ছাত্র আন্দোলনে চোখ হারিয়ে অনেকেই দিশেহারা, চায় উন্নত চিকিৎসা ও পুর্নবাসন
জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার দাবি আহত রোগীদের। আগের মতো আলো দেখতে চায় আহতরা। সরকার যেনো অতিদ্রুত তাদের উন্নত চিকিৎসা এবং পুর্নবাসন করেন। এটাই একমাত্র দাবি আহতদের।
কারো ডান চোখ, কারো বাম চোখে একেবারেই দেখছেন না। আবার অনেকের মাথার খুলির ভিতরে রয়েছে অসংখ্য গুলি। সরজমিনে গেলে আহতদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া যায়। অনেকের চাকরি, ব্যবসা হারিয়েছে জুলাই আগস্টের আন্দোলন করতে গিয়ে।
এবিষয় রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউ হাসপাতালে (১৮ নভেম্বর) সরেজমিনে গেলে এসব তথ্য পাওয়া যায়। এখনো জুলাই ফাউন্ডেশনের টাকা পায়নি অনেকেই।
আহত সোহেব কবির, নভেম্বরের ৯ তারিখ এই চক্ষু হাসপাতাল ভর্তি হয়। নরসিংদী জেলখানা রোডে ১৮ জুলাই ছোড়া গুলি লাগে তার চোখে, দুই চোখের বাম চোখে ২ টি গুলি এখন পর্যন্ত রয়েছে বলে জানান। তার শরিরের ৬২ টি গুলি লাগে। আহত সোহেবের পিতার নাম, হুমায়ুন কবির, নরসিংদী ব্লাবো এলাকার বাসিন্দা। নরসিংদী সরকারি কলেজে অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।
এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি সহয়তা পায়নি বলে জানান আহত সোহেব। সোহেব বলেন, এখন পর্যন্ত ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা তার নিজের খরচ হয়েছে। সরকারি কোনো টাকা তিনি এখন পর্যন্ত পায়নি। এই আহত বলেন, বর্তমান সরকার যদি, আমাদের জন্য কিছু না করে তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে যাবে। আমরা এখুনি এক ধরনের আসহায় জীবনযাপন করছি।
কথা হয় আল আমিন, (১৯) এর সাথে তিনি গাজীপুর আনসার একাডেমি এলাকা গত ৪ আগস্ট একাডেমির সামনে আহত হন। তিনি পেশায় একজন গার্মেন্টস কর্মী। আল আমিনের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলায় তার পিতার নাম আমশো আলী। এই আহত গত (৭) আগস্ট থেকে ভর্তি রয়েছে এই চক্ষু হাসপাতালে। তার ডান চোখ পুরোপুরি অকেজো হয়েছে বলে জানান। চিকিৎসা ছাড়া এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সহযোগিতা পায়নি এই আহত। তার নিজের এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। আহতের চোখে এখন পর্যন্ত একটি বুলেট রয়েছে বলে জানান। তিনি বলেন, একধরনের অসহায় জীবনযাপন করছি।
আহতদের মধ্যে রয়েছে সনাতন ধর্মের একজন তার নাম কেশব রিষি (২২) তিনি গত ১৯ জুলাই গুলিতে আহত হয় নারায়ণগঞ্জ এলাকায় গত ২১ জুলাই আগারগাঁও চক্ষু হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। পুলিশের গুলিতে তার বাম চোখ পুরোপুরি অকেজো হয়েছে বলে জানান।
তিনি পেশায় অটোরিকশা চালক। সংসারের দায়িত্বে ছিলেন কেশব কিন্তু সেই জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত কোনো রোজগার করতে পারছে না। তার একটি শিশু সন্তান রয়েছে। সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে এই আহত ব্যক্তির। সরকারী অনুদান বলতে কিছুই পায়নি এখন পর্যন্ত। তার নিজের খরচ হয়েছে এখন পর্যন্ত (১) লাখ টাকা নিজের খরচ হলেও সরকারি অনুদান বলতে শুধু চিকিৎসা ছাড়া অন্য কিছু পায়নি এই আহত।
