ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪ জুন, ২০২৫

সিলেটের সেই অস্ত্রবাজরা এখন কোথায়?


সিলেট ব্যুরো অফিস photo সিলেট ব্যুরো অফিস
প্রকাশিত: ৭-৯-২০২৪ দুপুর ৪:১

সিলেট সীমান্তের জাফলং ও জৈন্তা সীমান্ত দিয়ে গত সিটি নির্বাচনের আগে ও পরে প্রায় ৮ টি অস্ত্রের চালান সিলেট নগরীতে প্রবেশ করে। বিশেষ করে চোরাই চিনির বুঙ্গাড়ীদের মাধ্যমে জাফলং সীমান্তের লাইনম্যান ইমরান হোসেন সুমন উরফে জামাই সুমন ও হরিপুর এলাকার পিচ্চি আবুল হোসেনের হাত ধরে এসব অস্ত্রের চালান দেশে আসে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করে।  এনিয়ে দৈনিক সকালের সময় পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। তবে সূত্র জানিয়েছে সীমান্ত দিয়ে আসা সব কয়টি অস্ত্রের চালানের খবর জানতেন জৈন্তাপুর থানার বর্তমান ওসি তাজুল ইসলাম পিপিএম, তবে তিনি ছিলেন নিরব দর্শক। কারণ বুঙ্গার লাইন থেকে তিনি প্রতি মাসে কয়েক কোটি টাকা আদায় করতেন। অপর দিকে গোয়াইনঘাট সীমান্তের বিষয়টি জানতে থানার তৎকালীন ওসি রফিকুল ইসলাম। তিনিও সাবেক মন্ত্রীর লোক জামাই সুমনদের কাছে ছিলেন অসহায়। কারণ চিনির লাইন থেকে তিনি প্রতি সপ্তাহে কোটি টাকা নিতেন জামাই সুমনসহ অপর লাইনম্যানদের কাছ থেকে। বিগত কয়েক মাসে চোরাই পথে সিলেটে প্রবেশ করা আগ্নেয়াস্ত্র মজুদ করছিলেন সদ্যবিদায়ী ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের ক্যাডাররা। মুলত বিভিন্ন গ্রুপ-উপগ্রুপের ক্ষমতা, দাপট ও শক্তি বাড়াতে মজুদ করা হচ্ছিল এই অস্ত্রগুলো। ভারতীয় ‘বুঙ্গার চিনি’র ব্যবসা থেকে কামানো কাড়ি কাড়ি কাঁচা টাকা দিয়ে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ ক্যাডাররা কিনেন এসব অস্ত্র। চিনির পাশাপাশি এসব বুঙ্গাড়ীদের মাধ্যমে বিগত সরকারের শেষ সময়ে বেশ কয়েকটি অস্ত্রের চালান শহরে প্রবেশ করে। সূত্রমতে জাফলং সীমান্ত দিয়ে চাঁদাবাজারদের গডফাদার জামাই সুমনের হাত ধরে সিলেট নগরীতে একাধিক অস্ত্রের চালান প্রবেশ করে। অপর দিকে বুঙ্গার চোরাচালানের গডফাদার হরিপুরের আবুল হোসেনের মাধ্যেমে রঞ্জিত গ্রুপের হাতে আসে একাধিক অস্ত্রের চালান। এসব চালানকৃত অস্ত্র সরাসরি সিলেট নগরীতে প্রবেশ করে নির্ধারিত ব্যক্তির হাতে চলে যেতো। হরিপুর এলাকার একটি সূত্র নিশ্চিত করে শুধু আবুলের মালিকানাধিন চৌধুরী ট্রেডার্সে আড়ালে তিনটি বড় অস্ত্রের চালান সিলেট নগরীতে প্রবেশ করে। আর জামাই সুমনের হাত ধরে কাজী ইলিয়াস গ্রæপের হাতে আসে দুটি অস্ত্রের চালান। কারণ জামাই সুমন সিলেট আওয়ামী লীগের সাবেক প্রবাসী কল্যানমন্ত্রী ইমরান হোসেনের নিজস্ব লোক। আর সেই বলয়ের রাজনীতির সংশ্লিষ্টতা ছিলো শফিউল আলম নাদেল গ্রুপের সাথে। আর হরিপুরে পিচ্চি আবুল ছিলেন সুনামগঞ্জ থেকে নির্বাচিত এমপি টিলাগড়ের বাসিন্ধা রঞ্জিত গ্রুপের রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত। অপরদিকে বিগত সিটি নির্বাচনের মাত্র ৪দিন আগে একটি কালো প্রাইভেট কার যোগে একটি অস্ত্রের চালান সিলেট নগরীতে প্রবেশ করে। সেই চালান ধরতে এসএমপি একাধিক টিম ভাগ হয়ে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিলেও সফল হয়নি তারা। সেই চালানের নেতৃত্বে ছিলেন হরিপুরের পিচ্চি আবুল। এতোদিন অস্ত্র কেনা ও মজুদের বিষয়টি গল্প-আড্ডায় সীমাবদ্ধ থাকলেও সিলেটবাসী এর প্রকাশ্য রূপ দেখতে পান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে। গত ১৮ জুলাই নগরীর আখালিয়ায় ও ৪ আগস্ট কোর্ট পয়েন্টে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ ক্যাডাররা প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে হামলা চালান ছাত্র-জনতার উপর। এসময় প্রদর্শিত অত্যাধুনিক অস্ত্র দেখে হতবাক হয়ে যান সিলেটের মানুষ। অভিযোগ উঠেছে, প্রদর্শিত অস্ত্রের মধ্যে এম-১৬ রাইফেলও ছিল। যা সেই সময়কার সিটি মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত যুবলীগ নেতা শিবলু আহমদের হাতে দেখা গেছে। ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত এসব অস্ত্র রাজপথের দখল, প্রভাব বিস্তার ও ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে ব্যবহার হলেও শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অস্ত্রধারী সেই ক্যাডাররা হাওয়া হয়ে গেছেন। কোথাও তাদের খোঁজ মিলছে না। সূত্র জানায়, গেল প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে অবৈধভাবে নিয়ে আসা চিনির ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সীমান্ত থেকে শহর পর্যন্ত নিরাপদে চিনি পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পালনে তৈরি হয় বেশ কয়েকটি গ্রুপ-উপগ্রুপের।‘বুঙ্গার চিনি’খ্যাত এই ব্যবসায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মুলত বিভিন্ন গ্রুপ অস্ত্র কিনে শক্তি বৃদ্ধি করতে থাকে। এই অস্ত্রগুলো এতোদিন বিভিন্ন নেতা ও ক্যাডারের কাছে গোপনে থাকলেও গত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তা প্রকাশ্যে বের হয়। এছাড়া গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের কয়েক শত নেতা ও পেশাজীবী অস্ত্রের লাইসেন্স বাগিয়ে নেন। লাইসেন্সকৃত অস্ত্রেরও ব্যবহার হয় আন্দোলনে ছাত্র-জনতাকে দমাতে। সূত্র আরও জানায়, গত ১৮ জুলাই নগরের আখালিয়া এলাকায় পুলিশের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে ছাত্র-জনতার উপর হামলা চালায় আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এসময় অস্ত্র দিয়ে প্রকাশ্যে গুলি ছুঁড়েন তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা। পরবর্তীতে ৪ আগস্ট সিলেট নগরের কোর্ট পয়েন্টে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ছাত্র-জনতা অবস্থা নিলে তাদেরকে হটাতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের ক্যাডাররা অস্ত্রের মহড়া দেন। তারা অস্ত্র হাতে ছাত্র-জনতার উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। পুলিশ ও ক্যাডাররা মিলে কোর্ট পয়েন্ট থেকে ছাত্র-জনতাকে তাড়িয়ে দেন। এরপর আরও কয়েকটি স্থানে ক্যাডাররা অস্ত্রের মহড়া দেন।  ৪ আগস্ট কোর্ট পয়েন্টে মহড়ার সময় কিছু অত্যাধুনিক অস্ত্র দেখে হতবাক হন নগরবাসী। সদ্য সাবেক সিটি মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত যুক্তরাজ্য প্রবাসী যুবলীগ নেতা রুহুল আমিন ওরফে শিবলু আহমদের হাতে দেখা যায় অত্যাধুনিক একটি আগ্নেয়াস্ত্র। যেটি অত্যাধুনিক এম-১৬ রাইফেল বলে দাবি করছেন অনেকে। এছাড়াও আন্দোলন চলাকালীন সময়ে যাদেরকে প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন করতে দেখা গেছে তাদের মধ্যে ছিলেন, সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন খান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সিনিয়র সহসভাপতি পিযুষ কান্তি দে, মহানগর যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এমএ হান্নান, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সজল দাস অনিক, মেজরটিলার ছাত্রলীগ ক্যাডার আনসার আহমদ ওরফে শুটার আনসার, ছাত্রলীগ ক্যাডার হাসান আহমদ, ২নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহেদ হোসেন, স্বেচ্ছাসেবকলীগ কর্মী বাবুল আহমদ পাঙ্গাস, মুনিম আহমদ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অস্ত্রধারীদের বেশিরভাগই ভারতে পালিয়ে গেছে। এক্ষেত্রে দুই দেশের চিনি ও গরু চোরাকারবারীরা সীমান্ত পারাপারে তাদেরকে সহায়তা করেছে। ভারত হয়ে পরবর্তীতে কেউ যুক্তরাজ্যে ও কেউ দুবাই পৌঁছেছেন। কেউ কেউ আবার ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছেন। আর যারা সীমান্ত পাড়ি দিতে পারেননি তারা সিলেট ছেড়ে গা ঢাকা দিয়ে আছেন। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্রধারীদের গ্রেফতার প্রসঙ্গে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের গণমাধ্যম কর্মকর্তা, অতিরিক্ত উপ কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, ভিডিও ও ছবি দেখে অস্ত্রধারীদের পরিচয় সনাক্তের কাজ চলছে। প্রদর্শিত অস্ত্রগুলো কোথা থেকে কিভাবে এসেছে। কাদের হেফাজতে এগুলো ছিল- সেটাও উদঘাটনে পুলিশ কাজ করছে। পাশাপাশি অস্ত্রধারীদের অবস্থান সনাক্ত করে তাদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টায় আছে পুলিশ। এরই মধ্যে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে সিলেট নগরীর রায়নগর একটি বাসা থেকে একটি পিস্তুল ও কয়েক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে। এবং সিলেট কৃষি বিদ্যালয়ে অভিযান চালিয়ে কয়েক শত দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে যৌথ বাহিনী।

