বোয়ালখালীতে মুক্তিযোদ্ধার উপর হামলা, আটক হয়নি কেউ, মামলা তুলে নিতে চাপ
চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে এক বীর মুক্তিযোদ্ধার উপর বর্বর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ নামধারি কয়েক নেতা। এই ঘটনায স্থানী থানায় মামলা করা হলেও শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পুলিশ কাউকে আটক করেনি।জানা যায়, গত ১ ফেব্রুয়ারি বোয়ালখালী পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম কদুরখীল ডেপুটি পাড়ার বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা মো. ইসহাক মিয়ার উপর হামলা করে রক্তাক্ত করেছেন ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল মোনাফ ও তার সহযোগীরা। ঘটনার বিষয় উল্লেখ করে মুক্তিযোদ্ধা মো. ইসহাক বাদী হয়ে ছাত্রলীগ নেতা মোনাফসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়ের করেছেন। (বোয়ালখালী থানা মামলা নং ০২ তাং- ০২/০২/২০০৪ইং)।
মামলায় আসামীরা হলেন, বোয়ালখালী উপজেলার ১ নং ডেপুটি পাড়ার মৃত আবদুল মান্নােনর পুত্র আবদুল মোনাফ (৩৮), মৃত আহমদ ছফার পুত্র মিন্টু (৪০), মৃত আব্দুল মান্নানের দুই পুত্র মো: শাহাজাহান (৪২) ও ইব্রাহিম (৩৫), ইদ্রিস সাইফুর পুত্র ইমন (২০), মুন্না (২৮), বিজয় (২৫) সহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন। মামলার এজাহারের বর্নানা মতে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধো ইসহাক ঘরের ছাদে রড ওয়েল্ডিং এর কাজে জন্য রডমিস্ত্রি শাহজাহানের সাথে ৬ হাজার টাকার মৌখিক চুক্তি হয়। শাহজাহান নিজে না করে কৌশলে নয়নকে কাজটি দিয়ে দেন ৫ হাজার টাকা বিনিময়ে, নয়ন সন্তুষ্ট হয়ে ইসহাকের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা গ্রহন করলেও শাহজাহান ৫ হাজার টাকা নিতে অনীহা প্রকাশ করেন। শাহাজাহান একপর্যায়ে টাকা না নিয়ে ভাগ বিতন্ডতায় জড়িয়ে পড়ে, ইসহাক দেখে নিবে বলে হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল হতে চলে গিয়ে কিছুক্ষণ পর তার সংবদ্ধ দলবল সাথে নিয়ে অস্ত্র সস্ত্র সজ্জিত হয়ে মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে এলোপাথাড়ী হামলা চালায়, অশ্লীল ভাষায় গালি গালাজ করেন। জোরপূর্বক ঘরে ঢুকে তাকে টানা হেঁছড়া করেন, এক পর্যায়ে ইছাকের উপর ছাত্রলীগ নেতা
মোনাফের নিদের্শে একযোগে সবাই হামলা চালায়। মুক্তিযোদ্ধার বৃদ্ধা স্ত্রী রোকেয়া খাতুন, পুত্রবধূ জান্নাতুল ফেরদৌস, এই হামলায় বাঁধা প্রদান করতে গেলে তাঁদের উপরও হামলা করে, নারীদের উপর শ্লীলতাহানী করা হয়েছে বলে ইসহাকের পরিবার জানান, আসামী মিন্টু মুক্তিযোদ্ধার প্রবাসী ছেলেকে হত্যা করার উদ্দেশ্য গলা চেপে ধরে শ্বাসরুদ্ধ করে, ছাত্র লীগনেতা মোনাফ ইসহাককে হত্যার উদ্দেশ্য লাঠি দিয়ে মাথা আঘাত করে, তাঁদের আঘাতে বৃদ্ধ মুক্তিযুদ্ধো ইসহাক মাথা ও চোখে প্রচন্ড আঘাত প্রাপ্ত হন। পরিবারের মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ও পুত্রবধুকে বোয়াখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথামিক চিকিৎসা করে ছেড়ে দিলেও
মুক্তিযোদ্ধা ইসহাকের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। এই ঘটনায় মামলা দায়ের হলেও রহস্যজনক কারনে আসামিদেরকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
এছাড়া, আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় মামলা দায়েরের কৈফিয়ত চান এবং মামলা তুলে নিতে চাপ প্রয়োগ করে ছাত্রলীগ নেতা মোনাফের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা পুনরায় হামলা করার চেষ্টা করেন। মুক্তিযোদ্ধা ইসহাকের ঘর ঘিরে রেখে পুরোপরিবারকে জিম্মি করেন বলে জানা যায়।
২৪ ঘন্টার মধ্যে মামলা তুলে না নিলে পুরো পরিবারে উপর পুন:রায় কঠোর হামলা করে বাড়িঘর দখল করে নেওয়া হবে বলে তারা প্রক্যশ্যে হুমকি দেন। হামলার শিকার হয়ে মামলা করার কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানা যায়। এবিষয়ে বোয়ালখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসহাব উদ্দিন বলেন, ঘটনার পরপর আমি মামলা নিয়েছি, আসামীদেরকে শাস্তির আওতায় আনার ব্যবস্হা করা হবে, তিনি আরো বলেন আমি মুক্তিযোদ্ধার প্রতি শ্রদ্ধাশীল,আসামী যেই হোকনা কেন তাকে শাস্তি পাইতে হবে। এ এস আই সাইফুল শরাফত ও ওসমানের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণের বিষয় জানতে চাইলে ওসি বলেন আমি কিছুই জানিনা, যদি এ এস আই সাইফুল নিয়ে থাকে তবে প্রমাণ স্বাপেক্ষে আইনগতভাবে ব্যবস্হা নেওয়া হবে, আসমীদের গ্রেফতারে অভিযান চলমান আছে।
তবে ঘটনার মূলহোতা মোনাফ ও মিন্টু জামিন না নিয়ে প্রকাশ্যে চলাফেরা করছে। অন্যদিকে আসমী গ্রেফতার করার কথা বলে এ এস সাইফুল তার জন্য ১০ হাজার, ওসি আছহাব উদ্দিনের জন্য ২০ হাজারসহ মোট ৩০ হাজার টাকা জনৈক শরাফত এবং ওসমানের মাধ্যমে ঘুষ গ্রহণ করেন। রহস্যজনক কারনে মূল আসামীরা আটক হয়নি। এ এস আই সাইফুলকে টাকা দেওয়ার বিষয়টি প্রতিবেদককে ইসহাকের পরিবার নিশ্চিত করেছেন।
আহত বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক তাঁর ও পরিবারের উপর হামলার সুষ্ঠু বিচার ও তার জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী,আই জি পি, ডি আই জির,পলিশ সুপারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এমএসএম / এমএসএম