ঢাকা মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫

জিকে প্রকল্পের শেষ ভরসা পাম্পটিও বন্ধ হওয়ায় ১,১০,১০৭ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ অনিশ্চিত


এম মাহফুজ আলম, পাবনা photo এম মাহফুজ আলম, পাবনা
প্রকাশিত: ১৬-৩-২০২৪ দুপুর ২:৩৭

দেশের বৃহত্তম গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের সব পাম্প বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ১,১০,১০৭ হেক্টর সেচযোগ্য জমির কৃষকরা চরমভাবে বিপাকে পড়েছেন। ৩টি পাম্পের মধ্যে ২টি পাম্প অনেক আগেই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শুধুমাত্র ১টি পাম্প দিয়ে ঢিমে তালে পানি উত্তোলন করা হচ্ছিল। সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে। 
এ প্রকল্পের আওতায় কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, ও মাগুরার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষকদের সেচের পানি সরবরাহ করা হয়। সম্প্রতি একটি মাত্র পাম্প দিয়ে চারটি উপজেলায় পানি সরবরাহ করা হচ্ছিল। এমনকি গত দুই সপ্তাহ ধরে তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে যার ফলে বোরো ফসল লাগানোর সময় লক্ষাধিক কৃষককে বিপাকে  ফেলেছে। 
জিকে প্রকল্পের আওতায় তিনটি পাম্পের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হয়। গত কয়েক বছর ধরে দু’টি পাম্প বন্ধ ছিল। চলতি বছর ১৯ ফেব্রুয়ারি শেষ পাম্পটিও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কুষ্টিয়া সদর, মিরপুর, চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গার চারটি উপজেলায় কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। পানির অভাবে অনেক চাষি ধান বপন করতে পারছেন না এবং অনেক কৃষকের ফসলি জমি শুষ্ক অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কেউ কেউ বিকল্প হিসেবে অগভীর পাম্প ব্যবহার করছেন, যাতে ধান উৎপাদন খরচ ১২ থেকে ১৫ গুণ বেশি হচ্ছে। 
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি থেকে খালগুলোতে পানি সরবরাহ করার কথা ছিল। তবে পদ্মা নদীতে তখন পানির স্তর নেমে গেছে। এ ছাড়া ভেড়ামারায় মূল খালের ওপর সেতু নির্মাণের কাজ চলছিল। খালের একটি বড় অংশ মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। ১ ফেব্রুয়াি থেকে ১ নম্বর পাম্পের মাধ্যমে পানি ছাড়া হলেও ১৯ ফেব্রুয়াি বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে পাম্পটি বিকল হয়ে যায়। এখন সেচের পানি সরবরাহ একেবারেই বন্ধ। 
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গার চারটি উপজেলার অন্তত এক লাখ ৬ হাজার কৃষক জিকে সেচ প্রকল্পের পানি দিয়ে বোরো চাষ করতে পারছেন। কৃষকরা বলছেন, বোরো ফসলে সবচেয়ে  বেশি সেচের প্রয়োজন হয়। জমি প্রস্তুত করা থেকে শুরু করে চারা গজানো পর্যন্ত সেচের প্রয়োজন হয়। অনেক সময় জমিতে দিনে দু’বার সেচ দিতে হয়। তারা জানুয়ারি থেকে ফসল চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, কিন্তু পানি সরবরাহ শুরু হওয়ার পর হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। 
‘জিকে প্রকল্পটি ১৯৭,৫০০ হেক্টর এলাকা জুড়ে, যার মধ্যে ১৪২,০০০ হেক্টর নেট সেচযোগ্য এবং কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ এবং মাগুরা জেলার অধিক্ষেত্রের অধীনে রয়েছে। এই ৪টি জেলার মোট ১৩টি উপজেলা প্রকল্পের আওতায় রয়েছে- কুষ্টিয়া সদর, কুমারখালী, খোকসা, মিরপুর, ভেড়ামারা, চুয়াডাঙ্গা, আলমডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, হরিণাকন্ডু, শৈলকুপা, মাগুরা সদর, শ্রীপুর ও দৌলতপুর। 
