কর্ণফুলীতে অভিযানেও থামছেনা হাক্কানীর পরিবেশ দূষণ
গত ১৭ অক্টোবর পরিবেশ অধিদপ্তরের মেয়াদোত্তীর্ণ ছাড়পত্র ও পরিবেশ দূষণের দায়ে নগদ ১ লক্ষ টাকা জরিমানা ও কারখানা বন্ধের নির্দেশ দেন ভ্রাম্যমান আদালত ও পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু এমন নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে নির্দ্বিধায় চলছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জ্যারটেক এলাকায় হাক্কানী খাদ্য ফ্যাক্টরি উৎপাদন কার্যক্রম। অকার্যকর বায়োপ্ল্যান্ট দেখিয়ে অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে প্রাণী খাদ্য উৎপাদন করছে কারখানাটি। ভ্রাম্যমান আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ অমান্য করে তারা প্রতিনিয়তই নিজেদের মতো উৎপাদন কার্যক্রম চালু রেখেছে। প্রতিদিন বিকাল চারটার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন কার্যক্রম চলছে বলে স্থানীয়রা জানায়। বিকেল বেলা থেকে শুরু করে শেষ রাত অবধি হাক্কানী কর্পোরেশনের খাদ্য ফ্যাক্টরির সামনে সহ আশপাশ দিয়ে কোন মানুষ যাতায়াত করলে অনায়াসেই তার নাকে দুর্গন্ধ ভেসে আসে। এই দুর্গন্ধের অত্যাচার দীর্ঘদিন ধরে সহ্য করে আসছে স্থানীয় এলাকাবাসীরা, ৩০ বছরের পুরাতন এতিমখানা ও মাদ্রাসার কয়েক'শ শিশু শিক্ষার্থী, টোল প্রদানে অপেক্ষারত পরিবহনের চালক ও যাত্রী, ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তাগণ, মসজিদের মুসল্লিগণ, কিউর পয়েন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শাহ আমানত ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সেবা নিতে আসা রোগীসহ সাধারণ পথচারীরা এতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। পরিবেশ দূষণ করে তাদের উৎপাদন কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কর্ণফুলী উপজেলা প্রশাসন আগে একবার ফ্যাক্টরিটি সিলগালা করে দিয়েছিল বলেও জানা যায়। কিন্তু তা বেশিদিন স্থায়ী রাখতে পারেননি প্রশাসন। বিভিন্ন দপ্তর, রাজনৈতিক প্রভাবশালী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ম্যানেজ করে পুনরায় চালু হয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটি এমনটাই জানান স্থানীয়রা। কিন্তু সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করার মতো যেন কেউ নেই। হাক্কানী কর্পোরেশন লিঃ এর খাদ্য ফ্যাক্টরি থেকে নির্গত গন্ধ বাতাসের সাথে মিশে পরিবেশকে দূষণ করছে। ফলে শিশু এবং বয়স্কদের সৃষ্টি হচ্ছে নানাবিধি রোগ।
স্থানীয়দের তথ্য মতে, "প্রায় চার বছর আগে খাদ্য ফ্যাক্টরিটি উপজেলা প্রশাসন থেকে সিলগালা করে দেওয়া হয়েছিল। কিভাবে বা কাকে ম্যানেজ করে তারা পুনরায় ফ্যাক্টরি চালু করেছে তা কারোর জানা নেই। ফ্যাক্টরিটির আশেপাশের পরিবেশের জন্য অত্যন্ত বিপদজনক। বিষয়টি তাদের কর্তৃপক্ষকে বারবার জানালেও কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। গত কিছুদিন আগে ভ্রাম্যমান আদালত তাদেরকে কড়া নির্দেশনা দিয়ে গেলেও তা তোয়াক্কা না করেই প্রতিদিন চালিয়ে যাচ্ছে উৎপাদন কার্যক্রম। এতে করে পরিবেশ মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়ছে।"
এছাড়াও খাদ্য ফ্যাক্টরি থেকে নিঃসরিত তেল ছড়িয়ে পড়ছে বাজারসহ আশপাশের বিভিন্ন জায়গায়। এই তেল কি কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে তা নিয়ে জনমনে অসংখ্য প্রশ্ন রয়ে গেছে।
এই বিষয়ে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) পিযূষ কুমার চৌধুরী দৈনিক সকালের সময়কে জানান, " স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে হাক্কানী কর্পোরেশন লিঃ এর বিরুদ্ধে পরিবেশ দূষণের দায়ে বেশ কয়েকবার অভিযান চালানো হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর এই বিষয়ে শীঘ্রই ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করেছে। বিষয়টি নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কাজ করছে, আমরা চেষ্টা করছি পরিবেশ দূষণ বন্ধ করতে এবং সাধারণ মানুষের যেন কোনো প্রকার সমস্যা না হয়।
চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নুর হাসান সজীব জানান, "হক্কানী পশু খাদ্য কারখানায় ইতিমধ্যে আমরা অভিযান করেছি। তাদের পরিবেশ ছাড়পত্র মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে গত আগস্ট মাসে। ছাড়পত্র মেয়াদ বৃদ্ধি করার জন্য তারা আবেদন করেছে। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর সার্বিক কার্যক্রমে ও পরিবেশ বিবেচনা করে তাদের ছাড়পত্র না দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এবং পরিবেশ দূষণের দায়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আঞ্চলিক অফিসে সুপারিশ করা হয়েছে।
এমএসএম / এমএসএম