ঢাকা রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৫

জেন-জির হাত ধরে আগামীর নেতৃত্ব: সম্ভাবনা ও করণীয়


মোঃ সাজ্জাদুল ইসলাম photo মোঃ সাজ্জাদুল ইসলাম
প্রকাশিত: ১৯-১-২০২৫ দুপুর ১১:৯

জেন-জি, অর্থাৎ ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া প্রজন্ম, প্রযুক্তি পরিবর্তনের যুগে বেড়ে ওঠা একটি প্রজন্ম। তারা এমন একটি সময়ে জন্মেছে যখন স্মার্টফোন, ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া এবং গ্লোবালাইজেশন দৈনন্দিন জীবনের অংশ। কারণে তারা প্রযুক্তি-সচেতন, উদ্ভাবনী, এবং সমাজ পরিবেশ সম্পর্কে গভীরভাবে সচেতন। এই প্রজন্মকে ভবিষ্যতের নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত করতে হলে তাদের প্রয়োজন সঠিক দিকনির্দেশনা, মূল্যবোধের ভিত্তি, এবং দক্ষতার বিকাশ। এই সম্পাদকীয় নিবন্ধে, আমরা আলোচনা করব কীভাবে জেন-জিকে ভবিষ্যতের জন্য উপযুক্ত নেতা হিসেবে গড়ে তোলা যায়।

নেতৃত্ব বিকাশের জন্য শিক্ষার ভূমিকা অপরিসীম। বর্তমান পাঠ্যক্রমে নেতৃত্বের ধারণা এবং নৈতিক শিক্ষা সীমিত পরিসরে অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু এটি যথেষ্ট নয়। জেন-জিদের নেতৃত্বের জন্য আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় কয়েকটি পরিবর্তন আনা দরকার।স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে নেতৃত্বের প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করা উচিত। এতে সমস্যার সমাধান, দল পরিচালনা, এবং কৌশলগত পরিকল্পনার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। তরুণদের শেখানো হবে কীভাবে একজন দায়িত্বশীল নেতা হওয়া যায়।

আজকের বিশ্বে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষাব্যবস্থায় এমন পরিবেশ তৈরি করা উচিত যেখানে শিক্ষার্থীরা প্রকল্পভিত্তিক কাজের মাধ্যমে তাদের সমস্যার সমাধান করার সক্ষমতা গড়ে তুলতে পারে।জেন-জি একটি গ্লোবাল প্রজন্ম। তাদের শিক্ষায় আন্তর্জাতিক বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া উচিত যাতে তারা বৈশ্বিক সমস্যাগুলোর সমাধান সম্পর্কে সচেতন হতে পারে।এ প্রজন্ম প্রযুক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। তবে শুধু প্রযুক্তি ব্যবহার জানা যথেষ্ট নয়, তাদের আরও গভীর দক্ষতা অর্জন করতে হবে।ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্রগুলোতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং অটোমেশনের গুরুত্ব বাড়বে। এই কারণে জেন-জিকে প্রোগ্রামিং, ডেটা অ্যানালাইসিস, এবং সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে দক্ষ করে তোলা প্রয়োজন।ডিজিটাল বিশ্বে নৈতিকতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার এবং ডিজিটাল ডেটা পরিচালনার ক্ষেত্রে জেন-জিকে দায়িত্বশীল আচরণ শিখতে হবে।তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে নতুন সমস্যার সমাধান করার সুযোগ তৈরি করা উচিত। স্টার্টআপ সংস্কৃতিতে প্রবেশের জন্য প্রযুক্তিগত দক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

