শক্তিশালী ৩ স্বতন্ত্রপ্রার্থীতে সুবিধা মমতাজ বেগমের মানিকগঞ্জ-২ আসনে প্রার্থী ১৫ জন, হ্যাভিওয়েট ৪ জন

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-২ আসন হতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীসহ মোট ১৫ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। গত বৃহস্পতিবার ৩০ নভেম্বর ছিল মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। এই দিনেই সিংগাইর উপজেলা চত্তরে দেখা মেলে স্ব স্ব নেতাকর্মীদের উপচে পড়া ভীড়। বেশ ধুমধামের সহিত পুলিশ ও আনসার বিডিবিদের উপস্থিতিতে নিরবিচ্ছিন্নভাবে একে একে প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র্ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে দাখিল করেন।
ঐ দিন শুরুতেই বেলা ১২ টার দিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষ বিশিষ্ট শিল্পপতি দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু তাঁর মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। অতপর এ আসনের জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি এসএম আব্দুল মান্নান, স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন সিংগাইর উপজেলা পরিষদের একাধিকবারের চেয়ারম্যান প্রবীন আওয়ামীলীগ নেতা আলহাজ্ব মুশফিকুর রহমান খাঁন হান্নান, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকির কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের গামছা প্রতীক পাওয়া তানভীর হাসান, স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল, মনোনয়নপত্র দাখিল করেন নৌকা মনোনয়ন প্রার্থী টানা তিন বারের এমপি বিশ্ব বরেন্য আন্তর্জাতিক কন্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম। এছাড়াও অন্যান্ন প্রার্থী হচ্ছেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের এ্যাড. ফেরদৌস আহমেদ আসিফ, বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টির একতারা প্রতীকের সাংবাদিক একে নাহিদ,স্বতন্ত্রপ্রার্থী সারোয়ার আলম, শাহাবুদ্দিন আহমেদ চঞ্চল, বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির জাকির হোসেন, জাকের পার্টির আজিজুর রহমান, তৃণমূল বিএনপির জসিম উদ্দিন, বিএনএম-এর একেএম ইকবাল, জাসদের রফিকুল ইসলাম সিদ্দিকীসহ মোট ১৫ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
এদিকে টানা তিন বারের এমপি মমতাজ বেগমের সাথে তুমুল লড়াই করার মত রয়েছেন তিন জন হ্যাভিওয়েট প্রার্থী। ভোটার সাধারণদের নিকট তাদের জনপ্রিয়তাও রয়েছে চোখে পড়ার মত। ঠিক যেন হ্যামিলনের সেই বাঁশিওয়ালা। সে তালিকায় রয়েছেন দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল, মুশফিকুর রহমান খাঁন হান্নান ও দানবীর খ্যাত শিল্পপতি দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সিংগাইরে আওয়ামীলীগকে বলিষ্ঠ নেতৃত্বদানকারী ছিলেন, ঘটু ডাক্টার, ছাইদুর রহমান খান, শাহাদৎ মাস্টার, জিলকদ আলী প্রমূখ। তবে বিএনপির মরহুম এমপি ও মন্ত্রী শামসুল ইসলাম খান নয়ামিয়ার টানা একচ্ছত্র আধিপত্যে দুর্ব্ল হয়ে পড়ে সিংগাইরের আওয়ামীলীগ। এ অঞ্চল বিএনপি অধ্যুষিত ঘাটিতে পরিচিতি পায়। অবস্থা এমন হয় যে, প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধুর নাম নেয়ার মত নেই কোন বীর। সেই দুর্ব্লল আওয়ামীলীগকে শক্তিশালীতে রুপান্তর করতে রাজধানী ঢাকা হতে নিজ গ্রামে ফিরে কঠোর আন্দোলন-সংগ্রাম করে পুন:জ্বীবিত করেন দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল। অবমূল্যায়িত ত্যাগী ও দু:সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামে যোগদানকারী শত শত নেতাকর্মীরাই মূলত এখন টুটুলের রাজপথের সঙ্গী। মফস্বলে রয়েছে জনপ্রিয়িতাও। তবুও একচেটিয়া বিএনপি অধ্যুষ্যিত এলাকায় নির্বাচনে পাশ করতে পারেননি তিনি। অপরদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা মুশফিকুর রহমান খান হান্নান ছিলেন ছাত্র অবস্থায় বঙ্গুবন্ধুপ্রেমী। স্বাধীনতার আগে ও পরে রাজপথের পরীক্ষিত লড়াকু সৈনিক হান্নান সিংগাইরের আপামর জনসাধারনদের পাশে থাকেছেন সবসময়ই। রাজনীতিতে পদবঞ্চিত বহু ত্যাগী নেতাকর্মীরাই তার মূল শক্তি। এছাড়াও মফস্বলে কৃষক-শ্রমিকদের কাছে তিনি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ্। অত্যন্ত বিচক্ষণতার সহিত গ্রামাঞ্চলের লোকদের বিভিন্ন ঝামেলা নিরসনে নির্ভয়ে আসেন তার কাছে। দেশ প্রেমিক এ নেতা এলাকার লোকদের বিপদ পরিত্রানে বড় ভূমিকা রাখেন বরাবরের মতোই। আধুনিক সিংগাইর বিনির্মাণ করাই তার লক্ষ্য। দেওয়ান বাড়ির আরেক চমক হচ্ছেন দানবীর ও বিশিষ্ট শিল্পপতি দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু। তিনি দানবীর হিসেবেই বেশ পরিচিত। তার এলাকায় জামালপুরে প্রায় ৩০০ গৃহহীনদের দিয়েছেন জমি ও ঘর তৈরী করে। এতে এক নতুন যুগান্তরের সূচনা করেন তিনি যা চোখে পড়ে কেবলই এ সভ্যতার এক মহাকালে। সজিদ মাদ্রাসা, মন্দির, স্কুল ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনে দেদারছে দান করে অল্প দিনেই হয়ে গেছেন জনতার নেতা। প্রায় সভাতেই লোকারণ্যে ভরে উঠত জনসভা।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লষকরা মনে করেন, এ তিন জনপ্রিয় নেতা সবারই ভোটের মাঠে রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। তাদের ত্রিমুখী টানাটানিতে শুধু মাত্র নৌকার ভোট পেয়ে ৪র্থ্ বারের মত এমপি হবার সম্ভাবনা বেশি মমতাজ বেগম এমপির। অন্যদিকে তিন জন মিলে একজনকে প্রার্থী করলে এমপি মমতাজ বেগমকে ঠেকানো সম্ভব। না হলে টানা ৪র্থ্ বারের মতো পুনরায় এমপি হবেন এমপি মমতাজ বেগম।