জিকে প্রকল্প একটি সেচ ব্যবস্থার প্রতিনিধিত্ব করে যেখানে পাম্পের মাধ্যমে পদ্মা নদী থেকে পানি তোলা হয় এবং মাধ্যাকর্ষণ খালের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, ফসলের ধরণ উন্নত করা, ফসলের তীব্রতা বৃদ্ধি করা এবং কৃষকদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি করতে প্রকল্পটি করা হয়। যা ১৯৬২-৬৩ সালে এই সেচ প্রকল্পের অধীনে স্থানীয় জাতের ধান চাষ করা শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে উন্নত জাতের ধানের আবাদ চালু করা হয়। 
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলেন, পাম্প বন্ধ থাকায় বোরো ফসল বপনে কৃষকরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। ফসল কমে যেতে পারে এবং কৃষকদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন  বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কবে পানি সরবরাহ শুরু হবে তা বলতে পারছেন না।
ভেড়ামারায় গঙ্গা-কপোতাক্ষ প্রধান পাম্প হাউসের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, তিনটি পাম্পই অচল। কৃষকদের বলা হয়েছে নিজেদেও সেচের ব্যবস্থা করতে। 
জিকে প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলছেন যে প্রাথমিকভাবে বছরে ১০ মাস (১৫ জানুয়ারি থেকে ১৫ অক্টোবর) চব্বিশ ঘন্টা সরবরাহ করা হত। পরের দুই মাস রক্ষণাবেক্ষণের কাজে ব্যয় হয়। ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুন্ডু উপজেলার আদর্শ আন্দুলিয়া গ্রামের আদর্শ কৃষক মুখলেছুর রহমান লাড্ডু বলেন, খালে পানি না থাকায় কৃষকদের ডিজেল ও  মেশিন ভাড়া বাবদ ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে। 
কর্মকর্তারা জানান, এই সেচ প্রকল্পের আওতায় কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরার ১৩টি উপজেলায় ১৯৩ কিলোমিটার মূল খাল, ৪৬৭ কিলোমিটার মাধ্যমিক খাল এবং ৯৯৫ কিলোমিটার টারশিয়ারি খালের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হয়। এই প্রকল্পের আওতায় সেচযোগ্য জমি রয়েছে ১১০,১০৭ হেক্টর।
জিকে প্রকল্প এবং কৃষি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, যে প্রকল্পটি মূলত শুরু হয়েছিল আমন ফসলের জন্য পানির ঘাটতি মেটাতে। কিন্তু এটি প্রায় সারা বছর ধরে তিনটি ফসলের মৌসুমে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু পদ্মার  রোভারের পানি কমে যাওয়ায় গত তিন-চার বছর ধরে শুধু বোরো মৌসুমেই কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গায় পানি সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা হয়। মাগুরা ও ঝিনাইদহ খালের স্লুুইস গেট বন্ধ রাখা হয়েছে। 
কৃষকরা জানান, প্রধান খাল ও মাধ্যমিক খালে পানি থাকলে আশপাশের টিউবওয়েল ও পুকুরে পানি স্বাভাবিক থাকে। একের পর এক পাম্প বন্ধ হযে যায় পদ্মা নদীর পানির স্তর স্বাভাবিক থাকলে প্রতিটি পাম্প সেকেন্ডে গড়ে ২৫,৩১৬.৮৫ লিটার পানি সরবরাহ করতে পারবে। তিনটি পাম্পের মধ্যে ২ ও ৩ নম্বর পাম্প বিগত কয়েক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। বিকল্প হিসাবে আরও ১২টি ছোট পাম্প ছিল, কিন্তু সেগুলো ২০০১ সাল থেকে বন্ধ করা হয়েছে। 
কুষ্টিয়া সদরের বটতৈলের কৃষক শেখ রাজু ১৫ বছর ধরে ধান চাষ করছেন। তিনি এবারও দেড় বিঘা জমিতে ধান চাষের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। তবে পানির অভাবে এখন পর্যন্ত ফসল বপন করতে পারেননি তিনি। একই এলাকার কৃৃষক আবদুল্লাহও তার দুর্দশার কথা বলেন। তিনি জানান, ১৫ দিন আগে তিনি ২ বিঘা জমিতে ধান বপন করেছেন, কিন্তু পানি পাচ্ছেন না। গভীর টিউবওয়েল দিয়ে সেচ দিতে তাকে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করতে হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আলমডাঙ্গায় জিকে প্রকল্পের আওতায় সাড়ে ছয় হাজার  হেক্টর জমি রয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমি এখনও অনাবাদি পড়ে আছে। আলমডাঙ্গার ডাউকি গ্রামের কৃষক বদরুল আলম খালে পানি এলে ছয় বিঘা জমিতে ধান বপন করেন। তিনি