জেন-জি শুধু কর্মসংস্থানে অংশগ্রহণ করতে চায় না; তারা নিজেরাই নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করতে চায়। উদ্যোক্তা মানসিকতা বিকাশের মাধ্যমে তারা এমন নেতৃত্বে এগিয়ে আসতে পারে যা কেবল আর্থিক সাফল্যের ওপর নয়, বরং সামাজিক পরিবর্তনের ওপরও ভিত্তি করে।উদ্যোক্তা হতে হলে ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা থাকা দরকার। তরুণদের ছোট থেকে ঝুঁকি নেওয়া এবং ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেওয়ার অভ্যাস তৈরি করতে উৎসাহিত করা উচিত।উদ্যোক্তা হওয়ার মানে কেবল মুনাফা করা নয়। সমাজে পরিবর্তন আনতে এবং টেকসই উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে হবে। জেন-জিকে এই দিকটি বোঝানো জরুরি।যুব উদ্যোক্তাদের সমর্থন করার জন্য সরকারী অনুদান, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, এবং ব্যবসায়িক পরামর্শদাতা প্রদান করা উচিত। এটি তরুণদের মধ্যে নতুন উদ্যোগ গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।

নেতৃত্ব মানে শুধু আদেশ দেওয়া নয়; এটি অন্যদের বোঝা, তাদের সমস্যা উপলব্ধি করা এবং একটি ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করা।জেন-জি প্রজন্ম তাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে যথেষ্ট সচেতন। এই সচেতনতাকে কাজে লাগিয়ে তাদের মধ্যে সহানুভূতিশীল নেতৃত্ব গড়ে তোলা সম্ভব।তরুণদের বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া উচিত, যাতে তারা দায়িত্বশীল নেতৃত্ব এবং সহানুভূতির শিক্ষা পায়।নেতৃত্বের সুযোগ শুধুমাত্র কিছু বিশেষ শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সকলের জন্য উন্মুক্ত রাখা উচিত। এটি সমাজে সমতা আনার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।নেতৃত্বে অভিজ্ঞতার কোনো বিকল্প নেই। অভিজ্ঞ মেন্টর এবং সমবয়সীদের সঙ্গে নেটওয়ার্কিং তরুণ নেতাদের জন্য নতুন দিকনির্দেশনা দিতে পারে।সরকার, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম চালু করা উচিত যেখানে অভিজ্ঞ নেতারা তরুণদের দিকনির্দেশনা দেবেন।গ্লোবাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তরুণদের অন্য দেশের তরুণ এবং অভিজ্ঞ নেতাদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। এটি তাদের বৈশ্বিক নেতৃত্বের ধারণা তৈরি করতে সাহায্য করবে।

 ভবিষ্যতের নেতৃত্ব সৃজনশীল চিন্তা এবং সমালোচনামূলক বিশ্লেষণের ওপর নির্ভর করবে। তরুণদের এমন প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত যা তাদের সৃজনশীল সমস্যা সমাধানের কৌশল শিখতে সাহায্য করবে। তাদের মধ্যে সমালোচনামূলক চিন্তার বিকাশ ঘটানো প্রয়োজন যাতে তারা সহজে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারে। জেন-জি প্রজন্ম আমাদের ভবিষ্যতের আলো। তারা প্রযুক্তি, উদ্ভাবন, এবং সামাজিক পরিবর্তনের মাধ্যমে বিশ্বকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। তবে এটি নিশ্চিত করতে হলে তাদের সঠিক শিক্ষার মাধ্যমে নেতৃত্বের যোগ্যতা অর্জনের পথ তৈরি করতে হবে। সরকারের নীতি, শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন এবং সামাজিক সচেতনতার মাধ্যমে আমরা একটি দক্ষ, সহানুভূতিশীল, এবং উদ্ভাবনী প্রজন্ম তৈরি করতে পারি।জেন-জি কেবল আমাদের ভবিষ্যৎ নয়; তারা বর্তমানের পরিবর্তনের কাণ্ডারী। তাদের সক্ষমতার বিকাশ ঘটাতে পারলেই আমরা ভবিষ্যৎকে আরও উজ্জ্বল করতে পারব।

এমএসএম / এমএসএম

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন

ট্রাম্প-উরসুলার বাণিজ্য চুক্তিতে স্বস্তির হাওয়া

মানবিক সংকটের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব

বিশ্ব পানিতে ডুবা প্রতিরোধ দিবস ২০২৫ : গল্পের মাধ্যমে গড়ে উঠুক সচেতনতার বাঁধ