ঢাকা বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫

বিশ্ব জলাভূমি দিবস: টিকে থাকার জন্য জলাভূমি সুরক্ষা এখন সময়ের দাবি


মোঃ সাজ্জাদুল ইসলাম photo মোঃ সাজ্জাদুল ইসলাম
প্রকাশিত: ৩-২-২০২৫ দুপুর ১২:২২

প্রতি বছর ২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব জলাভূমি দিবস পালিত হয়, যা আমাদের জলাভূমি সংরক্ষণের গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দেয়। দিনটি প্রথম উদযাপিত হয় ১৯৭১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ইরানের রামসার শহরে অনুষ্ঠিত একটি ঐতিহাসিক চুক্তির মাধ্যমে। চুক্তিটি "রামসার কনভেনশন" নামে পরিচিত এবং এটি জলাভূমি সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহারের জন্য বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করে। বর্তমানে জলাভূমির গুরুত্ব ও তা সংরক্ষণের জন্য এই দিবসটি বিশেষভাবে উদযাপিত হয়।
জলাভূমি বলতে বোঝানো হয় এমন সব প্রাকৃতিক পরিবেশ, যেখানে বছরব্যাপী বা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পানি জমে থাকে। এটির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হাওড়-বাঁওড়, বিল, ঝিল, ম্যানগ্রোভ বন, প্যারাবন, খাল-বিল এবং উপকূলবর্তী অঞ্চল। এই জলাভূমি প্রকৃতির এক অপরিহার্য অংশ। এটি কেবল প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষা করে না, বরং মানুষের জীবনযাত্রা, খাদ্য নিরাপত্তা এবং পরিবেশ সংরক্ষণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

জলাভূমি কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে সাহায্য করে।এটি প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে কাজ করে। অতিরিক্ত বৃষ্টি বা বন্যার সময় পানি ধরে রেখে ক্ষয়ক্ষতি কমায়।পৃথিবীর অনেক বিরল ও বিপন্ন প্রাণী জলাভূমিতে বসবাস করে। উদাহরণস্বরূপ, মাছ, পাখি, সরীসৃপ, উভচর ও ক্ষুদ্রজীব নানা ধরনের জলাভূমি নির্ভরশীল। জলাভূমি বিশ্বের প্রায় ৭৫ শতাংশ মিঠা পানি সরবরাহ করে। খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানি এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের অন্যতম উৎস হলো জলাভূমি।
পৃথিবীজুড়ে জলাভূমি আজ ভয়ানক হুমকির সম্মুখীন। শিল্পায়ন, নগরায়ন এবং অব্যাহত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে জলাভূমি দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশের বেশি জলাভূমি ইতোমধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে। বাংলাদেশেও চিত্রটি ভিন্ন নয়। হাওড়, বাঁওড় এবং উপকূলীয় অঞ্চলগুলো দিনে দিনে সংকুচিত হচ্ছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং কৃষি জমির সম্প্রসারণ জলাভূমির অবলুপ্তির প্রধান কারণ। শিল্পবর্জ্য, রাসায়নিক সার, কীটনাশক এবং পলিথিন জমে জলাভূমি দূষিত হচ্ছে। ক্রমাগত উষ্ণায়নের ফলে জলাভূমি শুকিয়ে যাচ্ছে। বাঁধ, রাস্তাঘাট এবং অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ জলাভূমি ধ্বংসের অন্যতম কারণ।

বাংলাদেশে জলাভূমি দেশের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। হাওড়-বাঁওড়, সুন্দরবন, টাঙ্গুয়ার হাওড়, চিতলমারীর জলাভূমি, হাকালুকি হাওড় ইত্যাদি আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে অপরিকল্পিত চাষাবাদ, শিল্পায়ন এবং দখলের ফলে এসব জলাভূমি আজ সংকটে।বাংলাদেশের অনেক জলাভূমি এখন কৃত্রিমভাবে শুকিয়ে মাছ চাষ বা কৃষি কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা এর প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করছে। ঢাকা এবং চট্টগ্রামের মতো বড় শহরগুলোতে জলাভূমি ভরাট করে আবাসিক এবং বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের কারণে পরিবেশ দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

জলাভূমি সংরক্ষণের জন্য আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। এটি কেবল সরকার বা আন্তর্জাতিক সংস্থার কাজ নয়, বরং ব্যক্তিগত ও সামাজিক উদ্যোগও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। জলাভূমি সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানো। নিয়ন্ত্রণমূলক আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন। স্থানীয় জনগণকে জলাভূমি ব্যবস্থাপনায় সম্পৃক্ত করা। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় জলাভূমি ধ্বংস না করার জন্য পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনা গ্রহণ। আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার অনুযায়ী জলাভূমি সংরক্ষণ নিশ্চিত করা।
জলাভূমি প্রকৃতির এক অমূল্য সম্পদ, যা মানুষের জীবনযাত্রা এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অপরিসীম ভূমিকা রাখে। বিশ্ব জলাভূমি দিবসের এই দিনে আমাদের উচিত জলাভূমি সংরক্ষণে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া। প্রকৃতির প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ আমাদের অস্তিত্বকে নিশ্চিত করবে। জলাভূমি রক্ষা করলে প্রকৃতি আমাদের রক্ষা করবে।

মোঃ সাজ্জাদুল ইসলাম
পাবলিক রিলেশন অফিসার, ডিপার্টমেন্ট অব বিসিপিআর, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি

এমএসএম / এমএসএম

মার্কেটিং বিক্রি বাড়ায়, যোগাযোগ ব্র্যান্ড তৈরি করে

নির্বাচনী ব্যবস্থায় গণমাধ্যম নীতিমালার প্রস্তাবিত সংস্কার ও গণমানুষের প্রত্যাশা

বাংলাদেশ সংবিধানের আলোচিত ৭০ অনুচ্ছেদ প্রেক্ষিতঃ রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত

শতাব্দির সেরা মাটির সৈনিক কৃষক যোদ্ধা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট ও জনগণের প্রত্যাশা

ট্রাম্প-সালমান কথোপকথনে বিশ্ব কী বার্তা পেল

এফবিসিসিআইর ডিজিটাল রূপান্তর : ব্যবসায়িক নেতাদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল সেবা

জাতীয় ঐকমত্য কঠিন হলেও উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

রাজনৈতিক অঙ্গনে এক অনন্য উচ্চতায় তারেক জিয়া

কেমিক্যাল আতঙ্ক নয়, চাই বিজ্ঞানসম্মত আমচাষ ও প্রশাসনিক সচেতনতা

শুভ অক্ষয় তৃতীয়া: দানে ধ্যানে অনন্তকালের পূণ্যলাভ

শিক্ষা উপকরণের ব্যবহার ও গুরুত্ব, বাংলাদেশ প্রেক্ষিত

ইসরায়েলের বর্বরোচিত যুদ্ধের অবসান হোক