ঢাকা বুধবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২৫

ড. ইউনূসকে মাহাথির বিন মোহাম্মদের ভূমিকায় দেখতে চাই


তানভীর আহমেদ photo তানভীর আহমেদ
প্রকাশিত: ১৭-৮-২০২৪ দুপুর ৩:৫

মালয়েশিয়ার মাহাথির বিন মোহাম্মদ একজন প্রভাবশালী এবং দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তার দেশের রাজনৈতিক ও অবকাঠামোগত পরিবর্তনে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি ১৯৮১ থেকে ২০০৩ এবং ২০১৮ থেকে ২০২০ পর্যন্ত দুই দফায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার নেতৃত্বে দেশটি অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিল্পায়ন এবং আধুনিকায়নের মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রে পরিণত হয়। যে সকল কারণে মাহাথির বিন মোহাম্মদ মালয়েশিয়ার মহানায়কে পরিনত হয়ে ছিলেন, তা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় তিনি ‘দৃঢ় অর্থনৈতিক নীতি এবং শিল্পায়ন, মেগা প্রজেক্ট ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও দৃঢ় নেতৃত্ব, জাতীয়তাবাদী অর্থনৈতিক নীতি, আন্তর্জাতিক কূটনীতি এবং স্বতন্ত্র পররাষ্ট্রনীতি এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ।’ উল্লেখিত কারণগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায় মাহাথির মোহাম্মদের সাথে ড. মোহাম্মদ ইউনূসের অনেকাংশে মিল আছে। 

ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং মাহাথির মোহাম্মদ উভয়েই তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব এবং সমাজের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছেন। যদিও এতদিন তারা ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করেছেন- একজন অর্থনীতিবিদ এবং সমাজসেবক, আরেকজন রাজনীতিবিদ- তবুও তাদের মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য মিল রয়েছে।

 নিচে তাদের মিলগুলো তুলে ধরা হলো:

১. দূরদর্শী নেতৃত্ব: মাহাথির মোহাম্মদ: মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মাহাথির দূরদর্শী নীতি ও পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশকে আধুনিকীকরণের পথে নিয়ে যান। তার ভিশন ২০২০ পরিকল্পনা মালয়েশিয়াকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে তৈরি হয়েছিল। ড. মুহাম্মদ ইউনূস: ড. ইউনূস তার ক্ষুদ্রঋণ মডেল এবং সামাজিক ব্যবসার ধারণার মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র মানুষের ক্ষমতায়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে কাজ করেছেন, যা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে।
২. উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা: মাহাথির মোহাম্মদ: মাহাথির মালয়েশিয়ার উন্নয়নে উদ্ভাবনী উদ্যোগ গ্রহণ করেন, যেমন- মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন এবং শিল্পায়নের প্রচেষ্টা। ড. মুহাম্মদ ইউনূস: ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ ধারণা উদ্ভাবন করেন, যা দারিদ্র্যপীড়িত মানুষদের জীবনে আর্থিক স্বাধীনতা এনে দেয়।
৩. আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও প্রভাব: মাহাথির মোহাম্মদ: মাহাথির তার নেতৃত্বের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মালয়েশিয়ার অবস্থান সুসংহত করেন এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর পক্ষে কণ্ঠস্বর ছিলেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস: ড. ইউনূস তার ক্ষুদ্রঋণ মডেলের জন্য সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন এবং বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে প্রভাব রেখেছেন।
৪. জনগণের জন্য কাজ: মাহাথির মোহাম্মদ: মাহাথির তার নীতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার চেষ্টা করেছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস: ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করেছেন এবং তাদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করেছেন।
৫. সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণ: মাহাথির মোহাম্মদ: মাহাথির কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা করেননি, যেমন- অর্থনীতিকে মুক্ত করা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের মোকাবিলা করা। ড. মুহাম্মদ ইউনূস: ড. ইউনূস প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার বিরুদ্ধে গিয়ে ক্ষুদ্রঋণ মডেল চালু করেন এবং সমাজের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করেন।
৬. সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ: মাহাথির মোহাম্মদ: মাহাথির তার দেশ ও জাতির উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিয়েছেন এবং জাতীয়তাবাদী নীতিগুলোর প্রচার ও বাস্তবায়ন করেছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস: ড. ইউনূস দারিদ্র্য দূরীকরণ ও সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে সমাজের প্রতি তার দায়িত্ববোধ প্রদর্শন করেছেন।
৭. প্রতিষ্ঠান নির্মাণে দক্ষতা: মাহাথির মোহাম্মদ: মাহাথির মালয়েশিয়ার অবকাঠামো এবং অর্থনৈতিক খাতকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তোলেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস: ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন, যা বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্রঋণের মডেল হিসেবে পরিচিত।
৮. দৃঢ় নৈতিকতা ও আদর্শবাদ: মাহাথির মোহাম্মদ: মাহাথির তার আদর্শ এবং বিশ্বাসের ওপর অটল ছিলেন, যা তাকে একজন শক্তিশালী নেতা হিসেবে গড়ে তোলে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস: ড. ইউনূসও তার নৈতিকতা এবং আদর্শের প্রতি দৃঢ় থেকে সমাজের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
৯. সমাজে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব: মাহাথির মোহাম্মদ: মাহাথিরের নেতৃত্ব মালয়েশিয়ার অর্থনীতি, রাজনীতি এবং সামাজিক কাঠামোতে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলেছে।
 ড. মুহাম্মদ ইউনূস: ড. ইউনূসের কাজ সমাজের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এবং দারিদ্র্য বিমোচনের একটি নতুন পথ তৈরি করেছে।
এই মিলগুলো দেখায় যে, ড. ইউনূস এবং মাহাথির মোহাম্মদ উভয়েই সমাজের উন্নয়ন ও পরিবর্তনে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, যদিও তাদের কাজের ক্ষেত্র ও পদ্ধতি ভিন্ন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং অবকাঠামোগত পরিবর্তনে মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদের ভূমিকায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে দেখতে পাওয়াটা একটি সাহসী ও পরিবর্তনকামী দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে। মাহাথির মোহাম্মদ ছিলেন একজন দূরদর্শী নেতা, যিনি তার কঠোর নেতৃত্ব ও সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে মালয়েশিয়াকে অর্থনৈতিক এবং অবকাঠামোগত ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। তার নেতৃত্বে মালয়েশিয়ার অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নের ধারা শক্তিশালী হয়েছিল।
বাংলাদেশে, ড. ইউনূস একটি পরিচ্ছন্ন এবং জনকল্যাণমুখী ভাবমূর্তি নিয়ে এতদিন রাজনীতির বাইরে থেকেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে পাওয়াটা মূলত একটি নিরপেক্ষ, সৎ এবং দক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক সংস্কার ও উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা থেকে উদ্ভূত। তবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে ড. ইউনূসের ভূমিকায় মাহাথিরের মতো প্রভাব রাখতে হলে তাকে রাজনৈতিক বাধা, বিদ্যমান ক্ষমতার কাঠামো এবং অন্যান্য নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। একই সাথে তাকে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা অর্জন করতে হবে, যা বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় একটি কঠিন কাজ হতে পারে। এ ধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে তিনি মাহাথিরের মতো দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন বলে সকলের দৃঢ় বিশ্বাস ।
বাংলাদেশের জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ মনে করেন, ড. ইউনূসের নেতৃত্বে দেশে অর্থনৈতিক এবং অবকাঠামোগত পরিবর্তনের মাধ্যমে উন্নয়নের নতুন অধ্যায় শুরু হতে পারে। যার মাধ্যমে ড. ইউনূসকে মাহাথির বিন মোহাম্মদের ভূমিকায় পেতে পারি।

এমএসএম / এমএসএম

প্লাস্টিকের বোতল স্বাস্থ্য এবং পরিবেশগত সমস্যা সৃষ্টি করছে

নতুন বছরে বিশ্ব অর্থনীতিতে নেই কোন সুসংবাদ

বিদায়ী বছরের ইতিবৃত্ত ও নতুন বছরের সূচনা

জলবায়ু সংকট বর্তমান বিশ্বে এক বিরাট চ্যালেঞ্জ

ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং খাতে চ্যালেঞ্জ ও সমাধান

জনগণকে সম্পৃক্ত করার উপযুক্ত সময় এখনই

বিজয় দিবস ও এমএজি ওসমানী পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে না থাকা

স্বাধীনতাকে হৃদয়ে আঁকড়ে ধরে রাখার নাম বিজয়

অর্থনৈতিক আধিপত্য বিস্তারে চীন-মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা

অগণতান্ত্রিক শক্তির অপসারণ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা

নিরাপত্তার স্বার্থেই ভারতকে উগ্রতা পরিহার করতে হবে

মানব উন্নয়ন শুধু মানুষের বস্তুগত কুশলের ওপরে নির্ভর করে না

প্রেসিডেন্ট আসাদের পতন ও সিরিয়ার ভবিষ্যৎ