কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

কোমলমতি শিশুরাও এখন কোচিং করছে—শুনতে অবাক লাগলেও এটাই দেশের শিক্ষাঙ্গনের বাস্তবতা। অভিযোগ উঠেছে, শিক্ষকেরাই বাচ্চাদের কোচিং করতে বাধ্য করেন। সম্প্রতি মাইলস্টোন স্কুলের অভিভাবকদের অভিযোগে এই সত্যতা নিশ্চিত হয়েছে এবং বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় তা প্রচারিতও হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অস্বীকার করলেও মাইলস্টোন স্কুলে পোড়া ক্ষত এখনো শুকায়নি—গত ২১ জুলাই যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় ৩৫টি তাজা প্রাণ ঝরেছে। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই নতুন বিতর্ক কোচিং বাধ্যতামূলক করা। এর ফলশ্রুতিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধুর সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে, আর শিক্ষা আজ বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে। সারাদেশে এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চললেও শহরের মতো মফস্বলেও এই কোচিং নিয়ে নানা অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, কোচিং না করলে শিক্ষক অবহেলা করেন। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক পাঠদানে গুরুত্ব না দিয়ে কোচিং-এ মনোযোগী হয়ে পড়ছেন, এতে শ্রেণি পাঠদানের মান নিয়ে অহরহ প্রশ্ন উঠছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, দেশের মফস্বলে গড়ে ওঠা কিন্ডারগার্টেন থেকে শুরু করে মাধ্যমিক, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও কোচিং করছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমন কোনো স্থান নেই যেখানে কোচিং নেই। সর্বত্র এখন চোখে পড়ে কোচিং-এর বড়সড় বিলবোর্ড। এ যেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আড়ালে শিক্ষা নিয়ে বড় বাণিজ্যিকীকরণ। দেশে এত নামি-দামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকা সত্ত্বেও এতো বড়ো বড়ো কোচিং সেন্টার কেন? তাহলে কি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আদতে কোনো পড়াশোনা হয় না? সব শিক্ষার্থী যদি কোচিং-এর উপর নির্ভরশীল হয়ে যায়, তাহলে দেশের প্রচলিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক-কর্মচারী রেখে রাষ্ট্রের ব্যয় বাড়িয়ে লাভই বা কী? রাষ্ট্রের শিক্ষাঙ্গনে যারা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন, তারাই বা দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেন না কেন? তাহলে কি এর পিছনে তাদের কোনো স্বার্থ আছে? শিক্ষায় দায়িত্বশীল যারা, তারা কি বিষয়টি জানেন? জেনেই বা কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
শিক্ষায় কোচিং বাণিজ্য নিয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, শিখনের সঙ্গে কোচিং-এর কোনো সম্পর্ক নেই। এটি যার যার ব্যক্তিগত স্বার্থে করে থাকেন। সকাল ছয়টা থেকে নয়টা পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থী কোচিং-এ থাকলে, আবার সাড়ে নয়টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত বিদ্যালয়ে থাকলে এবং আবারও সাড়ে চারটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোচিং করলে এতে বাড়তি চাপে শিক্ষার্থীর শিখন কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এতে শিক্ষার্থীর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বাধাগ্রস্ত হয়। সুস্বাস্থ্য ও শারীরিক গঠনের জন্য খেলাধুলাও প্রয়োজন রয়েছে। একজন শিক্ষক চাইলেই শ্রেণিকক্ষেই শিক্ষার্থীকে পরিপূর্ণ শিখন দিতে পারেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে কোচিং হয়, সেই সময়ে যে প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়, সেটা কি রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় নয়? এভাবেই দেশের কোটি কোটি টাকা অপচয় করে ব্যক্তিগত স্বার্থ লুটে নেওয়া হলে রাষ্ট্রের কি দেখভাল করার কিছুই নেই? সরকারি নিয়োগের মাধ্যমে শিক্ষক হয়ে এমন ঘটনা ঘটলেও তার কি নৈতিক কোনো দায়বদ্ধতা নেই? শ্রেণিকক্ষেই শিক্ষার্থীকে পূর্ণ শিক্ষা দিলে কি এমন ক্ষতি? শ্রেণিকক্ষে তো অনেক অসহায় মেধাবী দরিদ্র শিক্ষার্থী থাকে, যাদের অর্থ ব্যয় করে পড়াশোনা সম্ভব নয় বলে অনেকেই অকালে শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ে। তিনি প্রশ্ন রাখেন—শিক্ষার্থীর প্রয়োজন হলে ক্লাসের বাইরে অন্য কোথাও শিখবে, শিক্ষার্থী কেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কাছেই পড়বে, কেনই বা তাকে বাধ্য করা হবে?
দেশের প্রচলিত আইনে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোচিং করানোর বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে ২০১২ সালে, যেখানে কোচিং বাণিজ্য বন্ধে নীতিমালা জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব শিক্ষার্থীদের কোচিং করানো নিষিদ্ধ করে, তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি সাপেক্ষে অন্য প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ১০ জন শিক্ষার্থীকে পড়ানো যাবে। তবে বাস্তবে এ চিত্র ভিন্ন, কোথাও কোথাও গণহারে নিজের শিক্ষার্থীদের নিয়েই কোচিং বাণিজ্য চলছে। পরবর্তীতে (২০১২ সালের নীতিমালাটি ২০১৯ সালে গেজেট আকারে প্রকাশিত ও কার্যকর ছিল এবং এটি ২০২২ সালেও প্রযোজ্য ছিল) এ নীতিমালার মূল উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করা এবং শিক্ষকদের শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে মনোযোগী করা।
কোচিং বাণিজ্য নিয়ে শিক্ষার্থী সহ অভিভাবক ও সমাজের মানুষ চায় শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকদের উন্নত মানের শিক্ষাদান নিশ্চিত করা। যাতে পরবর্তীতে শিক্ষার্থীকে কোচিং-এ যেতে না হয়। এতে বাড়তি সময় শিক্ষার পেছনে ব্যয় না করে অন্য কিছুর পেছনে লেগে থাকুক। এতে শিক্ষার্থী খেলাধুলা সহ সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারবে, সমাজে অবদান রাখতে পারবে, পরিবার পরিজনকে সময় দিতে পারবে। বর্তমানে কোচিং-এর ব্যয় নির্বাহে সন্তান মানুষ করতে দরিদ্র ও মধ্যবিত্তকে চরম কষ্টে জীবন যাপন করতে হচ্ছে। সন্তানকে পড়াশোনা করানো কঠিন হয়ে পড়েছে, আবার অনেকেই শিক্ষা ব্যয় নির্বাহ করতে না পেরে ঝরে পড়ছে। তাই রাষ্ট্রের উচিত এ বিষয়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
এমএসএম / এমএসএম

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন

ট্রাম্প-উরসুলার বাণিজ্য চুক্তিতে স্বস্তির হাওয়া