বলেন, ‘না, পানির অভাবে ধান শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। কয়েক প্রজন্ম ধরে আলমডাঙ্গা উপজেলার হাউশপুর গ্রামের কৃষক রজব আলী খালের পানি ব্যবহার করে জমিতে সেচ দিয়ে আসছেন। খালে পানি থাকলে ১০ ফেব্রুয়ারি এক বিঘা জমিতে ধান বপন করেন। কিন্তু ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি পানি পাচ্ছেন না। জমিতে সেচ দেয়ার জন্য তাকে অগভীর ইঞ্জিন ভাড়া করতে বাধ্য করা হয়েছে। এই কৃষক বলেন, “খালের পানির জন্য আমাদের ২০০ টাকা দিতে হবে। এবার শ্যালো মেশিনের ভাড়া হিসেবে এক মণ চাল দিতে হবে। আমাদেরও ডিজেল বাবদ খরচ করতে হচ্ছে ৫ হাজার টাকা। তারপর জমির মালিককে সঠিক মণ ধান দিতে হবে। এই সব খুবই উদ্বেগজনক।” 
অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে স্থানীয় প্রকৌশলীরা এসব পাম্প মেরামত করতে পারবে না জানিয়ে ভেড়ামারা পাম্প হাউসের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, জাপানি কোম্পানি এসব পাম্প বসিয়েছে। কোম্পানির সঙ্গে  যোগাযোগ করা হয়েছে কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই পাম্পগুলো অনেক পুরনো। এক সময়ে স্থানীয় প্রকৌশলীরা এগুলো  মেরামত করেছিলেন।
সেচ প্রকল্পের উপ-প্রধান সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আবদুল বাতেন বলেন, পদ্মার পানি কমলে এ সময়ে সমস্যা হবে। কবে নাগাদ পাম্পগুলো আবার চালু হবে তা বলতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ করা যেতে পারে প্রকল্পটি চালু করার সময় তখন এলাকায় উচ্চ ফলনশীল জাত ধান পাওয়া যেত না। পরবর্তীতে, কৃষকদের মধ্যে ঐ ধানের চাষ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, বিশেষ করে আউশ এবং আমন যথাক্রমে খরিফ-১ (মার্চ থেকে জুন) এবং খরিফ-২ (জুলাই থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি) মাসে। 
প্রকল্পটি ছিল শুধুমাত্র সম্পূরক সেচের জন্য, কিন্তু বর্তমানে এটি একটি অতিরিক্ত ফসলে সেচ দেয়ার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে যার পানির চাহিদা বেশি। ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত আমন (খরিফ-২) মৌসুমে সেচের সর্বোচ্চ অর্জন ৪৩,০০০ হেক্টওে পৌঁছেছিল, যেখানে আউশ (খরিফ-১) মৌসুমে ৯৯,০০০ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া হয়েছিল। পুরো প্রকল্পটি দু’টি ইউনিটে বিভক্ত, কুষ্টিয়া ইউনিট এবং যশোর ইউনিট। কুষ্টিয়া ইউনিট দু’টি ভাগে বিভক্ত,  ফেজ-১ এবং ফেজ-২। ফেজ-১ এর কমান্ড এলাকা ৮৫,০২০ হেক্টর, যার মধ্যে ৪৮,৭০০ হেক্টও সেচযোগ্য।  ফেজ-২ এর কমান্ড এলাকা ১১৭,৮১৪ হেক্টর, যার মধ্যে ৯৩,৩০০ হেক্টও সেচযোগ্য। সিস্টেমটির মোট  সেচযোগ্য এলাকা রয়েছে ১৪২,০০০ হেক্টর। যাইহোক, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন এবং পরিচালনা উভয় পর্যায়েই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। 
অনুসন্ধানে দেখা যায়, জিকে প্রকল্পের লক্ষ্য এলাকার সামগ্রিক নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতি করা এবং এই উদ্দেশ্যে ৯৭১-কিমি দীর্ঘ নিষ্কাশন খাল রয়েছে। প্রকল্পটি ২২৮-কিমি দীর্ঘ পরিদর্শন রাস্তা নির্মাণ করেছে যা প্রকল্পের পাশাপাশি এলাকার জনগণকে সেবা দেয়। সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে বিভিন্ন খালের ওপর- ১,২৬৮টি  সেচ খালে, ৬৫৩টি মাঠ চ্যানেলে এবং ২৫৩টি নিষ্কাশন খালের ওপর। প্রকল্প এলাকা বন্যামুক্ত রাখতে মোট ৩৯ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। মোট ১,৪০২ জন কর্মী এই প্রকল্পে নিযুক্ত আছেন যাদের মধ্যে ৫৭ জন কর্মকর্তা এবং প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং বাকি ১,৩৪৫ জন সহায়ক এবং মাঠ কর্মী। গঙ্গায় কম প্রবাহের সময়, পাম্পগুলো প্রায় ১২২ কিউসেক সরবরাহ করে, ১৮০ কিউসেক পরিকল্পিত স্রাবের মাত্র ৬৮%। