দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সাঁটলিপিকার কামাল হোসেনের কালো টাকা পাহাড়
কামাল হোসেন, সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটর, মহাপরিচালকের ব্যক্তিগত সহকারি একজন দুর্নীতিবাজ কর্মচারি। কামাল হোসেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহোদয়ের ব্যক্তিগত সহকারী হওয়ার সুবাদে মহাপরিচালকের নাম ভাঙ্গিয়ে কয়েকজনের সহযোগিতায় মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের কাছ থেকে বদলি ও বিভিন্ন অজুহাতে টাকা হাতিয়ে নেয়াসহ সকল অন্যায় ও দুর্নীতি দাপটের সাথে চালিয়ে যাচ্ছেন। এত অন্যায় ও অবৈধ/অনৈতিক কাজের প্রমানসহ অভিযোগ থাকার পরও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
কথায় আছে চোরের মায়ের বড় গলা, কামালের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। দুর্নীতিকে তিনি মনে করেন আলাদিনের চেরাগ। যেই চেরাগে ঘষা দিয়ে তিনি হয়েছেন অঢেল সম্পত্তির মালিক। তার হোল্ডিং নং-৫০৯, উদয়া ম্যানশন সোসাইটি, ১০নং লেন, পূর্বাঞ্চল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকায় নিয়েছেন ১২০০ স্কয়ারের ২টি ফ্ল্যাট। যার একটিতে (ফ্ল্যাট নং-ই/৪) রাজকীয়ভাবে সাজিয়ে বসবাস করছেন ও অন্যটি দিয়েছেন ভাড়ায়। উদয়া ম্যানশন সোসাইটিতে তার আরও ৫ কাঠার অংশবিশেষ জমি রয়েছে। তার গ্রামের বাড়ি মধুপুর, টাঙ্গাইলে কোটি টাকার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, দোকান, মার্কেট ও ফিসারিজ ব্যবসা গড়ে তুলেছেন। তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে নিজের স্ত্রীকে আরালে রেখে ২০ কোটি টাকার সম্পদ করেছেন শুধুমাত্র বোন ও শাশুড়ির নামে।
শাহিনা সুলতানা (বোন) দলিল নং ৬১৮১, তারিখ: ১৬-০৬-২০২১, ঢাকা সিটি জরিপ নং-১৭২৩২, ১৭১৭৪ দাগে ০০৮৯.১৩৮ অযুতাংশ ও দলিল নং-৪৫৫৫, তারিখ: ৩০-০৩-২০২৩, ঢাকা সিটি জরিপ নং-১৭২৩২ দাগে ০০০৯. অযুতাংশ। ঢাকা শহরে প্রায় ০১ একক জমি ক্রয় করে রেখেছেন বোনের নামে এই দুর্নীতিবাজ কর্মচারি।
মোসাঃ মালেকা বেগম (শাশুড়ি) দলিল নং ৬১৮১, তারিখ: ১৬-০৬-২০২১, ঢাকা সিটি জরিপ নং-১৭২৩২, ১৭১৭৪ দাগে ০০৮৯.১৩৮ অযুতাংশ ও দলিল নং-৪৫৫৫, তারিখ: ৩০-০৩-২০২৩, ঢাকা সিটি জরিপ নং-১৭২৩২ দাগে ০০০৯. অযুতাংশ। ঢাকা শহরে প্রায় ০১ একক জমি ক্রয় করে রেখেছেন শাশুরির নামে এই দুর্নীতিবাজ কর্মচারি। লিংক গার্ডেন, মেরুল বাড্ডা, ঢাকাতে তার স্ত্রীর নামে ১টি ফ্ল্যাট, তার শ্বশুরের নামে ১টি, শ্বাশুড়ির নামে ১টি, বোনের নামে ১টি ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন। এছাড়াও ঢাকায় নামে-বেনামে একাধিক প্লট ও ফ্ল্যাট ক্রয় করে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন।
