গাজীপুর ৫ আসনে ভোট যুদ্ধে এগিয়ে আখতারউজ্জামান

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা শেষ। রাত পোহালেই ভোট যুদ্ধ শুরু। গাজীপুর ৫ আসনে ভোটের হিসাব-নিকাশে শক্ত-পোক্ত অবস্থায় আছেন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারউজ্জামান ও তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের মেহের আফরোজ চুমকি। বাকিরা কাগজে কলমে প্রার্থী থাকলেও বেশীরভাগ প্রার্থী নেই প্রচার প্রচারনায়। ভোটারদের সাথেও নেই তেমন যোগাযোগ। সাধারণ ভোটাররাও বেশীরভাগ প্রার্থীকেই চিনেন না।

নির্বাচনের মাঠে সক্রিয় আছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ডাকসুর সাবেক দুই বারের জিএস ও ভিপি, জেলা পরিষদের সাবেক দুইবারের চেয়ারম্যান, সাবেক সংসদ সদস্য আখতারউজ্জামান ট্রাক প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

গাজীপুর-৫ আসন কালীগঞ্জ উপজেলা, পুবাইল (গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের আংশিক) ও বাড়িয়াসহ গঠিত এই নির্বাচনী এলাকার ভোটার সংখ্যা প্রায় তিন লাখ, তেত্রিশ হাজার। আওয়ামীলীগে ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই এলাকায় আওয়ামী লীগের নিশ্চিত আসন হিসেবে ধরা হয়। কারণ স্বাধীনতার পরে গত এগারটি সংসদ নির্বাচনে আট বারই আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।

এই আসনের অন্য প্রার্থীরা হলেন, ইসলামীক ফ্রন্ট বাংলাদেশ এর প্রার্থী মাওলানা আলামিন দেওয়ান আল আবেদী (চেয়ার), স্বতন্ত্র প্রার্থী আমজাদ হোসেন স্বপন (ঈগল পাখী) বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির উর্মি ভান্ডারী (একতারা), গণফোরামের প্রার্থী সোহেল মিয়া (উদীয়মান সূর্য), জাতীয় সমাজতান্ত্রীক দল -জাসদ (মশাল প্রতীক) নিয়ে নির্বাচন করছেন। এছাড়া জাকের পার্টির এন এম মরিরুজাম্মান প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন এবং জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী লাঙ্গল প্রতীকের এম এম নিয়াজ উদ্দিন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।

নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকে নৌকা ও ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী ও তাদের কর্মীরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে সাধারণ ভোটারদের নিজেদের পক্ষে টানার চেষ্টা করছেন। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এই দুই জনের মধ্যেই ভোট যুদ্ধের লড়াই হবে বলে বুঝা যাচ্ছে। উপজেলার ও বেশ কয়েকটি হাট-বাজারে ঘুরে লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, আওয়ামী লীগের সাবেক নেতাদের একটি অংশ ও বিভন্ন ইউনিয়ন এর চেয়ারম্যানরা সমর্থন করছেন সাবেক সংসদ সদস্য আখতারউজ্জামান কে। পাশাপাশি বিএনপি নির্বাচনে না আসায় বিএনপি পন্থী ভোটারদের একটি অংশ আখতারউজ্জামান এর ট্রাক প্রতীকে ভোট দিবেন। 

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক হিসেবে পরিচিত ও আওয়ামীলীগ পন্থী বেশিরভাগ ভোটার ট্রাক মার্কায় ভোট দিবেন।

গাজীপুর-৫ আসনের আসনের কালিগঞ্জ উপজেলা, কালীগঞ্জ পৌরসভা, সাবেক পূবাইল ইউনিয়ন'সহ বাড়িয়া ইউনিয় ও নাগরী ইউনিয়নের বিভিন্ন নেতা-কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রচারণায় নেমে সাধারণ ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন তারা। জয়ের ব্যাপারে তারা শতভাগ আশাবাদী। বিজয়ের বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা অনেকটাই দৃঢ় আশাবাদী। তবে তাদের ভয় শুধু ভোটের দিন প্রশাসনিক প্রভাবে কোনো কৌশল খাটানো হয় কি না, তা নিয়ে। কায়দা-কানুন না করলে জয়জয়কার হবে বলে বিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের ভেতরে। এই আসনের ছয়টি ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তাদের অনুসারীদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র দেখা গেছে।

সাধারণ ভোটাররা জানান, বঙ্গবন্ধুর কন্যা আমাদের সুখে দুঃখে পাশে আছেন। তাই আমাদের যোগ্য ব্যক্তিকে নির্বাচিত করে বাংলাদেশের প্রধামন্ত্রীকে গাজীপুর ৫ আসনটি উপহার তুলে দিতে পারবো। এই আসনের নতুন ও তরুণ ভোটাররা মনে করছেন আখতারউজ্জামান নির্বাচিত হলে তরুণদের মূল্যায়ণ করবেন তাই তারা ট্রাক মার্কায় ভোট দিবেন।

বঞ্চিত ও প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতারা মনে করছেন শেখ হাসিনার আস্থাভাজন আখতারুজ্জামান'কে ট্রাক মার্কায় ভোট দিবেন আওয়ামীলীগের ভোটাররা। শেষ সময়ে ট্রাক মার্কার জয় হবে।

তুমিলিয়া ইউনিয়ন থেকে বারবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান মোঃ আবুবকর মিয়া বলেন, আমার ইউনিয়ন থেকে ৮০ ভাগ ভোট ট্রাক মার্কায় পড়বে, এবং ইনশাআল্লাহ আগামী ৭ জানুয়ারি ট্রাক মার্কায় ভোটের ব্যবধান হবে প্রায় লক্ষাধিক, ভোটের মাধ্যমে আমরা সৎ ও জনপ্রিয় একজন ব্যক্তিকে নির্বাচিত করবো ইনশাআল্লাহ।

অধিকাংশ ভোটার মনে করছেন ও ট্রাক প্রতীক প্রার্থী ছাড়া অন্য কোন প্রার্থী আমাদের কালীগঞ্জে ভোট পাবেনা, এমনটাই বলেছেন কালীগঞ্জ পৌর আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি ও কালীগঞ্জ পৌর ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো: বাদল হোসেন।

মোক্তাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ শরিফুল ইসলাম সরকার (তোরণ) বলেন, নির্বাচন একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমার ভোট আমি দেবো তাকে খুশি তাকে দেবো এই স্লোগানকে সামনে রেখে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আখতারউজ্জামান কে ট্রাক মার্কায় বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়যুক্ত করে কালীগঞ্জ কে একটি আদর্শ উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলবো বলে আমার বিশ্বাস।

জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের তৌহিদুজ্জামান মোল্লা বলেন, আমাদের কালীগঞ্জ থেকে ঢাকা যাওয়ার কোন যানবাহন নেই, আখতারউজ্জামান এমপি হলে ঢাকার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্তা খুব দ্রুত সম্ভব হবে, তাই আমি আমরা পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনসহ সবাই  ৭ তারিখে ট্রাক মার্কায় ভোট দিবো। আমাদের পুনসহি এলাকার সবাই ট্রাক মার্কায় ভোট দিবে।