ঢাকা বৃহষ্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫

বিশ্ব পানিতে ডুবা প্রতিরোধ দিবস ২০২৫ : গল্পের মাধ্যমে গড়ে উঠুক সচেতনতার বাঁধ


আবুল বরকাত photo আবুল বরকাত
প্রকাশিত: ২৩-৭-২০২৫ দুপুর ৩:২২

পানিতে ডুবা প্রতিরোধ: বাস্তবতা ও কার্যকর পদক্ষেপের উদ্ভাবন বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪০ জন শিশু পানিতে ডুবে প্রাণ হারায়- যার অধিকাংশই ঘটে ১ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে। শিশুর এ করুণ পরিনতি ব্যক্তি ও সমাজের নজর এড়িয়ে নীরবে ঘটে যায় প্রায়শই। বাবা-মা তাদের সন্তান হারানোর বেদনায় সান্ত্বনা খোঁজে নিয়তির ওপর দায় চাপিয়ে। পানিতে ডুবার এই মর্মান্তিক ঘটনাগুলো বিশ্বব্যাপী তাই ‘নীরব মহামারী’ হিসেবে পরিচিত।
এই মহামারীর বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে, বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ডের নেতৃত্বে জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রের সমর্থনে ২০২১ সালে ২৫ জুলাইকে ঘোষণা করা হয়েছে “বিশ্ব পানিতে ডুবা প্রতিরোধ দিবস” হিসেবে। প্রতি বছর এই দিনটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, একেকটি ছোট্ট উদ্যোগ বা সচেতনতা ঠেকাতে পারে অনেক শিশুর অকাল মৃত্যু।  
২০২৫ সালে এই দিবসটির মূল প্রতিপাদ্যকে এভাবে বলা যায় “একটি গল্প, একটি শিক্ষা সচেতন হই, শিশুকে পানিতে ডুবার হাত থেকে বাঁচাই”। নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও পরিবর্তনের গল্প অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া থেকে আসে শিক্ষা। সেই শিক্ষাই গড়ে তোলে সচেতনতা, যা অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। 
সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) ২০০৫ সাল থেকে শিশুদের পানিতে ডুবা প্রতিরোধে গবেষণা করে আসছে। একইসাথে এ কাজে নানা অংশীজনের সম্পৃক্ততা বাড়াতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। আঁচলে (সমন্বিত শিশুযত্ন কেন্দ্র) ১ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের নিরাপদ পরিবেশে রাখা পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঝুঁকি ৮২ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে সক্ষম বলে গবেষণায় প্রমানিত। একইভাবে, ৬ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুদের জন্য স্থানীয়ভাবে সহজ পদ্ধতিতে জীবন রক্ষাকারী সাঁতার প্রশিক্ষণ মৃত্যুর ঝুঁকি ৯৬ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনে। এই কার্যক্রমগুলোকে বৈজ্ঞানিক ও উদ্ভাবনী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। 
পানিতে ডুবে যাওয়া ব্যক্তিকে উদ্ধারের সাথে সাথেই দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দেওয়া গেলে প্রাণহানি ও স্থায়ী ক্ষতি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। তাই শুধু শিশু নয়, পরিবারের প্রত্যেকের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা বিষয়ে প্রশিক্ষণ থাকা অত্যন্ত জরুরি।
পানিতে ডুবা প্রতিরোধে স্বীকৃত পদক্ষেপগুলোর বাস্তবায়ন আজ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিভিন্নভাবে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে । সেগুলোর সমাধান খুঁজে বের করা আবশ্যক। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতায় স্থানীয়ভাবে মানুষের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে টিকে থাকার সহজ কৌশল আবিষ্কারের কোনো বিকল্প নেই। বরিশালের বাকেরগঞ্জ ও বরগুনার তালতলী উপজেলায় সিআইপিআরবি সেই কাজটি করছে ‘নিরাপদে ভাসা’ প্রকল্পের মাধ্যমে। সহযোগিতায় রয়েছে রয়্যাল ন্যাশনাল লাইফবোট ইন্সটিটিউশন (আরএনএলআই), ইউকে ও প্রিন্সেস শার্লিন অফ মোনাকো ফাউন্ডেশন । 
বিশ্ব পানিতে ডুবা প্রতিরোধ দিবসকে কেন্দ্র করে আলোচনা করা দরকার কীভাবে এই পরীক্ষিত, ফলপ্রসু ও স্বীকৃত পদক্ষেপগুলোকে সকলের অংশগ্রহণে বৃহৎ পরিসরে আরও কার্যকরভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া যায় এবং অনাকাঙ্ক্ষিত শিশুমৃত্যুর মিছিল থামানো যায়।
সামাজিক ময়নাতদন্ত: গল্প থেকে শক্তি ও সচেতনতা
‘সামাজিক ময়নাতদন্ত’ হলো একটি জনসম্পৃক্ত আলোচনা ও শিক্ষণ প্রক্রিয়া, যা পানিতে ডুবে অকালে মারা যাওয়া শিশুদের স্মরণে করা হয়। মারা যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানের প্রত্যেকটি ধাপ স্থানীয়দের সচেতন করে তোলে এবং ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সক্রিয় ভূমিকা নিতে অনুপ্রাণিত করে। এই মানবিক ও কার্যকর উদ্যোগটি সিআইপিআরবি দীর্ঘদিন ধরে পরিচালনা করছে- যা এবারের পানিতে ডুবা প্রতিরোধ দিবসের প্রতিপাদ্যের সাথে খুবই সঙ্গতিপূর্ণ।
প্রকল্প এলাকায় যখন কোনো শিশুর পানিতে ডুবে মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়, সিআইপিআরবি’র প্রতিনিধি সংশ্লিষ্ট পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মৃত্যুর ১০ থেকে ১২ দিন পর পরিবারের সম্মতিতে একটি আলোচনা সভা হয়, যেখানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ধর্মীয় নেতা, শিক্ষক, এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ ও প্রতিবেশীরা উপস্থিত থাকেন।
আলোচনায় মৃত শিশুর পরিবারের একজন সদস্য সেই মর্মান্তিক দিনের বর্ণনা দেন। স্বজনহারা পরিবারের আকুল কান্না ও হাহাকার উপস্থিত সবাইকে শোকাভিভূত করে। এই বাস্তব অভিজ্ঞতা একইসাথে সচেতন ও সতর্ক হতেও সাহায্য করে। আলোচনা শুধু আবেগ প্রকাশেই সীমাবদ্ধ থাকে না, এতে এলাকার পানিসম্পর্কিত ঝুঁকি ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যা উঠে আসে। অংশগ্রহণকারীরা সম্মিলিতভাবে ঝুঁকি হ্রাসে উদ্যোগ গ্রহণের পরিকল্পনা করেন, যেমন পুকুর ঘেরা, শিশুর সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান ও সাঁতার প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা ইত্যাদি।
আলোচনা শেষে মৃত শিশুর নামে বাড়ির উঠোনে বা পার্শ্ববর্তী স্থানে একটি গাছের চারা রোপণ করা হয়। এটি শোক প্রকাশ ও শিশুটিকে স্মরণীয় করে রাখার সাথে সাথে ভবিষ্যতের জন্য সচেতন সমাজ গড়ারও প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকে। সামান্য খরচে অনেক বড় প্রভাব রাখা এ কাজগুলোতে সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি পর্যায়ে সম্পৃক্ত হওয়া এখন সময়ের দাবী যাতে আর একটি শিশুও প্রতিরোধযোগ্য কারণে অকালে প্রাণ না হারায়। 
আসুন, বিশ্ব পানিতে ডুবা প্রতিরোধ দিবসে আমরা সকলে প্রতিজ্ঞা করি- জীবন রক্ষাকারী গল্পগুলো ছড়িয়ে দেব, সচেতনতা বাড়াবো, উদ্যোগ নেবো এবং এই নীরব মহামারীর বিরুদ্ধে একসঙ্গে রুখে দাঁড়াবো।
লেখক:
মো: আবুল বরকাত
উপ-পরিচালক, সিআইপিআরবি

