ঢাকা রবিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৫

বাজার ব্যবসায়ীদের দখলে

ভরা মৌসুমে আমদানি, লোকসানের গ্যারাকলে ধানচাষিরা


মহাদেবপুর প্রতিনিধি photo মহাদেবপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২৮-৫-২০২৪ দুপুর ৪:২১

ধান আর আমে সমৃদ্ধ দেশের খাদ্যভাণ্ডার বলে পরিচিত উত্তরের জেলা নওগাঁ। শেষ মহূর্তে জেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে চলছে বোরো ধান কাটার উৎসব। সকালে সূর্য ওঠার আগেই মাঠে ছুটছেন চাষিরা। কেউ ধান কাটছেন, কেউ আঁটি বাঁধছেন। ভ্যান, ট্রলিসহ বিভিন্ন বাহনে করে কৃষকরা ক্ষেত থেকে ধান তুলে বাড়ির উঠোনে মাড়াইয়ের কাজ করছেন। আবার কেউ কেউ সার, কীটনাশক, সেচ, হাল ভাড়াসহ উৎপাদন খরচ মিটাতে নতুন ধান বিক্রির জন্য হাট-বাজারে তুলছেন। ধান কাটা-মাড়াই, বাছাই আর বিক্রি নিয়ে মহাব্যস্ত কৃষক-কৃষাণি। ফলনে খুশি হলেও দামে সন্তুষ্ট নন তারা। বাজারে গিয়ে চাষিদের হাসি হচ্ছে মলিন। চলতি মৌসুমে ধান হাটে উঠার পর থেকে দাম উঠা নামা করছে। তবে সরকারের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে হাটে অনেক কম দামে মোটা ধান বিক্রি হচ্ছে। সরকারি দরে বিক্রি করতে না পেরে হতাশ কৃষকরা। এবারও লোকসানের গ্যারাকলে পড়েছেন ধান চাষিরা। বাজার মনিটরিংয়ের দাবী জানিয়েছে তারা।
কৃষকরা বলছেন, কৃষি উপকরণের দামবৃদ্ধিসহ জলবায়ু পরিবর্তনে চাষাবাদে বাড়তি খরচের ধকলে পুড়ছেন তারা। পাচ্ছেন না ন্যায্যমূল্য। বছরজুড়ে বাজার থাকছে ব্যবসায়ীদের দখলে। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বড় বড় চাল কলের মালিক, প্রভাবশালী মজুতদার সিন্ডিকেট ও কর্পোরেটদের নিয়ন্ত্রণে বাজার। তাই দিন দিন কমছে ধানের দাম। আগামীতে আরও দরপতনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। আর কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভরা মৌসুমে চাল আমদানির প্রভাবে বাজারে কমছে ধানের দাম। এতে ন্যায্যদাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চাষিরা। 
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ এপ্রিল ১৩,০০,০০০০,০৪৪,০৭,০০৪,২৪,৩২৬ নম্বর স্বারকে বেসরকারি পর্যায়ে সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানির জন্য বরাদ্দ দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক সংগ্রহ শাখা। এতে ৫টি শর্তে সর্বোচ্চ শতকরা ৫ শতাংশ ভাংগাদানা বিশিষ্ট ৯১ হাজার মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল ও ৩৩ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল আমদানির অনুমতি পায় নির্বাচিত ৫০টি প্রতিষ্ঠান।
খোঁজ নিয়ে জানা গছে, ধান রোপণ থেকে শুরু করে কাটা-মাড়াই পর্যন্ত বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে অন্তত ১৪-১৫ হাজার টাকা। ফলন হচ্ছে ২২-২৪ মন। মৌসুমের শুরুতে ব্যবসায়িদের সিন্ডিকেটে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা। এ বছর মৌসুমের শুরু থেকে প্রকৃতিতে তীব্র তাবদাহ ও খরা বইছে। প্রচণ্ড গরমে জমিতে ঠিকমতো পানি সেচ দেয়া সম্ভব হয়নি। এছাড়া হয়েছে পোকার উপদ্রব। এতে করে বিঘাপ্রতি ৩-৪ মণ ফলন কমেছে। নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় ১ লাখ ৯১ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্য ১২ লাখ ৮৫ হাজার ২১৫ মেট্রিক টন। এই পরিমাণ ধান থেকে ৮ লাখ ৫৬ হাজার ৮০০ টন চাল উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।
নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার তেরমাইল এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর আবহাওয়ার কারণে ধান উৎপাদন খরচ কিছুটা বেশি হয়েছে। আবার ধানের ফলনও কিছুটা কম হয়েছে। সরু জাতের ব্রি-৯০ ধান বিক্রি হচ্ছে ১৩’শ টাকা মণ। যেখানে সরকার মোটা ধান ১২৮০ টাকা দাম বেঁধে দিয়েছে। এ ধান ১৬’শ টাকা মণ দরে বিক্রি হলে কৃষকদের জন্য সুবিধা। কিন্তু আমাদের পক্ষে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।’ একই উপজেলার গাহলি গ্রামের কৃষক প্রেমানন্দ বলেন, ‘আমরা হাটে ধান বিক্রি করতে এসে ন্যায্য দাম পাচ্ছি না। সরকারি দামের চেয়ে মোটা ধান অনেক কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় কৃষকদের সুবিধার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিং করা প্রয়োজন।’ ধান ব্যবসায়ি জামান হোসেন বলেন, ‘বিগত বছরে আমরা হাটে ধান কিছুটা বেশি কিনে মজুদ করতে পারতাম। এজন্য দাম কিছুটা বেশি ছিল। তবে এ বছর বেশি করে ধান কিনা সম্ভব হচ্ছে না। যে পরিমাণ ধান কিনা হচ্ছে তা চাল উৎপাদনের জন্য চালকলে পাঠানো হচ্ছে। মজুদবিরোধ অভিযানের ভয়ে বেশি করে ধান কিনে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। যদি মজুদ করা সম্ভব হতো তাহলে ধানের দাম আরো ১০০-১৫০ টাকা বাজার বেড়ে যাবে।’
নওগাঁ চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, ‘কৃষকরা হাট-বাজারে যে ধান নিয়ে আসে তাতে, কিছুটা  ভেঁজা, চিটা এবং ও ধুলা-বালি যুক্ত। ভেঁজা ধান কেনার পর শুকানো হলে ওজনে কমে যায়। আবার সংরক্ষণ করাও সম্ভব হয়না। সরকার মোটা ধান ১২৮০ টাকা মণ ঘোষণা করেছে। আমরা বাজার থেকে ধান কেনার পর দেখা যায় সরকারি মুল্যের কাছাকাছি চলে যায়। তাই বাধ্য হয়ে কম দামে কিনতে হয়। তবে সরকারি মুল্যে কেনা হলে পোশানো সম্ভব না। কারণ সরকারি গুদামে শুকনা ও ধুলা-বালি মুক্ত ধান দিতে হয়।’
নওগাঁ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মুহাম্মদ তানভীর রহমান বলেন, ‘জেলায় ১৯ হাজার ২১৮ টন ধান, ৪৭ হাজার ৮১৫ টন সিদ্ধ চাল এবং ৪ হাজার ৬৫২ টন আতপ চালের বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে ধান-চাল সংগ্রহ শুরু হয়েছে। সরকারিমুল্যে দাম পেয়ে কৃষকরা লাভবান হবে। তবে গুদামে ধান দিতে গিয়ে কৃষকরা যেনো কোন ভাবে হয়রানি না হয়, সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এ বছর জেলায় ১ লাখ ৯২ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। যেখানে প্রতি হেক্টরে ৪ দশমিক ৪৫ টন হিসেবে ফলন হচ্ছে। তবে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ফলন ভাল হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে  আশা করা হচ্ছে।’
সম্প্রতি ঢাকায় ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) একটি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে এক কেজি চালও আমদানি করতে হয়নি। বরং চাহিদার চেয়ে বেশি উৎপাদন হয়েছে। এখন আমরা অনায়াসে ৫-৭ লাখ টন চাল রপ্তানি করতে পারি, সে অবস্থা হয়েছে। আমাদের শুধু পালিশ করে যে চাল নষ্ট হচ্ছে, সেটা অর্ধেক রপ্তানি করলেই হবে। কারণ, উৎপাদিত প্রায় চার কোটি টনের মধ্যে তিন শতাংশ হারে প্রায় ১২ লাখ টন চাল পালিশ করার কারণে অপচয় হচ্ছে। আমাদের চাল পাঁচ দফা পালিশ করে চকচকে করা হচ্ছে। দুবার পালিশ করলেও ৫-৭ লাখ টন চাল বাড়বে।

