ঢাকা বুধবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২৫

শিক্ষার্থীদের তারুণ্যে অর্জিত সোপান ও পরবর্তী ভাবনা


ফায়েজুর রহমান, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়  photo ফায়েজুর রহমান, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: ১-৯-২০২৪ দুপুর ১২:৩২

তারুণ্য একটি উদ্দীপনার নাম ও অদম্য শক্তি। সব বাধা পেরিয়ে সামনে এগিয়ে চলাই তারুণ্যের বৈশিষ্ট্য। এদেশের তরুণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ইতিহাস সোনালী ইতিহাস। মহান স্বাধীনতা পূর্ববর্তী থেকে অদ্যাবধি বিভিন্ন অসহযোগ আন্দোলনে রয়েছে  শিক্ষার্থীদের অসামান্য অবদান। এ দেশের মানুষ এ যাবত তিনটি অভ্যুত্থান প্রত্যক্ষ করেছে। আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারির গণঅভ্যুত্থান, এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বরের গণঅভ্যুত্থান। এরপর দীর্ঘ ৩৪ বছর পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের  গণঅভ্যুত্থান।

বায়ান্ন'র ভাষা আন্দোলন থেকে অদ্যাবধি যত আন্দোলন ও অভ্যুত্থান হয়েছে সবগুলোতে রয়েছে শিক্ষার্থীদের মুখ্য ভূমিকা ও সর্বাত্মক প্রচেষ্টা। সকল আন্দোলনেই ঝরেছে ছাত্রদের বুকের তাজা রক্ত। যেখানেই ছাত্ররা জীবন দিয়েছে সেখানেই সফলতার মুখ দেখেছে দেশবাসী। বাংলার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের প্রচেষ্টা বৃথা যায়নি কখনো।

পৃথিবীর প্রথম ছাত্র আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল চীনে। ১৬০ খ্রিষ্টাব্দে চীনের ইম্পেরিয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সরকারের কয়েকটি নীতির প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিল। সেই আন্দোলন ছুঁয়ে গিয়েছিল সাধারণ মানুষকেও। কারাগারে যেতে হয়েছিল ১৭২ জন শিক্ষার্থীকে। এভাবেই ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস দীর্ঘ হতে থাকে। এ ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের বিভিন্ন আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে আসছে বাংলার ছাত্রসমাজ। এমন কোনো অর্জন বা অভ্যুত্থান নেই যেটা ছাত্রদের অংশগ্রহণ ছাড়াই সম্ভবপর হয়ে উঠেছিল।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ‘রাষ্ট্র ভাষা-রাষ্ট্র ভাষা, বাংলা চাই-বাংলা চাই’ স্লোগানে ছাত্ররা মিছিল বের করে। মুখরিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। পুলিশ মিছিলের ওপর গুলি চালালে ভাষাশহিদদের রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার ও শফিউরসহ নাম না জানা আরো অনেকেই শহিদ হন মাতৃভাষা বাংলার জন্য। সেসব ছাত্ররা নিজের জীবন উৎস্বর্গ করে নজির স্থাপন ও অনুপ্রেরণা জুগিয়ে গেছেন পরবর্তী প্রজন্মের জন্য। 

১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ঐতিহাসিক শিক্ষা দিবস। শিক্ষার অধিকার আদায়ে এই দিনেই ঢাকার রাজপথে তৎকালীন পাকিস্তানী শাসকগোষ্টির পুলিশের গুলিতে জীবন উৎস্বর্গ করেছিল মোস্তফা ওয়াজিল্লাহ, বাবুল প্রমুখ ছাত্র নেতারা। পাকিস্তানের সামরিক শাসক ফিল্ডমার্শাল আইয়ুব খানের শাসনামলে শরীফ কমিশনের নেতৃত্বে একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছিল। যে শিক্ষানীতির বেশ কিছু বক্তব্য তৎকালীন পাকিস্তানের মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার সাথে প্রাসঙ্গিক ছিল না। তাতে আইয়ুব খানের সাম্রাজ্যবাদী শিক্ষা সংকোচন নীতির পূর্ণ প্রতিফলন ঘটেছিল। রিপোর্টে শিক্ষাকে পণ্য হিসেবে বর্ণনা করা হয়। সাম্প্রদায়িক চেতনা প্রকট হয়। এ শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন চাঙ্গা করেছিল বাংলার ছাত্রসমাজ। ১৯৬২ সালের ৩০ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী গ্রেফতার হলে ফেব্রুয়ারি জুড়ে আন্দোলন জোড়ালো থাকে। শিক্ষার্থীদের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। আগস্টে ছাত্র ধর্মঘট ও সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়া হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর আন্দোলন পরিণতির দিকে যায়। যোগ দেয় সাধারণ মানুষ। হরতালের মিছিলে পেছন থেকে আক্রমণ করে পুলিশ ও ইপিআর। দ্বিতীয় দফা আদালত এলাকার সংঘর্ষে গুলিতে নিহত হয় ৩ জন। অনেকেই আহত হন। অসংখ্য শিক্ষার্থী গ্রেফতার হন।
১৯৬২'র এই 'শিক্ষা আন্দোলন' আইয়ুব খানের ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করে রাজনৈতিক শূন্যতা ভেঙ্গে গোটা পরিবেশকে রাজনীতির পক্ষে নিয়ে এসেছিল। আর সেই আন্দোলনকে সফল ও স্বার্থক করার মূল হাতিয়ার ছিল এ দেশের ছাত্রসমাজ। এ আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে ঐক্যবদ্ধ করে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। তাই এ আন্দোলন ছিল সরকারের প্রতি একটি চ্যালেঞ্জ এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত। 

পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ১৯৬৯ সালে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন সংঘটিত হয়৷ ইতিহাসে এটি গণঅভ্যুত্থান নামে পরিচিত৷ গণ মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন এই অভ্যুত্থান। শিক্ষার্থী-শিক্ষকসহ সকল পেশাজীবীর সংগঠন ও মানুষ এই আন্দোলনে যুক্ত হয়৷ ১৯৬৯ সালের জানুয়ারি মাসে আইয়ুব খানের স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। বাংলাদেশের ছাত্ররা পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানের ডাক দেন। গণঅভ্যুত্থানে পুলিশী নির্যাতনের প্রতিবাদে ধর্মঘটের আহবান করা হয়। ধর্মঘট পালনকালে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান আসাদ। তাঁর নামানুসারে ঢাকা গেটের নাম হয় আসাদ গেট । ২০ জানুয়ারি শহীদ হওয়ার দিনকেই ‘শহীদ আসাদ দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে। এই ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রদের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। এটিই মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করেছে।

অন্যান্য আন্দোলনের মতো মুক্তিযুদ্ধেও ছিল ছাত্রদের সরব ভূমিকা। স্লোগান দেয়া থেকে শুরু করে অস্ত্রহাতে শত্রুর মোকাবেলা পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে এদেশের ছাত্রসমাজ। ১৯৭১ সালে ইয়াহিয়া খান ২ মার্চের গণপরিষদের অধিবেশন স্থগিত করলে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো বাংলা। ঐদিন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের এক জনসভায় প্রথম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। ৩ থেকে ৬ মার্চ ছাত্ররা পরীক্ষা বন্ধ রেখে হরতাল পালন করে। সে সময়ের নামকরা ছাত্র নেতারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন যুদ্ধে। ২৫ মার্চ কালো রাতে পাকিস্তানি সামরিকবাহিনী প্রথম আক্রমন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের উপর। যার ফলে জনমনে ক্ষোভের সঞ্চার হয় এবং সংশস্ত্র সংগ্রামে জনগণকে লিপ্ত হতে উৎসাহ দেয়। যুদ্ধের নয়মাস ছাত্ররা বিভিন্ন কৌশলে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পেতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যায়। এ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ফলে বাংলায় স্বাধীনতার নতুন সূর্য উদিত হয়। নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি বাহিনী যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে নতুন একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের আত্মপ্রকাশ ঘটে।

স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পথচলায় উত্থান ঘটে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীর। তাদের মাধ্যমে দেশ পরিচালিত হতে থাকলে ক্ষমতার লোভ এঁটে বসে বিভিন্ন শাসকগোষ্ঠীর মনে। পরিচিতি লাভ করে স্বৈরশাসক হিসেবে। কালক্রমে ৩০ মে ১৯৮১ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হলে এরশাদের রাজনৈতিক ফন্দি প্রকাশ হয়ে পড়ে। ২৪ মার্চ ১৯৮২ সালে এরশাদ রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। ১৯৮৩ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্ররা আন্দোলনের সূচনা করেছিল। সেদিন ঢাকায় শিক্ষাভবন অভিমুখে ছাত্রদের মিছিলে পুলিশের গুলিতে বেশ কয়েকজন নিহত হয়। ছাত্রদের আন্দোলন বেগবান হয়ে ওঠে। আন্দোলন চলাকালীন হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীকে গ্রেপ্তার করে সেনানিবাস ও বিডিআর সদর দপ্তরের অজ্ঞাত স্থানে আটকে রাখা হয়। পিটিয়ে ট্রাকে তোলা হয় শত শত ছাত্রছাত্রীকে। শিক্ষার্থীদের এ দমন-পীড়নের প্রভাব বেশি কাজ করেছে জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করতে, আন্দোলনকে আপসহীন রাখতে এবং শেষ পর্যায়ে ১৯৯০ সালে গণ-অভ্যুত্থানকে সংগঠিত করতে। ১৯৮৩ সালের ফেব্রুয়ারির আন্দোলনই পরিণতি লাভ করে নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে। এ অভ্যুত্থানে বাংলার স্বৈরশাসক হিসেবে পরিচিত এরশাদের পতন ঘটে। যা শিক্ষার্থীদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ও আন্দোলনের ফলশ্রুতিতেই সম্ভবপর হয়ে উঠেছিল।

