আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত তানোর কৃষি অফিস
রাজশাহীর তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহমেদের বিরুদ্ধে সরকারি বরাদ্দের প্রতিটি খাতেই অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দিয়ে কৃষি অফিসটিকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন। কৃষকদের জন্য ধান, সয়াবিন, বাদাম ও ভুট্টা কাটার যন্ত্রপাতি বরাদ্দ এনে তা প্রকৃত কৃষকদের না দিয়ে তার পছন্দের লোকদের দিয়ে অন্যদের কাছে বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনীর নামে কৃষকদের এনে নামমাত্র নাস্তা ও সামান্য নগদ টাকা ধরিয়ে দিয়ে সাদা কাগজ স্বাক্ষর ও টিপসই নিয়ে বিদায় করা হয়।
অভিযোগ উঠেছে, কৃষক প্রশিক্ষণ, মাঠ দিবস, প্রদর্শনী, কৃষি যন্ত্রপাতিতে ভর্তুকি ও দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বরাদ্দসহ বিভিন্ন খাতের বরাদ্দের সিংহভাগ লুটপাট হচ্ছে। তারা কৃষকদের নিয়ে একটি ফসলের মাঠ দিবসের অনুষ্ঠান করে ব্যানার টাঙিয়ে ছবি তুলে রেখেই বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করে চলেছেন। এছাড়া প্রতিটি বরাদ্দের কলাম ফাঁকা রেখেই স্টক-রেজিস্টারে নেয়া হয় কৃষকদের স্বাক্ষর ও টিপসই।
এসব অভিযোগের সত্যতার খোঁজে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রদর্শনীতে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষকদের জন্য বরাদ্দের চার ভাগের তিন ভাগই চলে যাচ্ছে কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহমেদের পকেটে। সরকারি বরাদ্দের এক-চতুর্থাংশও কৃষকরা পাচ্ছেন না। অফিসের যন্ত্রপাতি (মেশিন) থেকে শুরু করে প্রতিটি খাত থেকে কৃষি কর্মকর্তার বাণিজ্য এখন ওপেন সিক্রেট। বিভিন্ন ট্রেনিংয়ে অংশ গ্রহণকারী কৃষকদের মানসম্মত নাস্তা ও খাওয়ার দেয়া হচ্ছে না বলেও জানান অন্তত ২০ জন কৃষক। বেশিরভাগ কৃষকই জানেন না তাদের জন্য সরকার কী পরিমাণ বরাদ্দ দিচ্ছে এবং কৃষকরা পাচ্ছেন কতটুকু।
তারা বলছেন, আমরা তো এতকিছু জানিও না, বুঝিও না। কৃষি অফিসে বরাদ্দের পরিমাণ জানতে চাইলে পরে আর কিছুই দেয় না। উল্টো তার নাম কেটে দেয়ার হুমকি-ধমকিও দেন এই কর্মকর্তা। এতে কৃষকরা মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।
কৃষি অফিস বলছে, বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সরিষা, খেসারি, মসুর, চিনাবাদামসহ বিভিন্ন ফসলের প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে এবং কৃষকদের সব বরাদ্দ পূর্ণভাবে বণ্টন করা হয়েছে।
কিন্তু নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একটি সূত্র বলছে, উন্নতমানের ধান, গম, পাট ও ভুট্টার বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণের নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ১৫ জন কৃষককে ৫ একরের একটি করে প্রদর্শনী প্লট দেয়ার কথা। কোনো গ্রুপে ১৫ হাজার আবার কোনো গ্রুপে ১০ হাজার টাকা সম্মানী দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হয় না। হেক্টরপ্রতি কৃষকের জন্য যে পরিমাণ বীজ, সার, কীটনাশক, নগদ টাকাসহ যেসব উপকরণ দেয়ার কথা, তাও দেয়া হয়েছে নামমাত্র। সরেজমিন তদন্ত করলে সত্যতা পাওয়া যাবে।
এএসসিপি প্রকল্পের মাধ্যমে রয়েছে কৃষক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। প্রতিটি প্রশিক্ষণে অংশ নেন ৩০ জন কৃষক। ওই প্রশিক্ষণে প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থী কৃষকের জন্য খাবার বাবদ বরাদ্দ ৪০০ টাকা এবং ব্যাগ বাবদ ৬৫০ টাকা বরাদ্দ থাকলেও কৃষকদের হাতে ধরিয়ে দেয়া হয় ১০০ টাকা দামের এক প্যাকেট বিরিয়ানি আর ১০০ থেকে ১৫০ টাকার একটি ব্যাগ। তাদের অভিযোগ, বিভিন্ন ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণকারী কৃষকদের মানসম্মত নাস্তা ও খাওয়ার দেয়া হচ্ছে না।
এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার নিকট কৃষক ও যন্ত্রপাতি বরাদ্দের তালিকা চাইলে তিনি আজ নয় কাল, এমন টালবাহানা করে তালিকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ প্রতিবেদক কাগজপত্রের জন্য কৃষি অফিসে অন্তত তিনবার গিয়ে তার কাছ থেকে এসব তথ্য নিতে পারেননি।