এমএসএম / এমএসএম

সিডিএ'র কাজ করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের বাধার মুখে ঠিকাদার

পটুয়াখালীতে কিন্ডারগার্ডেন স্কুলের শত শত কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি পেশ

বেনাপোল বন্দরে পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞায় বাণিজ্যে স্থবিরতা

রাণীনগরে বিএনপির কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত

অবসরে যাওয়া পুলিশ কনস্টেবলদের বিদায় সংবর্ধনা

সম্প্রীতি বিনিষ্টকারীদের ছাড় নেই: গোপালগঞ্জে সম্মেলনে ডিসি

পল্লী বিদ্যুতের খুঁটির টানায় শক লেগে ৫ শিশু হাসপাতালে

আমন চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে হাটহাজারীর কৃষকরা

রৌমারীতে আশ্রয়ণ কেন্দ্রের ঘর সংস্কারের অভাবে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে

ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা মৃত্যুকে ভয় পায় না বলেই আন্দোলন মুছতে পারেনি : এটিএম আজহারুল

বোদায় ১৩৫০ টাকার সার ১৮০০ টাকায় বিক্রি, যৌথ বাহিনীর অভিযান

সমাজ উন্নয়নে শিক্ষার বিকল্প নেই : জহুরুল আলম

নেত্রকোনায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী মোহাম্মদ বশির