অভিযোগ আছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে ২০২১ সালে কর্মচারি নিয়োগে কামাল হোসেন তার আপন ছোট ভাই (রবিন) কে নিয়োগ পাইয়ে দেয়ার জন্য মোটা টাকায় অন্যজনকে দিয়ে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করিয়ে উত্তীর্ণ করায়। পরবর্তীতে নিয়োগ বোর্ডের মৌখিক পরীক্ষায় তার ছোট ভাই (রবিন) অংশগ্রহণ করলে নিয়োগ বোর্ডের সদস্যগণ ভূয়া পরীক্ষার্থী হিসেবে বুঝতে পেরে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার ছোট ভাই (রবিন) স্বীকারোক্তি দেয় যে, কামাল হোসেন মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ পাওয়ার জন্য বদলি পরীক্ষার সকল ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। নিয়োগ বোর্ডের সদস্যগণ তার জালিয়াতির প্রমান পেয়ে গত ১৩-০২-২০২২ তারিখে বনানী থানায় এজাহার দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন।
উল্লেখ্য, মোঃ কামাল হোসেন মহাপরিচালক মহোদয়কে মিথ্যা বলে তার সেই জেলখাটা ছোট ভাই (রবিন) যার মামলার বাদী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, মামলার কথা গোপন রেখে তাকে (রবিন) ০৭-০৩-২০২৩ তারিখে অত্র অধিদপ্তরাধীন সেতু/কালভার্ট শীর্ষক নির্মাণ প্রকল্পে কার্যসহকারী হিসেবে নিয়োগ পাইয়ে দেন। পরবর্তীতে নিয়োগ জালিয়াতি মামলার আসামী রবিন-কে শিক্ষা ভবন, আব্দুল গণি রোড, ঢাকাতে অফিস সহায়ক পদে আবার অন্যজনকে দিয়ে পরীক্ষা মাধ্যমে চাকুরি পাইয়ে দেন। জানা যায়, রবিন বর্তমানে কালিহাতি উপজেলা শিক্ষা অফিসে কর্মরত আছে।
তার দুর্নীতির জালে আটকে পড়ে অধিদপ্তরের গাড়ি ভাড়ার টেন্ডারে এম এইচ এন্টারপ্রাইজের মালিক মোঃ মাসুদ রানা গ-২১/১৩, মহাখালী, ঢাকা এর বৈধভাবে কাজ পাওয়ার পরও সুকৌশলে ফাইল আটকিয়ে তিন লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে কার্যাদেশ প্রদান করেন। এম এইচ এন্টারপ্রাইজের মালিক প্রথম মাসের বিল জমা দিলে এই দুর্নীতিবাজ কামাল হোসেন হুমকি দিয়ে বলেন, প্রতি মাসের বিলে ১০ হাজার টাকা না দিলে টেন্ডার বাতিলসহ প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে বলে হুমকি দেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি স্যারদেরকে বলে টেন্ডার বাতিল করার জন্য এম এইচ এন্টারপ্রাইজের মালিক মোঃ মাসুদ রানাকে বাধ্য করেন টেন্ডার বাতিলের আবেদন করতে। বাধ্য হয়ে অনোন্যপায় হয়ে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে তিনি আবেদন দেন টেন্ডার বাতিলের। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার পরও গায়েবিভাবে ধামাচাপা পড়ে যায়। ত্রাণ অনুবিভাগের কম্বল, ঢেউটিন, শুকনা খাবার ও বিভিন্ন প্রকল্পের ঠিকাদারদের কাছে রেইট কোড ও অফিসের গুরুত্বপূর্ণ গোপনীয় তথ্য সরবরাহ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের কর্মচারী কামাল হোসেন সাঁটলিপিকার-কাম-কম্পিউটার অপারেটর মহাপরিচালকের ব্যক্তিগত সহকারীর লাগামহীন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনেছেন।
অনুসন্ধানে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকের কাছ থেকে জানা যায়, তার গ্রামের বাড়ি (গাংগাইর বাজার, মধুপুর, টা্ঙ্গাইল) এবং শুশ্বর বাড়ির (দেউলা বাড়ী, ঘাটাইল, টাঙ্গাইল) অবস্থান চাকুরির আগে তার উল্লেখযোগ্য স্থাবর সম্পত্তি কিছুই ছিল না।
অভিযোগের বিষয়ে কামাল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমার বিষয়ে যে সকল অভিযোগ করা হয়েছে সে গুলা সঠিক নয় । যে সম্পত্তি এর কথা বলা হয়েছে সে সব আমার না । আমি এখানে চাকুরি করি আমার অনেক শত্রু থাকতে পারে তারা এই মিথ্যা অভিযোগ করেছে ।
এমএসএম / এমএসএম