কাপ্তান বাজার মুরগি পট্টি এখন বাপ-ছেলের দখলে
আওয়ামী সরকারের পতন হলেও বহাল তবিয়তে আছেন চাঁদাবাজরা। চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ কব্জায় রাখতে নিত্য নতুন কৌশল ও নাম ব্যাবহার করছে তারা। দেশের অন্যতম ব্যবসায়ী এলাকা গুলিস্তানের কাপ্তান বাজার। যেখানে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়। এই এলাকা কারো নিয়ন্ত্রণে গেলে তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়না। এ যেন টাকার খনি। যেখানে দিনরাত কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র কাপ্তান বাজারের মুরগি পট্টিতে চলছে বাপ-বেটার চাঁদাবাজির রাম-রাজত্ব। ব্যবসায়ীরা ফের চাঁদাবাজ ও দখলবাজদের খপ্পরে পর্যুদস্ত। নুর ইসলাম ও তার ছেলে সজিবের নেতৃত্বে চলছে কাপ্তান বাজারে মুরগি পট্টি।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, মুরগি পট্টির এই চাঁদাবাজির শেল্টার দিচ্ছেন স্থানীয় বিএনপি নেতা হামিদুর রহমান হামিদ ও বাশার । তবে এ বিষয়ে বিএনপি নেতা হামিদের সাথে যোগাযোগ করা হলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সাথে সংম্পৃক্ততার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। অপর নেতা বাশারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে নুর ইসলাম সম্পর্কে জানতে কাপ্তান বাজার এলাকায় গেলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, নুর ইসলামের বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। আমরা দিন আনি দিন খাই, হেয় কয় তিনি হলেন হামিদ নেতার লোক। কিছু কইলে, জানতে পারলে আমগো খবর আছে। মূলত এই নুর ইসলাম আসলে কার লোক? নাকি তিনি সবার। ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার আবুল বাশারের সাথেও আছে গভীর সখ্যতা। আর কাপ্তান বাজার ও ৩৮ নং ওয়ার্ডেই মুলত এই ২ নেতা হামিদ আর বাশার এর ছত্রছায়ায় মুরগীর ব্যবসায়ী নুর ইসলাম এখন কাপ্তান বাজারের বেপরোয়া নিয়ন্ত্রক। আর এই নুর ইসসলামের ছেলে সজীবই হলো তার লাঠিয়াল বাহিনীর প্রধান। হোটেল ওসমানী ইন্টারন্যাশনালের সামনে অবৈধ মুরগী ব্যবসা বন্ধের জন্য ইতিমধ্যে বেশ কিছু আবেদন করা হয়েছে। অপর দিকে এমদাদের নিয়ন্ত্রনে চলছে ৩৯ নং ওয়ার্ডের পাশের অবৈধ মুরগীর বিট।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছরের ৪ অক্টোবর স্বাক্ষরিত চিঠির স্মারক নম্বর- ৪৮৬৭ মূলে নির্দেশ দেয়া হয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক হাসপাতালের দক্ষিণ পাশের ব্লকে ২৪৪৮ বর্গফুট ও পার্শ্ববর্তী পশ্চিম ব্লগে ৩৯৭৭ বর্গফুটসহ সর্বমোট ৬৪২৫ বর্গফুট জায়গায় রাত্রিকালীন পাইকারি মুরগি বাজারের টোল আদায়ে এবং কাপ্তানবাজার কমপ্লেক্স-৩ এ মুরগি পট্টির অবশিষ্টাংশে ১০ হাজার ২০০ বর্গফুট চলমান মুরগির দোকান আদায়ের জন্য ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে নুর ইসলামকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ৫ ই আগস্ট স্বৈরাচার সরকার পতনের পর অনেকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে ও দেশের ভেতরে আত্মগোপনে রয়েছে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী থেকে মাঠ পর্যায়ের অনেক নেতা-কর্মী। ছাত্র-জনতার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ফলে দীর্ঘ বছর ধরে চলমান দেশের প্রেক্ষাপট বদলে গেছে। সংস্কারের কাজ চলছে দেশের সর্বত্র। শুধু রাজধানীর যে সকল জায়গাগুলো টাকা কামানোর জন্য প্রসিদ্ধ, সেগুলোর সবকিছুই বহাল রয়েছে। ছাত্র-জনতার বিরোধীতার কারণে কিছুদিন টাকা উঠানো বন্ধ থাকলেও আবার শুরু হয়েছে ফুটপাত ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা উঠানোর কাজ। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে এই এলাকা ছিল স্থানীয় কাউন্সিলর আহমেদ ইমতিয়াজ মন্নাফী গৌরবের দখলে । আর এখন অন্য রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা উঠাচ্ছে নতুন চাঁদাবাজরা ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিরাতে উঠানো হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা। মূলত দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নামে সিটি কর্পোরেশনের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় মুরগির বাজার বসিয়ে খাস কালেকশন করার কথা বলা হলেও বৈধ কাগজের সূত্র ধরে অবৈধভাবে মুরগির বিট বসিয়ে দোকান সম্প্রসারণ করে প্রতিরাতেই লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদাবাজি করছে একটি চক্র। কাপ্তান বাজারের এই মুরগির বিট দোকান যেন আলা দিনের জাদুর চেরাগ। যেখান থেকে প্রতিরাতে চাদা তোলা হয় অন্তত ৭ লক্ষ টাকা।
এমএসএম / এমএসএম