নাম আসিফ হোসেন (২৪) পিতা আবুল হোসেন, খিলগাঁও এলাকায় গুলি লাগে আন্দোলনে গিয়ে। আগস্টের ৪ তারিখ খিলগাঁও এলাকায় দুই চোখে গুলি লাগে আসিফের, বর্তমানে ডান চোখে কিছুই দেখে না। সরকারি অনুদানের কথা জানতে চাইলে, তার পিতা বলেন, জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে ১ লাখ টাকা পেয়েছি। তাদের নিজের এখন পর্যন্ত ২ লাখ টাকার মতো খরচ হয়ে গেছে। আসিফের বাবা বলেন, ১৯ জুলাই পুলিশের গুলিতে আহত হয় তার শরিরে বিভিন্ন জায়গায় ১৫ থেকে ১৬ টি গুলি লাগে, এরমধ্যে দুটি গুলি লাগে বাম চোখে। এখনো দুটি গুলি চোখের ভিতরে রয়েছে উন্নত চিকিৎসা পেলে হয়তো তার চোখটি ঠিক হতে পারে।
রোহান (২৩) নামে আরেক আহত ব্যক্তি কুষ্টিয়া থেকে ভর্তি হন ঢাকার চক্ষু হাসপাতাল। আজ পর্যন্ত তিনি এই হাসপাতালেই ভর্তি রয়েছে। তার ডান চোখ পুরোপুরি অকেজো হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে ডাক্তার।
এখন পর্যন্ত নিজের খরচ হয়েছে মিনিমাম ২ লাখ টাকা। গত ৪ আগস্ট কুষ্টিয়া সদরে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে ডান চোখ হারান এই আহত রোহান। রোহানের পরিবারে রোহান ছাড়া আর কেউ নেই। রোহানের ছোট বেলায় বাবা মারা যায়, এরপর নানির কাছে বড় হয় রোহান, আপন ভাই বোন বলতেও কেউ নেই এই আহতের। ছাত্র আন্দোলনে কুষ্টিয়ায় আহত হয়ে বর্তমানে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
সরকারি অনুদানের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে ১ লাখ টাকা পেয়েছি। রোহান বলেন, এখন পর্যন্ত আমার ২ লাখ টাকার চেয়েও বেশি খরচ হয়েছে। আন্দোলনে গিয়ে একটি চোখ হারাতে হয়েছে।
কথা হয় আরেক চোখ হারানো শরিফের সাথে। তিনি আগস্টের ৫ তারিখ বিকাল ৪টায় মিরপুর মডেল থানার সামনে পুলিশের গুলিতে আহত হন। তার ডান চোখে গুলি লেগে পুরোপুরি অকেজো হয়ে গেছে। তার চোখে এখনো গুলি রয়েছে। তিনি বলেন, একধরনের অসহায় জীবনযাপন করছি। সবকিছু হারাতে হলো। সরকার অনুদান জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে (১) লাখ টাকা এখন পর্যন্ত পেয়েছে কিন্তু তার নিজের থেকে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে (১) লাখ ৭০ হাজার টাকা। আহত শরিফের মিরপুর ১ নাম্বার এলাকায় একটি দোকান ছিলো সেই দোকানটি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে আন্দোলনের সময়। সেখানে প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান এই আহত শরিফ।
সালমান নামে একজন আহত হয় রামপুরা এলাকায়। তার শরিরে মোট ৪০ টি গুলি লাগে, এই আহতের ডান চোখ পুরোপুরি অকেজো হয়েছে। গত ৫ আগস্ট এই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সহযোগিতা তিনি পায়নি। এখন পর্যন্ত নিজের ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। পরিবারের বড় ছেলে থাকায় চাকরি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে আছেন এই আহত।
T.A.S / এমএসএম