বস্তি উচ্ছেদ না করার আকুতি ৪ পরিবারের
উচ্ছেদের নির্দেশ পাওয়ার পর রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের কাছে পদ্মার পাড়ে নিজেদের করা কুঁড়েঘরগুলো উচ্ছেদ না করার আকুতি জানাল রাজশাহী নগীর দরগার বিপরীত পাশে দৃষ্টিনন্দন ব্রিজটির ঠিক নিচেই পদ্মাপাড়ে করা বস্তির ৪টি অসহায় পরিবার।
বস্তি ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১৭-১৮ বছর ধরে পদ্মার পাড়ে ময়লা-আবর্জনা ফেলা পরিত্যক্ত জায়গাটিতে মাটি ভরাট করে কুঁড়েঘরগুলো বানিয়ে বসবাস করে আসছে ছিন্নমূল এই পরিবারগুলো। বর্ষার পানি ঢুকে ঘর ভরে যায়, গরমে ঘরের টিন- নদীর বালুর তপ্ততা আর দারিদ্র্যের কষাঘাত সহ্য করে এতগুলো বছর তাদেরও একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল এই কুঁড়েঘরগুলোই।
কিন্তু কথায় আছে, অভাগা যেদিকে যায়, সাগর শুকিয়ে যায়...! চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি তাদের ঘরগুলোর পাশ দিয়েই বিনোদনপ্রিয় মানুষের জন্য গড়ে ওঠা শোভাবর্ধনকারী ঝুলন্ত ব্রিজটির উদ্বোধন হয়। আনন্দে মেতে ওঠেন বিনোদনপ্রিয় নগরবাসী। কিন্তু ব্রিজ উদ্বোধনের পর থেকেই তাদের শুনতে হয়, তোমাদের আর এখানে থাকতে দেবে না, তোমাদের বস্তির ঘর ব্রিজের সৌন্দর্য নষ্ট করছে, এখানে সুন্দর রেস্টুরেন্ট হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। অজানা শঙ্কায় দিন কাটতে থাকে তাদের।
এদিকে গতকাল সোমবার (৩০ আগস্ট) ও তার আগেও দু-এক দিন সিটি কর্পোরেশন থেকে তাদের ঘরগুলো উঠিয়ে নিতে বলা হয়। সর্বশেষ সোমবার সকালে তাদের বিকেল ৫টার মধ্যে ঘর সরিয়ে না নিলে সিটি কর্পোরেশন ঘরগুলো ভেঙে দেবে বলে নির্দেশনা দিয়ে যায়। সর্বশেষ আজ মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) সকালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ ঘরগুলো ভাঙতে এলে বস্তির মানুষগুলো বলেন, স্যার, আমরা যাব কোথায়, আমাদের তো যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। তখন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাদের আবারো ৭ দিনের সময় দিয়ে যান।
উল্লেখ্য, নগরীর দরগাপাড়ার দরগার মূল গেটের সামনেই রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের তৈরি করা দৃষ্টিনন্দন ব্রিজটির ঠিক নিচেই নদীর ধারে চারটি অসহায় হতদরিদ্র পরিবার কোনোরকম ঝুপড়ি তুলে বসবাস করে আসছে। ১৯৫৭ সালে নদীতে সব খেয়ে নেয়া বরিশালের এতিম নবাব আলী (৮২), ৪০ বছর আগে মাগুরা থেকে আসা সহায়-সম্বলহীন মতিয়ার রহমান (৭০), মানসিক ভারসাম্যহীন বিউটি ওরফে কুটি (৩২) এবং দিনমজুর জলিল মিয়া (৭০); এই মিলে চারটি পরিবার এখানে থাকে। তবে সবারই রয়েছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এলাকার ঠিকানাসহ জাতীয় পরিচয়পত্র। এদের সাথে থাকে শিশু অধিকারের লেশমাত্র ছোঁয়া না পাওয়া কুরবান (৬), সুরাইয়া (৫) আর রাহান (৮)। কুরবান আর সুরাইয়ার মা কুটি (৩২) মানসিক ভারসাম্যহীন, বাবা ওয়াদ আলী রাগারাগি করে কোথায় চলে গেছে কেউ জানে না। রাহানের (৮) মা আজিরন (৩৫) আর বাবা দিনমজুর জলিল (৪৬)।
এখানে থাকা নবাব আলী বলেন, আমাদের কোথাও থাকার জায়গা নেই। এ কারণে এখানে ঘর তুলে থাকি। অনেক দিন হলো কোনোরকমে দুবেলা দুমুঠো ভাত জোগাড় করে বেঁচে আছি। কিন্তু ব্রিজটি হওয়ার পর থেকেই নানান মানুষ নানান কথা বলছে। কেউ বলছে এখানে রেস্টুরেন্ট বানাব, তোরা অন্য কোথাও চলে যা আবার কেউ বলছে তোদের এই ঘরগুলোর জন্য সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। আমাদের তো আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই, যাব কোথায়? থাকব কোথায় আমরা? তবে আমরা জানি, আমাদের এই দুঃখ-দুর্দশার কথা যদি নগরপিতা এএইচএম খায়রুজজামান লিটনের কানে পৌঁছায়, তাহলে তিনি নিশ্চয়ই আমাদের জন্য একটি ব্যবস্থা করবেন।
