নানান জটিলতায় আটকে আছে জবির নতুন উপাচার্য নিয়োগ
জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্রদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার অভিযোগের কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্রসমাজের আন্দোলনের মুখে গত ১১ আগস্ট প্রতিষ্ঠানটির ভিসি সাদেকা হালিম পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় এক মাস জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ভিসিশূন্য।
সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য থেকেভিসি নিয়োগ দেয়া যায় কিনা, সে বিষয়ে খতিয়ে দেখছে তারা। বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নাকি অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পাবেন, এমন নানান জটিলতায় আটকে আছে নতুন উপাচার্য নিয়োগ।
এছাড়াও পুরো প্রক্টরিয়াল বডি ও অন্যান্য পদের পদত্যাগ করায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য রয়েছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটিতে এখন অস্থিরতা বিরাজ করছে। প্রক্টরিয়াল বডি না থাকায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন শিক্ষার্থীরা। এমন পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসে চলছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মধ্য থেকে ভিসি নিয়োগের দাবিতে আন্দোলন। এই দাবিতে বিগত প্রায় এক মাস শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভাগ সংযোগ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সমাবেশের মাধ্যমে লাগাতার আন্দোলন করে আসছেন।
এছাড়া শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গেটলক কর্মসূচি করার ঘোষণা দিয়েছেন। তারা জানান, যদি বাইরের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভিসি হিসেবে কেউ নিয়োগ পেতে জগন্নাথে আসেন, তাহলে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট দিয়ে ঢুকতে দেয়া হবে না।
এদিকে জবি শিক্ষকগণের মধ্য থেকে ভিসি নিয়োগের ক্ষেত্রে জোর আলোচনায় আছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দিন। তিনি একাডেমিক ও প্রশাসনিক উভয় ক্ষেত্রে একজন দক্ষ ব্যক্তি বলে জানান জবি শিক্ষকরা। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত তার প্রবন্ধের সংখ্যা ২৮ টির অধিক। আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, কানাডা, মালয়েশিয়া সৌদি আরব সহ বিভিন্ন দেশে ১৯ টির বেশি সেমিনারে তিনি অংশগ্রহণ করেছেন। ক্যারিয়ারের বিভিন্ন সময় তিনি প্রভোস্ট, প্রক্টর, চেয়ারম্যান, ডিন, সিন্ডিকেট সদস্য সহ অসংখ্য প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ জবির কলা অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দিন বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের সাধারণ সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)-এর যুগ্ম-মহাসচিব।
এছাড়াও আলোচনায় আছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম। তিনি ১৯৮৬ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবেও কাজ করেছেন। ২০০৮ সালে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান ও সামজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এসময় তিনি বিভিন্ন একাডেমিক রুলস কমিটির সদস্য হিসেবেও কাজ করেছেন।
এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি অংশ অভিযোগ করে বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য থেকে ভিসি নিয়োগের দাবিকে দুর্বল করার জন্য একটি মহল পরিকল্পিতভাবে নীল দলের পোস্টধারি কয়েকজন শিক্ষকের নাম ভিসি হিসেবে সামনে এনেছেন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তাদের নাম ও প্রকাশিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড.নাছির আহমাদ বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য থেকে ভিসি দেয়ার দাবিতে আমরা এক মাস ধরে আন্দোলন করে আসছি। আমি ষোল বছর ধরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছি। এই অভিজ্ঞতা থেকে বলছি যিনি জবির ভিসি হবেন তাকে ২টি বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। প্রথমত ৫ আগস্ট স্বৈরশাসনের পতনের পর জবির বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে ৪১টি বিভাগ থেকে বিভাগ সংস্কারের দাবির পাশাপাশি প্রশাসন সংস্কারের দাবিও উঠেছে। নতুন ভিসি স্যারকে সকল সংস্কারকে এড্রেস করে জবির সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, জবির বর্তমান শিক্ষকের সংখ্যা ৬৮১ জন। এর মধ্যে আওয়ামী সমর্থিত শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ৬০০। তারা নতুন ভিসি স্যারকে নানান ভাবে চ্যালে্ঞ্জ করবেন। তাদের বাধাকে অতিক্রম করে নতুন ভিসি স্যারকে কাজ করতে হবে। এই দুটি বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য নতুন ভিসি স্যারকে একদিকে যেমন একাডেমি হতে হতে হবে অন্যদিকে তীক্ষ্ণ রাজনৈতিক জ্ঞান সম্পন্ন ও হতে হবে। এই দুই দিক থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হওয়ার যোগ্য শিক্ষকদের মধ্যে সবচেয়ে যোগ্য ড. রইছ উদ্দিন স্যার।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে জবি শিক্ষকগণের মধ্য থেকে ভিসি নিয়োগ আন্দোলনের অন্যতম আহবায়ক ড. মোহাম্মদ বিলাল হোসাইন বলেন, শিক্ষা, গবেষণা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সমসাময়িক প্রতিষ্ঠিত অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেক পেছনে রয়েছে। বিগত ঊনিশ বছরে বিভাগ ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধাদি নিশ্চিত করা হয়নি। এক্ষেত্রে আগত উপাচার্যগণের অবহেলা এবং অদক্ষতাই প্রধানত দায়ী। উপাচার্যগণ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজের মনে করেননি। যার ফলস্রুতিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার আজ বাহিরের উপাচার্য আগমনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। একটি সত্যিকারার্থে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের মধ্য থেকে যোগ্য, সৎ এবং দক্ষ একজন শিক্ষক উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাবেন, এটি পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণের দাবি। এই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।
এমএসএম / জামান
ইবি'র ৪৭তম জন্মিদনে নানা কর্মসূচি গ্রহণ
জকসু নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য পদপ্রার্থী অবন্তির ভাবনা
জকসু নিয়ে কেন্দ্রীয় পাঠাগার ও সেমিনার সম্পাদক পদপ্রার্থী ইমনের ভাবনা
ছাত্রদলের উদ্যোগে সুবিধাবঞ্চিত ও ছিন্নমূল শিশুদের সাপ্তাহিক স্কুল উদ্বোধন
শেকৃবিতে নিয়োগে আওয়ামী পুনর্বাসন, এলাকাপ্রীতি ও অর্থ লেনদেনের অভিযোগ
উত্তরায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন
জকসুতে কার্যনির্বাহী সদস্য পদে নির্বাচন করবে সাংবাদিক সম্পদ
দীর্ঘ তিন যুগ পর জাবিতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের মিছিল
জকসু নির্বাচন: ছাত্রশিবিরের ‘অদম্য জবিয়ান ঐক্য’ প্যানেল ঘোষণা
জকসু নির্বাচন: ছাত্রদল সমর্থিত "ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান" প্যানেল ঘোষণা,
এইচএসসির খাতা পুনঃনিরীক্ষণের ফল প্রকাশ
বাকৃবিতে প্রিসিশন ব্রিডিং-ভিত্তিক দুগ্ধ উৎপাদন উন্নয়ন বিষয়ক কর্মশালা