জাল দলিল করে সম্পত্তি হাতানোর অভিযোগ

খুলনার ডুমুরিয়ায় জাল দলিলের জালিয়াতিতে ৪০ বছরেরও বেশী সময় ধরে ভোগ দখলে থাকা জমির মালিক আজ দিশেহারা। পদ্ম সেতু চালুর পর থেকে দক্ষিণাঞ্চল তথা খুলনায় জমির দাম তুঙ্গে। চাহিদার তুলনায় শহরে জমি কম থাকায় মহানগরের আশাপাশ এলাকায় জমি কেনায় রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে সম্পত্তি হাতানোর বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে ভূমিদস্যুদের একাধিক সংঘবদ্ধ চক্র।
একটি অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, জাল দলিল তৈরি করে অন্যের জমি নামজারি করে নিজেদের মধ্যেই বিক্রি করে জমি হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্রটি। শুধু নামজারি নয়, বেশ কয়েকটি মূল্যবান সম্পত্তির মালিক বনে যাওয়ার লক্ষে জাল দলিলের মাধ্যমে আদালতে মামলাও করেছে এই চক্র।
খুলনা ডুমুরিয়ার উপজলার মোস্তফার মোড় এলাকায় এভাবে আসল জমির মালিককে অন্ধকারে রেখে একজনের জমি অন্যের নামে রেজিস্ট্রি করে হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আর এ জালিয়াতি ও প্রতারণার ঘটনা ঘটিয়েছে রায়েরমহল এলাকার বাসিন্দা মো. মকিতুর রহমান ও তার সংঘবদ্ধ চক্র। এক সময় এই মকিতুরের পূর্ব পুরুষ ওই এলাকায় অনেক জমির মালিক থাকায় জমি হাতাতে নিজেই সাজেন দাতা। যাতে হাতিয়ে নেওয়া জমি বিক্রিতে কারো সন্দেহ তৈরী না হয়। আর গরিব ভূমি মালিকের অসহায়ত্বের সুযোগ নেয় চক্রটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মো. মকিতুর রহমানের নামে গত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে খুলনা ডুমুরিয়া উপজেলার চক আসানখালী মৌজার ৮৯২৯ খতিয়ানে নামজারির আবেদন অনুমোদিত হয় এবং তিনি ডিসিআর কাটেন। মকিতুর অক্টোবর মাসে মিজান মোল্লার ছেলে সৈকত মোল্লার কাছে এই আট শতক জমি বিক্রি করেন। পরে মকিতুর লোকজন নিয়ে দলিল ও নামজারি দেখিয়ে চক্রটি জমির দখল নেয়।
সরেজমিন দেখা যায়, ডুমুুরিয়া উপজেলার চক আসানখালী মৌজার মোস্তফার মোড় থেকে কৈয়া বাজার যেতে রাস্তার পাশে একই জমিতে দুটি সাইনবোর্ড। একটি সাইনবোর্ডে লেখা ওয়ারেশ সূত্রে শেখ আকতার হোসেন, শেখ ফেরদাউষ হোসেন ও শেখ রফিকুল ইসলাম মুকুল এক দশমিক ৭০একর জমির মালিক। পাশেই নতুন করে ঘেরা দেওয়া আট শতক জমি। সাইনবোর্ড দেওয়া জমিতে। সেখানে লেখা ক্রয় সূত্রে এই জমির মালিক সৈকত মোল্লা।
জমির মূল মালিক শেখ ফেরদাউস হোসেন বলেন, ৪০ বছরেরও বেশী সময় ধরে ওয়ারেশ সূত্রে আমরা তিন ভাই এ জমি ভোগ দখলে আছি। কিছুদিন আগে হঠাৎ জানতে পারি আমাদের ১৭০ শতক জমির মাঝে সামনে থেকে ৮ শতক জমি ঘেরাও দিয়ে সৈকত মোল্লা সাইনবোর্ড লাগিয়েছে তার লোকজন নিয়ে। পরে তাদের সাথে আলাপ করলে তারা জানায় সে জমি কিনেছে মকিতুর রহমানের কাছ থেকে। আমরা ভূমি অফিসে খোঁজ নিয়ে দেখি মকিতুর জাল দলিল দিয়ে নামজারি করে আমাদের জমি বিক্রি করে দিয়েছে। এখন এই চক্রের হাত থেকে রেহাই পেতে আমরা দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ছাড়া এ জমি পাবো কিনা জানি না। আমরা অসহায় হওয়ায় আমাদেরকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে এই মকিত মিজান চক্র।
অনুসন্ধানে উঠে আসে, ডুমুরিয়া ভূমি অফিসের নামজারি ১৭২৬/২০২৪-২৫ অনুমোদিত মামলায় ৮৯২৯ খতিয়ানে দেখা যায়, রেকর্ডীয় মালিক আব্দুল করিম এর নিকট থেকে ২৮১০/১৯৯৮ নং কবলা দলিল মূলে মো. মকিতুর রহমান ১২ দশমিক ১৫ শতাংশ জমির মালিক। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে এ আবেদনে যে দলিল জমা দেওয়া হয়েছে সেটি একটি জাল দলিল। এ প্রতিবেদক নামজারির আবেদনে উল্লেখিত দলিল নাম্বার তারিখ ঠিক রেখে জেলা রেকর্ড রুম খুলনা জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে নকল তুলতে দিলে বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। আসল দলিলে দেখা যায় সেখানে দাতা গ্রহীতা ভিন্ন। আসল দলিলের তথ্যের সাথে অনুমোদিত নামজারির তথ্যের কোন মিল নেই।
এ বিষয়ে ডুমুরিয়া উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার আরাফাত হোসেন বলেন, আমরা দলিল এবং অন্যান্য কাগজপত্র দেখে শুনানীর মাধ্যমে নামজারি অনুমোদন করে থাকি। ভূলবশত জাল দলিলে কোন নামজারি অনুমোদন হয়ে থাকলে ১৫০ ধারায় জমির আসল মালিক আবেদন করলে তা যাচাই বাচাইয়ের মাধ্যমে বাতিল করার সুযোগ আছে। অথবা স্বপ্রনদিত হয়ে এ নামজারি বাতিল করা যাবে।
খোঁজ নিয়ে আরো দেখা যায়, মুকিতুর রহমান বাদী হয়ে এর আগে ডুমুরিয়া উপজেলার বিল পাবলা মৌজায় আরো কয়েকটি জমির মালিকানা দাবী করে মামলা করেন। খুলনার জেলা জজ দ্বিতীয় আদালতে ১০৭৩/৯৩ নম্বর কবলা দলিল মূলে এক একর জমির মালিকানা দাবী করে ১১ আগষ্ট ২০১৬ তারিখে দেঃ ৭৬/১৬ মামলা দাখিল করেন। পরবর্তীতে ২০২১ সালে এসে এই মকিতুর রহমান ১৩৪০/৮৩ দলিল মূলে ৭৫শতক জমির মালিকানা দাবী করে ৩০ জুন ২০২১ তারিখে সিনিয়র সহকারী জজ আদালত, ডুমুরিয়া খুলনায় ১৮৬/২১ মামলা দাখিল করেন। তিনি এ দুটি মামলায় যে দুটি দলিল দাখিল করেছেন জেলা রেকর্ড রুম খুলনা থেকে তার নকল উঠালে দেখা যায়। এ দলিল গুলো জাল। এই নাম্বারের আসল দলিলে দাতা গ্রহীতা ভিন্ন ব্যাক্তি।
সৈকত মোল্লা বলেন, আমি টাকা দিয়ে মকিতুর রহমান এর কাছ থেকে এই জমি ক্রয় করেছি। আমার বাবা মিজান মোল্লা ভালো বলকে পারবেন। তিনি সব কাগজপত্র দেখে এই জমি ক্রয় করেছেন।
মো. মকিতুর রহমান বলেন, আমি নামজারি করি নাই। নাম জারি করেছে সৈকতের আব্বা। তার বাবা মিজান মোল্লা নিজেই সব কাগজ প্রস্তুত করেছে। আমি যে দলিল দিয়েছি তা আমার বাবার জমি। আর কাগজ ঠিক আছে কিনা তা আদালত সিদ্ধান্ত দেবে। পরক্ষনে তিনি আবার বলেন, আমি যে দলিল দিয়ে মামলা করেছি সেগুলো তখন ঘরে পাইছি। এ কারনে সেগুলো মামলায় দিছি। পরে জানতে পারছি এগুলো ঠিক নাই। তাই কদিন আগে এভিডেভিট করছি।
মিজান মোল্লা বলেন, আমি কাগজ পত্র দেখে আমার ছেলের নামে জমি ক্রয় করেছি। মকিতুর আমার নামে যে অভিযোগ তুলেছে তা মিথ্যা। তার জমি আমি কিভাবে নামজারি করবো। সেই সব করে দিছে। আমি কিনেছি মাত্র।
খুলনা মহানগরের সাব-রেজিস্ট্রার অফিস সংলগ্ন বিভিন্ন কম্পিউটার এর দোকান থেকে এসব জাল দলিল তৈরী করে নেয় ভূমিদস্যু ও জালিয়াত চক্ররা। মূলত মকিতুর রহমান, মিজান মোল্লা ও সৈকত মোল্লা একই সুতায় বাধা একটি চক্র। এদের সাথে রয়েছে ভূমি অফিসের অসাধু ব্যাক্তি। এছাড়া এ জালিয়াত চক্র সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের অসাধু রেকর্ডকিপার ও নকলনবিশ অর্থের বিনিময়ে এসব অপকর্ম করে যাচ্ছে বলে তথ্য উঠে আসে।
এমএসএম / এমএসএম

