যাত্রী সেবা ও পর্যটন খাত বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে শাহজালাল বিমানবন্দর

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর – হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নানামুখী যাত্রী সেবা ও পর্যটন খাতকে বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। কি নেই এই সেবার আওতায় প্রবাসী লাউঞ্জ চালু,আন্তর্জাতিক টার্মিনালে প্রবাসী যাত্রীদের অপেক্ষাগার, প্রবাসী ভাই-বোনদের প্রশিক্ষণে অবদান,হেল্প ডেস্ক এর মাধ্যমে যাত্রীদের তথ্য সেবা প্রদান,পবিত্র হজ্ব ফ্লাইট পরিচালনা।
এক ঘন্টার মধ্যে লাগেজ ডেলিভারি,ওয়েবপোর্টাল এবং ২৪/৭ হটলাইন চালু, যাত্রীসেবা নিশ্চিতকরণে প্রশিক্ষণ, পরিচ্ছন্নতা, গ্রীণ চ্যানেল নম্বর ২ খোলা, ইমিগ্রেশন এর ৪টি শিফট চালু, নতুন ফ্রি টেলিফোন বুথ স্থাপন, ফ্রি ইন্টারনেট ব্যবস্থা,এয়ারলাইন্সসমূহের হটলাইন নম্বর প্রদান, নতুন ট্রলি সংযোজন, অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে নতুন বসার ব্যবস্থা, 
যাত্রী সহায়তায় বিভিন্ন ধরনের নির্দেশিকা, লাগেজ লেফট বিহাইন্ড সমস্যা উন্নতিকরণ, মশক নিরোধন, শুল্কযুক্ত পণ্যের অর্থ পরিশোধ সহজীকরণ, ই-গেটস অটোমেশন,  ফ্লাইট অপারেশনে সুফল বয়ে আনতে বার্ড সার্ভে চলমান, শাটল বাস সার্ভিস, ওয়ান স্টপ সার্ভিস, ৩য় টার্মিনাল  এই সবই উদ্যোগ নেওয়া  হয়েছে আন্তর্জাতিক মানের যাত্রী  সেবার মানকে আরো বেগবান করতে। 

২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক রুটে প্রায় ৫৫ হাজার ফ্লাইট এবং  অভ্যন্তরীণ রুটে প্রায় ৪৫ হাজার ফ্লাইট এই বিমানবন্দর দিয়ে পরিচালিত হয়।এতে বাৎসরিক প্রায় ১ কোটি ২ লাখের বেশি  যাত্রী আন্তর্জাতিক রুটে এবং প্রায় ২৩ লাখ সম্মানিত যাত্রী অভ্যন্তরীণ রুটে যাতায়াত করেন।বর্তমানে ২০২৫ সালে সকল ধরনের ফ্লাইটের চাহিদা অধিক থাকায় এই সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।  
সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সহায়তা এবং পৃষ্ঠপোষকতায়, মন্ত্রণালয়ের দিক নির্দেশনায়, বেবিচক চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সবগুলো সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসহ ৪০ টি এয়ারলাইন্স এবং অন্যান্য সংগঠনের সাথে সুসমন্বয় করে যাত্রীদের যাত্রা সহজতর করার কাজটি করে যাচ্ছে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অভ্যন্তরে বহুতল কার পার্কিং এর ২য় তলায় বিস্তৃত স্থান জুড়ে যাত্রীদের যাত্রাকালীন ফ্লাইটের পূর্বে/পরে  যাত্রীদের জন্য  বিশ্রামগার ও সুলভমূল্যে খাবার গ্রহণের ব্যবস্থা  করা হয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এর নির্দেশনা, IOM এর সহযোগীতায় এবং বেবিচকের সার্বিক ব্যবস্থাপনায়  উন্মুক্ত করা হয়েছে  প্রবাসী লাউঞ্জ।দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা যাত্রীগণের যোগাযোগ সুবিধার্থে  আগমনি এলাকায় ০২(দুই)টি এবং বহির্গমন এলাকায় ০৩ (তিন)টি হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। এতে  ৫৪ জন সহকর্মী ২৪ ঘন্টা বিনামূল্যে যাত্রীদের বিভিন্ন তথ্য ও দিকনির্দেশনা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। 

