিয়ে দেয়। চীনে এসব চুল দ্বিতীয়বার প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এসব প্রক্রিয়াজাত করা চুল বাংলাদেশে পাঠানো হয়। চীন থেকে প্রতি কেজি প্রক্রিয়াজাত করা চুল ৬০ হাজার টাকায় কিনতে হয়। এরপর চীনের ব্যবসায়ীরা চাহিদা অনুযায়ী পরচুলা তৈরির কার্যাদেশ দেন। গাইবান্ধার চার উপজেলার নয়টি কারখানায় মাসে প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার ক্যাপ তৈরি হচ্ছে। কয়েক মাস পরপর চীনে ক্যাপ পাঠানো হচ্ছে। প্রতি ক্যাপে লাভ হচ্ছে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা।
পরচুলা তৈরির জন্য নারীদের ৭ থেকে ১০ দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রত্যেক নারী মাসে ৭ থেকে ১০টি পরচুলা (চুলের ক্যাপ) তৈরি করতে পারেন। আকারভেদে একটি চুলের ক্যাপ তৈরি করতে একজন নারী শ্রমিক ৫০০ থেকে ২০০০ হাজার টাকা পান। চার উপজেলার নয়টি কারখানায় মাসে প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার চুলের ক্যাপ তৈরি হচ্ছে। কয়েক মাস পরপর চীনে ক্যাপ পাঠানো হয়। ক্যাপপ্রতি প্রতিষ্ঠানের লাভ হচ্ছে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা।
খামারবোয়ালি গ্রামে সততা হেয়ার প্রসেসিং কারখানায় গিয়ে পরচুলা তৈরির কর্মযজ্ঞ দেখা গেছে। দেখতে মনে হয়, পোশাক কারখানায় কাজ চলছে। কারখানার ভেতর নারীরা পরচুলা তৈরিতে ব্যস্ত। কেউ কাজের তদারকি করছেন, কেউ চুল মেপে দিচ্ছেন, কেউ তৈরি করা পরচুলা বুঝে নিচ্ছেন। এই প্রতিষ্ঠানে শিশু, কিশেরী ও মধ্যবয়সী অনেক নারী পরচুলা তৈরির কাজ করেন।
বোয়ালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেনির ছাত্রী রাজিয়া সুলতানা। দুই বোন, এক ভাই নিয়ে তাদের পাঁচ সদস্যের সংসার। বাবা আদম মিয়া পেশায় কৃষক। সংসার চালাতে বাবাকে সহায়তা করতে রাজিয়া পরচুলা তৈরির কাজ করেন। রাজিয়া জানান, পড়াশুনার পাশাপাশি প্রায় একবছর ধরে সে এখানে কাজ করছেন। প্রতি মাসে তার ছয় থেকে আট হাজার টাকা আয় হচ্ছে। এই টাকা দিয়ে নিজের পড়াশোনার খরচ চালানোর পরও সংসারে জোগান দিতে পারছেন।
সাহেব উল্লাহ সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেনির ছাত্রী মুসলিমা আক্তার। অটোভ্যান চালক বাবা আব্দুল মতিনের আয়ে দুই ভাই দুই বোন নিয়ে ছয়জনের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। বাধ্য হয়ে সে পরচুলা তৈরির কাজ নেয়। মাসে সে আকারভেদে ৭ থেকে ১০টি ক্যাপ বানাতে পাড়ে। এতে তার আয় হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা।
সততা হেয়ার প্রসেসিং এ বেশি মজুরী পাওয়া ৮ম শ্রেনির ছাত্রী, সুমি আক্তার। বাবা পেশায় কামার। সারাদিন কাজ করেও পড়াশুনার সামন্য সমস্যা হলেও সংসারের খরচ চালাতে আসতেই হয় তাকে। সুমি প্রতি মাসে ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা মাসে আয় করে এই প্রতিষ্ঠান থেকে। এই টাকা সংসারের খরচের যোগান দিয়ে নিজের পড়াশুনা ও হাত খরচ করে।
শুধু শিশু-কিশোরীরাই নয় কৃষক হাসান মিয়ার স্ত্রী আলেফা বেগম (৪০) দুই ছেলে-মেয়ের জননী। দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতির বাজারে কৃষি কাজ করে সংসার চালানো সম্ভব হয়না তাই সংসারের বাড়তি রোজগারে এখানে কাজ করেন তিনি। তিনি মাসে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় করেন। ছেলে মেয়ের লেখা পড়া থেকে শুরু করে সংসারের যাবতীয় খরচ চালান তিনি।
সততা হেয়ার প্রসেসিং এর তদারকির দায়িত্বে থাকা সম্পা বেগম বলেন, সংসারের বাড়তি যোগান দিতে দিনাজপুর এমনই এক প্রতিষ্ঠানে মাসখানেক কাজ শিখে এসে এখানে কাজ করছেন তিনি। দুই তিন দিন চুলের গিটের প্রশিক্ষণ প্রদানের পরেই তাদের মূল কাজে দেয়া হয়। পরচুলা তৈরির কাজ করে অনেক নারী এখন নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন।
সততা হেয়ার প্রসেসিং এর ম্যানেজার হুমায়ুন কবির বলেন, এই কারখানা থেকে প্রায় প্রতি মাসে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা মজুরী দিতে হয়। আমাদের নয়টি কারখানায় নয়জন প্রশিক্ষিত সুপারভাইজার তাদের সুপারভিসনে প্রায় পাঁচশ নারী পরচুলা বানানোর কজ করে।
এ ব্যাপারে সততা হেয়ার প্রসেসিং কারখানার ব্যবস্থাপক ফিরোজ কবির জাগো নিউজকে বলেন, ১ হাজার ৬শ থেকে ২ হাজার ক্যাপ তৈরি করে এই প্রতিষ্ঠান। প্রাথমিক অবস্থায় লাভ কম হলেও এলাকায় কাজ করার মতো দক্ষ শ্রমিক পেলে আরও ২০ থেকে ২৫টি কারখানা তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর।
এ বিষয়ে গাইবান্ধা বিসিকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক রবীন চন্দ্র রায় বলেন, পরচুলা তৈরির এই প্রতিষ্ঠান গুলো জেলার আর্থথ-সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখছে। উদ্যোক্তারা চাইলে তাঁদের ঋণসহায়তাসহ সার্বিক সহযোগীতা দেওয়া হবে।
এমএসএম / এমএসএম