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, এলাকার কৃষকরা সরবরাহ বাড়ানোর জন্য টিউবওয়েলের দিকে ঝুঁকেছেন, যদিও যখনই এটি পাওয়া যায় তখনই তারা পৃষ্ঠের পানি ফিরে যায়। সেচ ব্যবস্থা সাধারণত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে সক্রিয় হয় এবং বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে গঙ্গা-কাপোতাক্ষ প্রকল্পের আওতায় কর্মীদের থাকার সুবিধার্থে নির্মিত কয়েকশ’ ওয়াপদা (বাড়ি) দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে, যা এই স্থাপনাগুলোকে অপরাধমূলক কর্মকান্ডের জন্য নিরাপদ স্বর্গে পরিণত করেছে। দীর্ঘদিন ধরে বাড়িঘর পরিত্যক্ত থাকায় চোর ও স্থানীয় লোকজন ঘরের ইটসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে গেছে। এছাড়া স্থানীয় প্রভাবশালীরাও কর্তৃপক্ষের নাকের ডোগায় বাড়িগুলো দখলের চেষ্টা করছে। মেরামতের অভাবে ভবনগুলো ক্ষয়ে যেতে শুরু করেছে। 
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, তৎকালীন পাকিস্তাান সরকার ১৯৫৪ সালে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও মাগুরায় ১ লাখ ৯৭ হাজার হেক্টর আবাদি জমিতে সেচ নিশ্চিত করতে প্রকল্পটি শুরু করে। প্রকল্পটি ৯৭১ কিলোমিটার দীর্ঘ  ড্রেনেজ খাল দিয়ে এলাকার সার্বিক নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতির লক্ষ্যে শুরু হয়েছিল। এলাকাকে বন্যামুক্ত রাখতে ওই সময় ২২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ পরিদর্শন সড়ক, ৩৯ কিলোমিটার বাঁধ এবং অসংখ্য সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। ১৯৬৩ সালে জিকে প্রকল্প প্রতিষ্ঠার পর, ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায় কারণ এটি এলাকার পানির সংকট সমাধান করেছিল। প্রকল্পটি স্থাপনের পর তৎকালীন সরকার প্রকল্পের কাজ নিবিঘ্নন করতে প্রকল্পের কর্মচারিদের জন্য ১৯৫৭ সালে শত শত ঘর নির্মাণ করে। জিকে প্রকল্পের পানির প্রধান উৎস পদ্মা নদী। কিন্তু পানি চুক্তির আগে ৪টি জেলার ১৩টি উপজেলায় প্রচুর পরিমান পানি পাওয়ায় কৃষকরা মনের মতো আনন্দের সাথে ধার রোপন করতেন। পানি চুক্তির পর থেকে সেইভাবে সব অঞ্চলে যথেচ্ছা পরিমান পানি না পাওয়ায় আবাদের পরিমান সংকুচিত হয়। উজানের ফারাক্কা পয়েন্টে গঙ্গার পানি প্রত্যাহারের কারণে প্রতি বছর পানির পরিমাণ কমতে দেখা যায় বলে কুষ্টিয়ার পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান।
জিকে প্রকল্পটি ১৯৯২-১৯৯৬ সালে পদ্মায় কম প্রবাহের কারণে পানি সরবরাহে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়। এখন পদ্মা নদীর পানি কমে যাওয়ায় নির্বিঘ্নে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রল্পটিও ব্যর্থ হচ্ছে। পদ্মা নদীতে পানির অভাবে প্রকল্পটি আংশিকভাবে ভেঙ্গে যাওয়ায় হতাশ স্থানীয় কৃষকরা সেচ প্রকল্প ছেড়ে গভীর নলকূপ ও পাম্প ব্যবহার করে তাদের জমিতে সেচ দিতে শুরু করে। কিছু কৃষক পাট ও তামাক চাষ শুরু করেন। প্রকল্পটি তার আড়ম্বর হারিয়ে ফেলায়, প্রকল্প কর্তৃপক্ষ প্রায় ৬০ বছর আগে নির্মিত বাড়িগুলো মেরামত করা বন্ধ করে দিয়েছে। এই  মেয়াদে কর্মকর্তা-কর্মচারিরাও ঘর ছেড়েছেন। শুধু তাই নয়; নতুন কর্মচারি নিয়োগও বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। জনবলের অভাবে পিক মৌসুমে সেচ প্রকল্পের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। এটি পানি পাম্পিং এবং সেচ ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থাকেও ব্যাহত করে। জিকে প্রকল্পটি নানা সমস্যায় ভুগলেও সরকারের কাছ থেকে ভাতা পেলে মেরামতের কাজ শুরু করার ইঙ্গিত দেন প্রকল্পের কর্মকর্তারা। 
‘আমরা ঘর মেরামতসহ সব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি বলে প্রকল্প পরিচালক আব্দুল হামিদ যোগ করেন।

