নালিতাবাড়ীতে বন্যায় ঘর হারানো মানুষের মানবেতর জীবনযাপন
ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের ফলে সৃষ্ট বন্যায় শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় ছয় হাজারের বেশি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে অনেক পরিবার। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাটি ও টিনের ঘরে বসবাসকারী পরিবারগুলো। প্রশাসন বলছে, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে টিন ও অর্থ বরাদ্দ চেয়ে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে দ্রুত সেগুলো বিতরণ করা হবে।
পানি নেমে যাওয়ায় বন্যার তাণ্ডবের ক্ষতচিহ্ন ক্রমেই ভেসে উঠছে। অনেক স্থানে ঘর থেকে বন্যার পানি নেমে গেলেও বাড়ির উঠান ও চারপাশে পানি থাকায় বেড়েছে ভোগান্তি। পাশাপাশি পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। গ্রামীণ রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ায় কাদা-পানিতে একাকার হয়ে থাকায় মানুষের দুর্ভোগ পৌঁছেছে চরমে। এদিকে, আঞ্চলিক সড়কগুলো বন্যার পানির স্রোতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দুর্ঘটনার শঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
নাকুগাঁও স্থলবন্দরের শ্রমিক চিন্তাহরণ বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ, দিন আইন্না দিন খাই। আমার তিনটা ঘর ঢলে ভাইঙ্গা নিয়ে গেছে গা। ঘরের ধান-চাল সবই ভাসায়া নিয়ে গেছে গা। এখন কী খায়া বাঁচমু? সরকার আমগরে সাহায্য না করলে আর কোনো উপায় নাই।’
আরেক বাসিন্দা জুলহাস মিয়া বলেন, ‘ঢলের পানিতে হাঁস-মুরগিসহ ঘরের সব ভাসায়া নিয়ে গেছে গা। ছোট ছোট পুলাপান নিয়া কোনোমতে জীবন বাঁচাইছি।’
তাদের মতো এমন অসহায়ত্বের গল্প দুই উপজেলার হাজার হাজার মানুষের। দিন এনে দিন খাওয়া এসব দরিদ্র মানুষ তাদের পেটের ক্ষুধার চেয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই নিয়ে বেশি চিন্তিত।
গত কয়েক দশকের মধ্যে এরকম বন্যা দেখেননি এখানকার মানুষ। এখনো অনেক নিচু এলাকার মানুষ জলাবদ্ধতার কারণে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছেন না। বন্যার পানির নিচে এখনো বিস্তীর্ণ এলাকার ক্ষেতের রোপা আমন ধান তলিয়ে রয়েছে। বন্যাকবলিত অধিকাংশ স্থানে রোপা আমন ধান একেবারে নষ্ট হওয়ায় একমুঠো ধানও পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারগুলো মুষড়ে পড়েছে। পুকুর ও মাছের খামারগুলো থেকে সব মাছ ভেসে যাওয়ায় উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষিদের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। এ ক্ষতি তারা কিভাবে পূরণ করবেন, তা ভেবে কোনো কূল-কিনারা পাচ্ছেন না।
নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাসুদ রানা জানান, বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। উজানের পানি সম্পূর্ণ নেমে গেছে, তবে ভাটি এলাকার ৮-১০টি গ্রাম এখনো পানিবন্দি রয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রায় ৩০ হাজার বন্যার্তের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। নালিতাবাড়িতে ৪ হাজার ৬৮টি ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ও প্রায় ১ হাজার ২০০ ঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা প্রস্তুত করে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই পুনর্বাসন শুরু হবে।
T.A.S / জামান