ঢাকা রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৫

কন কনে শীতে অযত্নে -অবহেলায় কাটছে পথশিশুদের জীবন


মুহাম্মদ দিদার হোসাইন photo মুহাম্মদ দিদার হোসাইন
প্রকাশিত: ২৫-১-২০২৫ বিকাল ৫:৫৫

কন কনে শীতের মধ্যে চরম অযত্নে-অবহেলায় কাটছে পথশিশুদেরজীবন, নানা কারণে স্বাভাবিক জীবন থেকে ছিটকে পড়ে পথশিশুদের জীবন, তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সমাজ ও রাষ্ট্রের কর্তব্য। বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ, এদেশের অধিকাংশ পরিবার মধ্যবিত্ত, নিন্মবিত্ত ও দরিদ্র, বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে এদেশে শিশুদের একটি বড় অংশ অবহেলিত, নিষ্পেষিত, নিপীড়িত।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পারিবারিক কহল, বিবাহ বিচ্ছেদ,অবিবাহিত নারী -পুরুষের অনৈতিক যৌন মিলনে পিতৃপরিচয়হীন ভাবে জন্ম নেওয়া অধিকাংশ শিশুরাই পথশিশুতে পরিণত হয়ে থাকে। এছাড়াও পিতা-মাতার অকালমৃত্যুর কারণেও অনেক শিশু পথশিশুতে পরিণত হয়। আবার মানসিক ভারসাম্যহীন, মানসিক, শারীরিক ও বাকপ্রতিবন্ধীতার কারণে গন্তব্যহীন ভাবে ঘুরেচলা অনেক নারী-পুরুষদের অবাধ মেলামেশার ফলেও জন্ম নিয়ে থাকে পথশিশুদের কেউ কেউ। তাদের অনেক নারীরা মাদকাসক্ত হাতে যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়া, পারিবারিক কহল,বিবাহবিচ্ছেদের কারণে যেসব শিশুরা পথশিশুতে পরিণত হচ্ছে তাদের বেশিরভাগই পিতৃস্নেহ বঞ্চিত হলেও মাতৃস্নেহে গড়ে উঠে অনেকে। তবে অর্থ অভাবেই শিশুদের ভরণপোষণের ব্যয়ভার বহন করা মাতার একার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে, যার ফলে পেটের ক্ষুধা মেটাতে একমুঠো ভাতের খোঁজে বাধ্য হয়ে দেশের অলিতে-গলিতে, পথে-ঘাটে ঘুরে বেড়ায় ওইসব পথশিশুরা। অযত্নে, অবহেলায় গন্তব্যহীন হয়ে স্বাভাবিক জীবন থেকে ছিটকে পড়ে অনেক শিশুর জীবন। প্রচন্ড গরম, বর্ষার বৃষ্টি আর তীব্র ও কন কনে শীতকে উপেক্ষা করে নির্দিষ্ট কোন গন্তব্য না থাকায় কখনো রেললাইনে, ফুটপাতে, ফ্লাইওভারের নীচে বিল্ডিংয়ের কিনারায়, রাস্তার পাশে, মার্কেটের গলিতে কিংবা খালের পাড়ে বাধ্য হয়ে দিনাতিপাত করে থাকে। খাদ্য অভাবে ক্লান্ত হয়ে হয়ে কন কনে শীতের মধ্যে ওইসব জায়গায় শীতবস্ত্রহীন খোলা আকাশের নীচে ঘুমিয়ে থাকতেও অনেককে।

বেঁচে থাকার জন্য একমুঠো ভাতের খোঁজে তাদের মধ্যে কেউ ভিক্ষাবৃত্তি, কেউ কারো বাসায় বা দোকানে চাকরি, কেউ আবার খাদ্য অভাবে চুরি করতে বাধ্য হয়। অনেক সময় মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকারও হয়। তাদের দুর্বলতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু কিছু অসাধু শ্রেণির মানুষ তাদের স্বার্থসিদ্ধর জন্যে সামন্য টাকা বা খাবারের লোভ দেখিয়ে নানা অপকর্ম করতে এপথশিশুদের ব্যবহার করে থাকে। এধরণের জ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড সামাজ ও রাস্ট্রের জন্য খুবই অকল্যাণ বয়ে আনে।

