মাগুরা-ঝিনাইদহ মহাসড়কের জমি দখলের অভিযোগ
মাগুরা সদরের আলমখালীতে মহাসড়কের সরকারি জমি দখল করে মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে সদর থানা পুলিশ।
সরেজমিন মাগুরা সদর থানার অধীন সাচানী রাউতারা মৌজার সিএস খতিয়ান ৩৯, এসএ খতিয়ান ২৪, দাগ নং ১৬০৮-এর ১১ শতক জমি নিয়ে বিরোধ দেখা যায়। সিএস রেকর্ডীয় মালিক রায়তি দং অভয়চরণ মণ্ডল, এসএ রেকর্ডীয় মালিক দং মকবুল বিশ্বাস এবং আরএস রেকর্ড রয়েছে মাগুরা সড়ক ও জনপথের নামে।
ঝিনাইদহ-মাগুরা মহাসড়কসংলগ্ন ১২ রুমবিশিষ্ট মার্কেট দখল সূত্রে মালিক রয়েছে ৫নং হাজরাপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান, সিরাজুল মণ্ডল, বাঁশি সিকদার, আসাদুজ্জামান এবং শান্তি রাম। মহাসড়কের পাশে নির্মিত মার্কেটটি গত ৫ তারিখ ভেঙে দিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা বলে অভিযোগ উঠেছে। মার্কেটটি নতুন করে নির্মাণ করতে গেলে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন স্থানীয়রা, এমন অভিযোগ শোনা যায়। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে সদর থানার এসআই ইব্রাহিম উভয়পক্ষকে শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানান।
৫নং হাজরাপুর ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, সাচানী রাউতারা মৌজার সাবেক ১৬০৮ দাগ, হাল দাগ ২৭৩৪নং মাগুরা-ঝিনাইদহে মহাসড়কের অধিগ্রহণকৃত সরকারি জমি। ১৯৩৯ সালে দি ক্যালকাটা গেজেটের মাধ্যমে মহাসড়কের জমি অধিগ্রহণ করা হয়। উক্ত অধিগ্রহণকৃত সরকারি জমির পরের দাগ ১৬০৯ আমার জমি। আওয়ামী শাসনামলে কোর্টের আইনকে নিজের মতো সাজিয়ে জোর করে ১২টি দোকান নির্মাণ করে ভাড়া বাণিজ্য চালাচ্ছেন কিছু অসাধু ব্যক্তি। মানুষের সুবিধার জন্যই রাস্তা নির্মাণ করে সরকার। ভবিষ্যতে পাকা রাস্তা প্রশস্তকরণে এই ভবন অনেক বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। এজন্য যত দ্রুত সম্ভব রাস্তার ওপর থাকা ভবনের অংশবিশেষ অপসারণের দাবি জানান তিনি।
এদিকে ৫টি রুমের মালিক মো. আসাদুর জামান বলেন, ১৯২৪ সালের সিএস রেকর্ডীয় মালিক অভয়রচরণ, বানীকান্ত এবং ‘৬২ সালের রেকর্ডীয় ১১ শতাংশ জমি অভয়রচরণের উত্তরসূরি মতিলালের নামে। আরএস রেকর্ড মাগুরা সড়ক ও জনপথের নামে হওয়ায় মতিলালের ছেলে জয়গোপাল মাগুরা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে নির্বাহী প্রকৌশলী (সওজ) এলএসটি মামলা করেন। নিম্ন আদালত জয়গোপালের পক্ষে রায় দিলে সড়ক ও জনপথ অফিস উচ্চ আদালতে আপিল করে। ওই আপিলে সড়ক ও জনপথ অফিস হেরে যায়। আমরা কোর্টের রায়ের মাধ্যমে মালিক হয়েছি।
সড়ক ও জনপথের সার্ভেয়ার ইলিয়াস বলেন, ১৯/৬/১৩ ডিক্রী রদ বাবদ দেওয়ানি ১৮৮/১৩ মাগুরা সদর সহকারী জজ আদালতে নির্বাহী প্রকৌশলী (সওজ) বাদী হয়ে মামলা রুজু করেন। এরপর স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা বাবদ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বাদী হয়ে বিবাদী জয়গোপাল মণ্ডলের বিরুদ্ধে দেওয়ানি ০৪/২০১৩ মাগুরা সদর সহকারী জজ আদালতে আরেকটি মামলা রুজু করেন। মামলা দুটি চলমান রয়েছে।
তবে এ বিষয়ে শনিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে মাগুরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এএম আতিক উল্লাহ বলেন, মামলা যখন চলমান রয়েছে তার মানে আদালতের অধীনে রয়েছে বিচার ব্যবস্থা। মার্কেট নির্মাণ বা স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। অবশ্যই জমিটি সড়কের জন্য ধরে রাখার জন্য চেষ্টা করব। এটা আমাদের আইনি পদক্ষেপ। জমিটি নিয়ে যেহেতু আদালতে দুটি মামলা হয়েছে, এখন সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না জমিটির মালিক কে। তারা দাবি করছে তারা মালিক আর আমরা দাবি করছি আমরা মালিক। আদালতের রায় প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে কোনোপক্ষই জমির মালিক নয়। জায়গাটি আমরা নজরদারির মধ্যে রেখেছি এবং জেলা প্রশাসকের সাথে সমন্বয় করে কার্যকরী পদক্ষেপ নেব, যাতে আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগেই কেউ অন্যায়ভাবে মার্কেট বা স্থাপনা কোনো নির্মাণ না করতে পারে। সরকারি জমি দখল করে কেউ মার্কেট নির্মাণ করবে এটা হতে পারে না। সমাধান না হলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমএসএম / জামান