এছাড়াও  www.hsia.gov.bd নামে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে  ওয়েবসাইট ও ওয়েব পোর্টাল হয়েছে।এতে যাত্রীবৃন্দ যে কোনো সহায়তা সহজেই পেতে পারেন এবং ১৩৬০০ তে ২৪ঘন্টা হটলাইন কলে কোনো অভিযোগ থাকলে দ্রুত সমাধান পেতে পারেন এবং  মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের জন্য হশাআবি মোবাইল এপ রয়েছে যাতে যাত্রীবৃন্দ সহজেই বিমানবন্দরের ভিতরে দিকনির্দেশনামূলক সহায়তা পেতে পারেন।বিমানবন্দরে কর্মরত সকল সংস্থার সদস্যের যাত্রীসেবা প্রদানে জবাবদিহীতা নিশ্চিতকরণসহ দায়িত্ববান হওয়ায় উৎসাহ প্রদান এবং যাত্রীদের সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল এবং ICAO Annex 9 (Facilitation) এর Standards and Recommended Practices অনুযায়ী বিমানবন্দরে কর্মরত সকল সংস্থার সদস্য কর্তৃক সম্মানিত যাত্রীদেরকে আন্তর্জাতিক মানের সেবা প্রদান নিশ্চিতকরনের লক্ষ্যে Passenger Service and Facilitation in Civil Aviation নামে একটি প্রশিক্ষণ এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

এই পর্যন্ত প্রায় ২৮টি ব্যাচে ৭৫৪ জন বিমানবন্দরের কর্মরত সদস্য এই কোর্সটি সম্পন্ন করেছেন। দক্ষিন এশিয়ায় এই প্রথম হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে সংযুক্ত হয়েছে ২৬টি ই-গেটস যার মাধ্যমে যাত্রীগণ তাদের ইমিগ্রেশন দ্রুততা ও নিরাপত্তার সাথে কার্যক্রম সম্পাদন করতে পারবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। এই গেইট কে অটোমেশন এর প্রক্রিয়া চলমান। এছাড়াও স্বর্ণের শুল্ক পরিশোধ করতে যাত্রীরা আগমনী স্থানে শুল্ক দিতে পারবেন। কাস্টমের পাশেই, একই স্থানে চালান ও ব্যাংকে অর্থ পরিশোধের ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

দেশের এভিয়েশন ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতন বার্ড স্ট্রাইক প্রতিরোধে গবেষণালব্ধ দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রজেক্ট ইনভেস্টিগেটর মাধ্যমে পাখিদের জাত, ধরন, বসবাস, প্রজনন ও আনাগোনা সম্পর্কে জানা যাবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া যাবে। যাত্রীদের জন্য নাম মাত্র ভাড়ায় বিমানবন্দর থেকে নিকটস্থ বাস স্ট্যান্ড, রেল স্টেশন এ আসা ও যাওয়া সহজীকরণে ২০২৪ সালে চালু হয়েছে  বিমানবন্দর শাটল বাস সার্ভিস। 

বিমানবন্দরের সার্বিক পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য  প্রায় ৪৫০জন ও  মশক নিরসনের জন্য বিমানবন্দরের বিভিন্ন স্থানে ৫০টি Mosquito Trap ব্যবহার করাসহ  এয়ার ও ল্যান্ড সাইডের বিভিন্ন  খাল ও পুকুর পরিষ্কার  এবং গাপ্পি মাছ অবমুক্ত করেছেন। ৩য় টার্মিনাল নির্মাণের সাথে সাথে   পুরোনো অনেক চাহিদা, অনেক সমস্যার সমাধানসহ  আন্তর্জাতিক মানের যাত্রীসেবা প্রদানে সর্বদা সচেষ্ট থাকবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। জবাবদিহিতার ও স্বচ্ছতায় দেশের বিমান চলাচল ও পর্যটন খাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে  বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।