বাইরের বাতাসের চেয়েও বিপজ্জনক ঢাকার গৃহ-অভ্যন্তরীণ বায়ু দূষণঃ ড. সাখাওয়াত হোসেন
বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের শীর্ষ বায়ু দূষিত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম অবস্থানে রয়েছে, যেখানে ঢাকা শহরও বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। তবে বাহ্যিক বায়ু দূষণের পাশাপাশি গৃহ-অভ্যন্তরীণ বায়ু দূষণ ঢাকার বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান উৎস হিসেবে চিহ্নিত করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. সাখাওয়াত হোসেন।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগে ০৪ নং কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে 'ঢাকার ঘরের বাতাসে মৃত্যু ঝুঁকি: এখনই পদক্ষেপ জরুরি' শিরোনামে একটি গবেষণা পত্র প্রকাশ করেন।
গবেষণায় দেখা যায়, গৃহ-অভ্যন্তরীণ বায়ু দূষণের ফলে সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে বায়ুদূষণ-সংবেদনশীল গ্রুপ, যেমন শিশু, বৃদ্ধ ও যাদের আগে থেকে শ্বসনযন্ত্র-সম্পর্কিত রোগ, হৃদরোগ ও অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী রোগ আছে। 'স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার-২০১৯' প্রতিবেদন অনুযায়ী, গৃহ-অভ্যন্তরীণ বায়ু দূষণ বাংলাদেশের ৪র্থ প্রধান মৃত্যুঝুঁকির কারণ এবং এর ফলে প্রতিবছর ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
গবেষণা পত্রে তিনি উল্লেখ করেন, গৃহের ভেতরের বায়ুতে ক্ষতিকর পদার্থ জমা হওয়ার ফলে নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কারণ তারা বেশিরভাগ সময় ঘরের ভেতরে কাঁটায়। দুঃখজনকভাবে, এ সমস্যাটি নিয়ে দেশে যথেষ্ট আলোচনা না হওয়ায়, এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে জনগণকে সুরক্ষিত রাখা ক্রমশই কঠিন হয়ে উঠছে। তাই গৃহ- অভ্যন্তরীণ বায়ু দূষণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং এ থেকে রক্ষা পেতে কার্যকর নীতিমালা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।
ড. সাখাওয়াত হোসেন এর নেতৃত্বে পরিচালিত "Characterizing Indoor Air Quality and Identifying Factors Influencing Air Quality at Home Microenvironment in Dhaka City" শীর্ষক এ গবেষণা সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন "ইন্ডোর ইনভাইরন্টমেন্টস” জানালে প্রকাশিত হয়েছে। উক্ত গবেষণায় ঢাকায় প্রথম বারের মত ব্যাপকভাবে ৪৩টি গৃহের অভ্যন্তরে PM2 দূষণের মাত্রা নির্ণয় করা হয়েছে এবং বায়ুমান উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবকগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, গৃহের গড় দূষণ মাত্রা ছিল ৭৫.৬৯ মাইক্রোগ্রাম। মিটার, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা থেকে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি। কিছু গৃহে দূষণ মাত্রা ছিল ২০০ মাইক্রোগ্রাম। মিটার-এর বেশি, যা বাসিন্দাদের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ। বিশ্বের অনেক শহরের তুলনায় ঢাকার গৃহের বায়ু মান অনেক বেশি উদ্বেগজনক।
ড. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, মানুষ তার দিনের প্রায় ৬০-৬৫% সময় ঘরের ভেতরে কাটায়। মানুষের দৈনন্দিন বায়ু দূষণের একটি বড় অংশ ঘরের ভেতরে শ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। তাই গৃহ-অভ্যন্তরীণ বায়ু দূষণ সম্পর্কে সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। আমরা সাধারণত ঝাহ্যিক দূষণ সম্পর্কে সচেতন থাকি, কিন্তু ঘরের অভ্যন্তরের দূষণ সম্পর্কে অনেকটাই অবহিত নই। যেহেতু ঘরের দূষণকে এড়িয়ে চলা সম্ভব নয়, তাই দূষণ কমাতে উৎসগুলো চিহ্নিত করে তা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাইরের দূষিত বায়ু ঘরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ভেতরে অবস্থানরত মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ায়। তবে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এই দূষণের অনুপ্রবেশ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন 'বিল্ডিং অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট' জার্নালে প্রকাশিত আমার গবেষণায় দেখা গেছে, জানালা বন্ধ রাখলে ঘরের ভেতরে বাইরের পিএম ২.৫ দূষণের প্রায় ৬৮ শতাংশ পর্যন্ত প্রবেশ বন্ধ করা যায়। ঘরের ভেতর এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করতে হবে। একটি গবেষণায় আমরা পেয়েছি, হেপা-ফিল্টারসহ এয়ার পিউরিফায়ার ঘরের ভেতরে পিএম ২.৫-এর দূষণ অনেক কমিয়ে দেয়।
এমএসএম / এমএসএম