মিরসরাইয়ে মহাসড়ক সংলগ্ন অবৈধ বাউন্ডারি ওয়াল গুঁড়িয়ে দিল উপজেলা প্রশাসন

চিলমারীতে যৌথ অভিযানে, অনলাইন জুয়ার সরঞ্জামসহ দুই যুবক আটক

পারিবারিক দ্বন্দ্বে আহত হয়েও ‘জুলাই যোদ্ধা’ গেজেটে নাম পেলেন বাঘার জাহিদ

মহেশখালীতে শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা, ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড

কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর অনুষ্ঠিত

তাড়াশে আগুনে বসত ঘর পুড়ে ছাই, ১০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি

সুবর্ণচরে বিশিষ্ট সমাজসেবক আকবর হোসেনকে সংবর্ধনা

কোটালীপাড়ায় পুকুরে ডুবে প্রতিবন্ধী যুবকের মৃত্যু

ধামরাইয়ে পোশাক কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

মির্জাগঞ্জে মাসিক আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত

বগুড়ার শেরপুরে গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা, হাসপাতালে ভর্তি

বোয়ালমারীতে প্রাণি সম্পদ দপ্তরের উদ্যোগে হাঁস বিতরণ কর্মসূচি পালন

লন্ডনে তারেক রহমানের সাথে বিএনপি নেতাদের সাক্ষাৎ
Link Copied