কালের পরিক্রমায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মন্ত্রীসভার সদস্যরা শপথ নেন ২০০৯ সালের ৬ই জানুয়ারি। তারপর থেকে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত টানা ১৫ বছর ৭ মাস একচ্ছত্র আধিপত্যে দেশ পরিচালনা করে শেখ হাসিনা। এ সময়ের মধ্যে আওয়ামীলীগের অধীনে তিনবার জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সবগুলো নির্বাচনই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন এসব নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রেখে স্বৈরশাসক হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে একটি অভ্যুত্থানের। 
 
বাংলাদেশের যত অভ্যুত্থান রয়েছে তন্মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জিত গণঅভ্যুত্থান-২০২৪। ইতিপূর্বের দু’টি অভ্যুত্থানের চেয়ে ২০২৪ সালের অভ্যুত্থান ছিল অনেক বেশি ভয়াবহ, লোমহর্ষক ও হৃদয় বিদারক। আইয়ুব খান ও এরশাদ দেশ ছেড়ে পালাননি, কিন্তু শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট  দুপুরে সামরিক বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে দেশ ছেড়ে ভারত চলে যান। ইতিপূর্বের অভ্যুত্থানে এতটা রক্তপাত হয়নি, যতটা না হয়েছে ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানে। এ অভ্যুত্থানে যত প্রাণহানি ঘটেছে ইতোপূর্বে কোন অভ্যুত্থানে তা ঘটেনি। এ অভ্যুত্থানের শুরুটা হয়েছিল ৫ জুন সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন হাইকোর্ট কর্তৃক অবৈধ ঘোষণার মাধ্যমে। সংগঠিত হয় 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন' নামক বৃহৎ এক ব্যানারে। গত ১ জুলাই থেকে শুরু হয় তাদের আন্দোলন। এ প্রেক্ষিতে ১৪ জুলাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ আখ্যা দেন। সেখান থেকেই ফুঁসে ওঠে শিক্ষার্থীরা। এতে ওই রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্লোগান ওঠে, ‘তুমি কে, আমি কে– রাজাকার, রাজাকার; কে বলেছে, কে বলেছে– স্বৈরাচার স্বৈরাচার’। পরের দিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন এ স্লোগানের জবাব দিতে ছাত্রলীগ প্রস্তুত। এ কথা বলার এক ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর তাণ্ডব চালানো হয়। ছাত্রলীগের বহিরাগত নেতাকর্মী ছাত্রীদের মেরে রক্তাক্ত করে। এতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী  আবু সাঈদ বুক পেতে দাঁড়ালে সরাসরি গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। এখান থেকেই আন্দোলন আরো বেগবান হয়ে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। ১৮ থেকে ২১ জুলাই নারকীয় বর্বরতা চলে আন্দোলনকারীদের ওপর। ঝরে যায় শিশুসহ শত শত শিক্ষার্থীর প্রাণ। হাজার হাজার মানুষ গুলিবিদ্ধ হন। এরপরই গণঅভ্যুত্থান প্রকৃত রূপ পেয়ে যায়। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয়, সারা দেশে স্কুল-কলেজের হাজার হাজার শিক্ষার্থী রাস্তায় নেমে আসে। এরপরও দমন-পীড়ন থামল না। এর প্রতিক্রিয়া শাসকদের জন্য আরও ভয়ংকর হলো। অভিভাবক ও সাধারণ মানুষও যুক্ত হলো মিছিলে। অবস্থা আঁচ করতে পেরে শেখ হাসিনার মন্ত্রিপরিষদের কোনো কোনো মন্ত্রী ও নেতা-নেত্রী দেশ ছাড়তে লাগলেন। সবশেষে ৫ আগস্ট গণবিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় দেশত্যাগ করেন। এভাবেই ছাত্র সমাজের এ গণঅভ্যুত্থানের পরিসমাপ্তি ঘটে। পতন ঘটে দীর্ঘ পনেরো বছরের স্বৈরশাসকের। একটি সফল শিক্ষার্থী আন্দোলনের প্রত্যক্ষ সাক্ষী হয় পুরো বাংলাদেশ। শিক্ষার্থীদের তারুণ্যে অর্জিত এ সফলতা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। দেশবাসী মনে রাখবে বাংলার সাহসী সন্তানদের নাম। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা জাতির চোখ খুলে দিয়েছে স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা হটানোর মধ্য দিয়ে। এভাবেই আরো একটি গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস রচিত হয় ৫ ই আগস্ট, ২০২৪।