এমএসএম / এমএসএম

মিরসরাইয়ে মহাসড়ক সংলগ্ন অবৈধ বাউন্ডারি ওয়াল গুঁড়িয়ে দিল উপজেলা প্রশাসন

চিলমারীতে যৌথ অভিযানে, অনলাইন জুয়ার সরঞ্জামসহ দুই যুবক আটক

পারিবারিক দ্বন্দ্বে আহত হয়েও ‘জুলাই যোদ্ধা’ গেজেটে নাম পেলেন বাঘার জাহিদ

মহেশখালীতে শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা, ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড

কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর অনুষ্ঠিত

তাড়াশে আগুনে বসত ঘর পুড়ে ছাই, ১০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি

সুবর্ণচরে বিশিষ্ট সমাজসেবক আকবর হোসেনকে সংবর্ধনা

কোটালীপাড়ায় পুকুরে ডুবে প্রতিবন্ধী যুবকের মৃত্যু

ধামরাইয়ে পোশাক কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

মির্জাগঞ্জে মাসিক আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত

বগুড়ার শেরপুরে গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা, হাসপাতালে ভর্তি

বোয়ালমারীতে প্রাণি সম্পদ দপ্তরের উদ্যোগে হাঁস বিতরণ কর্মসূচি পালন

লন্ডনে তারেক রহমানের সাথে বিএনপি নেতাদের সাক্ষাৎ