খুলনায় বেড়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন
খুলনার আদালতে এক বছরে ১ হাজার ৩০৮টি মামলা দায়ের

বর্তমান সমাজে যতগুলো সামাজিক সমস্যা রয়েছে নারী নির্যাতন তার মধ্যে অন্যতম প্রধান। বর্তমান সময়ে নারী নির্যাতনের ভয়াবহ রূপ যেকোনো সুস্থ মানসিকতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে আতঙ্কিত করে তোলে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী একটি জরিপে দেখা গেছে সারা বিশ্বের সর্বাধিক নারী নির্যাতিত হওয়া শহরের তালিকায় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অবস্থান রয়েছে চতুর্থ স্থানে। সময়ের পরিবর্তন হলেও মানুষের মানষিকতার পরিবর্তন হয়নি। সভ্য সমাজে এখনও দেখা যাচ্ছে নারী ও শিশু নির্যাতনের নির্মম বর্বরতার চিত্র। নারী ও শিশু নির্যাতনের সংখ্যা খুলনাতেও কম নয়। ন্যায় বিচারের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হন অনেক নির্যাতিতা। খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে দায়েরকৃত মামলার সূত্রে জনা যায়, ২০২৩ সালে খুলনা জেলার আদালতে মোট মামলা চলমান ছিলো ১২৪১টি। ২০২৩ সালে মোট মামলা নিস্পত্তি হয়েছে ২৫৯৪টি। তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর তথ্যমতে ২০২৩ সালে দাখিল হয়েছে ৭১৭টি মামলা। ২০২৩ সালে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ৯৫১টি। এ ট্রাইব্যুনালের ৯৮৩টি মামলা নতুন বছরে অর্থাৎ ২০২৪ সালের বিচারের তালিকায় দেখা যায়। অন্যদিকে এ ট্রাইব্যুনালে চলতি বছরের জানুয়ারী মাসেই ৯৫টা মামলা দাখিল হয়েছে। সর্বশেষ তথ্যমতে জানুয়ারী মাসে ৫০টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ তে ২০২৩ সালে দাখিল হয়েছে ৩২৮টি মামলা। আর পূর্বের মামলাই চলমান ছিলো ৯৭৮টি। আর ২০২৩ সালে নিস্পত্তি হয়েছে ৮২৬টি মামলা। আর এ আদালতে পাঁচ বছরের বেশী সময় ধরে চলমান রয়েছে ২৪৪টি মামলা। এ আদালতে ২০২৩ সালে শিশু মামলা দাখিল হয়েছে ৬৭টি। বর্তমানে ট্রাইব্যুনাল-২ এ শিশু মামলা বিচারাধীন রয়েছে ১৮৯টি মামলা। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ তে ২০২৩ সালে দাখিল হয়েছে ১৯৬টি মামলা। আর এ আদালতে পূর্বের মামলাই ছিলো ২৮৬টি। ২০২৩ সালে সব মিলিয়ে মোট মামলা চলমান ছিলো ৯৭৩টি। যার মধ্যে গত বছরেই মামলা নিস্পত্তি হয়েছে ৮১৭টি। মামলা পর্যালোচনায় দেখা যায়, খুলনা জেলার আদালতে নারী নির্যাতনের অভিযোগে ৫৫ ভাগ মামলা দায়ের হয়েছে। ২০ ভাগ মামলা বিচ্ছেদ এবং বাকি অধিকাংশই ধর্ষনের অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে। অন্যদিকে, শিশু নির্যাতনের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলাগুলো অধিকাংশই ধর্ষনের অভিযোগে বিচারাধীন রয়েছে। এইচআরএসএস জানায়, বাংলাদেশে ২০২৩ সালে ২ হাজার ৩৬১ জন নারী ও কন্যা শিশুকে নির্যাতন করা হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৯৯০টি, যাদের মধ্যে আশঙ্কাজনকভাবে ৫৫৭ জন (৫৬ শতাংশ) ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু। এইচআরএসএস এর তথ্য বিশ্লেষনের মধ্যে খুলনা জেলায় ১২৪১টি নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা চলমান ছিলো। নারী নির্যাতন মামলার কয়েকজন বাদীর সাথে কথা বললে জানা যায়, শারীরিক , মানষিক নির্যাতন এবং যৌতুক চাওয়ার কারনেই মূলত বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে। অন্য কয়েকটি মামলা পর্যালোচনা করে দেখা যায় খুলনা জেলার মোট মামলার ১৯ ভাগ রয়েছে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষনের অভিযোগ। আর আলোচিত ধর্ষন মামলা চলমান রয়েছে। অনেক মামলার বিচার কার্যক্রম নিস্পত্তি হয়েছে। সচেতন নাগরিক সমাজ মনে করছেন, সামাজিত মুল্যবোধের অবক্ষয়ের কারনে দিন দিন বিবাহ বিচ্ছেদ বাড়ছে। নারী ও শিশু নির্যাতনও বেড়েছে তুলনামূলক ভাবে। অনেক প্রতারক সহজ,সরল নারীদের ফাদে ফেলে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শ্লিলতাহানি করছে। এছাড়াও ব্লাক মেইলিং করে হাতি নিচ্ছে অহরহ টাকা। অনেক ভুক্তভোগি সাহস দেখিয়ে মামলা করেন। আবার অনেকে ভয়ে ও লজ্জায় মামলা করেন না। আদালত পর্যন্ত যেসকল মামলা এবং অভিযোগ আসে , আমরা সেগুলোই জানতে পারি। প্রত্যান্ত অঞ্চলের অনেক ভুক্তভোগি নারীরা আছেন, যারা চাপা নির্যাতনের শিকার হয়ে মুখ বুঝে জীবন অতিবাহিত করছেন। সরকার এবং ব্যক্তি উদ্যোগে আমাদের উচিত সামাজিক মুল্যবোধ ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট হওয়া। একটা সময় পারিবারিক সমস্যা মুরুব্বিদের হস্তক্ষেপে সমাধান হতো। কিন্তু এখন কেউ কাউকে মানতে চান না। অনেক সুখী পরিবার বিবাহ বিচ্ছেদের কারনে ভেঙ্গে যাচ্ছে। যা ধর্মীয় জ্ঞান এবং আমাদের সচেতনতার মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করছেন নাগরিক সমাজের সদস্যরা। অধ্যাপক ও চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা: শাহ মো: বুলবুল ইসলাম বলেন, নারী নির্যাতন একটি বৈশ্বিক সমস্যা। বাংলাদেশ এর ব্যতিক্রম নয়। নারীর ওপর দৈহিক, মানসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিপীড়ন চলছে। খবরের কাগজ খুললেই এ ধরনের খবর প্রায়ই চোখে পড়ে। নারী ঘরে-বাইরে-কর্মক্ষেত্রে কোনো জায়গায়ই নিরাপদ নয়। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিশ্বে নারী নির্যাতনের হারে বাংলাদেশ চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে, যা সত্যিই উদ্বেগজনক। নারী নির্যাতন আমাদের অগ্রগতি ও সাফল্যকে ম্লান করে দিচ্ছে। নারী নির্যাতনের ব্যাপ্তিটা অনেক বড়। এটা শারীরিক, মানসিক, আর্থিক, সামাজিক ভাবেও হতে পারে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় সালিশের নামে নির্যাতন করার ঘটনা প্রায়ই আমরা খবরের কাগজে দেখি। কখনো মাথার চুল, কখনো চুনকালি মেখে, কখনো গাছের সাথে বেঁধে, মিথ্যা অপবাদ দিয়ে নারী নির্যাতন করা হয়। এ নিয়ে মামলা হলেও ভুক্তভোগী অনেক সময় সঠিক বিচার পান না। এ ছাড়াও অনলাইনে ইদানীং নির্যাতন বেড়েছে। অনলাইনে কারো সাথে যোগাযোগ করা, কথোপকথনের রেকর্ড করা ও অশালীন প্রস্তাব দেয়াও নির্যাতনের আরেক রূপ। এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করলে ক্ষেত্র বিশেষে প্রাণও দিতে হয়। এ সব ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির খুবই কম হওয়ায় দিন দিন নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে বলে তিনি মনে করেন।
এমএসএম / এমএসএম

