ভোলার দক্ষিণ আইচা থানা পুলিশ যখন মাদক বিক্রেতার বন্ধু

 

দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে জাতিকে রক্ষার নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার। ঠিক সেই মুহুর্তেও দেশকে ধ্বংসের হাতিয়ার হিসেবে করোনা ভাইরাসকে উপেক্ষা করে দক্ষিণ আইচা থানা পুলিশের সাথে বন্ধুত্ব করে অভিনব পন্থায় ফাঁকি দিয়ে লোকচক্ষুর অন্তরালে তরুণ প্রজন্মকে ঠেলে দিচ্ছে ভয়াবহ এই মাদকের নেশায়। বর্তমানে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সচেতনতা বৃদ্ধিতে দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। ঠিক সেই সুযোগে সক্রিয় হয়ে উঠেছে নব্য গজিয়ে ওঠা ইয়াবা ব্যবসায়ীরা।

 

স‍ূত্র জানায়, ভয়াবহ এ মাদক সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানা এলাকায়। এক সময়ে এলাকাটি ছিল সম্পূর্ণ মাদকমুক্ত। বর্তমানে এ এলাকাটি মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। বাড়ছে মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের সংখ্যা। এলাকাজুড়ে মাদকের বিস্তার এতটাই বিস্তার লাভ করেছে যে, ১২ বছরের শিশুটিও মাদক বিক্রি ও সেবন থেকে বাদ পড়ছে না। এছাড়াও এলাকাটিতে অবাধ মাদক ব্যবসা ও সেবনের কারণে উঠতি বয়সের যুবকরা দিন দিন মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। ফলে বাড়ছে সামাজিক ব্যাধি, দূরত্ব, ধংস হচ্ছে পরিবার।

 

এলাকাবাসী জানায়, এলাকাটিতে দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসা চলে আসছিল। প্রশাসনের অভিযানে চিহ্নিত ২-১ জন ধরা পড়লেও অধিকাংশই বিভিন্ন কৌশল পালটে থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ভয়াবহ এ মাদক সিন্ডিকেটের সাথে দক্ষিণ আইচা থানা এলাকায় মুছা মাজির ছেলে কুখ্যাত সন্ত্রাসী ও ডাকাত বাহিনীর সদস্য বাবুল বেপারী ও গনি সর্দারের ছেলে আবদুর রহিম সর্দারসহ অসংখ্য উঠতি বয়সি তরুণ জড়িত রয়েছে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ওরা দীর্ঘদিন ধরে এলাকাটির বিভিন্ন স্থানে গিয়ে মাদক সেবন ও কেনা-বেচার সাথে জড়িত। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে অবস্থান বদলে ইয়াবা বিক্রির একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে গজিয়ে ওঠা নব্য এ মাদক ব্যবসায়ীরা। তাদের কথামতো নির্ধারিত স্থানে গিয়ে চাহিদামতো ইয়াবা কিনছে ও তা সেবন করছে মাদকসেবীরা। এরমধ্যে একাধিক মাদক ব্যবসায়ী এলাকাবাসীর তোপের মুখে মাদক সিন্ডিকেটের সাথে জড়িতদের নামও প্রকাশ করেছে।

 

একাধিক মাদক ব্যবসায়ী জানায়, এলাকাটিতে মাদকের মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত রয়েছে মুছা মাজির ছেলে কুখ্যাত সন্ত্রাসী ও ডাকাত বাহিনীর সদস্য বাবুল বেপারী ও গনি সর্দারের ছেলে  আবদুর রহিম সর্দার। বাবুল বেপারী বর্তামানে দক্ষিণ আইচা থানা পুলিশের কাঁধে হাত দিয়ে মাদক বিক্রিসহ এলাকার বিভিন্ন স্থানে জুয়া খেলার আসর বসিয়ে যুবসমাজকে নষ্ট করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।

 

মাদক ব্যবসায়ীরা জানায়, বর্তমানে চরফ্যাশনের দক্ষিণ আইচা এলাকাটিতে মাদকের গডফাদার হিসেবে বাবুল বেপারীকে বলা হয়। বাবুল বেপারী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থান থেকে মাদক ক্রয় করে এলাকার উঠতি বয়সী তরুণদের কাছে বিক্রি করছে। আর এ পুরো বিষয়টি  তার নিজ কৌশল অবলম্বন করে মাদকের বিস্তার ঘটিয়ে যাচ্ছে। অভিনব এ কৌশল অবলম্বন করে বাবুল বেপারী ও তার সহযোগীরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

 

জানা যায়, বাবুল বেপারী মাদক ব্যবসায় জড়িত হওয়ার পর হঠাৎ করেই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে। ক্রয় করেছে জমিও। বাবুল বেপারীর বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে স্থানীয়  একাধিক পত্রিকায় মাদক সংশ্লিষ্টতার সংবাদও প্রকাশ করা হয়।বাবুল বেপারীকে মাদক ও বিভিন্ন অপরাধসংক্রান্ত বিষয়ে সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে দক্ষিণ আইচা থানা পুলিশ বলে অভিযোগ রয়েছে। ইতিপূর্বে বাবুল বেপারীর আপন ভাগ্নে আবদুর রহিম সর্দার মাদক মামলায় কারাভোগ করেছে। রয়েছে একটি মাদক মামলাও। যদিও জামিন পায় মাদক থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার শর্তে। কিন্ত বর্তমানে এলাকায় রয়েছে মাদক বিক্রির বিশাল সিন্ডিকেট। মাদক ব্যবসায়ী বাবুল নিজে ইয়াবা সেবনের পাশাপাশি বিক্রিসহ এলাকার ১৫-১৬ বছর বয়সী তরুণদের বাধ্য করছে মরনব্যাধি এ মাদক ব্যবসায় ও জুয়া খেলায়।

 

এলাকাবাসী জানায়, বাবুল বেপারী এলাকার চিহ্নিত মাদক সেবনকারী ও ব্যবসায়ী। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মাদক বিক্রিসহ সেবনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এলাকাবাসী বিভিন্ন সময়ে তাদের সাবধান কিংবা প্রতিবাদ করতে গেলে উল্টো এলাকাবাসীদের বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। তাই এদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতেও রাজি হয় না। দিন যতই যাচ্ছে, বেপরোয়া হয়ে উঠছে দক্ষিণ আইচা এলাকার মাদকের এ ভয়াবহ সিন্ডিকেট। এদের লাগাম টেনে ধরতে না পারলে এলাকাটি মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হবে। তরুণ প্রজন্মকে মাদকের এ ভয়াবহ ছোবল থেকে রক্ষা করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। শীঘ্রই এলাকাটির স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে এলাকাবাসী জেলা পুলিশ সুপার ও চরফ্যাশনের সহকারী পুলিশ সুপারে সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।  

 

এ বিষয়ে দক্ষিণ আইচা থানার ওসি হারুন অর রশিদ  জানান, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান সর্বদা জিরো টলারেন্স।