মানসিক ভারসাম্যহীন বিউটি ওরফে কুটি বলেন, আমরা এখান থেকে কোথাও যাব না। একটু একটু করে মাটি তুলে ভরাট করে আমরা এখানে ঘর বানিয়েছি। প্রতি বছর বর্ষার সময় আমাদের ঘরে পানি উঠলে ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে বাঁধের ওপর খোলা আকাশের নিচে দিনের পর দিন কাটাতে হয়। তবুও এখানেই থাকি, আল্লাহ্র দুনিয়ায় আর তো কোনোকিছুই নাই আমাদের।
দিনমজুর বৃদ্ধ মতিয়ার রহমান (৭০) বলেন, শুনতে পাই এ দেশে কেউ নাকি ঘরহীন থাকবে না। বিভিন্ন জায়গায় ভূমিহীনদের জন্য সরকার ঘর বাড়ি দিচ্ছ, আমরাও তো ভূমিহীন, তাহলে আমরা কি একটা স্থায়ী বসবাসের জায়গা পাবনা?
রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, রাষ্ট্রের প্রয়োজনে যে কোনো জায়গাই খালি করতে হতে পারে। তাতে কোনো নাগরিকের বাধা দেয়ার ক্ষমতা নেই। তবে এ ধরনের উচ্ছেদের আগে পুনর্বাসন ব্যবস্থাও করতে হবে। সংবিধানে রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের ৫টি মৌলিক অধিকারের মধ্যে বাসস্থান একটি। তাদের থাকার জায়গা অবশ্যই করে দিতে হবে। নইলে সংবিধান লঙ্ঘিত হবে।
এ বিষয়ে উচ্ছেদ কার্যক্রমে নেতৃত্ব দেয়া রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইমরানুল হককে উচ্ছেদের উদ্দেশ্য ও উচ্ছেদ হওয়া মানুষগুলোর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা আছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সাথে কথা বলুন।
এরপর রাসিক ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর (অতিরিক্ত দায়িত্ব ৯নং ওয়ার্ড ) ও প্যানেল মেয়র-১ শরিফুল ইসলাম বাবুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পদ্মাপাড়ের সৌন্দর্যবর্ধন ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বৃদ্ধি, গরু-ছাগলসহ ময়লা-আবর্জনা মুক্ত করার জন্যই এ কার্যক্রম। এটা সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন নগরীর বৃহত্তর স্বার্থে। তারা তো দীর্ঘদিন এখানে বসবাস করছে। এখন যাবে কোথায়- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবৈধ দখলদারদের পুনর্বাসনের কোনো ব্যবস্থা আমাদের কাছে নেই। নগরীর বহু মানুষের ঘরবাড়ি নেই, তারা ভাড়া থাকে, এরাও থাকুক।
এমএসএম / জামান
চুয়াডাঙ্গা জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ কামাল হোসেন এর দিনব্যাপী প্রশাসনিক কার্যক্রম
বাগেরহাট টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের নব-নির্মিত ৫ তলা ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৮ বছর
কুমিল্লা-৯ আসনে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল
কুমিল্লায় প্রায় দেড় কোটি টাকার অবৈধ ভারতীয় শাড়ি জব্দ
নিসচার ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জয়পুরহাটে র্যালি, আলোচনা ও দোয়া মাহফিল
টুঙ্গিপাড়ায় শিক্ষকদের পদসোপান আন্দোলন: দুই বিদ্যালয়ে বার্ষিক ও নির্বাচনী পরীক্ষা স্থগিত
কুমিল্লায় খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় হাজী ইয়াছিনের উদ্যোগে ধারাবাহিক কুরআন খতম ও দোয়া
ক্ষমতায় না গিয়েও অনেকে ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছেন : শফিকুর রহমান
আমরা হিন্দু-মুসলিম নয় আমরা বাঙ্গালী এটাই আমাদের পরিচয়ঃ মহিত তালুকদার
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় মুজিবনগরে দোয়া মাহফিল
ময়মনসিংহ রিয়াদ হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন, পিতার আহাজারি
ভূরুঙ্গামারীতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত
Link Copied