শিক্ষার্থীদের অভ্যুত্থান পরবর্তীতে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে ২১ সদস্যবিশিষ্ট একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। যাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুইজন সমন্বয়কও রয়েছেন। তাঁরা বর্তমানে দেশ পরিচালনা করছেন। তাঁদের মুখ থেকে দেশ সংস্কারের কথা শোনা যাচ্ছে। সকল ক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণের আওয়াজও পাওয়া যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে। ঘোষণা অনুযায়ী তাঁদের এই পদক্ষেপ বাস্তবায়ন চাইছে বাংলার ১৮ কোটি জনতা। ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে পুরো দেশবাসী। যেহেতু রাষ্ট্রীয় বৈষম্যমূলক নীতির প্রতিবাদেই জন্ম নিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, তাই তরুণ ছাত্রসমাজকে প্রতিটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকাটাও বাঞ্ছনীয়। দেশের সকল শাখার দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান দৃঢ় হওয়াটাও সময়ের দাবি। 
 
উল্লেখ্য যে, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বাংলাদেশ দুর্নীতি পরায়ন দেশের তালিকায় বিশ্ব দরবারে পরিচিত হয়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) প্রতিবেদনের তথ্যমতে, যেসব দেশে গণতন্ত্র নেই এবং যেসব দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসন রয়েছে, সেসব দেশের চেয়েও বাংলাদেশে দুর্নীতির মাত্রা বেশি। যেখানে প্রতিটি শাখার রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি, অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্যে সয়লাব, সেখানে এহেন অভ্যুত্থান অবশ্যম্ভাবী ছিল। স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা কায়েম, প্রশাসনিক সহায়তায় দানবীয় রাষ্ট্র গঠনের উদ্যোগ, পুলিশ বাহিনীর শোষণ, বিচার ব্যবস্থায় দলীয়করণসহ সকল অনিয়ম উচ্ছেদ হোক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যকরী পদক্ষেপে। বাংলাদেশে আর কখনো স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা কায়েম হবে না এমনটাই প্রত্যাশা আপামর জনতার। ছাত্র-জনতার এ উত্থান হোক দুর্নীতি বিরোধী উত্থান, সংস্কারের উত্থান, বৈষম্যবিরোধী উত্থান। দেশকে ঢেলে সাজানোর সময় ও সুযোগ তৈরি হয়েছে শিক্ষার্থীদের এ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে।

T.A.S / T.A.S

প্লাস্টিকের বোতল স্বাস্থ্য এবং পরিবেশগত সমস্যা সৃষ্টি করছে

নতুন বছরে বিশ্ব অর্থনীতিতে নেই কোন সুসংবাদ

বিদায়ী বছরের ইতিবৃত্ত ও নতুন বছরের সূচনা

জলবায়ু সংকট বর্তমান বিশ্বে এক বিরাট চ্যালেঞ্জ

ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং খাতে চ্যালেঞ্জ ও সমাধান

জনগণকে সম্পৃক্ত করার উপযুক্ত সময় এখনই

বিজয় দিবস ও এমএজি ওসমানী পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে না থাকা

স্বাধীনতাকে হৃদয়ে আঁকড়ে ধরে রাখার নাম বিজয়

অর্থনৈতিক আধিপত্য বিস্তারে চীন-মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা

অগণতান্ত্রিক শক্তির অপসারণ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা

নিরাপত্তার স্বার্থেই ভারতকে উগ্রতা পরিহার করতে হবে

মানব উন্নয়ন শুধু মানুষের বস্তুগত কুশলের ওপরে নির্ভর করে না

প্রেসিডেন্ট আসাদের পতন ও সিরিয়ার ভবিষ্যৎ