সুনামগঞ্জে পাশবিক নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ হাসপাতালে
সুনামগঞ্জের কুরবাননগর ইউনিয়নের শেখেরগাঁও গ্রামে দীর্ঘদিন যাবৎ দেবর ও ননদের স্বামী ও ননদের হাতে পাশবিক শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে গুরুতর আহত হয়ে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক অসহায় গৃহবধূ। আহতের নাম আয়াতুন নেছা (৩৫)। তিনি শেখেরগাঁও গ্রামের প্রবাসী মো. জালার উদ্দিনের স্ত্রী।
প্রত্যক্ষদর্শী ও হাসপাতাল সূত্রে যানা যায়, আয়াতুন নেছার স্বামী প্রবাসে অবস্থান করছেন। দীর্ঘদিন যাবৎ স্বামীর অবর্তমানে তিন সন্তানকে নিয়ে তিনি শ্বশুরবাড়িতে শাশুড়ি আলেকজান, দেবর বিল্লাল হোসেন, ননদ আমিনা বেগমের সাথে একত্রে একই পরিবারে বসবাস করে আসছিলেন। বছরখানেক আগে দেবর বিল্লাল হোসেন ও ননদের স্বামী দিলোয়ার হোসেনের কুনজর পড়ে অসহায় গৃহবধূ তিন সন্তানের জননী আয়াতুনের ওপর। স্বামী বিদেশে থাকার সুবাদে বারবার জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা চালায় নারীলোভী দেবর বিল্লাল ও ননদের স্বামী দিলোয়ার হোসেন। নিজের ইজ্জত বাঁচাতে বারবার পারিবারিকভাবে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কাছে বিচারপ্রার্থী হয়েও লম্পট দেবর ও ননদের স্বামীর কুনজরের বাইরে আসতে পারেননি আয়াতুন নেছা।
কিছুদিন পরপর দেবর ও ননদের স্বামী কর্তৃক কুপ্রস্তাবের শিকার হতে থাকেন তিনি। অবশেষে গত ৫ (মঙ্গলবার) রাতে আয়াতুন নেছা ঘুমন্ত থাকা অবস্থায় অন্ধকারে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করার জন্য তার ঘরে প্রবেশ করে তার ওপর লম্পট ঝাঁপিয়ে পড়ে দেবর বিল্লাল ও ননদের স্বামী দিলোয়ার। তার চিৎকারে ঘুমে থাকা তিন সন্তান জেগে উঠে লাইট জ্বালাতেই পালিয়ে যায় লম্পট দেবর ও দিলোয়ার। নিজের ইজ্জত রক্ষা করার জন্য আয়াতুন নেছা দুই মাস আগে সুনামগঞ্জ সদর থানায় লম্পট বিল্লাল হোসেন ও দিলোয়ার হোসেনের নামে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মাসখানেক আগে সালিশ বৈঠকের নামে এলাকার ওয়ার্ড মেম্বার পারিবারিকভাবে মীমাংসা করার কথা বলে আপসের সিদ্ধান্ত নেন। গত ২১ আগস্ট সদর থানায় শাশুড়িকে নিয়ে সরল বিশ্বাসে অভিযোগ তুলে নেন আয়াতুন নেছা। অভিযোগ তুলে নেয়ার দুদিন পরেই গত ২৩ আগস্ট রাতে আবার শুরু হয় লম্পট দেবর ও ননদের স্বামী কর্তৃক তার ওপর অমানবিক নির্যাতনের স্টিমরোলার।
জানা যায়, ২৩ আগস্ট রাতে লম্পট বিল্লাল ও দিলোয়ার মিলে আয়াতুনের ঘরের দরজা ভেঙে প্রবেশ করে তাকে শারীরিক নির্যাতন করে আহত করে এবং অজ্ঞান করে তার কানের একটি স্বর্ণের একটি দুল ও গলায় থাকা দুই ভরি ওজনের একটি রুপার হার জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে যায় এবং ধর্ষণের চেষ্টা করে শ্লীলতাহানী করে। তিন সন্তানের চিৎকারে আশপাশের বাসিন্দারা এলে হামলাকরীরা হুমকি দিয়ে চলে যায়। খবর পেয়ে পরদিন সকালে গুরুতর আহত অবস্থায় আয়াতুন নেছাকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান তার স্বজনরা। এ সময় দেবরের হুমকির মুখে পড়তে হয় তাদের। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়।
এ ব্যাপারে আহত আয়াতুন নেছা জানান, আমি একজন অসহায় নারী। তিনটি সন্তানকে নিয়ে সংসার পরিচালনা করে আসছি। স্বামী প্রবাসে থাকায় বারবার আমার উজ্জত লুণ্ঠন করার জন্য কুপ্রস্তাব দেয় আমার দেবর ও ননদের স্বামী। আমি বারবার বিচারপ্রার্থী হয়েও কোনো ন্যায়বিচার পাচ্ছি না। অবশেষে থানায় অভিযোগ দিয়েছি। ওয়ার্ড মেম্বার আলাউদ্দিনের পরামর্শে আমাকে ন্যায়বিচারের নামে থানা থেকে অভিযোগ তুলে নিতে বাধ্য করে আমার শাশুড়ি আলেকজান। কেন থানায় অভিযোগ দিয়েছি, সেজন্য আমার ওপর আবার অমানবিক শারীরিক নির্যাতন চালায় আমার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। আমি প্রশাসনের কাছে ন্যায়বিচার চাইব, সুস্থ হওয়ার পর আদালতে মামলা করব।
এ ব্যাপারে কুরবাননগর ইউপি সদস্য আলাউদ্দিন বলেন, আমি বিষটি মীমাংসা করার চেষ্টা করেছি কিন্তু লম্পট বিল্লাল ও দিলোয়ার বারবার মহিলার ওপর নির্যাতন চালায়। এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। তা না হলে যে কোনো সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে।
এ ব্যাপারে সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সহিদুর রহমান জানান, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এমএসএম / জামান