চুঁইঝাল চাষে খরচ কম লাভ বেশি
উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলার মধ্যে চার উপজেলাতেই ঔষধীগুন সম্পন্ন চুঁইঝাল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।তরকারীতে মসলা হিসেবে ব্যবহার করায় প্রতিনিয়ত চাহিদাও বেড়েছে লতা জাতীয় উদ্ভিদটির। তবে এ অঞ্চলে চুঁইঝাল উৎপাদন হলেও এখানকার চেয়ে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।
কুড়িগ্রাম কৃষি বিভাগ জানায়, কুড়িগ্রামের ৯টি উপজেলার মধ্যে রাজারহাট, নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ী ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় চুঁইঝাল উৎপাদন হচ্ছে। লতা জাতীয় উদ্ভিদটির চাহিদা দিনে দিনে বেড়ে যাওয়ায় জেলার বিভিন্ন উপজেলার অধিকাংশ বাড়ির বিভিন্ন ফলজ বনজ ও সুপারী গাছে এর ব্যাপক চাষ হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, পরগাছা জাতীয় উদ্ভিদ হওয়ায় এর চাষে বাড়তি কোন ব্যবস্থা নিতে হয় না। যে কোন গোছের গোড়ায় সামান্য সার দিয়ে চুঁইঝাল এর একটি লতা রোপণ করলেই স্বাভাবিকভাবে বড় হতে থাকে। গাছের বয়স যত বাড়তে থাকে এর শিকড় ও লতা এবং কান্ডও ততো মোটা হতে থাকে। একটি চুঁইগাছ তিন বছর বয়স হলেই পরিপক্ব হয় এবং বিক্রি উপযোগী হয়। এছাড়া আরও বেশী বয়সী গাছ বিক্রি করলে তার কান্ড ও লতা বেশী মোটা হয় এবং দামও বেশী পাওয়া যায়। পাঁচ বছর বয়সী একটি চুঁই দুই থেকে তিন মন ওজন পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রতিমন চুঁই ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়।
চাষীরা জানান, মাটি ভেদে কোন কোন গাছে ছত্রাকের আক্রমন হয়। সেক্ষেত্রে প্রতিরোধী কীটনাশক স্প্রে করলে সহজেই নিরাময় করা যায়। চুঁইঝাল মুলত মাংস জাতীয় তরকারীতে ব্যবহার করলে এর স্বাদ ও গন্ধ বৃদ্ধি পায়। জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার নেওয়াশী ইউনিয়নের চাকেরকুটি এলাকার হোসেন আলী বলেন, আমি ২৫-৩০ বছর যাবত বাড়ির বিভিন্ন গাছে চুঁইঝাল চাষ করছি। প্রতিবছর ৪৫-৫০ হাজার টাকার চুঁইঝাল বিক্রি করি। চুঁইঝাল চাষে তেমন খরচ নেই। আমাদের প্রায় ২০০-২৫০টির মতো গাছে চুঁইঝাল রয়েছে। এছাড়াও আমার গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে কম বেশি চুঁইঝালের গাছ রয়েছে।
একই এলাকার সাগর আলী বলেন, গ্রামের অনেক মানুষের চুঁইঝাল চাষ করা দেখে আমি গত তিন বছর আগে কিছু গাছে লাগিয়ে বিক্রি করেছি। কোন প্রকার ব্যয় ছাড়াই লাভ হয়েছে। আরও বড় পরিসরে করার চিন্তা ভাবনা করছি। চুঁইঝাল চাষে আলাদা কোন জমির প্রয়োজন হয় না। বাড়ির যেকোনো গাছে চাষ করা যায়। পরিচর্চাও করতে হয় না তেমন।
নাগেশ্বরী কৃষি অফিসের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান বলেন, চুঁইঝাল মসলা ও ঔষধীগুন সম্পন্ন গাছ। উপজেলার চাকেরকুটি গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই প্রায় এ গাছটি আছে। এ গাছে তেমন কোন পরিচর্চা করতে হয় না। বিশেষ করে বাগান বাড়িতে যে গাছগুলো আছে তার গোরায় লাগালে হয়ে যায়। কৃষকরা ভালো দাম পাওয়ার কারণে দিন দিন চুঁইঝাল চাষ বাড়ছে। দুর দূরান্ত থেকে পাইকাররা এসে এখান থেকে কিনে বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলে বিক্রি করছে। ওইসব এলাকায় গাছটির অনেক কদর রয়েছে।
কুড়িগ্রাম সরকারী কলেজের উদ্ভিদ বিদ্যার শিক্ষক ও অধ্যক্ষ মির্জা নাসির উদ্দিন বলেন, চুঁইঝাল মুলত লতা জাতীয় উদ্ভিদ। এটি তরকারিতে স্বাদ বৃদ্ধিতে ব্যবহার হয়ে থাকে। এছাড়া ব্যাথা, সর্দ্বি-কাশি ও জ্বর নিরাময়েও এর ভূমিকা অপরিসীম। আর চুঁইঝাল নিয়ে গবেষনা করে এর চাষ বৃদ্ধি করতে পারলে জেলা তথা দেশের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে মনে করেন তিনি।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, চুঁইঝাল চাষ বানিজ্যিকভাবে ছড়িয়ে দিতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কুড়িগ্রামে তরকারিতে এটির কদর কম থাকলেও, খুলনা বিভাগে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
এমএসএম / এমএসএম