অবহেলিত ও বঞ্চিত পথশিশুদের ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার পরিবর্তে রাজনৈতিক পরিচয়ে অসাধু শ্রেণির কিছু লোক সামান্য অর্থের বিনিময়ে রাষ্ট্র  বিরোধী কর্মকাণ্ড করাতে তাদের ব্যবহার করে থাকে। আর খাদ্য অভাব ও চাহিদা পূরণ করতে ওইসব অপকর্মে জড়িত হয়ে পড়ে শিশুরা। অসৎসঙ্গের কারণে অনেক শিশুরা মাদকাসক্ত, বোমাবাজি, খুন, চুরিসহ নানা অপরাধ মুলুক কর্মকাণ্ড করতে দ্বিধা করেনা। তাদের থেকেই সৃষ্টি হয়ে কিশোর গ্যাং উৎপাত।

এতে একদিকে ধ্বংস হয় শিশুদের জীবন অপরদিকে চুরিচামারি, খুন, ছিনতাইয়ের উৎপাত হু হু করে বেড়ে চলার ফলে এলাকার শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে অস্থির করে তোলে, দারুণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র।

চা-বিক্রেতা থেকে রাষ্ট্র প্রধান হওয়া, রিকশা চালক থেকে বিসিএস ক্যাডার, কৃষক পরিবার থেকে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর আশিররা যদি ছোটখাটো বিমান তৈরি করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করার নজির থাকলেও অযত্নে -অবহেলায় জীবন ধ্বংস হচ্ছে প্রতিভাসম্পন্ন এশিশুদের। শিশুদের দ্বারা সংগঠিত অপরাধ মুলুক কর্মকাণ্ড রোধ করা এবং তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সামাজ ও রাষ্ট্রের কর্তব্য।

প্রথমতঃ তাদের খাদ্য চাহিদা পূরণ, পোশাকের চাহিদা  পূরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
দ্বিতীয়তঃ তাদের পড়াশোনা ব্যবস্থা করতে হবে।
তৃতীয়তঃ তাদের চিকিৎসা সেবা, বাসস্থান ও খেলাধুলার ভালো পরিবেশ তৈরি করতে হবে, তাদের যত্ন নিতে হবে। চতুর্থতঃ পথশিশু সৃষ্টি রোধ করতে অবিবাহিত নারী -পুরুষদের অনৈতিক যৌন মিলন রোধ করতে করতে হবে, পারিবারিক কহল ও বিবাহবিচ্ছেদ রোধ করতে বাল্যবিবাহ প্রবণতা রোধ এবং যৌতুক প্রবণতা রোধ করতে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলতে হবে। মানসিক ভারসাম্যহীন নারী -পুরুষদের অবাধ মেলামেশা রোধ ও মাদকদ্রব্য রোধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এজন্যে দেশের বিভিন্ন সামাজিক, মানবিক সংগঠন ও সংস্থা গুলো এবং রাষ্ট্রকে উদ্যোগ নিতে হবে, এগিয়ে আসতে হবে ওইসব সংস্থা, সংগঠন ও রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের।

পাড়ায় মহল্লায়, গ্রামে-গঞ্জে ও শহরের অলি-গলিতে পড়ে থাকা পথশিশুদের খোঁজে বের করে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে একটি উন্নত, সুন্দর ও সমৃদ্ধির বাংলাদেশ গড়ে তোলতে হবে। তবে এক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে আগে উদ্যোগ নিতে হবে এবং প্রশাসনে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সতর্কতা বাড়ানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

লেখকঃ মুহাম্মদ দিদার হোসাইন,
গণমাধ্যমকর্মী

এমএসএম / এমএসএম

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন

ট্রাম্প-উরসুলার বাণিজ্য চুক্তিতে স্বস্তির হাওয়া

মানবিক সংকটের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব

বিশ্ব পানিতে ডুবা প্রতিরোধ দিবস ২০২৫ : গল্পের মাধ্যমে গড়ে উঠুক সচেতনতার বাঁধ