একটি বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, চলতি বছর উপজেলায় ভুট্টা কাটার মেশিন, কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন, টি-রিপার, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার ওয়াকিং টাইপ ও পাওয়ার স্প্রয়ার বরাদ্দ দেয়া হয়। উপজেলায় ভুট্টা চাষ না হলেও এই কর্মকর্তা লুটপাটের উদ্দেশ্যে ধান কাটার মেশিন বাদ দিয়ে ভুট্টা কাটার মেশিনের চাহিদা প্রেরণ করেন। এতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে মেইজ শেলার (ভুট্টা মাড়ার মেশিন) বরাদ্দ দেয়। মেশিনগুলো প্রকৃত কৃষকদের না দিয়ে তার অনুগত লোকজনের নামে বরাদ্দ দেখিয়ে ফটোসেশান করে ওই মেশিন অন্যদের কাছে নামেমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দেন। রিপার পেলেও ওইগুলো তার পছন্দের এক কীটনাশক ব্যবসায়ী দালালের মাধ্যমে বিক্রি করার অভিযোগ ওঠে।
কামারগাঁ ইউপির এক গ্রামপুলিশের কাছ থেকে টাকা জমা নিয়ে তার নামে মেশিন বরাদ্দ এনে অন্যের কাছে বিক্রি করেছেন। এছাড়াও পুষ্টি বাগানের জন্য বিভিন্ন গ্রুপে একজন কৃষককে ৩ হাজার ৭০০ টাকা দেয়ার কথা থাকলেও প্রতি কৃষককে ৫টি গাছের চারা, ২৫০ টাকার বীজ ও ৪৫০ টাকার সার দিয়ে বাকি টাকা তার পকেটে ঢোকান বলে অভিযোগ করেন কৃষকরা।
এসএসিপি প্রকল্পের আওতায় বাগান পরিচর্যার জন্য শতাধিক কৃষককে ট্রেনিং দেয়া হয়। এতে প্রত্যেক কৃষকের জন্য ১০ হাজার ৫০০ টাকা ভাতা দেয়ার কথা থাকলেও কৃষি কর্মকর্তা সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে দুই ভাগ ৫ হাজার টাকা ধরিয়ে দেন। এ নিয়ে কৃষকদের সঙ্গে কর্মকর্তার বাকবিতণ্ডা ও মৃদু হাতাহাতি হয়েছে বলে কৃষকরা জানান।
এছাড়াও এসএসিপি প্রকল্পের আওতায় কৃষক ট্রেনিংয়ের নামে ২০ টাকার নাস্তা, ১২০ টাকার দুপুরের খাওয়া ও নগদ ২৫০ টাকা ধরিয়ে দেয়া হয়। এভাবেই চলছে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরটি।
এসএসিপি প্রকল্পে ট্রেনিং নেয়া এক কৃষক বলেন, একবার একটি ট্রেনিং করে তিনি ৮০০ টাকার ভাতা পেয়েছেন। অপর এক কৃষক জানান, তার একটি পুষ্টি বাগান রয়েছে। কখনো ট্রেনিং করেননি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে একটা আমের চারা, লেবুর চারা ও একটি সাইনবোর্ড ছাড়া তিনি কিছুই পাননি।
আড়াদীঘি ও মাদারীপুর এলাকার দুই কীটনাশক ব্যবসায়ী বলেন, এবার লাইসেন্স নবায়নে কৃষি কর্মকর্তা ৫ হাজার টাকা করে আদায় করেছেন।
বরাদ্দের বিষয়ে অফিসের এক সহকারী বলেন, কৃষক ও কৃষি যন্ত্রপাতি বরাদ্দের কোনো কপি আমাদের দেয়া হয় না। অফিস থেকে মৌখিকভাবে জানানো হয়। আমরা ডায়েরিতে নোট করে নেই।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহমেদ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ভুলত্রুটি থাকতেই পারে। তবে তার আমলে কৃষকদের বরাদ্দ সঠিকভাবে দেয়া হচ্ছে। আপনাদের পছন্দের কেউ থাকলে নাম দিতে পারেন। আমি অগ্রাধিকারভিত্তিতে আপনাদের দেয়া নামগুলোকে বরাদ্দের আওতায় নিয়ে আসব।
এমএসএম / জামান
তারেক রহমানের সংবর্ধনা : চাঁদপুর থেকে যাবে ২৫ হাজার নেতাকর্মী
নাগেশ্বরীতে পূর্ব দুধকুমর পাড় মানব কল্যাণ যুব সংগঠনের শীত বস্ত্র বিতরণ
ভোলাহাট সদর ইউনিয়নে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ
দূর্গম পাহাড়ে বিশুদ্ধ পানির সংকট নিরসন করল সেনাবাহিনী
বাংলাদেশ থেকে মানবপাচারকালে ৩ বাংলাদেশি আটক
আধুনিকতার ছোঁয়ায় গরু দিয়ে হালচাষ এখন শুধুই স্মৃতি
গাজীপুর রেড ক্রিসেন্ট নির্বাচন: বিএনপি সমর্থিত বাবুল-টুলু প্যানেলের নিরঙ্কুশ জয়
জয়পুরহাটে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে অ্যাডভোকেসি ডায়ালগ
ভূঞাপুরে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে দেড় লক্ষাধিক টাকা জরিমানা
মান্দায় দায়সারা কাজ করে প্রকল্পের সাড়ে ৩০ টন চাল গায়েব
অভয়নগরে মাদরাসার এতিম শিক্ষার্থীদের মাঝে কম্বল বিতরণ
তানোরে অসহায় দুস্থ ও ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র কম্বল বিতরণ