এমএসএম / এমএসএম

জয়পুরহাটে গ্রাম আদালত বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

ঝালকাঠিতে রাস্তা সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ

মেঘনায় স্পিডবোট ডুবি, অক্ষত উদ্ধার ২৮ যাত্রী

বিয়ানীবাজারে প্রবাসী জামায়াত কর্মীকে হত্যার হুমকি

ত্রিশালে ট্রেনে কাটা পড়ে একজনের মৃত্যু

মেহেরপুরে কাব কার্নিভাল ২০২৫ এর উদ্বোধন

বারইয়ারহাটে আন্ডারপাস অথবা ফ্লাইওভার নির্মাণের দাবিতে ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন

বাঘায় বিশেষ অভিযানে সাজাপ্রাপ্ত আসামিসহ আটক ৫

সিংগাইরে শ্রেষ্ঠ ওসি তৌফিক আজম, ওয়ারেন্ট তামিলে এএসআই জলিল পুরস্কৃত

চুয়াডাঙ্গায় কেরুজ পুকুরে বিদ্যুতায়িত জিআই তারে কৃষকের মৃত্যু

পঙ্কিল রাজনীতি বিশ্ববিদ্যালয় চত্ত্বরে আনবেন না: শিক্ষা উপদেষ্টা

কুতুবদিয়ায় তিন দিনে ৬ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত

রাজশাহীতে দিনব্যাপী সুজুকি বাইকার্স ডে অনুষ্ঠিত