তারেক রহমানের নির্দেশে চট্টগ্রামে যুবদল নেতা শাহেদের ইফতার সামগ্রী বিতরণ

পাইকগাছা উপজেলা ও পৌর বিএনপির আংশিক সম্মেলন প্রস্তুত কমিটি ঘোষণা

রায়গঞ্জে ৫ টাকায় মিলছে ইফতারির সাত পণ্য

রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে হবে: আমির খসরু

প্রকৌশলীর গাড়িসহ ৩৭ লাখ টাকা জব্দ! বৈধ নথি দেখাতে ব্যর্থ, মুচলেকায় মুক্ত

সুবর্ণচরে মানবসেবা সংগঠনের ইফতার ও ঈদ সামগ্রী বিতরণ

তানোরে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ৮ কোটি টাকা তসরুপের অভিযোগ

লাখো রোহিঙ্গার ইফতার মাহফিলে পদপিষ্ট হয়ে বৃদ্ধ নিহত ও আহত হয়েছেন আরও দুজন

রোজা মানুষকে ধৈর্যশীল হতে শেখায়:বিএনপি নেতা নুরুল আনোয়ার

বাকেরগঞ্জ সড়কে বেপরোয়া অবৈধ লরি নিষিদ্ধ যানের কারণে বেড়েই চলেছে প্রাণহানির সংখ্যা

র্যাবের হাতে গাঁজাসহ দুই মাদক কারবারি আটক

গাজীপুরে ট্রাক-অটোরিকশা সংঘর্ষে নারীসহ তিনজন নিহত