রাণীশংকৈলে ৩ ইটভাটার মালিককে দেড় লাখ টাকা জরিমানা

গণতন্ত্রের অর্ডার ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন শক্তিশালী গণমাধ্যম : আমির খসরু

নওগাঁয় অবৈধ ইট ভাটা ভেঙে গুড়িয়ে দিল প্রশাসন

নবীনগরে ১১ চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার

গাজীপুরে ঘোড়ার মাংস বিক্রি করে আলোচনায় দুই বন্ধু, কেজি ২৫০ টাকা

নেত্রকোনা দুর্গাপুরে খামারের পাহাড়াদারকে হত্যা করে গরু লুট, যুবদল নেতাসহ গ্রেপ্তার ৩

জামালপুরে আইনজীবী ও শিক্ষার্থীদের পাল্টা-পাল্টি কর্মসূচি

অটোরিকশা চোর চক্রের তিন সদস্য গ্রেফতার

তানোরে দাদন ব্যবসায়ীর লাঞ্ছনা সইতে না পেরে বিষপানে আত্মহত্যা

ধামইরহাটে ইউএনও মোস্তাফিজুর রহমানকে বিদায় সংবর্ধনা

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মনিরা'কে ছাত্রদলের সম্মাননা প্রদান

পটুয়াখালীতে যাকাতের চেক বিতরণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
