পুলিশ দেখে পালাল ভূমিদস্যুরা, পরে ফের শুরু দখলবাজি
আদালতের নিষেধাজ্ঞা ও ১৪৫ ধারা জারি থাকার পরও জবেদ আলী মিয়াজী (৮৬) নামের এক বৃদ্ধের বাড়ি দখলের চেষ্টা করছে স্থানীয় ভূমিদস্যুরা। রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানার পশ্চিম মানিকদি নামাপাড়া এলাকায় ঘটেছে এই ঘটনা। পাশের এলাকা ভাষানটেকের দেওয়ান পাড়ার আওয়ামী লীগ নেতা মনির দেওয়ান ও আরিফ হোসেনের নেতৃত্বে কিছুদিন ধরেই ৯ কাঠা জমির ওপর নির্মিত জবেদ আলীর ২৫২/৮ নম্বর বাড়িটি দখলের পাঁয়তারা চলছিল। গত বুধবার এই ভূমিদস্যু চক্রটি জবেদ আলীর বাড়ির ভেতর ঢুকে জোরপূর্বক দেয়াল নির্মাণের কাজ শুরু করে। এই চক্রটির বিরুদ্ধে জবেদ আলী আদালতে মামলা করলে আদালত জবেদ আলীর পক্ষে স্ট্যাটাস-কো বা স্থিতাবস্থা প্রদান করেন। একইসঙ্গে আরেকটি মামলায় জবেদ আলীর পক্ষে ১৪৫ ধারাও জারি করা হয়। জবেদ আলী নিজেদের মালিকানার ২৫২/৮ নম্বর বাড়ির সকল কাগজপত্র ও আদালতের আদেশের কপি নিয়ে থানায় যান। কিন্তু সারাদিন থানায় বসে থাকলেও ওসি না থাকায় কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি পুলিশ।
গতবৃহস্পতিবার আরিফ হোসেনের নেতৃত্বে ভূমিদস্য চক্রটি আবারও দেয়াল নির্মাণ কাজ শুরু করলে থানায় ছুটে যান বৃদ্ধ জবেদ আলী। তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলে নির্মাণ কাজ ফেলে বাড়ির গেটে তালা দিয়ে গা ঢাকা দেয় আরিফ হোসেনসহ ভূমিদস্যুরা। পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান ভূমি দস্যুদের কাউকে না পেয়ে আশপাশের কয়েকজনকে জমিতে ১৪৫ ধারা জারির কথা জানিয়ে জবেদ আলীকে নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পুলিশ চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই ভূমিদস্যু আরিফ হোসেন ও তার লোকজন জবেদ আলীর ওই বাড়িতে আবার ফিরে আসে। পুলিশ আবারো ঘটনাস্থলে গেলে এবারও তারা সটকে পড়ে। এর আগে গত বুধবার ভূমি দস্যুরা, দিনে দুপুরে রাতারাতি এক বেলার মধ্যেই জবেদ আলীর বাড়ির ভেতর ঢুকে পুলিশের উপস্থিতিতেই তুলে ফেলে বিশাল এক দেয়াল। জবেদ আলীর পক্ষে আদালতের ১৪৫ ধারা ও স্থিতাবস্থা থাকার পরেও বহিরাগত ভূমিদস্যুদের দেয়াল নির্মাণে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন জবেদ আলী।
ভুক্তভোগী জমির মালিক জবেদ আলী ও লিটন উদ্দিন ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া তাদের এই জমির জমির ওপর করা বাড়িটিতে গত জুন মাসে একবার হানা দেয় আওয়ামী লীগ নেতা মনির দেওয়ান ও আরিফ হোসেনের নেতৃত্বে একটি ভূমিদস্যু চক্র। তারা নামাপাড়ায় জবেদ আলীর ২৫২/৮ নম্বর হোল্ডিংয়ের বাড়িতে প্রকাশ্য দিবালোকে সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে ব্যাপক লুটতরাজ চালায়। বৃদ্ধ জবেদ আলী সে সময়েও থানায় ছুটে যান। অভিযুক্তরা তখনকার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী হওয়ার কারণে থানা মামলা না নিয়ে একটি জিডি গ্রহণ করে। তৎকালীন ওসি দুই পক্ষকেই প্লটের ভেতর ঢুকতে বারণ করে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এরপর দেশে সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের সেই ভূমিদস্যু চক্রটি কিছুদিন গা-ঢাকা দিয়ে থাকে। তবে কিছুদিন আগে তারা আবার প্রকাশ্যে এসে জবেদ আলীর বাড়িতে নিজেদের নামে একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়। জবেদ আলী এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করলে তারা একইসঙ্গে থানাকে অবগত করারও পরামর্শ দেন। জবেদ আলী বিষয়টি থানাকে অবহিত করেন। এর দিন কয়েক পর তিনি জানতে পারেন তার বাড়িটি পুরোপুরি দখলে নিতে চাইছে মনির দেওয়ান, আরিফ হোসেন গং। তখন তিনি তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে একই সঙ্গে নিষেধাজ্ঞা ও স্থিতাবস্থার আদেশ নিয়ে আসেন। ভূমিদস্যু চক্রটি তখন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠলে জবেদ আলী আবারও থানায় ছুটে যান। তখন বর্তমান ওসি আব্দুল আলিম তার বরাবর আদালত থেকে সরাসরি একটি নির্দেশনা আনার পরামর্শ দেয়। নিরুপায় জবেদ আলী ফের ছুটে যান আদালতে। এবার আদালত ১৪৫ ধারা জারি করে ওসিকে নজরদারির নির্দেশ দেন। এই খবর পেয়ে আরিফ হোসেনের নেতৃত্বে ভূমিদস্যু চক্র তড়িঘড়ি দেয়াল নির্মাণের কাজ শুরু করে। জবেদ আলী তার পরিবার নিয়ে থানায় গেলেও সেদিন ওসি থানায় উপস্থিত না থাকায় কোনো প্রতিকার পাননি। উল্টো উদ্ধত আরিফ হোসেন জবেদ আলী কে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘থানা আমাদের ম্যানেজ করা আছে। পারলে ওসিকে এখানে নিয়ে আসেন।’ উপায়ান্তর না পেয়ে জবেদ আলী সাংবাদিকদের শরণাপন্ন হন। ভূমিদস্যু আরিফ হোসেন ও তার লোকজন বৃহস্পতিবার দেয়াল নির্মাণকাজ শুরু করলে জবেদ আলী পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ আসার খবরে এবার ওই প্লট থেকে সটকে পড়েন আরিফ হোসেন ও তার সাথে থাকা গোলাম কিবরিয়া ওরফে স্বাধীনের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা। এরপর পুলিশ তাদের কাউকে না পেয়ে সেখান থেকে চলে গেলে আরিফ হোসেন ও তার লোকজন আবারও দেয়াল নির্মাণ শুরু করে। এ খবর পেয়ে পুলিশ আবার ঘটনাস্থলে এলে ফের গা-ঢাকা দেয় আরিফ ও তার লোকজন। যাওয়ার সময় তারা আগামীকাল দেয়াল নির্মাণ করবে বলে শাসিয়ে যায়। এভাবেই গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে পুলিশ আর ভূমি দস্যুচক্রের ইঁদুর বিড়াল খেলা।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে জবেদ আলী আরো বলেন, ‘ভেবেছিলাম এই সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ নেতা মনির; আতাউর, আরিফদের জুলুমের শেষ হবে। কিন্তু এখন দেখছি উল্টোটা। আমার ওয়ারিশি সম্পত্তিই তো ভূমিদস্যুরা কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে। তারা আমার কাছে এক কোটি টাকা চায়। আমি রাস্তার ধারে চা বিক্রি করি, পেটের ভাতই তো জোটে না। অন্যথায় তারা আমার পাঁচ কোটি টাকার জমি ৫০ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। আমি চ্যালেঞ্জ করছি আরিফ হোসেনের নেতৃত্বে তার নামসহ আরো যাদের নামে আমার বাড়িতে সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে তাদের একজনের নামেও যদি বৈধ কোনো মালিকানা থাকে তাহলে আমি এই বাড়ির দাবি ছেড়ে দেব।
এসব বিষয়ে অভিযুক্ত আরিফ হোসেনকে ফোন দেওয়া হলে তিনি নিজেকে প্রথমে বায়না সূত্রে মালিক দাবি করেন। তার নামে রেজিস্ট্রি বায়না আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন মনির হোসেন রেজিস্ট্রি বায়নার মালিক। আমরা তার কাছ থেকে কাঁচা বায়না করেছি। এক বায়না থেকে আর একবার বায়না করা যায় কি না--- এমন প্রশ্নের তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
এসব বিষয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানার ওসি আব্দুল আলিম বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা পেয়েই আমি দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছি। ভূমিদস্যুরা কেউ জমির কাছে গেলে তাদের বিষয়ে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভূমিদস্যুদের বিষয়ে গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘বর্তমানে এসব বিষয়ে আমরা কঠোর নজরদারি রাখছি। কেউ আইনের বাইরে গিয়ে মানুষের উপর জুলুম করতে চাইলে সে যত ক্ষমতাবানই হোক না কেন তার ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।,
এমএসএম / এমএসএম
জাইকার সহায়তায় রাজউক কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন TOD প্রকল্পের ৪র্থ সেমিনার আয়োজিত
ব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের ছয় দফা দাবি
জাইকার সহায়তায় রাজউক কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন TOD প্রকল্পের ৪র্থ সেমিনার অনুষ্ঠিত
কামরাঙ্গীরচর থানার মোঃ আমিরুল ডিএমপি লালবাগ বিভাগে শ্রেষ্ঠ অফিসার হিসেবে নির্বাচিত
পেশাদারিত্ব ও মানবিকতায় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রাখায় বিশেষ সম্মাননা পেলেন ডিসি মহিদুল ইসলাম
ঝিনাইদহ অফিসার্স ফোরামের নতুন কমিটি গঠন
প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ
বিনামূল্যে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ শিখাচ্ছে পাথওয়ে
উত্তরায় SEDA ফাউন্ডেশনের ১৭তম মেধা যাচাইয়ে প্রায় ২ হাজার শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শনে রাজউক চেয়ারম্যান, ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনায় নকশা দাখিল ও অপসারণের নির্দেশ
হাতপাখা নির্বাচিত হলে ঢাকা-১৮ কে একটি মডেল সিটি হিসেবে গড়ে তুলা হবেঃ আলহাজ্ব আনোয়ার
ডেমরায় সাংবাদিকদের সাথে জামায়াতে ইসলামী প্রার্থীর মত মতবিনিময় সভা