এমএসএম / এমএসএম

বিশ্ব পানিতে ডুবা প্রতিরোধ দিবস ২০২৫ : গল্পের মাধ্যমে গড়ে উঠুক সচেতনতার বাঁধ

রাজনীতি আজ নিলামের হাট: কুষ্টিয়া-৪ এ হাইব্রিড দাপটের নির্মম প্রতিচ্ছবি

জাতীয় নির্বাচনে প্রথমবার ভোট দিবে প্রবাসীরা, আনন্দে ভাসছে পরবাসে বাঙালীরা

বিশ্ববাণিজ্যে অস্থিরতা ও বাংলাদেশে তার প্রভাব

বাংলাদেশে ওয়াশিং প্ল্যান্টের বর্জ্য দ্বারা মিঠাপানির দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে

বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ

দলীয় পরিচয়ে পদোন্নতি ও বদলি: দুর্নীতির ভয়াল থাবায় বাংলাদেশ

ব্যবসায়ীদের জন্য ওয়ান-স্টপ সমাধান: FBCCI-এর বিদ্যমান সেবার উৎকর্ষ সাধন

বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিসরকে একীভূত করা: অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার জন্য বিসিক কেন অপরিহার্য

সবুজ অর্থায়নের কৌশলগত বিশ্লেষণ: বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের ঝুঁকি ও সুযোগ

মেধাবী হলেই ভালো চাকরি হয় না কেন?

ধৈর্য্য ও কর্মে অনন্য উচ্চতায় তারেক রহমান

আলী খামেনির নেতৃত্ব ও বিশ্বে তার প্রভাব